নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাতের আকাশের নাম না জানা একটি অজানা তারা.........................

রাত জাগা তারা ও আমি

রাত জাগা তারা ও আমি › বিস্তারিত পোস্টঃ

দাঁত-নখ বার করছে মৌলবাদ

০৫ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১:০৩


ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন নয়। ঘটছে আলাদা আলাদা ভাবে ঠিকই। কোনও সংগঠিত প্রয়াস হিসেবে ঘটছে, তেমনও নয় সব ক্ষেত্রে। কিন্তু যাঁরা ঘটাচ্ছেন এই অনাসৃষ্টিগুলো, তাঁদের পরস্পরের মধ্যে ‘নাড়ির যোগ’ রয়েছে নিঃসন্দেহে।

হাওড়ার এক ক্লাবে টেবিল টেনিসের প্রশিক্ষণ চলছিল। সেই আসরে হাজির হয়ে শিক্ষানবিশদের পোশাক নিয়ে হইচই জুড়ে দিলেন একদল। মেয়েরা কেন হাফ প্যান্ট পরে খেলবে? এই প্রশ্ন তুলে ধুন্ধুমার বাঁধালেন তাঁরা। ফলে প্রশিক্ষণ বন্ধ হয়ে গেল।

যাঁরা হইচই বাঁধালেন, তাঁরা কারা, কী উদ্দেশ্যে তাঁরা এই কাণ্ড ঘটালেন, সে নিয়ে নানা মত রয়েছে। কেউ বলছেন, মেয়েদের হাফ প্যান্ট পরার বিরোধিতা করে যাঁরা গোলমাল করেছেন, তাঁরা ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত। অন্য কিছু বিষয়ে মতানৈক্য ছিল বলে হাফ প্যান্টকে নাকি ইস্যু বানিয়েছেন ওঁরা। এই ব্যাখ্যা যদি মেনেও নিই, তা হলেও ঘটনার গুরুত্ব কিছুমাত্র কমে না।মেয়েরা কেন হাফ প্যান্ট পরে টেবিল টেনিসের প্রশিক্ষণ নিচ্ছে, ইস্যু খোঁজার তাগিদে যাঁরা এই প্রশ্ন তুলতে পারেন, তাঁদের বিবেচনা বোধ এবং চিন্তা-ভাবনার গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হয়।

আট থেকে বারো বছরের বালক-বালিকারা যেখানে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে, সেখানে গিয়ে ওই শিক্ষার্থীদের সামনেই পোশাক নিয়ে এই রকম কুরুচিকর প্রশ্ন তুলতে পারেন যাঁরা, অশালীন ইঙ্গিত করতে পারেন যাঁরা, তাঁরা এখনও আধুনিক পৃথিবীতে পৌঁছতে পারেননি। অনেক পিছিয়ে রয়েছেন।

কলকাতা মেট্রোয় যুগলের আলিঙ্গন নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল দিন কয়েক আগে। যুগলকে গণপ্রহারও দেওয়া হয়েছিল। এ বার হাওড়ার ক্লাবে ঢুকে প্রশ্ন তোলা হল, মেয়েরা কেন হাফ প্যান্ট পরে টেবিল টেনিস খেলবে? বিষয়টিকে গণবিক্ষোভের চেহারা দেওয়ার চেষ্টাও হল। সপ্তাহের শুরুতে এবং সপ্তাহের প্রায় শেষে ঘটা এই দুই ঘটনার মধ্যে সাযুজ্য অঢেল। একই মানসিকতা থেকে এই ধরনের প্রশ্ন তোলা হয় বা এই ধরনের ‘প্রতিবাদ’ উঠে আসে।মৌলবাদ আসলে তার দাঁত-নখগুলো বার করতে শুরু করেছে। কালবুর্গী, পানসারে, গৌরী লঙ্কেশদের খুন হতে দেখেছে এই দেশ। গোমাংস বিরোধিতার অছিলায় প্রাণঘাতী হামলা চালানো হয়েছে এ দেশে একাধিক বার। কখনও আকলাখ, কখনও জুনেইদকে মরতে হয়েছে। অসহিষ্ণুতা, অন্যের মতামত শুনতে না চাওয়া, ভিন্নধর্মী চিন্তা-ভাবনাকে বিন্দুমাত্র স্থানও ছাড়তে না চাওয়া— প্রবণতাগুলো বাড়ছে দিন দিন। উপসর্গ বা লক্ষণগুলো খুব চেনা। আমি যে ভাবে ভাবি বা আমি যা বিশ্বাস করি, সেটাই শেষ কথা, অন্য রকম ভাবনার কোনও গুরুত্ব বা মূল্য বা স্থান নেই— এই মানসিকতা থেকেই এই ধরনের আক্রমণগুলো আসে। এই মানসিকতা মতামত বা ভাবধারার বৈচিত্র্যকে স্বীকার করে না। সেই কারণেই অসহিষ্ণু হয়ে ওঠে বার বার।

মৌলবাদী এই প্রবণতা ক্রমশও আরও নানা ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়ছে। এত দিন হামলা হচ্ছিল প্রখ্যাত নিত্যচিন্তকদের উপরে। এত দিন আক্রান্ত হচ্ছিলেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কোনও মানুষ। এ বার দাপট আরও বেড়ে গিয়েছে মৌলবাদের। প্রখ্যাত মুক্তচিন্তক বা সংখ্যালঘু নাগরিকে সীমাবদ্ধ নেই নিশানা। সমাজের আরও নানা ক্ষেত্রকে নানা ভাবে নিশানা বানানো হচ্ছে। নীতি পুলিশি জোরদার করা হচ্ছে। রাস্তায় কী ভাবে চলতে হবে, ক্লাবে কী ভাবে খেলতে হবে, পার্কে গিয়ে কী ভাবে বসতে হবে ইত্যাদি নানা বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা শুরু হয়ে গিয়েছে। কোনও মৌলবাদী সংগঠন এই হস্তক্ষেপগুলোয় প্রত্যক্ষ ইন্ধন জোগাচ্ছে, এমন নয়। ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন ভাবেই ঘটছে এখন। কিন্তু প্রবণতাগুলো বাড়তে থাকলে অচিরেই সংগঠিত রূপ পেয়ে যাবে মৌলবাদ।

প্রতিবাদ দরকার, তীব্র প্রতিরোধ দরকার। দমদমের ঘটনার পরে প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে হাজারো-লাখো কণ্ঠস্বর পথে নেমে প্রতিরোধের বার্তা দেওয়া হয়েছে। হাও়ড়ার ঘটনাতেও তীব্র নিন্দা শুরু হয়েছে। মৌলবাদের বিরুদ্ধে এই কণ্ঠস্বর জাগিয়ে রাখতে হবে আমাদের, প্রতিরোধ আরও তীব্র করতে হবে। সংঙ্কীর্ণতার সামনে মাথা নোয়ানো নয়, আরও বলিষ্ঠ ভঙ্গিতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে। নচেৎ এ বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া কঠিন।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১:৪৩

লাবণ্য ২ বলেছেন: বাঙালি ধর্মান্ধ জাতি।প্রতিবাদটা জানাবে কে?

২| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:১৪

সনেট কবি বলেছেন: কিছুটা পড়লাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.