নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাজু আহমেদ । এক গ্রাম্য বালক । অনেকটা বোকা প্রকৃতির । দুঃখ ছুঁয়ে দেখতে পারি নি ,তবে জীবনের সকল ক্ষেত্রে অনুভব করেছি । সবাইকে প্রচন্ড ভালবাসি কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে প্রকাশ করতে পারি না । বাবা এবং মাকে নিয়েই আমার ছোট্ট একটা পৃথিবী ।

সত্যকা

সত্যকা › বিস্তারিত পোস্টঃ

নারীরা ঘরে বাইরে সমানে নির্যাতিত হচ্ছে

২০ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১২:৩০

দেশের মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেক নারী । পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীরা প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হচ্ছে । আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় দিনে দিনে নারী নির্যাতনের সংখ্যা বেড়ে চলছে । ঘরে কিংবা বাইরে কোথাও নারীর পূর্ণ নিরাপত্তা নাই । একটা সময় ছিল যখন নারীরা মুখ বুঝে সকল নির্যাতন সয়ে যেত কিন্তু এখন নারীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হতে শুরু করেছে । তবুও এ সচেতনতা যথেষ্ট নয় । আজও নির্যাতিত নারীদের বুক ফাটা আর্তনাদে সভ্য সমাজ কেঁপে ওঠে । শিক্ষিত অশিক্ষিত নির্বিশেষে নারীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে । কখনো পাশবিক নিযাতন আবার কখনো মানসিক । মোটকথা কোন না কোনভাবে নারীকে যেন নির্যাতিত হতেই হবে । সমাজের অনেক পুরুষ এ শতাব্দীতেও মনে করেন নারী নির্যাতন ভবিতব্য। তুচ্ছ কতগুলো কারন এবং সমাজ সৃষ্ট কিছু কুপ্রথার জন্য নারীকে নানা ধরনের নির্যাতনের মুখোমুখি হতে হয় । আমাদের সমাজ এমন কিছু মানুষরুপী পশুর জন্ম হয়েছে যারা নারীদেরকে নির্যাতন করে একধরনের সূখানুভূতি অনুভব করে । যদিও এদের সংখ্যা কম তবুও তাদের দাপটে পুরো সমাজ ব্যবস্থা কলুষিত হচ্ছে । নারীদেরকে নির্যাতন করে মৃত্যু পথের যাত্রী বানিয়েও তাদেরকে চিকিৎসা পর্যন্ত দেয়া হয় না । সভ্যতা ও মানবাধিকার রক্ষার যুগে এটা যে কত নির্মম অসভ্যতা এবং মানবাধিকারের লংঘন তা কেবল নিয়ম কানুনেই সীমাবদ্ধ হয়ে রয়েছে। এ নির্যাতনের কারনে কখনো নারীকে জীবন পর্যন্ত দিতে হচ্ছে । কিন্তু নির্যাতিতের পরিবার তার স্বজন হারিয়ে ন্যায় বিচার পাচ্ছে খুবই কম । আইনের ফাঁক ফোকর কিংবা আর্থিক লেনদেনের কারনে অপরাধীরা প্রায়ই পার পেয়ে যায় । অপরদিকে অনেক নারীরা তাদের জীবন হারানোর ভয়ে অল্পবিস্তর নির্যাতনের শিকার হয়ে মুখ বুঝে থাকেন । লজ্জা এবং সামাজিক বাধার কারনে তারা তাদের কষ্টের কথা তাদের আপনজনদের কাছেও প্রকাশ করতে সংকোচ বোধ করেন । পুরুষদের একাংশের অন্যায় আচরণ এবং নারীর লজ্জা কিংবা ভালবাসার দুর্বলতার কারনে আজও সমাজে অহরহ ঘটছে নারী নির্যাতনের মত ঘৃণিত কাজ । পত্রিকার পাতা খুললেই কিংবা টেলিভিশনে চোখ রাখলেই নারী নির্যাতনের বিভৎস খবর এবং ছবিগুলো দেখলে অনেকেই লজ্জা পান এবং আঁৎকে ওঠেন । সভ্যতা, গ্রগতিশীলতা, সমঅধিকারের ও সমমর্যাদার যুগেও নারীদেরকে এভাবে নির্মম নির্যাতনের শিকার হতে দেখলে মনে পড়ে জাহিলিয়্যাতের সময়কার নারীদের করুন অবস্থার কথা । পৃথিবীতে নারী নির্যাতনের ঘটনা উন্নত, অনুন্নত কিংবা বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে অহরহ ঘটছে । তবে উন্নত দেশগুলোতে নারী নির্যাতনের সংখ্যা এত অধিক নয় যতটা ভয়বাহভাবে অনুন্নত দেশগুলোতে কিংবা বাংলাদেশে ঘটছে । একথা বলতে দ্বিধা নেই যে, নারীরা নির্যাতিত হওয়ার পিছনে পুরুষদেরকে যেভাবে দায়ী করা হচ্ছে সেভাবে নারীদেরকে দায়ী করা না গেলেও নারীরাও বহুলাংশে দায়ী । ধর্মীয় অনুশাসন পালন এবং শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে নারীরা যতদিন নিজেদের অবস্থানকে মজবুত না করতে পারবে ততদিন নারীরা কমবেশি নির্যাতিত হতে থাকবে বলেই কতিপয় বিশেষজ্ঞ ধারনা করছেন । এছাড়াও নারী পুরুষের লৈঙ্গিক বৈষম্যও নারী নির্যাতনের অন্যতম কারন । কাজেই কেবল উদার দৃষ্টিভঙ্গি আনয়ণ, সচেতনতা সৃষ্টি এবং আইনের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমেই নারী নির্যাতন বন্ধ করা সম্ভব ।



পরিসংখ্যান বলছে, নির্যাতিত নারীদের মধ্যে অধিকাংশই তাদের কাছের মানুষ, আপনজন এবং স্বামীর মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকেন । নির্যাতিত নারীদের ৭০% তাদের ঘৃহে নির্যাতনের শিকার হন । সভ্যতার এই যুগেও যৌতুকের মত ঘৃণিত দাবী পূরণের জন্য একজন নারীকে স্বামী কিংবা শ্বশুড়বাড়ীর অন্যান্য সদস্যদের দ্বারা শারীরিক কিংবা মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয় । নারীদের অসহায়ত্ব তাদের উপর নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করেছে । অসচেতনতার কারনে গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ নারীরা স্বামীর গালাগাল কিংবা সামান্য শারীরিক লাঞ্ছনাকে নির্যাতন বলে মনে না করে তারা এটাকে স্বামীর আদর সোহাগের একটি অংশ মনে করেন । বিভিন্ন সংস্থা প্রদত্ত তথ্যমতে, বাংলাদেশেল প্রেক্ষাপটে ৮৭% নারীই কোন না কোনভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন । এ নির্যাতিত নারীদের মধ্যে ৬৫% স্বামীর দ্বারা শারীরিক নির্যাতনের শিকার । আবার তাদের ৩৬% যৌন নির্যাতন, ৮২% মানসিক নির্যাতন এবং ৫৩% স্বামীর মাধ্যমে অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার । এসকল নির্যাতিত নারীদের ৭৭% বিগত একবছরেও একই ধরনের নির্যাতন ভোগ করেছেন । পুরুষ নির্যাতিত নারীদের অর্ধেকেরও বেশি চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ পান না । নির্যাতিত নারীদের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি স্বামীর ভয়ে কিংবা স্বামীর অনুমতি না থাকায় চিকিৎসকের কাছে যেতে পারেন না । তবে নির্যাতনের পরিসংখ্যান বলছে, শহরের নারীদের তুলনায় গ্রামের নারীরা অনেক বেশি নির্যাতিত হয় । সাধারণত পারিবারিক নির্যাতন, ধর্ষন, যৌতুক, এসিড নিক্ষেপ, যৌন হয়রানি, প্রেমের নামে প্রতারণা, দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করার পর তার ধারনকৃত ভিডিও প্রকাশ করে দেওয়া, নারীদেরকে বিভিন্ন অসামাজিক কাজে বাধ্য করা এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের মাধ্যমে নারীদেরকে নির্যাতন করা হয় । পরিসংখ্যানের তথ্যমতে, ২০০১ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত যৌতুক সহিংসতার কারনে ২৭৫৩ জন নারীকে হত্যা এবং ১৭৮৭ জন নারীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে । এ সময় স্বামী কিংবা শ্বশুড়বাড়ীর সদস্যদের নির্যাতনের তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে ১৯৯ জন নারী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে । ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১০০৮৭ জন নারী ও মেয়ে শিশু, এসিড সহিংসতার শিকার হয়েছে ১৭৯৬ জন, বখাটেদের যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে ১৭৮২ জন নারী ও শিশু । অতীতের সকল পরিসংখ্যানকে ছাড়িয়ে গেছে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রদত্ত পরিসংখ্যান । তাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৪ সালের জানুয়ারী থেকে জুন পর্যন্ত মাত্র ৬ মাসে মোট ২২০৮টি নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে । এ অল্প সময়ের মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৪৩১টি । যার মধ্যে গণধর্ষণের সংখ্যা ছিল ৮২টি । ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৪৫ জনকে । ধর্ষণের চেষ্টা করা হয় ৫১ জনকে । শ্লীলতাহানির শিকার ৭০ জন ও যৌন নির্যাতনের শিকার ২৫ জন । ২০১৩ সাল জুড়েই ছিল নারী নির্যাতনের মহোৎসবের সময় ! এসময় নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে ৪ হাজার ৭৭৭টি । এর মধ্যে ধর্ষিত হয়েছে ৬৯৬ জন । যার মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ১৮৫ জন । ধর্ষনের পর হত্যা করা হয়েছে ৯৪ জনকে এবং ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ১৫৩ জনকে ।



উপরে যা উল্লেখ করা হলে সেটা কেবল পরিসংখ্যান কিন্তু পরিসংখ্যানের অন্তরালে অনেক পরিসংখ্যান লুকিয়ে থাকে । কথায় বলে ‘নারীর বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না’ । গ্রামে-গলিতে খুজলে এমন আরও হাজারো নির্যাতনের খবর সহজেই পাওয়া যাবে যা উপরোযুক্ত পরিসংখ্যানে যোগ হয় নাই । নারী নির্যাতনের পকৃত সংখ্যা কত তা এদেশের প্রত্যেকটি পরিবারের দিকে তাকালেই সহজে অনুমেয় । কিন্তু এমনটা তো হবার কথা ছিল না । আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যানকর/অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর’ । কাজেই পরিবার, সমাজ কিংবা রাষ্ট্রের উন্নয়নের জন্য নারীদেরকে পশ্চাৎদেশে রেখে আমাদের দেশ তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে না । সুতরাং অবিলম্বে নারী নির্যাতন বন্ধ করতে হবে । নারী নির্যাতন বন্ধের সবচেয়ে মহোত্তম উপায় বিবেককে জাগ্রতা করা এবং মানবতা বোধ জন্ম দেয়া । যে নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হচ্ছে তারা কারো না কারো মা, বোন কিংবা সমজাতীয় । প্রত্যেক পুরষের কাছেই তার মা কিংবা বোন খুবই প্রিয় । কাজেই অবিলম্বে নারী নির্যাতন বন্ধ করে সমাজে কিংবা পরিবারে একটি সূখের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে ।



বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী কিংবা বৃহত্তম দলের নেত্রী নারী হওয়ার পরেও এই দেশে নারী নির্যাতনের মত এমন সহিংসতা চলছে তা কোন অবস্থায় মেনে নেওয়া যায় না । কঠোর ব্যবস্থার মাধ্যমে নারী নির্যাতন বন্ধ করতে হবে । ১৯৮০ সালের যৌতুক নিরোধ আইন এবং ২০০০ সালে শিশু ও নারী নির্যাতন দমন আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ সময়ের দাবী । তবে কিছু ব্যাপার আছে যা আইনের মাধ্যমে সমাধান করা কষ্টকর । কাজেই নারী নির্যাতন বন্ধে নারী পুরুষ উভয়কেই দায়িত্বশীল হতে হবে । নিরপেক্ষভাবে বিচার করলে নারী নির্যাতন বন্ধ হওয়ার কিংবা করার জন্য নারী এবং পুরুষ উভয়কেই সহনশীল হতে হবে । এক অপরের উপর আস্থা, বিশ্বাস, শ্রদ্ধা, ভক্তি পোষণ নারী নির্যাতন বন্ধ হওয়ার প্রধান মূলমন্ত্র । নারী পুরুষ উভয়কেই এই মন্ত্রে দীক্ষা নিয়ে সমাজে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে । অসভ্য কিংবা বর্বর যুগের মত এই শতাব্দীতেও নারীদেরকে ঘরে বাইরে নির্যাতিত হতে হবে তা কাম্য নয় । কাজেই নারী নির্যাতন বন্ধ করে আগামীর পৃথিবীকে সুন্দরভাবে সাজানোই হোক আমাদের অঙ্গীকার ।



রাজু আহমেদ । কলাম লেখক ।

[email protected]

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.