নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কাগজে-কলমে বাংলাদেশে বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা বিদ্যমান । তবে বাস্তবতায় দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া এখনও সম্ভব হয়নি । স্বাধীনতার পর থেকেই দেশের রাজনৈতিক দলগুলো আঁকাবাঁকা পথ পাড়ি দিলেও মূলত সব দলগুলো ভাগ হয়ে দেশের দু’টো বৃহত্তর রাজনৈতিক দলে মিলিত হয়েছে । সাধারণ শ্রেণীর সমর্থনও দু’টো বৃহৎ দলের বাইরে খুব বেশি যায়নি । উত্তরাধিকার সূত্রেই আওয়ামীলীগ এবং বিএনপি নির্দিষ্ট সংখ্যক এবং স্থায়ী জনসমর্থন পেয়েছে । যা সময়ের বিবর্তনে দু’টো দলকেই ক্ষমতায় তুলতে অনবদ্য ভূমিকা পালন করেছে । আওয়ামীলীগ এবং বিএনপি ছাড়া দেশের নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সাবেক স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদ সৃষ্ট বর্তমান সংসদের বিরোধীদল জাতীয় পার্টি এবং বাংলাদেশ জামাআত ইসলামী ভোটারের সমর্থন বিবেচনায় তৃতীয় এবং চতুর্থ স্থানে রয়েছে । যদিও ভোটার সমর্থনের বিবেচনায় এ দু’দল আওয়ামীলীগ কিংবা বিএনপির ধারে কাছেও নয় তবুও বৃহৎ রাজনৈতিক দল দু’টোর পরস্পরের প্রতি হিংসা-প্রতিহিংসার সুযোগ নিয়ে দিন দিন এরা জনগণের আপন হচ্ছে । তারপরেও যে হুট করে আওয়ামীলীগ এবং বিএনপিকে টপকে এ দু’টো দল নিকট ভবিষ্যতে শাসন ক্ষমতায় উঠে আসবে তেমন কোন সম্ভাবনা নাই তবে দৈব কিছু ঘটলে তার দায়ভার কে নেবে ? নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এইচএম এরশাদের জাতীয় পার্টি আওয়ামীলীগের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে এবং ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে জামাআতে ইসলাম বিএনপির সাথে জোটবদ্ধ রয়েছে । দশম জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি ও তাদের জোটবদ্ধ দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহন না করায় জাতীয় পার্টি সরকারের বিরোধীদল হিসেবে নির্বাচন করে সংসদেরও বিরোধীদলে পরিণত হয় ও ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় জাতীয় পার্টির স্রষ্টা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দুত মনোনীত এবং বিরোধীদলের একাধিক সাংসদ সরকারের ও দেশের মন্ত্রী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন । দেশবাসীও বিস্মিত হয়ে উপভোগ করে, ক্ষমতাশীন দল এবং বিরোধীদলের মধ্যকার রাজনৈতিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক । প্রচলিত গতানুগতিক ধারা থেকে বের হয়ে দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রতিষ্ঠিত হয় বিরল নজির । রাজনীতিতে এমন ধারা যদি বজায় থাকে তবে বাংলাদেশের গণতন্ত্রই হবে বিশ্বের সকল দেশের কাছে অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় গণতান্ত্রিক ধারা । তবে কিছু কথা আছে !!!!
বিএনপির নির্বাচনের ট্রেন মিস করায় হোক নতুবা জাতীয় পার্টির ইতিহাস গড়া উপলক্ষ্যেই হোক দেশে এই প্রথম গণতান্ত্রিক কোন নির্বাচনে বৃহৎ দলকে মাড়িয়ে তৃতীয় কোন রাজনৈতিক দলের উত্থানের সুযোগ হয়েছে । দেশ এতে কতটুকু উপকৃত হয়েছে তা পুরোপুরি এখনও উপলব্ধি করা সম্ভব হয়নি । তবে দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচিত সরকারের পূর্ণ একবছর পূর্তিতেই বেঁধেছে বিপত্তি । দু’বারের পূর্ণ মেয়াদী এবং একবারের খন্ডকালীন সাবেক ক্ষমতাশীন বিএনপি কর্তৃক সরকারকে পুরো টেক্কা দেয়ার মানসিকতা নিয়ে টানা অবরোধ এবং খন্ড খন্ড হরতাল আহ্বান করে দেশকে মারাত্মক ধাক্বা দিয়েছে । বিএনপির আন্দোলনের পক্ষে-বিপক্ষে জোড়ালে যুক্তি-তর্ক থাকায় আপাতত পক্ষে কিংবা বিপক্ষে বলার তেমন সুযোগ পাচ্ছি না । তবুও ক্ষনিকের জন্যও যদি নিজেকে আওয়ামীলীগ ভাবী তবে বিএনপির সব কর্মকান্ডতে দোষ দেখতে পাই । সংবিধান লঙ্গন করার চেয়ে বড় দোষ আর কী হতে পারে ? মুহুর্তের জন্য যদি নিজেকে বিএপির ব্যানারে ভাবী তবে বিএপির আন্দোলনের পক্ষেই সব যুক্তি দেখছি । ইতিহাস বলে. ’৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ’৬৯ এর গণঅভ্যূত্থান, ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা লাভ কিংবা ’৯০ এর স্বৈরশাসন বিরোধী আন্দোলন এর মত যুগান্তকারী কোন অর্জনের উপলক্ষ্যই তৈরি হত না যদি সে সময় সংবিধান মানা হত । এত সব যুক্তি-তর্কের পরে আমি কার পক্ষে থাকব কিংবা থাকবনা (যদিও আমার থাকা না থাকায় কিছু যায় আসে না) সেখানে একটু পরেই ফিরছি । বিএনপি এবং আওয়ামীলীগের মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব প্রায় চিরন্তন ধরে নেয়া যায় । অতীতে বারবার দেখা গেছে আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে কোন দাবী কিংবা কাজকে জনগণের জন্য উপকারী বলে ঘোষিত হলে বিএনপি তার উল্টো যুক্তি দিয়েছে কিংবা বিএনপির পক্ষ থেকে যে দাবী তোলা হয়েছে আওয়ামীলীগ তার বিপক্ষে অবস্থান করেছে । কোন দলেরটা সত্যযুক্ত ছিল কিংবা সত্যমূক্ত ছিল তার ধারে-কাছে যাওয়ার খুব বেশি বিচার বিবেচনা করার সুযোগ দেয়া হয়নি । বিএনপি যেটা বলেছে আওয়ামীলীগকে ওটার উল্টো কিংবা আওয়ামীলীগ যেটা বলেছে বিএনপিকে সেটার বিরুদ্ধ কিছু বলতে হবে বলেই বো্ধ হয় দু’দলের পাক্কা পণ ছিল । কাজটা যেহেতু রাজনীতি, কাজেই এখানে একদল অন্যদলের সমালোচনা করে জনসমর্থন আদায় করবে এবং এটা দোষেরও নয় কিন্তু দু’দল এমনভাবে জনসমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেছে কিংবা এখনও করছে যাতে কখনও কখনও মান্যবর ব্যক্তিদেরকে নিয়েও একেবারে সাধারণ শ্রেণীরা হাসাহাসি করার সুযোগ পেয়েছে এবং পাচ্ছে । দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল দু’টোর দূরত্বে সবচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছে তৃতীয় কোন রাজনৈতিক দল । তাও মন্দ কীসে যদি তৃতীয় কোন রাজনৈতিক দলের উত্থান ঘটে দেশের রাজনীতিতে বিরোধীদলের সাংসদ যেমন মন্ত্রী হওয়ার সুযোগ পায় তেমনি কোন নতুন ধারা সৃষ্টি হলে ? বরং ভালোই হবে ।
রাজনীতির মার-প্যাচের পন্ডিত না হওয়ায় আমার অবস্থান সাধারণের দলে । আমি যেমন সংবিধানের লঙ্ঘন চাইনা তেমনি অন্যায়ভাবে সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হোক সেটাও কামনা করি না । দাবীটি শুনলে একপেশে মনে হয় । তবে তেমনটা ভাবার সুযোগ নাই । বাংলাদেশের স্বাধীনতার বয়স মাত্র ৪৪ বছর অথচ দেশের সংবিধান সংশোধন হয়েছে ১৬ বার ! আমেরিকা স্বাধীন হয়েছে ২৩৯ বছরেরও কিছু বেশি সময় আগে অথচ তাদের সংবিধান সংশো্ধনের সংখ্যা ২৬ বারে অবস্থান করছে । আমাদের সংবিধান ১৬ বার সংশোধন করা হলেও এর কতবার ব্যক্তি কিংবা দলীয় স্বার্থে এবং কতবার জাতীয় সার্থে সংশোধন করা হয়েছে তা হিসেব করা আবশ্যক । সংবিধান সংশোধনের ধারানুযায়ী, সংসদীয় আসনের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসন কোন দল এককভাবে অর্জন করলে তারা আইনগতভাবে সংবিধান সংশোধন করার এখতিয়ার পায় । আমাদের বৃহৎ রাজনৈতিক দল দু’টো ক্ষমতায় গিয়ে প্রতিবার এত ভালো(!) কাজ করে যে কারণে মাত্র পাঁচ বছরের মেয়াদপূর্ণ করে নির্বাচনে অংশগ্রহন করে ৩০০ আসনের মধ্যে ২০-২৫টি আসন পেতেই জান যায় যায় অবস্থা । এর ফলও একেবারে খারাপ হয়না ! প্রতিটি নির্বাচনের পরেই শাসকদল ইচ্ছামত সংবিধান পরিবর্ধন ও পরিমার্জন করার সুযোগ পায় । সাধারণ নাগরিক হিসেবে আশা করি, দেশের বৃহৎ দু’টো রাজনৈতিক দলের মধ্যে এমন প্রতিযোগিতা হোক যাতে ক্ষমতার পালাবদলের সাথে সংবিধানের ভাগ্যও বদলে না যায় । দেশের সংবিধান প্রণয়নের সময় এতটা নাজুকভাবে তৈরি করা হয়নি যে প্রতি পাঁচ বছর কিংবা পাঁচ বছরেই একাধিকবার এটায় সংশোধনী আনতে হবে ।
যারাই দেশের রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত, হোক তারা ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ লাভ করুক কিংবা না করুক, তাদের দায়িত্ব যারা পরোক্ষভাবে রাজনীতির সাথে জড়িত কিংবা একেবারেই জড়িত নয় তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা । কিন্তু নিরাপত্তা পাচ্ছি কোথায় ? চলতি বছরের জানুয়ারী মাসের ৬ তারিখ থেকে টানা অবরোধে সৃষ্ট অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ৪০ জনের অধিক মানুষের প্রাণ দিতে হয়েছে । আহত হয়েছে হাজারের বেশি । জীবনের ক্ষতির সাথে যেহেতু সম্পদের ক্ষতির তুলনা চলে না তাই ধ্বংস হওয়া সম্পদের কথা নাই বা উল্লেখ করলাম । এ যাবৎ যারা সহিংসতায় নিহত হয়েছে তার দু’একজন ছাড়া সবাই সাধারণ মানুষ । যাদের সাথে রাজনীতির ন্যূণতম কোন সম্পর্ক নাই । এমন নিরীহ মানুষের জীবন দিতে হবে কেন ? মনের কষ্টে বলতে হচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলোর একে-অপরের বিরুদ্ধে লড়াই, সুতরাং মরতেই যদি হয় তারা মরুক এবং তাতে কিছু যায় আসে না কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি লেখার অধিকার কে দিয়েছে ? ঢাকা মেডিকেলসহ দেশের বড় বড় মেডিকেলগুলোর বার্ণ ইউনিট শ্মশানে পরিণত হয়েছে । শ্মশান থেকে যেমন লাশ পোড়া গন্ধ বের হয় তেমিন এসব স্থান থেকে জীবন্ত মানুষ পোড়া গন্ধ ঠিকরে বেরুচ্ছে । হত-আহত মানুষদের স্বজনদের আহাজারী আর আর্তনাদের ধ্বনি কেবল প্রলম্বিত হচ্ছে । চিকিৎসার খরচ জোগাড়, পরিবারের সদস্যদের আহারে জোটানোর কোন ব্যবস্থা নাই । যারা বেঁচে আছে তারা মৃতপ্রায় । না খেয়ে কতদিন বাঁচা যাবে ? টানা অবরোধ ও হরতালের বলি হচ্ছে সাধারণ মানুষ । পরিবহন ব্যবস্থা প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য প্রতিনিয়ত হু হু করে বাড়ছে । শিক্ষার্থীদের জীবনে নেমে এসেছে অমানিশার অন্ধকার । সেশনজট দীর্ঘ থেকে দীর্ঘায়িত হচ্ছে । বিশেষ করে ফেব্রুয়ারীর ২ তারিখ থেকে শুরু হতে যাওয়া এসএসসি ও সমমানের ১৫ লাখ পরীক্ষার্থীর ভাগ্যে কি আছে তা স্রষ্টাই ভালো জানেন । দেশের শিল্পখাত প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে । এভাবে আর কিছুদিন চললে সোনার দেশ ছাইতে পরিণত হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না ।
এ সকল ঘটনা-দূর্ঘটনার জন্য দায়ী কি আওয়ামীলীগ নাকি বিএনপি তা দু’দলকেই নির্ধারণ করতে হবে । সবচেয়ে বড় দায়িত্ব সরকারের । তারা যেহেতু রাষ্ট্রের শাসক সেহেতু সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বিধানে হয় তাদেরকে বিএনপির দাবী মেনে সমঝোতার টেবিলে বসতে হবে নয়ত কঠোর হস্তে বিএনপিসহ এর সমর্থকদের দমন করতে হবে । গণতন্ত্র ও দেশের স্বার্থে তারা কোন পথ বেছে নেবে সেটা একান্তই তাদের সিদ্ধান্ত কিন্তু সাধারণ মানুষকে বাঁচাতে হবে । দু’পথেই সাধারণ মানুষকে বাঁচানো সম্ভব তবে সরকার কোন পথ ধরবেন সেটা একান্তই তাদের দলীয় ব্যাপার । তবুও উত্তর-পূর্ব ভেবে সিদ্ধান্ত নেয়া আবশ্যক । দেশ ও জাতির জন্য যেটা কল্যানের হবে সে পথেই এগুনো উচিত । দু’টো দলের লড়াইয়ে যেভাবে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে রাখা হয়েছে এ থেকে মুক্তির রাস্তার পথ না খুজলে গণ-বিস্ফোরণ নিশ্চিত । যে বিস্ফোরণ নতুন রাজনৈতিক ধারার সূচনা করলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবেনা । দু’টো দলের জনমসর্থনে দিন দিন যেভাবে ভাটা পড়ছে তাতে ’৯৬ এ যেমন বিএনপিকে উচ্ছেদ করার জন্য বর্তমান চিরশত্রু আওয়ামীলীগ ও জামাআতে ইসলামী জোটবদ্ধ হয়েছিল তেমনি বর্তমান চিরশত্রু বিএনপি ও আওয়ামীলীগকে ভবিষ্যতে কোন রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হওয়ার দরকার পরতে পারে । এখন পর্যন্ত দেশবাসী রাজনীতির আদি ধারায় খুশি কাজেই পুরাতনদের উচিত দেশবাসীর আস্থার সে মান রাখা নয়ত চিত্র বদলের যাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে । শুধু কাগজে-কলমের সোনার দেশ নয় বর বাস্তব সোনার বাংলাদেশকেও সোনার বাংলাদেশ হিসেবে থাকতে দিন । দু’টো রাজনৈতিক দলের দ্বন্দ্বে দেশের শান্তি যদি বিঘ্নিত হয় তবে ভবিষ্যতে সৃ্ষ্ট বর্তমানের ইতিহাস দায়ীদের ক্ষমা করবে না ।
রাজু আহমেদ । কলামিষ্ট ।
[email protected]
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:৩৯
নিলু বলেছেন: ইতিহাস থেকে ইতিহাস , যাই হউক , এবার খেলা শুরু হয়েছে জয় / পরাজয়ের , সুতারাং গোল কেউ খাবে , আবার কেউ গোল দিবে , তারপর হতে পারে সমাধান বলে মনে করি , ধন্যবাদ