![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তাবৎ বিশ্বের (বিশেষত উন্নত বিশ্বের) মানুষ যখন এতটুকু শান্তির জন্য হা-পিত্যেশ করে মরেছে, সব বাদ-মতবাদের স্বাদ চোখে চোখে- পরিত্যাগ করেছে; ধনতন্ত্র, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র কোন তন্ত্রই পূর্ণ জীবন মন্ত্রে পরিণত হতে পারছে না। হতাশার কবলে নিমজ্জিত শান্তিকামী সত্য-সন্ধানী বিবেকবান মানুষেরা যখন ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নিতে ক্রমশ এগিয়ে আসছে, ইসলামকে জানার বুঝার আগ্রহ ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে, ইসলামী-শিক্ষা ও তাহযিব তামাদ্দুনকে আত্মস্থ করার সযতœ প্রয়াস পরিলক্ষিত হচ্ছে, তখন আমাদের এখানে তথাকথিত বুদ্ধিজীবী পর্যায়ে দেখা যায় সম্পূর্ণ ভিন্নচিত্র।
ম্যাক্সিজমের প্রায়োগিক জীবনের উদ্ভব, লালন ও বিকাশের কেন্দ্রভূমি রুশ তথা সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকেই একযুগ আগে নির্বাসিত হয়েছে যে সমাজতন্ত্র নামক স্বর্গরাজ্যের; সেই পুরনো বস্তাপঁচা তত্ত্ব দিয়ে এদেশ-সমাজকে স্বর্গ বানানোর দিবা স্বপ্নে বিভোর হয়ে কিছু বুদ্ধিজীবী বাঙালি এখনও চেষ্টা কোশেশ করতে কম যান না। বাস্তবের নিষ্ঠুর কষাঘাতে নাস্তানুবাদ বস্তুবাদীরা সর্বহারাদের মতো সব হারিয়ে বক্তৃতায় আগুন ছড়াচ্ছেন, কলম কামড়িয়ে রক্ত ঝরাচ্ছেন, কাগজ ভরাচ্ছেন আর ধর্ম-নিরপেক্ষতা তথা নাস্তিক্য চিন্তার খোরাক যোগাচ্ছেন-আহারে, রুচি বাড়াচ্ছেন, কার্লমার্ক্সের বাসি সস্ দিয়ে।
আরো কিছু বাঙালি নামের জঞ্জালি ওয়েস্টার্ন কালচারে মস্তিষ্ক ধোলাই করে নাস্তিক, পৌত্তলিক, ইহুদি-খ্রিস্টানদের সুরে সুর মিলিয়ে ইসলামকে, ইসলামী আদর্শ-তাহযিব তামাদ্দুনকে সেকেলে, প্রগতি বিরোধী, মৌলবাদী, সন্ত্রাসবাদী আখ্যা দিয়ে ইসলাম আর মুসলমানদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত কুৎসা রটনা ও বিষোদ্গার করে যাচ্ছে মঞ্চে-ময়দানে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এরা অত্যন্ত নীচ মনোবৃত্তি নিয়ে জঘন্য ভাষায় ইসলামের বিরুদ্ধে বক্তৃতা দিচ্ছে, কালি ঝরাচ্ছে।
অথচ এসব কূপমণ্ডুক, পরের মুখে ঝাল খাওয়া অর্বাচীন তোতা পাখিদের জানা উচিত ছিল অথবা এই জ্ঞান-পাপীদের অবশ্যই জানা আছে- মানুষকে আদিম বর্বরতার অন্ধকার থেকে আলোকোজ্জ্বল পৃথিবীর মুখ দেখিয়েছে ইসলাম। বিশ্বের নিপীড়িত, নির্যাতিত, অধিকার বঞ্চিত মানুষকে মানুষ হিসেবে আত্মপরিচয়ের অধিকার দিয়ে সম্মানিত করেছে ইসলাম।
এই যে এখন ব্যাপক হারে মানুষ লেখাপড়া শিখছে, জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা করছে, স্বাধীনভাবে কথা বলছে, এসবইতো ইসলাম আর মুসলিমদের দান। কেননা ইসলাম-পূর্ব সময়ের এমনকি অনেক ক্ষেত্রে ইসলামের আর্বিভাবের পরেও পৃথিবীর মানচিত্রে মানবগোষ্ঠির ইতিহাসে সবার জন্য শিক্ষা জ্ঞান-বিজ্ঞানের অবাধ চর্চা এমনকি স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকার তথা ব্যক্তি স্বাধীনতা এসব দুর্লভ ছিল।
আজ এখানে যা কিছু ভাল, সুন্দর ও কল্যাণকর সবকিছুই মনে করা হয় ইউরোপের দান। অথচ বলতে গেলে ইউরোপের নিজস্ব বলতে কিছু মেশিনারী যন্ত্রপাতি বাদে উল্লেখযোগ্য তেমন কিছুই নেই। এ কথার সত্যতা তখনি পরিস্ফুট হবে যখন আমরা অভিনিবেশ সহকারে দৃষ্টিপাত করব- আধুনিক সভ্যতার উজান বাঁকে। সেখানে আমরা কী দেখি?
ওরা অসভ্য, আমার্জিত ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন ছিল। ওরা তখন রাষ্ট্র, চার্চ আর ভূস্বামীদের দাসত্ব-শৃঙ্খল এবং অজ্ঞানতার অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। ওদেরকে সভ্যতার আলোক দিয়েছে ইসলাম। ইউরোপকে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্প চর্চার পথ দেখিয়েছে ইসলামের উদার নৈতিক সর্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা আর জ্ঞান চর্চার উন্মুক্ত অনুকূল উৎসাহ ব্যঞ্জক পরিবেশ। সাত শতাধিক বছর পাশাপাশি অবস্থানের ফলে মুসলিমদের জ্ঞান-বিজ্ঞান আর প্রজ্ঞাকে বুঝার সুযোগ পেয়েছে ইউরোপ। উপরন্তু ইউরোপের প্রাচীন জ্ঞান চর্চার নির্যাস (সক্রেটিস- প্লেটো-এরিস্টটল প্রমূখ) যার সাথে তাদের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল তাও আরবী অনুবাদের মাধ্যমে বিবিধভাষ্য টীকা টিপ্পনী ও নব মূল্যায়ন সহযোগে ইউরোপকে উপহার দিয়েছে মুসলিমরা। মুসলিম মনীষীদের জ্ঞান আর প্রজ্ঞার নির্যাসমাখা গ্রন্থরাজি ওরা অধ্যয়ন আত্মস্থ ও ভাষান্তরিত করেছে, নিজেদের জাগতিক- বৈষয়িক উন্নতির জন্য তার প্রয়োগ ঘটিয়ে প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেছে। অনেক ক্ষেত্রে সে জ্ঞান, তত্ত্ব-দর্শনকে নতুন ছাঁচে ঢালাই করে নিজেদের নামে চালিয়ে দিয়েছে।
…আর আমরা বুঝে না বুঝে ঐ সব আওড়িয়ে যাই। গোড়ার কথা জানিনা, গূঢ়তত্ত্ব বুঝি না, নব আবিষ্কারের পথ খুঁজি না। শুধু শুধু পরীক্ষা পাশের জন্য অথবা গণ্ডমূর্খের মাঝে- নিজেদের পাণ্ডিত্য ফলানোর জন্য ঐ সব চেটে-পুটে খাই আর ভক্তি গদগদ কণ্ঠে তাদের গুণকীর্তন করি। কিন্তু তাদের শক্তির মূল উৎসের সন্ধান করি না অথবা পাইনা অথবা আমাদের প্রজ্ঞার চোখে দেখি না, শুধু চর্মচোখে দেখি তাদের নগ্নশ্বেত শুভ্র দেহের চাকচিক্য। তাই ওটাকে সভ্যতা, অগ্রগতি আর আধুনিকতা মনে করে নগ্নতার ও (ধর্মীয়-সামাজিক-পারিবারিক ও নৈতিক) বন্ধন হীনতার চর্চায়-প্রতিযোগিতায় মেতে উঠি। পাশ্চাত্যের জ্ঞান-বিজ্ঞানের গ্রাহক-ধারক-বাহক না হয়ে তাদের নগ্ন কালচারের তল্পিবাহক হয়ে উঠি।
তাই আমাদের মন-মস্তিষ্কে ইসলামের শাশ্বত মূল্যবোধ, গভীর সৌন্দর্যবোধ, আকাশ ছোঁয়া উদারতা, চূড়ান্ত মানবাধিকার আর চিরন্তন মানবিকতার বাণী পৌঁছে না, ক্রিয়া করে না। উল্টো পঙ্কিঁল কূপমন্ডুকতায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ি,ফলে শ্যাম্পেইন-বিয়ারের বুদবুদের ধোঁয়ার নিচে চাপা পড়া নীচ মস্তিষ্কে সত্য, সুন্দর ও শালিনতাকে বিসদৃশ ঠেকে। নৈতিক শৃঙ্খলাকে তখন ব্যক্তি স্বাধীনতার অন্তরায় বা প্রতিবন্ধক মনে হয়। ফলে নিজেদের পাশব বৃত্তির চর্চার সুযোগ সংকীর্ণ হচ্ছে দেখে, ইসলামের বিরুদ্ধে, ইসলামী জীবনাচরণের বিরুদ্ধে মরিয়া হয়ে উঠি। বুদ্ধি যুক্তি আর ভদ্রতায় তখন কুলোয়না বলে আমরা বিবেকের মাথা খেয়ে, কাছা খুলে মাথায় নিয়ে নর্তন-কুর্দন শুরু করে দিই। এমতাবস্থায় আর কোন পরোয়া নেই! কারণ- নেংটার নেই ইজ্জতের ডর!
-এই হল আমাদের পরাশ্রিত পরজীবী কতিপয় মুসলিম নামধারী বাঙালি বুদ্ধিজীবী নামের বুদ্ধি বেপারী-বুদ্ধির ঢেঁকিদের যথা কিঞ্চিৎ নমুনা। যাদের স্বার্থপরতার নিকট লাঞ্চিত হয় পরার্থ; যাদের কাছে পরমার্থের চেয়ে নগদ অর্থের মূল্য অনেক বেশি। এ প্রসঙ্গে পরিশেষে একথাই বলতে পারি: বাংলার এ জমিন যদি বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবা (রা.) ও পরবর্তী যুগের ইসলাম প্রচারক সাধক পুরুষদের পদধুলিতে ধন্য না হতো, বিন কাসিম যদি ভারত বর্ষে পা না দিতেন, মাহমুদ যদি অভিযান না করতেন, ঘুরী যদি সালতানাৎ স্থাপন না করতেন, বখতিয়ার যদি এ দেশে না আসতেন, তবে ওই সব ‘ ম্লেচ্ছ’, ‘অনার্য’, ‘অন্ত্যজ’ শ্রেণীর ‘বাঙ্গাল’রা এখনও নেংটি, ডোমা কিংবা কৌপিন পরে শুদ্রাতি শুদ্র হয়েই তথাকথিত উচ্চ কোটির লোকদের সেবায় জীবন, মান, ধন থেকে নিয়ে কন্য-জায়া পর্যন্ত উৎসর্গ করে স্বর্গলাভে ধন্য হতেন!
কৃতজ্ঞতা আর কাকে বলে? নেমক হারামতো এরই নাম!
©somewhere in net ltd.