নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পাখি আমি আমার কেন মানুষের মত মন.।

রাংরাং পাখি

আমি রাংরাং পাখি , থাকি গাছের মগডালে..

রাংরাং পাখি › বিস্তারিত পোস্টঃ

জিগাতলার রহস্যময় পানওয়ালা

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৩:০৬

কি ভাবে শুরু করব ঠিক বুঝতে পারছিনা, জানিনা আমার কথা আদৌ কেউ বিশ্বাস করবে কিনা । কিন্তু ঘটনাটা আমার অবিশ্বাসী মনে এতটা রেখাপাত করেছে যে সেটা না লিখে পারছিনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনা শেষ করে কর্মজীবনে প্রবেশ করেছি বছর খানেক হল । সেই সুবাদেই আবাসিক হল ছেড়ে জিগাতলাতে বাসা নিয়েছি। অফিস বাসা সব এখানেই। খুবই সাধারন জীবনযাপন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলো বাদে রোজ একই রুটিন। সকাল এগারো থেকে সন্ধ্যা সাতটা অফিস, তারপর রোজই বন্ধুদের সাথে জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন জিয়া চত্বরে বসে চা কফি খেতে খেতে আড্ডা। ঘটনাটা এই জিয়া চত্বর কে নিয়েই। বহুদিন ধরেই একি জায়গাতে বসে আড্ডা দিতে দিতে অনেক মানুষের সাথেই পরিচয়। তো এদেরই একজন হলেন জব্বার মামা। মামা বললাম কারন ভাল নাম জব্বার তালুকদার হলেও আমরা সবাই আসলে ওনাকে জব্বার মামা বলেই ডাকি। চেহারা দেখে বয়স আন্দাজ করা কঠিন, পঁয়ত্রিশ ও হতে পারে আবার পঞ্চাশ ও হতে পারে। শ্যামলা করে শুকনো একটা মানুষ, টেকো মাথা। ভাঙ্গা চাপা, আধপাকা অবিন্যস্ত দাড়ি দেখে সহজেই বোঝা যায় জীবনের কঠোরতা তার বয়স অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছে। ভাল কথা, পেশায় উনি পান বিক্রেতা। আমাদের আড্ডা দেবার সময় প্রায়ই আসতেন পান নিয়ে। তো এভাবেই তার সাথে পরিচয়, এক কথা দুকথা থেকে জানা যে উনার বাড়ি চাঁদপুর, কলেজ পর্যন্ত পড়াশুনাও করেছেন। বাবার মৃত্যুর পর থেকে সংসারের বোঝা টানতে গিয়ে আর পড়াশুনা হয়নি, তবে নিজের ছেলে মেয়েদের পড়াশুনা করাচ্ছেন। সব শুনে বহুবার আমরা সাহায্য করতে চেয়েছি, কিন্তু কখনোই নিতেন না। সময়ের ফেরে আর্থিক অবস্থা খারাপ হলেও আত্মসম্মান ছিল প্রচুর। তাই খাবার অভ্যাস না থাকলেও মাঝে মাঝেই আমরা সবাই পান কিনতাম। এবছর ঈদের দু তিনদিন আগে দেখা, চেহারা দেখেই বুঝলাম খুব কঠিন কোন টানাপোড়েন এ আছেন। কাছে ডেকে ভাল করে জিজ্ঞাসা করলাম, প্রথমটায় কিছুই বলতে চান না । পরে অনেক গড়িমসি করে বললেন যে পারিবারিক প্রয়জনে উনার কিছু টাকা খুবই দরকার, সব মিলিয়ে এগারশো টাকার মত, তাই বাড়িও যাচ্ছেন না। সব শুনে আমরা সবাই মিলে কিছু টাকা উনাকে দিতে চাইলাম, কিন্তু কিছুতেই নিতে চান না। শেষ পর্যন্ত ধার হিসাবে নিতে রাজি হলেন।



তারপর বেশ কিছুদিন আর উনার কথা মনেই ছিল না, দেশের বাড়ি গিয়েছিলাম ঈদ করতে। ফিরে এসে কাজের চাপে বেশ কিছুদিন আড্ডা দিতে যাওয়া হয়নি। ব্যস্ততার জন্য ফোনও করা হয়নি। সপ্তাহ খানেক পর এক রবিবার গেলাম আড্ডা দিতে। তখন সময় খুব বেশি হলে সাড়ে সাতটা মত বাজে। কয়েকদিন ধরেই সময় অসময় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে, আকাশ মেঘে ঢাকা। ওদিকে সপ্তাহের প্রথম দিন, তাই মানুষের ভিড়ও বেশ কম। রিক্সা থেকে নেমে গেট দিয়ে জিয়া চত্বরে ঢুকছি, এমন সময় হঠাত লোডশেডিং। অন্ধকারে কারও একজনের সাথে ধাক্কা খেতে খেতে কোন রকমে সামলে নিয়ে দেখি জব্বার মামা। অন্ধকারে প্রথমটায় ঠিক চিনতে পারিনি । প্রথমটায় কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার হাতে উনার থালা থেকে একটা পান গুঁজে দিয়ে কেমন ভাঙ্গা ফিসফিসে কণ্ঠে বললেন – মামা একটা পান নেন, টাকা লাগবে না । উনার হাতে লেগে আমার হাতে থাকা মানিব্যাগটা পড়ে গিয়েছিল। নিচু হয়ে ব্যাগটা তুলে দেখি উনি নেই। ভাবলাম অন্ধকারে আশেপাশে কোথাও গিয়েছেন, একটু অপেক্ষা করে যখন দেখলাম তার কোন খবর নেই তখন পানটা হাতে নিয়ে আড্ডা স্থলে চলে গেলাম। আরও তিন চারজন আগে থেকেই বসে ছিল। চেয়ারে বসে ইউনুসকে ডেকে এক কাপ চা দিতে বলে পানটা সামনের টেবিলে রেখেছি। পান দেখে সবাই দেখি চুপ, বন্ধু আবিদ বলল – পান কিনলি নাকি ? জবাবে জব্বার মামার ঘটনাটা বলতেই, সবাই কেমন কেঁপে উঠল বলে মনে হল। বন্ধুদের মধ্যে মাহফুজ একটু ভীতু ধরনের, ও বলল – আজ আর চা খেয়ে কাজ নেই , চল উঠে পড়ি । সব দেখে শুনে আমার কেমন সন্দেহ হল, কিন্তু কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই সবাই উঠে গিয়েছে। সেদিন আর চা খাওয়া হয়নি। পরের দিন মাহফুজকে ফোন করে জিজ্ঞেস করতে ও যেটা বলল তাতে দিনের বেলাতেও আমার নিজের গা ও কেমন ছমছম করে উঠল। আমি বাড়ি চলে যাবার একদিন পরেই নাকি জব্বার মামা রাস্তা পার হতে গিয়ে রাইফেলস স্কয়ারের কাছে বাস চাপায় মারা যান। টাকা পয়সার চিন্তা নিয়ে সম্ভবত বেশি চিন্তিত ছিলেন, তাই বেখেয়ালে রাস্তা পার হতে গিয়ে এই দুর্ঘটনা। কিছু পুলিশি ঝামেলা শেষে উনার দেশের বাড়ি থেকে এসে কে নাকি লাশ নিয়ে গেছে। মাহফুজই বলল- বিকালে বাসায় আসিস একটা জিনিস দেখাব। বিকালে ওর বাসায় গেলে ও একটা পান এনে আমাকে দেখাল, সাথে বলল – শুধু তোকেই না,, পান আমাদের আরও কয়েকজন কে দিয়েছে। ওকে নাকি পানটা দিয়েছে রাত সাড়ে দশটার দিকে বাড়ি ফেরার সময়, সেটাও সপ্তাহ দেড়েক আগে। ভয়ে ভয়ে যখন বাসায় ফিরেছে ততক্ষনে ওর গায়ে ভীষণ জ্বর। সুস্থ হতেও নাকি অনেক কাহিনী করতে হয়েছে। পানটা হাতে নিয়ে দেখলাম, কেমন গাঢ় সবুজ রঙ আর ভীষণ সুগন্ধ । আরও অবাক ব্যপার হল যে এই সপ্তাহ দেড়েক পরেও পানটা একটুও শুকিয়ে যায়নি।



তারপর অনেক দিন কেটে গেছে, আমরা এখনো প্রায় প্রতিদিনই আড্ডা দিতে বসি, আমাদের সাথে আর জব্বার মামার দেখা হয়নি। তবে আরও অনেকের কাছেই শুনেছি এখন মাঝে মাঝে ঝড় বৃষ্টির সন্ধ্যায় জব্বার মামাকে পান হাতে দেখা যায়। পান বেচে ঋণের টাকা শোধের আগে যেন তার মুক্তি নেই। ও শেষ কথা, অনেকে পান খেয়েও দেখেছেন, তাদের কথামত সেই পানের স্বাদের নাকি কোন তুলনা চলে না।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৩:৫০

মোঃ আল-আমিন1641 বলেছেন: মানুষের জীবন কেন এমন হয়?

২| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:০৪

কলাবাগান১ বলেছেন: পৃথিবীর মানুষ এখন মংগল গ্রহে রোবোট পাঠাচ্ছে সেখানে আছি আমরা কল্প কাহিনী যেটা প্রমান করার কোন উপায় নাই তাই বিশ্বাস করতে

৩| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:০৮

নিয়েল হিমু বলেছেন: দারুন ছিল গল্প তবে প্লাট ফর্ম পুরোনো । বেশ লাগল ।
অঃটঃ রিপ্লাইয়ে আবার বৈলেন না এইটা গল্প না বাস্তব । মানে আমাকেও গিলাইতে চাইয়েন না পান :P

৪| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:২২

ইমরান সামি ব্লগ বলেছেন: গল্প ভালো লেগেছে।।।

৫| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৩০

নিজাম বলেছেন: এমন অতি প্রাকৃত ঘটনা কখনও কখনও ঘটে থাকে। এর কোন ব্যাখ্যা নেই। দুনিয়াতে রহস্যময় এমন অনেক কিছু আছে।

৬| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৪৯

আমি ব্লগার হইছি! বলেছেন: লে হালুয়া !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.