![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রিয় সন্ত্রাসী,
প্রথমেই দুই আঙ্গুলের শুভেচ্ছা নিবে। কেমন আছ? আশা করি ভালো আছ। শুরুতেই তোমাদেরকে ছিনতাইকারী হিসেবে সম্বধন করতে চেয়েছিলাম কিন্তু তোমাদের কাজ কর্ম এতই সুনিপুণ এবং সূক্ষ্ম হয়ে উঠেছে যে ছোট করে না দেখে বড় হিসেবেই আখ্যায়িত করলাম। এই বিজয় সম্পূর্ণ তোমাদেরই কৃতকর্মের ফল। তোমাদের সাহস, দক্ষতা, লেজুড়বৃত্তি তোমাদেরকে মহান করে তুলেছে। দক্ষতার মাধ্যমে তোমরা এতই ভিআইপি হয়ে উঠেছ যে, আজকাল পত্রিকা খুললেই তোমাদের নাম শিরনামে দেখা যায়। পত্রিকা জুড়ে শুধু তোমাদেরই গুণকীর্তন, আলোচনা আর সমালোচনা। ধন্য তোমাদের কর্ম।
তোমরা আমাদের সাথে আর সহজেই দেখা কর না। একই দেশে বাস করি অথচ মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা যেন ভিনদেশী। এখন তো তোমরা এই বড় ভাইদেরকে ভুলে যাবেই। আজ তোমাদের অনেক টাকা হয়েছে। প্রতিদিন মানুষ খুন করে যেভাবে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছ তাতে মনে হয় দেশটা একদিন তোমাদের হাতের মুঠোই চলে আসবে। আর আমাদের প্রশাসনের যা অবস্থা তাতে তোমাদের মতো আদর্শবান লোক ঘরে ঘরে তৈরি হবে একদিন। অপহরণ, গুম খুন, ছিনতাই, চাঁদা বাজি, টেন্ডার বাজি, ব্যাংক ডাকাতি, প্রশ্নপত্র ফাঁস, দুর্নীতি,মালের সাথে ভেজাল দেওয়া, ঘুষ খাওয়া সবই তোমাদের দক্ষতার পরিচয়। তোমরা বড়ই কৌশলী, বড়ই ছদ্মবেশী।
তোমরা এখন রাস্তা ঘাটে সালাম পাও। মনে রেখ আমরাই তোমাদের মাননীয় শিক্ষক। তোমাদের হাতেখড়ি কিন্তু আমাদের হাত ধরেই। তাই গুরু মারা বিদ্যা শিখেছ বলে এই গুরুদেরকে ভুলে যেও না।
ছোট ভাইরে আমরা ভালো নেই। বাংলাদেশের মানুষ দিনদিন বড়ই শেয়ানা হয়ে উঠছে। আজকাল অনেকেই মানিব্যাগ পকেটে রাখে না। আর কেউ যদি রাখেও বা দু'একশ টাকার বেশি রাখে না। সারা বছর ভাল রোজগার হয় নি। সামনে ঈদকে কেন্দ্র করে তাই আমরা বড়ই ব্যস্ত হয়ে উঠেছি। মানুষ এখন বেতন বোনাস পাবে, মোটা টাকা পকেটে রাখবে। তাই বাস, ট্রেনে ভিড়ের মধ্যে আমরা খুবই সতর্ক। দু'আঙ্গুলের ব্যবসায় আর পেট চলে না রে ভাই। তাই আমরা পাঁচ আঙ্গুলকেই কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি। এতে আমরা সফলও হয়েছি। পাঁচ আঙ্গুল ব্যবহার করে মানুষের পকেট থেকে মোবাইল মেরে দিই। এতে আমাদের খুবই লাভ হয়। কিন্তু দু:খের বিষয় মানুষ ব্যাপারটা বুঝতে পেরে দামি মোবাইল আর পকেটে রাখে না। দামি মোবাইল বাসায় রেখে কমদামি মোবাইল নিয়ে রাস্তা-ঘাটে চলাফেরা করে। এতে করে আমাদের ভাগ্য আকাশে মেঘের ঘনঘটা দেখা দিয়েছে। এতে সংসার চালানো তো দূরের কথা, নিজের গাঁজা-সিগারেটের টাকা যোগাোব কি করে এই নিয়েই হতাশ হয়ে পড়েছি।
মানুষ সচেতন হওয়ার পেছনে মূলত তোমরাই দায়ী। তোমরা কারণে অকারণে অলি-গলি, রাস্তার মোড়ে যেভাবে অস্ত্রের মুখে মানুষকে জিম্মি করে টাকা, মোবাইল, ল্যাপটপ ছিনিয়ে নিচ্ছ তাতে অদূর ভবিষ্যতে আামাদের ভাত মারা যাবে সন্দেহ নেই। দেখ আমরা দু'আঙ্গুলের কর্ম সম্পাদন করলে মানুষ বাসায় গিয়ে অথবা কোনো কিছু কিনতে গিয়ে পকেটে হাত দিয়ে ব্যাপারটা বুঝতে পারে। এতে কিছুক্ষণ গাল মন্দ দিয়ে ব্যাপারটা তারা ভুলে যায়। আবার অনেক সময় প্রেমিক পুরুষ তো তার প্রেমিকাকে রেস্টুরেন্টে খাইয়ে পকেট কাটা গেছে বলে প্রেমিকাকে দিয়েই বিল পরিশোধ করিয়ে নেয়। আবার অনেক সময় বাসের যাত্রীরা আমাদের অজুহাত দেখিয়ে বাস ভাড়ার টাকাটা বেঁচে যায়। কিন্তু তোমরা ঘটনাস্থলেই মানুষকে প্রয়োজনে হত্যা কর। তোমাদের বিবেকে এতটুকু কাজ করে না, যাদেরকে তোমরা হত্যা করছ তাদের বউ-সন্তানদের কি হবে?
তোমরা সন্ত্রাস করে সহজেই ধরা পড়তে চাও না। প্রশাসনের কিছু কিছু কর্মকর্তা এবং কিছু কিছু নেতার আশির্বাদ তোমাদের চির পাথেয়। তোমরা কোনো সময় জেলে গেলেও উপরের টেলিফোনে ক্যামনে জানি ছাড়া পেয়ে যাও। আর কোনো কারণে ধরা পড়লেও রাজনৈতিক দলের কর্মী হয়ে যাও। মাঝে মাঝে তোমাদের পোষাক-আষাক দেখলে মনেই হয় না তোমরা সন্ত্রাসী। ভালই তোমাদের কপাল, বড়ই তোমরা ভাগ্যবান।
আর আমরা ধরা পড়লে এমন গণধোলাই খাই যে, বাপ আর দাদার মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পড়ে। জনগণ গণধোলাই দিয়ে আমাদের মুখের জিওগ্রাফি এমনভাবে পাল্টে দেয় যে, আয়নার সামনে দাঁড়ালে নিজেই নিজেকে চিনতে পারি না। এমন কি বাড়িতে গিয়ে দরজার কড়া নাড়তেই বউ বাইরে এসে বলে "ভাই কে আপনি? কারে চান? ছেলের বাপ বাড়িতে নাই। পরে আসাবেন।" বলো ভাই তখন মনের অবস্থাটা কেমন থাকে। এমন মার খাই যে নিজের বউরা মাঝে মাঝে আমাদেরকে চিনতে পারে না। এমন কি গনধোলাই খাওয়ার সময় কেউ আমাদেরকে সাহায্য করতে আসে না। তবে মাঝে মাঝে পুলিশেরা আমাদেরকে গণ প্যাদানি থেকে বাঁচিয়ে দেয়। মারের মুখে পুলিশ যদি আমাদেরকে উদ্ধার না করতো তাহলে ঘটনাস্থলেই তো আমাদের ভবলীলা সাঙ্গ হতো।
সব শেষে তোমাদেরকে অনুরোধ করলাম, ভাই তোমরা তো সারা বছর অনেক রোজগার কর তাই ঈদকে সামনে রেখে তোমাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড একটুখানি থামাও। মানুষকে নির্ভয়ে বাস, ট্রেনে, ভিড়ের মেধ্যে চলতে দাও। আর এই ফাঁকে আমরাও কিছু রোজগার করে নিই। আর শোনো, বিদেশী মদ টদ খাওয়ার দাওয়াত টাওয়াত একাদ দিন দিও, গাঁজা-সিগারেটে যে আমরা বড়ই বিরক্ত হয়ে উঠেছি। আর অসৎ নেতা ও ঘুষখোর পুলিশের সাথে বেশি বন্ধুত্ব করতে যেও না। কারণ তারা বড়ই আজব জীব। স্বার্থে আঘাত লাগলে কখন আজিমপুর গোরস্থানে পাঠিয়ে দিবে টেরও পাবা না। আর বেশি অস্ত্রের বাহাদুরি দেখাতে যেও না। কারণ জনগণ ক্ষেপে গেলে মার একটাও মাটিতে পড়বে না।
ইতি
তোমাদের শিক্ষক বলো আর বড় ভাই বলো
প্রিয়পাত্র
পকেটমার।
০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১২:০৭
রাসেল আহমেদ মাসুম বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ সকাল ১১:৫৯
প্রামানিক বলেছেন: অন্যরকম একটা অনুভুতি নিয়ে লেখা। ভাল লাগল। ধন্যবাদ