নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সদ্য বিদায়ী বছরের ৩০ ডিসেম্বর প্রকাশিত হল বাচ্চাদের দু’টো পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল । দেশের সর্ববৃহৎ ও দ্বিতীয় বৃহৎ পাবলিক পরীক্ষা অর্থ্যাৎ প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী এবং জেএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের জীবনের প্রথম ও দ্বিতীয় পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলে অনেকেই আনন্দে উদ্বেলিত করেছে আবার কারো চেহারায় অমানিশার অন্ধকার ছেয়ে গেছে । ব্যর্থদের চেয়ে সাফল্য প্রাপ্তদের সংখ্যা নয়গুনেরও কিছু বেশি । প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও জেএসসি পরীক্ষায় যারা ভালো করতে পারেনি তাদের ব্যর্থতার দায়ভার শিক্ষার্থীদের চেয়ে শিক্ষক এবং অভিভাবকের কম নয় বরং বহুগুন বেশি । শুরুতেই আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি সে সকল ছোট্ট বন্ধুদেরকে, যারা সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়ে ভবিষ্যতের চলার পথ মসৃণ করেছ এবং পরিবার, শিক্ষক ও আত্মীয়-স্বজনের মুখ উজ্জ্বল করতে পেরেছে । জীবন প্রভাতের এ সফলতা ধারাবাহিকভাবে চলমান রেখে আগামীতেও যেন এ সফলতা তোমাদের জীবনে আলোকবর্তিকার মত কাজ করে তার নিশ্চয়তা তোমাদেরকেই দিতে হবে । স্বান্তনা তাদের জন্য যারা চেষ্টা ও শ্রম দিয়েও আকাঙ্খিত সফলতা অর্জন করতে পারনি । তবে ভেঙ্গে না পরে মনের জোড় নিয়ে আবারও প্রস্তুতি নাও । নিশ্চয়ই অধরা সফলতা তোমাদের কাছে নতি স্বীকার করবেই । ব্যর্থতার উপরে দাঁড়িয়ে সফলতা সিঁড়ি রচনা করাই তো বীরদের কর্ম । কাজেই মনের হতাশ দূর করে আবারও নতুন উদ্যমে প্রস্তুত হও এবং আগামীর দিনটা তোমাদের করে নাও ।
বাংলাদেশের জনসংখ্যার সমতুল্য বিশ্বের অন্য কোন রাষ্ট্রে বোধহয় এত অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী একসাথে পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেনা । উন্নয়নশীল বাংলাদেশের শিক্ষার অগ্রযাত্রা দেখলে সত্যিই বুকটা গর্বে ফুলে-ফেঁপে ওঠে । দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ও পরীক্ষা পদ্ধতিতে কিছুটা বিশৃঙ্খলভাব পরিলক্ষিত হলেও যখন দেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থীর মুখে হাসির ফোয়ার ফুটে ওঠে তখন সব কষ্ট ভূলে যেতে বাধ্য হতে হয় । গত ৩০ ডিসেম্বর যে বয়সের শিক্ষার্থীরা সফলতা পেয়ে আনন্দ উল্লাসে মত্ত হয়েছে ওরা সঠিকভাবে নৈতিকতা বোঝার কথা নয় । ওদেরকে জেষ্ঠ্যরা যা শিক্ষাচ্ছে তাকেই নৈতিক এবং যা নিষেধ করছে তাকেই অনৈতিক বলে শিখছে । বর্তমান শিক্ষা কাঠামো নিয়ে কিছু প্রশ্ন থাকলেও ওদের সফলতায় তার কালিমা লেপন করা আদৌ বুদ্ধিমানের কাজ নয় । আমাদের ব্যর্থতা এবং অযোগ্যতার দায়ভার ওদের কোমল কাঁধে চাপিয়ে ওদের সাফল্যকে ছোট করে দেখার মত নগ্ন মানসিকতা পোষণ করা উচিত নয় । পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস, নকল, পরীক্ষকদের উদরতা কিংবা অন্যকোন চাপে পরীক্ষার খাতা ঠিকমত মূল্যায়ণ করা না গেলে সে দায়ভার সম্পূর্ণই আমাদের রাষ্ট্র যন্ত্রের । বহুমূখী অনৈতিকতা ও অব্যবস্থাপণার কারণে আপাত দৃষ্টিতে ছোট্ট ছোট্ট সোনামনিরা তাদের জীবনের প্রারম্ভে কিছুটা সূফল পেলেও তা স্থায়ীভাবে সমাজের জন্য একটা ক্ষত দৃষ্টি করবে । শিক্ষার্থীদের দ্বারা সৃষ্ট সে ক্ষতের দায়ভার কোন বিচারেই শিক্ষার্থীদের উপর চাপিয়ে দেয়া যাবে না । যে শিশু শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় সফলতা নিয়ে তাদের নিষ্পাপ মূখে হাসি ফুটিয়ে বেড়াচ্ছে সে শিশুদের হাসি যদি তাদের তরুণ ও যৌবন বয়সে অম্লান না থাকে তবে তার সম্পূর্ণ দায়ভার দায়িত্বশীলদেরকেই নিতে হবে । বর্তমান শিশুদেরকে আমরা যেভাবে গড়ব ওরা সেভাবে হতে বাধ্য । চোরা বানাতে চাইলে চোর কিংবা সাধু বানাতে চাইলে সাধুই হবে । শিশু শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত পরিণতি নির্ভর করে দায়িত্বশীলদের অসৎ কিংবা সৎ কর্মকান্ডের উপর । প্রাথমিক স্কুল সমাপনীর একজন শিক্ষার্থী কিংবা জেএসসির একজন পরীক্ষার্থীর হাতে যদি পরীক্ষার পূর্বে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র তুলে দেওয়া হয় তবে সে দায়ভার কার ? দায়িত্বশীলরা তাদের উপর উত্থাপিত অভিযোগকে যতই পাশ কাটিয়ে যেতে চায় না কেন উত্থাপিত অভিযোগ অনেকাংশেই মিথ্যা নয় । সুতরাং শিক্ষা ব্যবস্থায় যতগুলো অনিয়মের প্র্রশ্ন বোদ্ধামহল প্রমাণসহ উপস্থাপন করেছেন সেগুলো যদি সুষ্ঠু সমাধান করতে সক্ষম হয় তবে দেশে শিক্ষা ক্ষেত্রে যে বিপ্লবের ধারার সূচনা হয়েছে তাতে জাতি ও দেশের উন্নতির জন্য শিক্ষিত জনসম্পদই যথেষ্ট হবে । আর যদি এ সমস্যা সামাধানে দায়িত্বশীলদের উদাসীনতার কারণে রাষ্ট্র ব্যর্থ হয় তবে দেশটা অচিরেই অদক্ষ জনতার ভারে বিশ্ব মানচিত্রে ব্যর্থদের কাতারে শামিল হবে ।
শিক্ষার মান কতটুকু নিশ্চিত হয়েছে তা এড়িয়ে শিক্ষার হারের অগ্রগতির দিকে তাকালে ভালোই লাগে । দায়িত্বশীলরা যদি সঠিক দিক নির্দেশনা ও অপরাধীদের ক্ষেত্রে কঠোরতা পালন করে শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে পারে তবে দেশের অগ্রগতি রুখবে কে ? সদ্য প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, দেশের সর্ব বৃহৎ পাবলিক পরীক্ষা অর্থ্যাৎ প্রাথমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ২৯ লাখ ৪৯ হাজার ৭৫৭ জন শিক্ষার্থী । যার মধ্যে ২৮ লাখ ৮৩ হাজার ৩৭৬ জন শিক্ষার্থী পাস করেছে । পাসের হার ৯৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ । পিএসসি ও এবতেদায়ী পরীক্ষায় মোট ২ লাখ ২৪ হাজার ৫১১ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ অর্জন করেছে । অপরদিকে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় ২০ লাখ ৪১ হাজার ৪৭১ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে ১৮ লাখ ৪৫ হাজার ৭৩২ জন শিক্ষার্থী পাস করেছে । পাসের হার ৯০ দশমিক ৪৯ শতাংশ । এর মধ্যে জিপিএ-৫ অর্জন করেছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ২৩৫ জন । প্রকাশিত ফলাফলে সরকার, শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকের অনেকেই খুশি । উল্টো কথাও বলছে কেউ কেউ । শিক্ষাবিশেষজ্ঞরা এ ফলাফলকে ধারাবাহিক রেখে শিক্ষার যথাযথ মান নিশ্চিত করতেও পরামর্শ দিয়েছেন । গত ৭ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া জেএসসি ও সমমান এবং ২৩ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়া দু’টো পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল একই দিনে প্রকাশিত হওয়ায় বিদায়ী বছরের শেষ এসে দেশে আনন্দের বন্যা বয়েছে । আনন্দ ভাগাভাগি এবং মিষ্টি মূখ করতে গিয়ে আনন্দে ভাটা না পড়লেও মিষ্টির দোকানের মিষ্টি ঠিকই ফুড়িয়ে গিয়েছিল । ৩০ ডিসেম্বর দেশে যে আনন্দঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল তা বিশ্বে সত্যিই বিরল । এত অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকের এক সময়ে আনন্দ প্রকাশ করার দৃশ্য অন্য কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে বলে বিশ্বাস হয় না ।
জেএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নাই কিন্তু দেশব্যাপী এভাবে পিএসসি পরীক্ষা গ্রহনের যৌক্তিকতা কতটুকু ? পিএসসি পরীক্ষার নামে শিশুর উপর মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছে নাতো ? ৯-১০ বছরের একটি ফুটফুটে শিশু রাজ্যের চাপ মাথায় নিয়ে জীবনের প্রথম পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে । এই ছোট্ট বয়সের শিশুকে এত বেশি মানসিক চাপ দেয়া কি আদৌ উচিত হচ্ছে ? এ বয়সে শিশুর ভবিষ্যত চিন্তা কিংবা ভালো রেজাল্টের গুরুত্ব বোঝার কথা নয় । রাষ্ট্রের নির্দেশে শিক্ষক এবং অভিভাবক মিলে শিশুকে জোড় করে ভালো রেজাল্ট প্রাপ্তির জন্য তাকে বাধ্য করা হয় । তবুও সমস্যা ছিল না যদি রেজাল্টের প্রভাব শিশুর মানসিক বৃদ্ধিতে বাধার সৃষ্টি না করত । পিএসসিতে যখন একটি শিশু খারাপ রেজাল্ট করে তখন নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস স্বাভাবিকভাবেই ভেঙ্গে যায় । বর্তমান রেজাল্ট বিপ্লবের সময় প্রতিটি অভিভাবক কামনা করেন তার সন্তানটি গোল্ডেন জিপিএ-৫ কিংবা সাধারণ জিপিএ-৫ অর্জন করুন । অভিভাবকের এ উচ্চ আকাঙ্খার কাছে শিশুর ক্ষমতা ও দক্ষতার মূল্য একেবারেই উপেক্ষিত থাকে । কোন কারণে যদি সন্তানটি জিপিএ-৪ কিংবা এর কম-বেশি পায় তবে বেশিরভাগ অভিভাবকই মন খারাপ করেন । সচেতন অভিভাবক হলে তাদের মনের অবস্থার সবটুকু শিশু বুঝতে পারে না এবং এতে শিশু মানসিকভাবেও খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়না কিন্তু এদেশে সচেতন অভিভাবকরে সংখ্যা কত ? অন্যদিকে পরীক্ষায় যেভাবেই হোক ভালো ফলাফল লাভের কিছু শর্ট-কার্ট পথ অাবিস্কার হওয়ায় অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী খুব ভালো ফলাফল করে বসে । শিক্ষার প্রকৃত অর্থ বোঝার আগেই এ ফলাফল তাকে আত্মবিশ্বাসের উচ্চ মাত্রা পৌঁছে দেয়ার কারণে ভবিষ্যতেও সে তার প্রস্তুতি ও শ্রমের চেয়ে যখন বেশি আকাঙ্খা করে পূর্বের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারবে না তখন স্বাভাবিকভাবেই তার মধ্যে হতাশ ভর করবে । সর্বশেষ পিএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পরে একজন সচেতন অভিভাবকে দেখলাম তার সন্তানের ফলাফল নিয়ে কিছুটা উদ্যেগ প্রকাশ করেছেন । সন্তান জিপিএ-৫ পেলেও তার বাবার ধারণা সে জিপিএ-৫ পাওয়ার মত পরীক্ষা দেয়নি । অভিভাবকটির মতে, তার সন্তানের জিপিএ-৫ পাওয়ার ক্ষমতা আছে কিন্তু পিএসসিতে সে যেভাবে পরীক্ষা দিয়েছে এবং প্রথম শ্রেণী থেকে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত তার যে রেজাল্ট তাতে সে কোন অবস্থাতেই জিপিএ-৫ পেতে পারেনা । তাকে যে জিপিএ-৫ দেওয়া হয়েছে তাতে অভিভাবক মনে করছে তার সন্তানের ভবিষ্যত শিক্ষা জীবনে এর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে । জীবনের একেবারে শুরুতে কোমল শিক্ষার্থীদেরেকে একটি জাতীয় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করে হীতে বিপরীত যেন না হয়ে যায় সেজন্য পিএসসি পরীক্ষা গ্রহনের যৌক্তিকতা নিয়ে গভীরভাবে ভেবে দেখা দরকার বলেই দেশের সচেতন মহলে বৃহৎ অংশ মনে করে ।
রাজু আহমেদ । কলাম লেখক ।
[email protected]
২| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১৬
আমিনুর রহমান বলেছেন:
আপনার বক্তব্যের সাথে সহমত।
৩| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২১
সুমন কর বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন। সহমত।
৪| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৩৫
কালীদাস বলেছেন: আগে এসএসসি থেকে শুরু হত এপ্লাসের টর্নেডো, এখন আরেকটু আগিয়ে নিয়ে আসছে আরকি। বালের জিপিএ ফাইভ!
৫| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৪৯
বেদুইন জাহিদ বলেছেন: বর্তমানে এই শিশুদের জন্য খারাপই লাগে। এদের শৈশব গুলো কেমন জানি যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে
৬| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৩৮
যবড়জং বলেছেন: সহমত
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:৫৩
অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: আমি কোন যৌক্তিকতা দেখি না। ধন্যবাদ ।
হ্যাপ্পি নিউ ইয়ার