নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাজু আহমেদ । এক গ্রাম্য বালক । অনেকটা বোকা প্রকৃতির । দুঃখ ছুঁয়ে দেখতে পারি নি ,তবে জীবনের সকল ক্ষেত্রে অনুভব করেছি । সবাইকে প্রচন্ড ভালবাসি কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে প্রকাশ করতে পারি না । বাবা এবং মাকে নিয়েই আমার ছোট্ট একটা পৃথিবী ।

সত্যকা

সত্যকা › বিস্তারিত পোস্টঃ

কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন

১৯ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৫:৩২

অতীত কালের যে সকল মানুষ বিখ্যাত হয়েছে তাদের জীবনী পড়লে জানা যায় তারা দীর্ঘ পথ পায়ে হেটে স্কুলে গিয়েছেন । সময় বদলেছে । ধীরে ধীরে মানুষ যান্ত্রিক সভ্যতায় প্রবেশ করেছে । বর্তমান সময়ের মানুষ সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে তাদের দৈনন্দিন কাজকর্ম সম্পাদন করছে । সময় এবং স্রোত যেমন কারো জন্য অপেক্ষা করে না তেমনি এখন মানুষও পিছে ফিরে তাকানোর সময় পাচ্ছে না । যে যার লক্ষ্যকে সামনে রেখে দুর্বার গতিতে এগুচ্ছে । নিত্যনতুন যান্ত্রিক আবিষ্কার এবং বিজ্ঞানের বিপ্লব দূরকে কাছে টেনে এনেছে । অতীতে যে কাজ করতে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস এমনকি বছরের পর বছর লেগে যেত সে কাজ করতে এখন সময় লাগছে মাত্র কয়েক মিনিট । চিকিৎসা, শিক্ষাসহ অন্যান্য সেবা উন্নত বিশ্বের মানুষ ঘরে বসেই গ্রহন করছে । বাংলাদেশ এখনো উন্নত বিশ্বের মত সকল কাজে আধুনিকতার, গতির ছোঁয়া লাগতে পারে নি তবে অচিরেই যাতে উন্নত দেশগুলোর সাথে পাল্লা দেয়া যায় তার বন্দোবাস্ত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে । উন্নত দেশের সাথে প্রতিযোগিতা করার জন্য সবার প্রথম যে কাজটি দরকার সেটা হল জাতিকে মানসম্মত কর্মমূখী শিক্ষায় শিক্ষিত করা । বাংলাদেশে কিছু কিছু অঞ্চলে কর্মমূখী শিক্ষাকে অগ্রসর করার জন্য নানামূখী পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে যা অবশ্যই রাষ্ট্রের উন্নতির জন্য ইতিবাচক দিক তবে এ কার্যক্রমকে দেশের সব অঞ্চলের জন্য উম্মুক্ত করে দিতে হবে ।



শিক্ষা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যথেষ্ট উন্নতি করেছে এবং এ ধারা চলতে থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দেশে শিক্ষিতের হার শতভাগ নিশ্চিত হবে । শিক্ষা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য দেখে এ শিক্ষা কাঠামোকে বিশ্বের কয়েকটি দেশ অনুসরণ-অনুরকরন করতে শুরু করেছে । তবে সে দেশগুলো বাংলাদেশের শিক্ষা ক্ষেত্রের নৈতিবাচক দিকগুলো এড়িয়ে যাচ্ছে । সুতরাং শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত অচিরেই দেশের শিক্ষা সংশ্লিষ্ট নেতিবাচক দিকগুলোকে বর্জনকরে পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহন করা । দেশের নতুন প্রজন্মের মধ্যে শিক্ষিতের হার ৯০ শতাংশের অধিক হলেও দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে অনেকগুলো অন্তরায় আছে যে গুলোর কারনে দেশের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে এবং রাষ্ট্রের শাসকদের আশানুযায়ী দেশে শিক্ষিতের হার শতভাগ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না অথচ এ অন্তরায় গুলো সামান্য কয়েকটি সহজ পদক্ষেপের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব । সরকার যদি এ ব্যাপারে আন্তরিক হয় তবে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা গোটা বিশ্ববাসীর কাছে গ্রহনযোগ্য এবং বাংলাদেশ বিশ্ববাসীর কাছে শিক্ষা ক্ষেত্রে রোল মডেল হয়ে থাকবে ।



বাংলাদেশের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করে । সরকার তাদের সন্তানদেরকে অবৈতনিক কিংবা সামান্য বেতনের বিনিময়ে শিক্ষিত করতে চাইলেও দরিদ্র অভিভাবকগন তাদের সন্তানদেরকে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করতে সাহস পান না । কেননা কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্তানকে ভর্তির মাধ্যমেই শিক্ষা কার্যক্রম শেষ হয়ে যায় না । সন্তানকে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে কিংবা আশেপাশের মেস ভাড়া করে সেখানে থাকার ব্যবস্থা করে দিতে হয় এবং খাওয়া এবং হাত খরচের জন্য কয়েক সহস্র টাকা দিতে হয় । অধিকাংশ অভিভাবকের সন্তানকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও খরচের টাকা জোগাড় করার সামর্থ না থাকার কারনে সন্তানকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে পারে না । তবে যাদের আবাসস্থল সন্তানকে ভর্তি করানো কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে তারা তাদের সন্তানকে নিজ বাসায় রেখে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে সক্ষম বা সাহস রাখেন ।



দেশের বিভিন্ন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা থাকলেও সে সকল প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অনেক কম । আবার যে সকল কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা আছে তাও প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য । যান্ত্রিক ত্রুটির কারনে সপ্তাহের বেশিরভাগ সময় সে যানবাহন গুলো বিকল থাকে আবার কখনো কখনো ইচ্ছাকৃতভাবেও বিকল করে রাখার অভিযোগ পাওয়া যায় । সুতরাং যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবহন ব্যবস্থা থাকার পরেও শিক্ষার্থীরা তা দ্বারা উপকৃত হয় না কিংবা সকল শিক্ষার্থী যাতায়াত করার মত আসনও নেই সে সকল যানবাহনকে যাতে শিক্ষার্থীদের চাহিদানুযায়ী তৈরি করা হয় কিংবা প্রতি রুটে একাধিক যানবাহনের ব্যবস্থা করা হয় সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করছি । বিভিন্ন সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের দাবীর মূখে সমস্যার সমাধান করার আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন হয় না । কাজেই শিক্ষার্থীদেরকে বিভিন্ন পরিবহনে হাফ ভাড়া দিয়ে ঝুলতে ঝুলতে কয়েক কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিয়ে ক্লান্ত শরীরে ক্লাস করতে আসতে হয় কিংবা ক্লাস শেষে প্রচন্ড ভীরের মধ্যে ক্লান্ত শরীরে বাসায় ফিরতে হয় । যে কারনে আসা যাওয়ার মধ্যেই শিক্ষা ব্যবস্থা সংক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে । কেননা শিক্ষার্থী যখন পড়াশুনা করবে তখন সে যাত্রাপথের ধকলের কারনে ঘুমিয়ে পড়ে কিংবা অসুস্থ থাকে ।



শিক্ষার্থীদের বাস্তব অবস্থার কথা বুঝানোর জন্য বরিশাল বিভাগের কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং এ গুলোতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের দূর্ভোগের কথা বলব । মূলত বরিশালের কথা বলা হলেও গোটা বাংলাদেশের সামান্য কিছু পার্থক্য ছাড়া একই অবস্থা । বরিশাল সদরে একটি বিশ্ববিদ্যালয়, একটি মেডিকেল কলেজ, বরিশাল বি এম কলেজ এবং জাতীয় বিশ্ব বিদ্যালয়ের আওতাভূক্ত দুটি কলেজ, কয়েকটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিওশন, একটি ল’ কলেজ, কয়েকটি সরকারী কলেজসহ প্রায় ডজন খানেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে । এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় অর্ধ লক্ষ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত । এ বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ৮০০ শিক্ষার্থী বরিশাল শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরত্বের ঝালকাঠী জেলা থেকে নিয়মিত শিক্ষা অর্জনের জন্য বরিশাল আসে । কেবল বরিশাল সরকারি বিএম কলেজ ব্যতীত অন্যকোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কোন পরিবহন ঝালকাঠীতে যায় না । বি এম কলেজের যে বাসটি ঝালকাঠীতে যায় তার ধারনক্ষমতা মাত্র ৪০ জনের । তবুও ঝালকাঠী থেকে প্রত্যহ বরিশাল বি এম কলেজে আগত প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর মধ্যে অন্তত ৭০-৮০ জন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অতিরিক্তভাবে বাসে বোঝাই হয়ে কলেজে আসে । অধিকন্তু বি এম কলেজ থেকে যে বাসটি ঝালকাঠীতে যায় সেটা অনেক পুরানো এবং মাসের অধিকাংশ সময় যান্ত্রিক ত্রুটির কারনে বিকল থাকে । সুতারং বরিশালের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ঝালকাঠী থেকে আগত শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ পরিবহনের অভাবে নিয়মিত ক্লাসে অংশ গ্রহন করতে পারে না । যারা নিয়মিত ক্লাসে আসে তাদের অনেকেই বাসের মধ্যে কিংবা কলেজ-বিশ্ববিদ্যা য়ে এসে অসুস্থ হয়ে পরে ।





ঝালকাঠী টু বরিশাল রুটে যে সকল পরিবহন চলাচল করে তার মধ্য থেকে কয়েকটি পরিবহনকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ যারা সীমাহীন কষ্ট সহ্য করার পরেও শিক্ষার্থদেরকে হাসিমূখে বহন করে । এ সকল পরিবহনের মধ্যে বি,আর টিসি, ঈগল, হানিফ অন্যতম । তবে কয়েকটি পরিবহন আছে তারা শিক্ষার্থীদরেকে বহন করেনা । এদের মধ্যে সোনারতরী, সুগন্ধা অন্যতম । এ রুটে যে সকল পরিবহন চালু আছে তাদের মালিকদের কাছে কৃতজ্ঞতা এবং দাবী তারা যেন শিক্ষার্থীদেরকে বহন করতে তাদের বেতনভূক্ত কর্মচারীদেরকে নির্দেশ দেন । তাদের একটু সহযোগীতার কারনে যদি শিক্ষার্থীরা জ্ঞান অর্জন করতে পারে এবং পরবর্তীতে এ শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রের কল্যানে আসে তবে শিক্ষার্থীরাও যেমন তাদের কাছে ঋণী হয়ে থাকবে তেমনি পরিবহন মালিকদের জন্যও সেটা হবে গৌরবের ।





পরিবহন সংকট দূর করে শিক্ষার্থীদের কষ্ট লাঘবে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করতে হবে রাষ্ট্রের পরিচালকবৃন্দকে বিশেষ করে শিক্ষা মন্ত্রনালয়কে । সরকার ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ঘোষিত বাজেটে সবচেয়ে বেশি অর্থ বরাদ্ধ করেছে শিক্ষা খাতে । কাজেই এটাকে এটাকে সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। বরিশালসহ দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যেন চিন্তামুক্ত হয়ে তাদের শিক্ষার্জন কার্যক্রম অব্যাহত রেখে দেশের মঙ্গলে আসতে পারে সে ব্যাপারে সরকারকে অগ্রনী ভূমিকা পালন করতে হবে । দেশের অন্যান্য স্থানের তুলনায় অবহেলিত জনপদ বরিশাল বিভাগের শিক্ষার্থীদের যাতায়াত অবস্থা অত্যন্ত নাজুক । কাজেই বরিশাল বিভাগের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে যেন অগ্রাধিকার দেয়া হয় । একটি জাতির শিক্ষা ব্যবস্থার সামগ্রিক অন্তরায় যে পর্যন্ত দূর করা সম্ভব হবে না সে পর্যন্ত জাতিকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলা যাবে না । কাজেই এ ব্যাপারে সরকারের শুভ দৃষ্টি কামনা করছি ।





রাজু আহমেদ । কলাম লেখক ।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.