![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দিনাজপুরের বিরামপুর, নবাবগঞ্জ, হাকিমপুর ও ঘোড়াঘাট উপজেলায় মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চার বছরে শিক্ষক ও কর্মচারী পদে পাঁচ শতাধিক ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে৷ তাঁদের অধিকাংশের কাছ থেকেই নিয়োগ কমিটি টাকা নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে৷
একাধিক লিখিত অভিযোগ, তথ্য অধিকার আইনে পাওয়া তথ্য ও প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়োগ কমিটি শিক্ষক ও কর্মচারীদের প্রত্যেকের কাছ থেকে দুই থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছে৷ সে হিসাবে কয়েক কোটি টাকার নিয়োগ-বাণিজ্য হয়েছে৷ নিয়োগ কমিটি মূলত অনুদান হিসেবে টাকা নিয়ে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন তহবিলে দেওয়ার নামে তা ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নিয়েছে৷ দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) রংপুর অঞ্চলের উপপরিচালক (ডিডি) মো. রফিকুল ইসলাম ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এনায়েত হোসেনের বিরুদ্ধেও৷ এসব অভিযোগসংক্রান্ত তথ্যপ্রমাণ প্রথম আলোর কাছে সংরক্ষিত আছে৷
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিগত পাঁচ বছরে নিয়োগ-বাণিজ্য হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন দিনাজপুর-৬ (বিরামপুর, হাকিমপুর, নবাবগঞ্জ ও ঘোড়াঘাট) আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ শিবলী সাদিক৷ তিনি বলেন, ‘নিয়োগে অনিয়ম হওয়ায় দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে৷ আমি সাংসদ হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ-বাণিজ্যসহ সব ধরনের দুর্নীতি বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি।’
তথ্য অধিকার আইনে দিনাজপুর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়ে আবেদন করে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের ১০ এপ্রিল পর্যন্ত উল্লিখিত চার উপজেলার ১০৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৫৬টি মাদ্রাসা ও একটি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৪৪ জন প্রধান শিক্ষক, সাতজন মাদ্রাসা সুপার, ৩৭১ জন সহকারী শিক্ষক, ৮৮ জন সহকারী গ্রন্থাগারিক ও ৫৪ জন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
ঘোড়াঘাট উপজেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম, নবাবগঞ্জ সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক দবিরুল ইসলাম, বিরামপুর সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন, হাকিমপুর সমিতির সভাপতি রকিব উদ্দিন এবং শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৫০ জন প্রার্থী ও ব্যবস্থাপনা কমিটির কয়েকজন সদস্য অভিযোগ করেন, প্রধান শিক্ষক ও সুপার পদে নিয়োগের জন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে ৮-১০ লাখ টাকা, সহকারী শিক্ষক ও গ্রন্থাগারিক নিয়োগে পাঁচ থেকে সাত লাখ ও কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে দুই থেকে সাত লাখ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। এসব পদে নিয়োগ দেওয়া মোট ৫৬৪ জনের মধ্যে অধিকাংশের কাছ থেকেই টাকা নেওয়া হয়েছে। নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে গত পাঁচ বছরে আদালতে ১৬টি মামলা হয়েছে।
শিক্ষক নিয়োগে বাণিজ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে ঘোড়াঘাট সমিতির নেতা জহুরুল ইসলাম জানান, বিদ্যালয়ে অনুদান দেওয়ার নামে মূলত সভাপতি ও একশ্রেণীর প্রধান শিক্ষক এই বাণিজ্য করে থাকেন।
মাউশির রংপুর অঞ্চলের ডিডি রফিকুল ইসলাম জানান, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এনায়েত হোসেন নিয়োগ-বাণিজ্য করার জন্য বিধিবহির্ভূতভাবে তাঁর পছন্দের মাউশির মহাপরিচালকের (ডিজি) প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়েছেন। এ ঘটনায় তিনি এনায়েত হোসেনকে তিনবার কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন।
এনায়েত হোসেন টাকা নেওয়া ও নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, তাঁকে কেউ কারণ দর্শানোর নোটিশ দেননি।
বিরামপুর পৌর শহরের দেবীপুর উচ্চবিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সভাপতি মশিহুর রহমান জানান, ওই বিদ্যালয়ে ২০১১ সালে একজন প্রধান শিক্ষক ও দুজন সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দিতে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে ৫০ হাজার, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে ৫০ হাজার, ডিজির প্রতিনিধি দিনাজপুর জিলা স্কুলের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক মাউশির রংপুর অঞ্চলের বর্তমান ডিডি রফিকুল ইসলামকে এক লাখ ৫০ হাজার, তৎকালীন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নকিবুল হাসানকে এক লাখ ৫০ হাজার, শিক্ষক প্রতিনিধিকে ১০ হাজার, অভিভাবক সদস্যদের ১০ হাজার, স্থানীয় প্রভাবশালী চার ব্যক্তিকে ১০ হাজার, বিদ্যালয়ের তহবিলে দুই লাখ, মাউশির রংপুর অঞ্চলের তৎকালীন ডিডিকে আট হাজার ৫০০, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নিজ বাড়ি গাইবান্ধা থেকে দিনাজপুরে আনা ও নেওয়ার গাড়ি ভাড়া বাবদ আট হাজার ৯০০ টাকা দেওয়া হয়েছে। রফিকুল ইসলাম ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা টাকা নেওয়ার অভিযোগ স্বীকার করেননি৷
বিরামপুরে সবচেয়ে বেশি নয়জন শিক্ষক ও একজন কর্মচারী নিয়োগ হয়েছে কাটলা উচ্চবিদ্যালয়ে। কাটলা গ্রামের দিলবর হোসেন অভিযোগ করেন, ওই বিদ্যালয়ে তাঁর পরিচিত তিনজনকে নিয়োগের জন্য প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম ১৮ লাখ টাকা নিয়েছিলেন। কিন্তু বেশি টাকা নিয়ে নজরুল ইসলাম গোপনে পেছনের তারিখে অন্যদের নিয়োগ দেন। নজরুল ইসলাম টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
বিরামপুর পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির দাতা সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান অভিযোগ করেন, ২০১১ সালে তাঁদের বিদ্যালয়ে ১০ জন শিক্ষক ও একজন কর্মচারী নিয়োগে ৫৩ লাখ টাকা অনুদান নেওয়া হয়েছিল। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আরমান হোসেন ও বর্তমান সভাপতি লিয়াকত আলী সরকার ওই টাকা আত্মসাৎ করেছেন৷ প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি দুজনই টাকা নেননি বলে দাবি করেছেন৷
আনিছুর রহমান ও মালতী লতা হোসেন মণ্ডল নামের দুজন শিক্ষক পদে নিয়োগ পেতে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আরমান হোসেনের কাছে দুই লাখ টাকা করে দিয়েছিলেন বলে ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ করেন৷
বিরামপুর পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে বাণিজ্য ও দুর্নীতির বিষয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এনায়েত হোসেন গত বছরের ২০ ও ২৭ আগস্ট তদন্ত করেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে এনায়েত হোসেন উল্লেখ করেন, ২০১১ সালে আনামুল কবির নামের এক ব্যক্তি ওই বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পাওয়ার জন্য বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সব সদস্যের উপস্থিতিতে প্রধান শিক্ষককে দুই লাখ টাকা এবং সভাপতিকে দুই লাখ টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে নিয়োগ না দিয়ে অন্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। টাকা ফেরত চাইলে সভাপতি ওই ব্যিক্তর নিয়োগ বাতিল করে আনামুল কবিরকে নিয়োগ দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তবে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
বিরামপুর উপজেলার ঝগড়ুপাড়া গ্রামের মুশফিকুর রহমান জানান, খানপুর কারামতিয়া মাদ্রাসায় নিম্নমান সহকারী পদে নিয়োগ পেতে তিনি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবদুল মতিনকে ৫০ হাজার ও সুপার শহিদুল ইসলামকে দুই লাখ দিয়েছিলেন। কিন্তু সভাপতি ও সুপার নয় লাখ টাকার বিনিময়ে অন্য প্রার্থীকে নিয়োগ দেন। এ ঘটনায় তিনিসহ নিয়োগবঞ্চিত চারজন প্রার্থী ২০১৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেন৷
বিরামপুর শালবাগান বালিকা দাখিল মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সভাপতি আহসান হাবিব অভিযোগ করেন, মাদ্রাসা সুপার আবদুল আউয়াল মাদ্রাসায় ১৮ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের বিপরীতে ৫৯ জনের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নেন।
নবাবগঞ্জ উপজেলার শালখুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আজাদুর রহমান অভিযোগ করেন, সুপার আবদুল আউয়াল কম্পিউটার শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য তাঁর কাছ থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা নিয়েছেন।
ছোট মাগুড়া গ্রামের রোস্তম আলী জানান, কম্পিউটার শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়ার নামে মাদ্রাসার সুপার তাঁর কাছ থেকে দুই লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়েছেন। দাউদপুর ইউনিয়নের হেয়াতপুর গ্রামের মুনিরুল ইসলাম জানান, তাঁকে সহকারী মাওলানা পদে নিয়োগের জন্য তাঁর কাছ থেকে দুই লাখ টাকা নিয়েছেন। সুপার আবদুল আউয়াল তাঁর বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন৷
নবাবগঞ্জে সবচেয়ে বেশি (১৫ জন শিক্ষক ও একজন কর্মচারী) নিয়োগ হয়েছে নবাবগঞ্জ মডেল বহুমুখী পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে। এর ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আতাউর রহমান জানান, শিক্ষক নিয়োগে যে টাকা পাওয়া গেছে, তা দিয়ে বিদ্যালয়ের মসজিদ, ঘর নির্মাণ এবং শিক্ষার্থীদের পোশাক তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষক নিয়োগে কোনো বাণিজ্য হয়নি বলে তিনি দাবি করেছেন
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা জুন, ২০১৪ সকাল ১১:২৩
আই ঠগ বলেছেন: মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারদের নাম গেল কৈ ??????