নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাজনীতির খলীফা

রাকিবুল হাসান ২০১০

আপনাদের খেদমতে আমি আছি ।

রাকিবুল হাসান ২০১০ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের লজ্জায় ডুবিয়ে বিশ্বকে ব্রাজিলের বার্তা

০১ লা জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৪:৩১

উত্সব কিংবা উল্লাসটা যত বিস্ফোরক হওয়ার কথা ছিল, ঠিক ততটা হলো না। রেফারির শেষ বাঁশি বাজার পর নেইমার-ফ্রেডরা উদযাপন করলেন বটে, তাতে ঠিক প্রত্যাশিত বুনো উল্লাসটা থাকল না। সবচেয়ে বেশি আবেগাক্রান্ত মনে হলো কেবল ডেভিড লুইজকে। মারাকানার অদূরবর্তী ক্রাইস্ট দ্য রেডিমার মূর্তিটার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে দুই পাশে দুই হাত ছড়িয়ে দিয়ে যেন প্রার্থনায় নিমগ্ন হলেন। নেইমার দুই পাক সাম্বাও নেচে নিলেন। বাকিরা কাঁধে কাঁধে হাত রেখে বৃত্ত বানিয়ে খানিকক্ষণ ঝাঁপালেন। ব্যাস, শেষ!

অথচ ব্রাজিল খ্যাপাটে কোনো উত্সবে মেতে উঠতেই পারত। ফুটবলবিশ্বকে পাঁচ বছর ধরে শাসন করে আসা স্পেন, ইউরো-বিশ্বকাপ-ইউরোর শিরোপাত্রয়ীর ইতিহাস গড়া স্পেন, অদম্য-অপ্রতিরোধ্য স্পেনকে কাল ব্রাজিল বাধ্য করল তাদের সামনে মাথা নুইয়ে কুর্নিশ করতে। টিকি-টাকার টিকটিক ঘড়িটাকে অচল করে দিয়ে বেয়াড়া নাচন নেচে উঠল জেগো বনিতো। স্পেনকে ৩-০ গোলে হারিয়ে কনফেডারেশনস কাপের হ্যাটট্রিক শিরোপা জিতল ব্রাজিল। ফুটবল বিশ্বকেই দিয়ে রাখল বার্তা, ‘আমরা আবার রাজ্য ফিরে পেতে প্রস্তুত!’

ঘুম আর পিঁচুটি লেপটে থাকা চোখে যাঁরা দেরিতে টিভি খুলে বসেছেন, কিংবা যাঁরা খেলাই দেখেননি, এইমাত্র জানলেন ম্যাচের ফল; চোখ কচলে দুইবার তাকাতে বাধ্য হবেন নিশ্চিত। কয়েক বছর ধরে ফুটবলকেই নতুন করে সংজ্ঞায়িত করা স্পেনকে রীতিমতো লজ্জায় ডুবিয়ে বিশ্বকাপের মহড়া টুর্নামেন্ট জিতল ব্রাজিল। স্পেনের রাতটা আরও বিষাদময় করে দিল ৫৫ মিনিটে সার্জিও রামোসের পেনাল্টি মিস, ৬৭ মিনিটে নিজের নতুন বার্সা সতীর্থ নেইমারকে বাজে ফাউল করে, দর্শক আসনে শাকিরাকে বিমর্ষ করে দিয়ে সরাসরি লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়া জেরার্ড পিকে।

জোড়া গোল করে ফাইনালের নায়ক বনে গেলেন ফ্রেড। এক গোল করে এবং ফ্রেডের দুটো গোলেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অবদান রেখে টুর্নামেন্টটাকে সত্যিকার অর্থেই নেইমারময় করে তুললেন ব্রাজিল ফুটবলের নবজাগরণের নতুন দূত, অবিশ্বাস্য লাগে ছেলেটার বয়স মাত্র একুশ!

এই মারাকানাতেই সর্বশেষ ফিফা আয়োজিত কোনো টুর্নামেন্টে ব্রাজিল ডুবে গিয়েছিল হতাশার গাঢ় অন্ধকারে। আলসিদেস ঘিঘিয়া নামের এক উরুগুইয়ান ‘ঘাতক’ স্বপ্নটা খুন করে দিয়েছিল ব্রাজিলের। ১৯৫০ বিশ্বকাপের সেই দুঃস্মৃতির অনেকটাই মাটি চাপা দিল ব্রাজিল। বাকি যেটুকু থাকল, সেটিও ২০১৪ বিশ্বকাপে ধুয়ে-মুছে ফেলবে নিশ্চিত। খুব বেশি দিন সময় পাননি, কিন্তু এরই মধ্যে তরুণতর এই দলটাকে সাজানো-গোছানো সংসার বানিয়ে ফেলেছেন লুইস ফেলিপে স্কলারি।

১৯৫০ বিশ্বকাপের স্মৃতিটা কাল আরও একভাবে ফিরে আসতে চাইল। সেবার মারাকানাতেই ব্রাজিলের কাছে ৬-১ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছিল স্পেন। যেটি তাদের ইতিহাসেরই অন্যতম বড় পরাজয়। প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে ২০১০ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচের পর থেকেই অপরাজিত, ম্যাচের সংখ্যায় আগের টানা ২৯ লড়াইয়ে হারের স্বাদ না-পাওয়া সেই স্পেনই কিনা কাল পড়তে যাচ্ছিল এমনই এক লজ্জায়! স্পেনকে ব্রাজিল মনে করিয়ে দিল, তাদের জার্সিতে একটাই তারকা আঁকা, কিন্তু পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নের প্রতীক হিসেবে হলুদ জার্সিতে শোভা পাচ্ছে পাঁচ-পাঁচটি তারা। ফুটবলের আসল সম্রাট তো ব্রাজিলই।

ব্রাজিল রূপকথার শুরুটা একেবারে ম্যাচের দেড় মিনিটের মাথায়। ফেনোমেনন রোনালদোর স্মৃতি উসকে দেওয়া ফ্রেডের এক গোলে। ভূপাতিত ফ্রেড মাটিতে শুয়ে থেকেই ওই অবস্থাতেই যে শটটা নিলেন, বিশ্বের এক নম্বর গোলপ্রহরী ইকার ক্যাসিয়াসের কিছুই করার থাকল না।

শুরুতেই এভাবে গোল খেয়ে স্পেন যেন হকচকিয়ে গেল। ব্রাজিলকে পেয়ে বসল গোলের নেশা। মুহুর্মুহু আক্রমণে স্পেনকে ব্যতিব্যস্ত করে তুললেন অস্কার-নেইমার-ফ্রেড। দ্বিতীয় গোলটা ব্রাজিল যেকোনো মুহূর্তেই পেয়ে যাবে, সেটা বোঝাই যাচ্ছিল। ব্রাজিলের সেই অপেক্ষা ফুরাল প্রথমার্ধের শেষ মাথায়। অস্কারের দুর্দান্ত পাসে বক্সের বাঁ প্রান্ত থেকে বাঁ পায়ে যে শটটা নিলেন নেইমার, ক্যাসিয়াস তো ক্যাসিয়াস, চীনের প্রাচীরেরও সাধ্য ছিল না তা রোখে।

প্রথমার্ধেই ২-০। খেলাটাকে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই খুন করে ফেললেন ফ্রেড। ৪৭ মিনিটে করলেন টুর্নামেন্টে নিজের পঞ্চম গোলটি। ৫৫ মিনিটে রামোসের সেই পেনাল্টি মিসের পর থেকে ম্যাচটা এক রকম পানসেই হয়ে যায়। বোঝাই যায়, এখন যা হচ্ছে, স্পেনের জন্য সেটা নিজেদের শেষ সম্ভ্রমটুকু রক্ষার চেষ্টা, ব্রাজিলের জন্য উত্সবের অপেক্ষা। শেষ দিকে পেদ্রো ও ডেভিড ভিয়ার দুটো দুর্দান্ত প্রচেষ্টা অবশ্য নিষ্ফল করেছেন ‘সম্রাট’ সিজার। প্রথমার্ধের শেষ দিকে পেদ্রোর শটে গোলমুখী বলটাকে গোললাইনের কাছ থেকে অবিশ্বাস্যভাবে সেভ করেছেন লুইজও। এই ব্রাজিল শুধু আক্রমণেই ক্ষুরধার নয়, রক্ষণেও অটল-অটুট!

এ রাতে ব্রাজিলের তরফ থেকে একটা জিনিসই কেবল ঠিকঠাক হয়নি—দর্শক সারিতে মেক্সিকান ওয়েভ তৈরির চেষ্টা। অসুবিধা নেই, নিজেদের শাণিয়ে নিতে এক বছর সময় তো পেয়ে যাচ্ছে ব্রাজিল। আসল উত্সবটাও না হয় ২০১৪ সালের ১৩ জুলাইয়েই হবে, মারাকানার ফাইনালেই!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.