![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার বয়স একুশ পেরিয়ে বাইশ ছুঁই ছুঁই করছে। কিন্তু আমার কোনো ভালোবাসা নেই। তাই অনেকে হাফ লেড়িস বলে ডাকে।
এই অপবাদ থেকে কাটিয়ে উঠার জন্য ডজন খানেক প্রেম করার প্রত্যয় নিয়ে অগত্য যাত্রা শুরু করলাম। সেই সুবাদে অনার্সের প্রথম ক্লাসে অপ্সরীর সঙ্গে আমার পরিচয়। একদিন ক্লাসে ঢুকতে তাকে টাচ করেছিলাম । তবে চুমোটুমো খাওয়া না জাস্ট হাত ধরা। হাত ধরে আমি অবাক ! বেমালুম ভুলে গেলাম ক্লাসের স্যারের কথা। ভাগ্যিস! ক্লাসে স্যার ছিল না। থাকলে হয়তো সেদিনই কারেক্টার সার্টিফিকেট হাতে ধরিয়ে দিতো। মনের অজান্তে যখন তার দিকে তাকাতাম, তখন দেখতাম অপ্সরী ক্লাসে বেঞ্চের উপর মুখ গম্ভীর করে বসে আছে, আমি ওর চেহারা দেখেই বুঝতাম, এই মেয়ে যাকে ভালবাসবে তাকে স্বার্থহীনভাবে ভালবাসবে। আপাতত তার ভালবাসার লিস্ট থেকে আমি বাদ পড়েছি। এই কথা নিশ্চিত। একটা কথা বলে রাখা দরকার মনে করছি, আমি দেখতে খুব বেশী স্মাট নয়, তবে উল্লেখ করার মতো ক্লাসে আমার চেয়ে সুদর্শন ছাত্র নেই বললে চলে। কিন্তু আমি লক্ষ্য করতাম ভদ্র মেয়েটা মাঝে মাঝে বিনয় মেশানো দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো। আমিও শিহরিত হতাম। ওর চোখে চোখ পড়লে আমি দ্রুত চোখ নামিয়ে ফেলতাম। সে লুকিয়ে হাসে। কাঁচ ভাঙ্গা শব্দের মতো তার হাসি। নারীর হাসি এত সুন্দর যা অপ্সরীকে না দেখলে বিশ্বাস করাটাই দুর্লভ। পরদিন কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সকালে শৈত্য প্রবাহে পুরো পৃথিবীটা অন্ধকার। ভাবলাম কলেজে যাব কি-না ? নাহ! সে দিন ক্লাসে আবু হেনা স্যারের গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস। মিস করা যাবে না। প্রতিদিনের মতো দ্রুত কলেজে গিয়ে পৌঁছলাম। ডিপার্টমেন্টে গিয়ে দেখি কোনো স্যার আসেনি। ক্লাসের দিকে তাকাতে আমি চিৎপটাং। অপরিচিতা একটা মেয়ে ছেলেদের বেঞ্চে বসে আছে। আমি তাকানোর আগে দেখি মেয়েটি আমার মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। যাকে বলে মেঘ না চাইতে বৃষ্টি। আমি তার বুক বরাবর হাঁটতে শুরু করলাম। একি! মেয়েটি অবাক না হয়ে বরং হাসছে। বুঝলাম মেয়েটি আমার চেয়েও কয়েকগুণ ফাষ্ট। আমি হকচকিত হয়ে গেলাম! এতক্ষণে মনে হচ্ছে পৃথিবীর সমস্ত মাটি আমার পায়ে লেগে আছে। সাহস করে বললাম, এক্সকিউজমি, আপনি কে? ছেলেদের বেঞ্চে কেন বসলেন? ঠোঁট রাঙ্গিয়ে মেয়েটি বললো, বেঞ্চে কোনো ছেলে মেয়ের নাম লিখা নেই । যার যেখানে ইচ্ছা সেখানে বসবে । আমিও হার মানার পাত্র নই । থপাস করে বসে গেলাম মেয়েটির কোল ঘেঁষে । আপনি কি করছেন! কি করছেন! করে মেয়েটি চেঁচিয়ে উঠলো । আমি পাক্বা বলে দিলাম, আপনিতো শিখালেন। এরপর মেয়েটি সরি বলে খানিকটা ভুল স্বীকার করলো। বাহাদুরিটাও ঝেড়ে ফেললো। বললো, আমি কণা। আজ কলেজে নতুন আসছি, তাই বুঝতে পারিনি। খুব বিনয়ের সুরে কণা কথাগুলো বললো । যতক্ষণ কথা বলেছিলে ততক্ষণ মনে হয়েছিল যেন তার কথায় মুক্তা ঝরছে। তার চোখের চাহনি ছিল কি যেন একটা পাওয়ার চাহনি, কাছে টেনে নেওয়ার চাহনি। মুহূর্তের মধ্যে আমার হৃদয় নাড়া দিল। মুখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম, বন্ধুত্ব করতে ইচ্ছে হলো। স্রেফ বন্ধুতা। হৃদস্পন্দনের অস্বাভাবিক গতি। ঘুম এলোনা, সে রাত। শুধু একটাই ভাবনা কণা আর কণা। ক্রমন্বয়ে দুইজনের মাঝে ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠলো। আমি আর কণা এখন অপ্সরীর কাছে চোখের বালি। কণা না আসলে আমি দিঘীর লেকের পাড়ে একা একা ঘুরতাম। একদিন ক্লাসে হেনা স্যার না থাকাতে নির্দিষ্ট সময়ের আগে কলেজ থেকে বেরিয়ে লেকের পাড়ে বসে বসে কণা আর অপ্সরীর কথা ভাবছিলাম। কাকতালীয়ভাবে সেদিন অপ্সরী আমার পাশে বসে আমার হাত ধরে ফেললো। স্মরণ করিয়ে দিলো কলেজের প্রথম স্বাক্ষাতের কথা। অপ্সরীর এই কান্ড দেখে আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। তখন আমি কি করবো বুঝে উঠতে পারিনি। ততক্ষণাৎ চিন্তা করলাম আমার অন্য বন্ধুরা কলেজে (ইন্টারমেডিয়েটে) ভর্তি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেখানে দু-চারটা প্রেম করেছিল আমি সেখানে মাত্র একটা দিয়ে শুরু করার কথা ভাবছি। যে কালে ঠেকেছে একটা মেয়ের সাথে প্রেম করলে হাপ লেড়িস হয়ে থাকতে হবে । কণার কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে তার ভালবাসার ড়াকে সাইঁ দিলাম। অপ্সরী আমাকে প্রতিদিন একটা কথা বলতো, তুমি আমাকে ভুলে যাবে না তো ? আমিও একটাই কথা প্র্যাকটিস করতাম। আমার প্রতি তোমার বিশ্বাস নেই? বিশ্বাস-অবিশ্বাসের প্রশ্নে আমি প্রতিদিন অপ্সরীকে হারিয়ে দিই। আমার এই কথা মালা শুনলে অপ্সরীর অন্যরকম একটা অনুভূতি সৃষ্টি হয়। যে অনুভূতি অপ্সরীর রক্ত কণাকে সব সময় অনুরণিত করে । অপ্সরীর ভালোবাসার ফাঁকে আরো দু-চারটা মানুষ খুঁজতাম। একদিন আর্য সাংস্কৃতি কেন্দ্রে গিয়েছিলাম একটা জরুরি কাজে। সেখানে একটা মেয়েকে দেখে আমি অবাক! বেমালুম ভুলে গেলাম কাজের কথা । ওর দিকে চোখ রেখে হাঁটতে গিয়ে ধাক্কা খেলাম এক বড় আপুর সঙ্গে। ভাগ্যিস সে ছিল আমাদের উপরের ইয়ারের মৌনিকা আপু। পরোক্ষণে চলে আসলাম। নামটি বলতে ভুলে গেছি সে হচেছ সুমাইয়া। পাগল হয়ে গেলাম সুমাইয়াকে দেখে। একদিন কলেজ থেকে বাসায় ফেরার পথে তাকে রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম । কলেজ এপ্রোন দেখে তাকে চিনতে কষ্ট হয়নি। সেও আমাদের কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। সেদিন তার হাবভাব দেখে মনে হলো সে নিঃস্ব। দুনিয়াতে তার কোনো ভালবাসা নেই। তার সামনে দু বার হেঁটেও নজর কাড়তে পারলাম না। তৃতীয় চেষ্টায় সফল মনে হলো সে আমাকেই খুঁজছে। মনে মনে মহাখুশি হলাম। হঠাৎ সে একটি রিক্সায় উঠে চলে গেলো। আমি অপলক দৃষ্টিতে শুধু তার রিক্সার তাকিয়ে রইরাম। অবশেষে ছুটে গেলাম অপ্সরীর কাছে। অপ্সরীকে আমার হৃদস্পন্দনের কথাটি জানিয়ে দিলাম। শুনে অপ্সরীর মুখটা মলিন করে বিষণ্ণতার ভাব নিয়ে কয়েক ফোঁটা অশ্রু ফেলে আমার সামনে থেকে দ্রুত চলে গেলো। পরদিন তার বান্ধবী অহনাকে দিয়ে রক্তাক্ষরে লিখা একটা চিরকুট পাঠিয়ে দিল। লিখা ছিল তুমি আমার প্রথম ভালোবাসা। আমি তোমায় ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি!.. রাফীদ পারলে তোমার সোনারতরীতে আমার জায়গা করে নিও।
আমিও সিদ্ধান্ত নিয়েছি ভ্যালেন্টাইনস ডে তে অপ্সরীকে সত্যি কথাটি জানাবো। তুমিও আমার প্রথম ভালোবাসা । তোমাকে নিয়ে স্বপ্নের জাল বুনবো। বুকের গহীনে পুষে রাখবো ।
©somewhere in net ltd.