নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাজু আহমেদ । এক গ্রাম্য বালক । অনেকটা বোকা প্রকৃতির । দুঃখ ছুঁয়ে দেখতে পারি নি ,তবে জীবনের সকল ক্ষেত্রে অনুভব করেছি । সবাইকে প্রচন্ড ভালবাসি কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে প্রকাশ করতে পারি না । বাবা এবং মাকে নিয়েই আমার ছোট্ট একটা পৃথিবী ।

সত্যকা

সত্যকা › বিস্তারিত পোস্টঃ

শহীদ মিনার তুমি কার ?

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ২:৩২

দেশ যখন গভীর সংকটে নিমজ্জিত ঠিক সেই অসময় চলে গেলেন দেশের বিখ্যাত সমাজ বিজ্ঞানী ড. পিয়াস করিম ও ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন (ভাষা মতিন) । অসময়ে তাদের চলে যাওয়ায় জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে । তবুও বিধির বিধান, কে তা খন্ডাতে পারে । ড. পিয়াস করিমের মৃত্যু হওয়ার পরে তাকে নিয়ে কিছু বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে । পিয়াস করিমের মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি ভূঁইফোঁড় সংগঠন এতে বাধার সৃষ্টি করে । তাদের প্রতিবাদের কারন হিসেবে তারা ড. পিয়াস করিমকে দেশের স্বাধীনতা বিরোধী বলে উল্লেখ করে । পরিস্থিতি যখন গোলাটে হয় তখন ড. পিয়াস করিমের পরিবার থেকে তার লাশ শহীদ মিনারে নেয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে তার দ্বিতীয় জানাযা শেষে তাকে কবরস্থ করা হয় । তাকে কবরে শায়িত করার মাধ্যমে উদ্ধুত এ বিতর্কের সমাধান হয়নি বরং আরও বিতর্ক দানা বাঁধতে শুরু করেছে । যারা পিয়াস করিমের মরদেহ শহীদ মিনারে ঢুকতে না দেয়ার পক্ষে আন্দোলন করেছিল সেই তারাই ড. পিয়াস করিমের স্ত্রীসহ দেশের নয়জন বিশিষ্ট নাগরিককে শহীদ মিনারে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে । ড. পিয়াস করিমসহ যে বিশিষ্ট নাগরিকদের শহীদ মিনারে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে তারা দেশের স্বাধীনতা বিরোধী না থাকলেও তারা আওয়ামীলীগ বিরোধী । এ সকল ব্যক্তিরা আওয়ামীলীগের বিভিন্ন দুঃশাসন এবং অন্যায় অপরাধের সমালোচনা করেছেন কিংবা এখনো করছেন । সুতরাং এই সকল বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার পিছনে শুধু ভূঁইফোড় সংগঠনগুলোর নিজস্ব মত রয়েছে নাকি আওয়ামীলীগের স্পষ্ট মদদ রয়েছে তা বোঝার জন্য খুব বেশি ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের প্রয়োজন পরে না ।

১৯৯৬ সালে যখন আওয়ামীলীগ ও জামাআতে ইসলামী যুগপৎভাবে বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল তখন আওয়ামীলীগের কাছে জামাআতে ইসলামীর কোন দোষ ছিল না । আওয়ামীলীগের কাছে জামাআতে ইসলামীর ভিতরে কোন যুদ্ধাপরাধী কিংবা মানবতাবিরোধী ছিল কিনা সন্দেহ । রাজনৈতিক অঙ্গনে এ সময়টাতে আওয়ামীলীগ এবং জামাআতের সম্পর্ক ছিল অতি আপনজনের । এ মধুর সম্পর্কের ছেদ শুরু হল ২০০১ সালের নির্বাচনে যখন জামাআতে ইসলামী আওয়ামীলীগের সাথে জোট ভেঙ্গে বিএপির সাথে চারদলীয় জোটবদ্ধ হয় । এরপর ক্রমান্বয় জামাআতে ইসলাম আওয়ামীলীগের প্রধান শত্রুতে পরিনত হয় এমনকি বিএপির চেয়েও বড় শত্রু । সর্বশেষ ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করার পরেই যুদ্ধাপরাধী এবং মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করে । ২০০৮ সালের নির্বাচনে পূর্বে আওয়ামীলীগের অনেকগুলো প্রতিশ্রুতি থাকলেও সেসব ভূলে সরকার পক্ষ কেবল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে মেতে ওঠে । সাচ্চা দেশপ্রেমিক হিসেবে ১৯৭১ সালে যারা দেশের স্বাধীনতা বিপক্ষে অবস্থান করেছিল কিংবা পাকিস্তানীদের পক্ষে বাঙালীদের বুকে অস্ত্র ধরেছিল সেই ঘৃণিত মানুষদের বিচার অবশ্যই প্রতিটি বাঙালী চায় । কিন্তু ১৯৯৬ সালে যখন জামাআত ইসলাম আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক সহোদর ছিল তখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কোথায় ছিল ? জামাআতে ইসলাম যদি যুদ্ধাপরাধীর দল হয়েই থাকে তবে বর্তমান সময়ের চেয়ে ৭ম জাতীয় সংসদে যুদ্ধাপরাধীর সংখ্যা বেশি বেঁচে ছিল । কেন সেই সময় তাদের বিচার করা হলো না ? এ ঘটনাই কি প্রমান করে না, যুদ্ধাপরাধী কিংবা মানবতা বিরোধী ইস্যু মূল বিষয় নয় বরং কারা আওয়ামীলীগের পক্ষে এবং বিপক্ষে অবস্থান করছে সেটাই বড় কথা । আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে কথা বললে মুক্তিযোদ্ধারাও রাজাকার হতে বেশি সময় লাগে না । আওয়ামীলীগের সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী এবং অন্যতম মুক্তিযোদ্ধা একে খোন্দকার এতদিন আওয়ামীলীগের অতি আপনজন ছিলেন কিন্তু যখন তিনি ‘মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ ঃ ঘরে বাইরে’ লিখলেন তখন তিনি হয়ে গেলেন আওয়ামীলগের সবচেয়ে বড় দুশমন এবং স্বাধীনতা বিরোধী । এই যদি হয় অবস্থা ! সত্য কথা কিংবা আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে কেউ কোন কথা বললেই তাকে কাঠ-গোঁড়ায় দাঁড়াতে হবে কিংবা তাকে জীবন থেকে হারাতে হবে । যতক্ষন আওয়ামীলীগের সাথে তাদের মত মেনে অবস্থান করা যাবে ততক্ষন কোন দোষই যেন দোষ নয় কিন্তু যখন এর বিরুপ ঘটবে তখন তার দোষ না থাকলেও তার বিরুদ্ধে দোষ জন্ম দিয়ে ছাড়া হবে ।

শহীদ মিনার তুমি কার ? যদি শুধু আওয়ামীলীগের হও তবে কোন কথা নেই । আর যদি দাবী কর যে, তুমি সবার তাহলে তোমার সাথে বহু কথা আছে । ড. পিয়াস করিমের লাশ তোমার বুকে স্থান পায়নি সে জন্য তুমিও যেমন ব্যথিত আমরাও তেমন । তোমাকে কোন এক তকমার বিনিময়ে যারা নিজেদের দাবী করতে চাচ্ছে তারা তাদের স্বার্থের উর্ধ্বে ওঠে তোমাকে কতটা ভালোবাসে তা একবারও কি ভেবেছ ? শহীদ মিনার এদেশের সকল মানুষের । প্রশাসন এটাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে ইজারা দেয়নি বরং দেখা-শুনার দায়িত্ব দিয়েছে মাত্র । কিন্তু বামসংগঠনগুলো ড. পিয়াস করিমের মরদেহকে কেন্দ্র করে যে আচরণটি করল তা দেশের মানুষ কোনদিনও কি ভূলতে পারবে ? ড. পিয়াস করিমের লাশ তোমার বুকে রাখলে নাকি তুমি অপবিত্র হয়ে যেতে । জানতে হচ্ছা করে, পিয়াস করিমের লাশ রাখলে যদি তোমার বুক অপবিত্র হয় তবে পবিত্র হবে কার লাশ রাখলে কিংবা কার পদ-ধূলিতে । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক একজন উপাচার‌্য তোমার বুকে জুতা পাঁয়ে হেটেছিল সে দৃশ্য তুমি ভূলে যেতে পার কিন্তু আমরা আজও ভূলিনি । ফরহাদ মাজহারসহ যে বিশিষ্ট নাগরিকদের নকল তকমা লাগিয়ে তোমার থেকে দূরে রাখার দাবি করা হচ্ছে সেই তাদের ছাড়া তুমি কি পূর্ণাঙ্গ ? না তোমায় ছাড়া তারা ? তোমার নসীব ভালো, যদি তোমার ভাষা থাকত আর তুমি এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে তবে তোমারও এ বঙ্গে যায়গা হত কিনা সন্দেহ । আইএসআইয়ের এদেশীয় চর অপবাদ দিয়ে তোমাকেও প্যাকেট করে পাকিস্থানে প্রেরণ করার উদ্যোগ নেয়া হত । এটাই আমাদের রাজনীতির সংস্কৃতি । যতক্ষন কেউ পক্ষে থাকবে ততক্ষন তার সাত খুন মাফ আর বিপক্ষে গিয়ে পান থেকে চূণ খসলেই সোজ শ্রীঘরে স্থায়ী ঠিকানা । পরমত সহিষ্ণুতার এত অভাব বিশ্বের অন্যকোন জাতির মধ্যে নেই যতটা আমাদের মধ্যে । পৃথিবীতে কোন শাসক গোষ্ঠীর ক্ষমতাই আজ পর‌্যন্ত চিরস্থায়ী হয়নি । এক্ষেত্রে স্বৈরতান্ত্রিকরা যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে সেভাবে গণতান্ত্রিকরাও কম হেনস্তার শিকার হয়নি । কাজেই বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও কারও ক্ষমতা চিরস্থায়ী বলা যাবে না । শহীদ মিনারের মত পবিত্র স্থানগুলো নিয়ে যদি রাজনৈতিক মেরুকরণ শুরু হয় তবে তা এ জাতীর জন্য কোনদিনও মঙ্গল বয়ে আনবে না । আজ যে বিশিষ্ট ব্যক্তিদেরকে শহীদ মিনারে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে সেই একই অভিযোগ তুলে ভবিষ্যতে যদি অন্যকোন রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এসে অন্য কোন মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বিশিষ্টজনদেরকে শহীদ মিনারে নিষিদ্ধ করে তখন করার থাকবে কি ? এভাবে পারস্পরিক ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া চললে এদেশে শান্তি আসবে কোন পথে ? সুতরাং যাদেরকে শহীদ মিনারে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে এবং যাদের ছত্র-ছায়ায় তারা এ কাজ করেছে তাদেরকে ঐ সকল ব্যক্তিদের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত । ড. পিয়াস করিমের মরদেহ শহীদ মিনারে স্থান না পেয়ে দুনিয়ার মধ্যে সবচেয়ে পবিত্র স্থান মসজিদে স্থান পেয়েছে এটা একার্থে অনেক কল্যানের তবুও শহীদ মিনারেও তার স্থান পাওয়া উচিত ছিল । সুতরাং এ জন্যও অনুশোচনা করা উচিত ।

ব্যক্তি শেখ হাসিনা শুধু আওয়ামীলীগের প্রধান হতে পারেন কিন্তু যখন তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন তখন তিনি এদেশের প্রতিটি মানুষের । সুতরাং তাকেই এদেশের সকল মানুষের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে । এখানে নিজদল কিংবা বিরোধীদলের মধ্যে পার্থক্য করা আদৌ উচিত নয় । সকল মতের সমালোচক থাকবেই এবং এটা থাকা আবশ্যক । কেননা সমালোচকরা যতটা ভূল ধরিয়ে দিতে পারে ততোটা ভূল নিজ দলের কর্মীদের চোখে পড়ে না । যুগে যুগে বুদ্ধিমানরা সমালোচদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহন করেছে । সমালোচকরা দর্পণের মত কাজ করে । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই শহীদ মিনারকে কেন্দ্র করে যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে তার নিরপেক্ষ সমাধান করে দেশের উদ্ধুত পরিস্থিতির মীমাংসা করবেন । শহীদ মিনারে যে নয়জনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে তাদের সমর্থক আর কেউ এদেশে নাই না কথা ভাবা উচিত নয় । সুতরাং এভাবে যদি কেবল কোন্দল বাড়ানোর পায়তাঁরা করা হয় তবে এদেশের উন্নতি কোন দিনই সঠিকভাবে হবে না । কোন দলীয় ব্যানারে শহীদ মিনার পরিচালনার মত ভূল যদি কেউ করে বসে তবে তাকে বিরাট মাশুল দিতে হবে । সুতরাং শহীদ মিনার কেন্দ্রিক সকল অপরাজনীতি বন্ধ করে এবং এটাকে সবার জন্য উম্মুক্ত রাখা হোক

রাজু আহমেদ । কলামিষ্ট ।
[email protected]


মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.