নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির সভাপতি\n\'সমকালীন যুক্তিবাদ\' ও \'নব্য সমাজতন্ত্র\'-র প্রতিষ্ঠাতা

যুক্তিবাদী প্রবীর ঘোষ

সভাপতি, ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি

যুক্তিবাদী প্রবীর ঘোষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

\'ঈশ্বর যদি অলীকই হবেন, তাহলে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মানুষ কেন আজও ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাসী ?

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:৫৩

উপরের এই প্রশ্নটাই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নানাভাবে প্রায়ই আমাদের শুনতে হয়। যুক্তিবাদীদের বিপক্ষে ঈশ্বরবাদীদের এই জোরালো সওয়ালের জোরটা নেহাতই সংখ্যাধিক্যের, ঈশ্বর বিশ্বাসীদের সংখ্যাধিক্যের। উত্তরটা পেতে আমাদের ফিরে তাকাতে হবে ইতিহাসের দিকে।
মাত্র শ'পাঁচেক বছর আগের কথা। পোল্যান্ডের নিকোলাস কোপারনিকাস পুস্তকাকারে তুলে ধরলেন এক বৈজ্ঞানিক সত্যকে - সূর্যকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে পৃথিবীসহ গ্রহগুলো। তাঁরই উত্তরসূরি হিসেবে এলেন ইতালির জিয়োর্দানো ব্রুনো, গ্যালিলিও গ্যালিলেই। সেদিন পৃথিবীর তামাম বিজ্ঞানী, বুদ্ধিজীবী, দার্শনিক থেকে সাধারণ মানুষ তাঁদের তত্ত্বকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। এমন এক 'গাঁজাখুরি' , 'অদ্ভুতুরে' ও 'ধর্মবিরোধী' মত প্রকাশের জন্য সেদিন ব্রুনোকে বন্দি করা হয়েছিল। রাখা হয়েছিল এমন এক কম উচ্চতার ঘরে, যার ছাদ সিসেতে মোড়া। গ্রীষ্মে ঘর হত চুল্লী, শীতে বরফ। এমনি করে দীর্ঘ আট বছর ধরে তাঁর উপর চালানো হয়েছিল বর্বরোচিত ধর্মীয় অত্যাচার। তথাকথিত সত্যের পূজারী, ঈশ্বর প্রেমিক ধর্মযাজকরা শেষবারের মত ব্রুনোকে বাঁচার সুযোগ দিল। নিজের মতকে ভ্রান্ত বলে স্বীকার করে নিয়ে বাঁচার সুযোগ। অসীম সাহসী ব্রুনো সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। বাইবেল বিরোধী অসত্য ভাষণের অপরাধে ব্রুনোকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হল প্রকাশ্যে।

গ্যালিলিও গ্যালিলেইকেও ধর্মান্ধতার বিচারে অধার্মিক ও অসত্য মতবাদ প্রচারের অপরাধে জীবনের শেষ আটটা বছর বন্দি জীবন কাটাতে হয়েছিল।
কিন্তু এত করেও সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, ঈশ্বর-পুত্র, পোপ এবং সংখ্যাগুরু জনমত সূর্যের চারপাশে পৃথিবীর ঘোরা বন্ধ করতে পারেনি।

আনাক্সাগোরাস বলেছিলেন, চন্দ্রের কোনও আলো নেই। সেই সঙ্গে তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন চন্দ্রে হ্রাস-বৃদ্ধির কারণ ও চন্দ্রগ্রহণের কারণ। সেদিন আনাক্সাগোরাসের তত্ত্বের প্রতিটি সত্যই ছিল ধর্মবিশ্বাসী বিশ্ববাসী সংখ্যাগুরুদের চোখে মিথ্যে। ঈশ্বর বিরোধিতা, ধর্ম বিরোধিতা ও অসত্য প্রচারের অপরাধে দীর্ঘ ও নিষ্ঠুর নির্যাতনের পর তাঁকে দেশ থেকে নির্বাসিত করা হয়। কিন্তু এত করেও নির্বাসনে পাঠাতে পারেনি আনাক্সাগোরাসের জ্ঞানকে, সত্যকে। সেদিনের সংখ্যাগুরু মানুষের দ্বারা সমর্থিত চন্দ্র বিষয়ক ঈশ্বরের অভ্রান্ত বাণীই আজ শিক্ষিত সমাজে নির্বাসিত।
ষোড়শ শতকেও পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি মানুষ বিশ্বাস করত, অসুখের কারণ পাপের ফল বা অশুভ শক্তি। ষোড়শ শতকে সুইজারল্যান্ডের বেসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নশাস্ত্র ও ভেষজ বিদ্যার অধ্যাপক ডাক্তার ফিলিপ্রাস অ্যাউরেওলাস প্যারাসেলসাস ঘোষণা করলেন- মানুষের অসুস্থতার কারণ কোনও পাপের ফল বা অশুভ শক্তি নয়, রোগের কারণ জীবাণু। পরজীবী এই জীবাণুদের শেষ করতে পারলেই নিরাময় লাভ করা যাবে।
প্যারাসেলসাসের এমন উদ্ভট ও ধর্মবিরোধী তত্ত্ব শুনে তাবৎ ধর্মের ধারক-বাহকরা 'রে রে ' করে উঠলেন। এ কী কথা! রোগের কারণ হিসেবে ধর্ম আমাদের যুগ যুগ ধরে যা বলে এসেছে, তা সবই কি একজন উন্মাদ অধ্যাপকের কথায় মিথ্যে হয়ে যাবে ? শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পবিত্র ধর্ম নায়কেরা যা বলে এসেছেন, ধর্মগ্রন্থগুলোতে যা লেখা রয়েছে, যুগ যুগ ধরে কোটি কোটি মানুষ যা বিশ্বাস করে আসছে, সবই মিথ্যে ? সত্যি শুধু প্যারাসেলসাসের কথা ?
প্যারাসেলসাসকে হাজির করা হল 'বিচার' নামক এক প্রহসনের মুখোমুখি। ধর্মান্ধ বিচারকরা 'রোগের কারণ জীবাণু' বলার অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দিল। প্যারাসেলসাস সেদিন নিজের জীবন বাঁচাতে নিজের দেশ সুইজারল্যান্ড ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। সেদিনের জনসমর্থন পুষ্ট ধর্মীয় সত্য আজ শুধু সুইজারল্যান্ডবাসীদের মন থেকেই নয়, সারা পৃথিবীর শিক্ষার আলো দেখা মানুষদের মন থেকেই নির্বাসিত।

ইতিহাস বার বার আমাদের এই শিক্ষাই দিয়েছে, যুক্তি ও প্রমাণের কাছে সংখ্যাগুরুর মতামতাতের দাম এক কানা-কড়িও নয় । বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিনির্ভর মানুষ সিদ্ধান্তে পৌঁছতে চায় পরীক্ষা-পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে। কোন পক্ষ সংখ্যা গুরু, কোন পক্ষে নামী-দামিদের সমর্থন বেশি, তা দেখে নয়। আর সেটাই যে সঠিক পথ, তারই প্রমাণ, বহু ক্ষেত্রেই সংখ্যাগুরুদের, বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের মতামতও
বাতিল হয়েছে আবর্জনার মতই। তেমনটি না হলে আজও আমাদের মেনে নিতে হত- পৃথিবীর চারপাশে সূর্য ঘোরে; গ্রহণের কারণ রাহুর গ্রাস; চন্দ্রের হ্রাস-বৃধির কারণ- অভিশাপে চন্দ্রের ক্ষয় রোগ ও বর লাভে ক্ষয় রোগ থেকে উত্তরণের রাস্তা জানার পর ক্ষয় রোগ ও পুষ্টি লাভের ঘটনা নিরন্তর ঘটেই চলেছে; রোগের কারণ রোগীর পাপ অথবা অশুভ শক্তি।

সংখ্যাতত্ত্বের নিরিখে 'সত্য' নির্ধারিত হলে আজও পৃথিবীর চারিদিকে সূর্য ঘুরত। আজও যে কত শত-সহস্র অন্ধ বিশ্বাসকে মেনে নিতে হত, তার ইয়ত্তা নেই। ঈশ্বর-বিশ্বাসের ক্ষেত্রেও অপেক্ষা করে আছে একই অনিবার্য পরিণতি। সুদীর্ঘকাল ধরে বহু অন্ধ বিশ্বাস, বহু বিজ্ঞানী, বুদ্ধিজীবী ও সংখ্যাগুরু জনগণের সমর্থন পেয়েও বাঁচতে পারেনি। কারণ অনিবার্যরূপে যুক্তির কাছে অন্ধ বিশ্বাসের পরাজয় ঘটেছে, ঘটছে এবং ঘটবে। ঈশ্বর-বিশ্বাসের ক্ষেত্রেও জয়কে বিলম্বিত করতে পারে মাত্র। অন্ধ-বিশ্বাসীরা যুক্তির জয়যাত্রার গতি স্তব্ধ করতে পারেনি, পারবেও না।

আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না- প্রবীর ঘোষ

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১০:২৪

গায়েন রইসউদ্দিন বলেছেন: অদ্ভূত ব্যাপার এখানে কেউ কোনও মন্তব্য করেনি। বলা বাহুল্য, সারা পৃথিবীতে ধর্ম-ব্যবসাটা বেশ রমরমিয়ে চলে। বিজ্ঞান-মনস্ক হ'লেই এর গতিরোধ হবে অথবা চিরতরে বন্ধ হয়ে হয়ে যাবে। এই আশঙ্কায় হয়তো কেউ মন্তব্য করতে চায়নি। কিন্তু প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক-- সবাই কি অন্ধ ধর্মপন্থী বা ধর্ম-সমর্থক? এই পোস্টটি ১৬৩ বার পঠিত হওয়ার পরেও কেন কোনও মতামত নেই?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.