![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শুধু গ্যাস কিংবা কয়লা নয়, বাংলাদেশে রয়েছে ইউরেনিয়াম নামের মহামূল্যবান খনিজসম্পদ। ইউরেনিয়াম বাংলাদেশের জ্বালানি সংকট নিরসনে ভূমিকা রাখতে পারে। হতে পারে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম উপায়। দেশে ইউরেনিয়ামের সন্ধান প্রথম পাওয়া যায় ১৯৭৫ সালে মৌলভীবাজারে। এক দশক পর সিলেটের জৈন্তাপুরে এ খনিজ পদার্থের সন্ধান মেলে। ১৯৮৯ সালে ময়মনসিংহের গারো পাহাড় বেষ্টিত সোমেশ্বরী নদীতে এ মূল্যবান খনিজের সন্ধান পাওয়া যায়। বাংলাদেশে ইউরেনিয়াম রয়েছে এটি তিন যুগেরও বেশি সময় আগে জানা গেলেও এর আহরণ এবং ব্যবহার কোনোটিই সহজসাধ্য ছিল না। ইউরেনিয়াম ব্যবহৃত হয় পারমাণবিক জ্বালানির জন্য। বাংলাদেশে এ ধরনের প্রকল্প না থাকায় ইউরেনিয়াম আহরণ ও ব্যবহারের যথাযথ সুযোগই ছিল না। বাংলাদেশ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি পাওয়ায় এ ক্ষেত্রে সম্ভাবনার নতুন দ্বার উšে§াচিত হয়েছে। দেশে পর্যাপ্ত ইউরেনিয়াম আহরণ এবং তা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব হলে সাশ্রয়ী দামে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। দেশ বর্তমানে যে সর্বগ্রাসী জ্বালানি সংকটে ভুগছে তার অবসান ঘটানো সম্ভব হবে। বাংলাদেশে তেল ও গ্যাসের মজুদ অপর্যাপ্ত। এ অবস্থায় জ্বালানি সংকট মোচনে ইউরেনিয়াম আশার আলো দেখাতে পারে। এই মূল্যবান খনিজ রফতানি করেও বিপুল পরিমাণের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। পত্রিকায় প্রকাশিত খবর মারফত জানা গেছে, পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা এবং সিলেট ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে নদীবাহিত বালুতে অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কয়েক প্রকার ভারী খনিজ ও আহরণযোগ্য ইউরেনিয়াম রয়েছে। প্রতিবেদনে প্রাপ্ত তথ্যকে সূত্র ধরে জিএসবি পদ্মা, যমুনার বালুর রাসায়নিক ও খনিজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের জন্য একটি বিশেষ কর্মসূচি হাতে নেয়। এর অধীনে পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার অন্তত ১০টি স্থানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ২০ মিটার গভীরতা থেকে বালুর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। যা দেশে ও বিদেশের গবেষণাগারে বিশ্লেষণ করা হয়। ফলাফলে দেখা গেছে, ওই নদীগুলোর বালুতে আহরণযোগ্য ভারী খনিজ ও রাসায়নিকের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদনের জন্য যেখানে ৭ শতাংশই যথেষ্ট। প্রতি ১ টন বালুতে ১ গ্রাম ইউরেনিয়াম পাওয়া গেলেই বাণিজ্যিকভাবে আহরণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়।
প্রচলিত আইনে বাংলাদেশে প্রাপ্ত ইউরেনিয়াম সরাসরি দেশে ব্যবহারের সুযোগ না থাকলেও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ইউরেনিয়াম উৎপাদন করে বিদেশে রফতানি করে প্রচুর বিদেশি মুদ্রা আহরণের সুযোগ রয়েছে। দেশের পারমাণবিক গবেষণা এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি চাহিদা পূরণে বিনিময়যোগ্য পণ্য হিসেবেও দেশে প্রাপ্ত ইউরেনিয়াম বিশেষ অবদান রাখতে পারে। বাংলাদেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রকল্প পাকিস্তান আমলে গ্রহণ করা হলেও গত অর্ধশত বছরেও তা’ আলোর মুখ দেখেনি। অনেক দেরিতে হলেও পাবনার রূপপুরের পুরনো পারমাণবিক প্রকল্পটিকে নতুনভাবে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্লান্ট হিসেবে বাস্তবায়নে সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা’ আশাব্যঞ্জক। কিন্তু জ্বালানি আমদানি নির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের চেয়ে দেশীয় সম্ভাবনাময় প্রচলিত ও ভারী খনিজ সম্পদ আহরণের উদ্যোগ গ্রহণ আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশ পেট্রোলিয়াম এবং বহুবিধ ভারী খনিজ সম্পদের উপর নির্ভর করে প্রযুক্তি ও শিল্পায়নের ক্ষেত্রে নিজেদের ভিত মজবুত করতে সক্ষম হয়েছে। কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের অভিজ্ঞতা অর্ধশতাব্দীর বেশি। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মতো আমাদের দেশে পেট্রোলিয়াম ও স্বর্ণের খনি না থাকলেও স্বর্ণের চেয়ে বেশি মূল্যবান খনিজ ইউরেনিয়াম, প্লাটিনামের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। আমি মনে করি, বাংলাদেশের নদী বিধৌত অববাহিকা অঞ্চলের সম্ভাবনাময় দুষ্প্রাপ্য খনিজ পদার্থের বাণিজ্যিক আহরণ নিশ্চিত করা গেলে অনেক আগেই দেশের অর্থনৈতিক চেহারা পাল্টে দেয়া সম্ভব হতো। আর জ্বালানি সংকটের অবসানে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে জোরেশোরে উদ্যোগ নিতে হবে। দেশে ইউরেনিয়াম আহরণ নিশ্চিত করা গেলে সস্তায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুবিধা পাওয়া যাবে ও দেশকে উন্নতির পথে নিয়ে যাওয়া সহজতর হবে।
©somewhere in net ltd.