নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুন্দর শিরোনাম খুজছি...

রায়হান দ্যা উইং

সাধারন মানুষ। সুস্থ মানুষ। ভালবাসি অভিনয় করতে।

রায়হান দ্যা উইং › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার হিমু রুপ

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৪:১৩

ঘুম ভাঙলো বাসা মালিকের কর্কশ+অসহ্য মার্কা ডাকাডাকিতে। কাল রাতে কখন ঘুমিয়েছি জানিনা। রাত ৪টা-৫টা হবে অনুমান করে বলা যেতে পারে। গভীর রাতেই ঘুমুবার অভ্যাস তৈরি করে ফেলেছি। কখনো কখনো সকাল হলে তবেই ঘুমুতে যাই। আমার ধর্মই তো রাত জাগা। পুরোটা সময় ল্যাপটপে কাটে। শুধু যে কাটে তা না, দারুন কাটে। তবে মাঝে মাঝে রাত জেগে হাঁটাহাঁটি করতে পারলে ভালো হত। তা সম্ভব না কারন অল্প পরিচিত জায়গায় রাতে হাঁটাহাঁটি করা আধুনিক হিমুর জন্য দুস্কর। কারন দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে মহানগর এলাকার পুলিশরা বাঁশ ডলায় বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন করেছে। বাঁশ ডলায় তারা অত্যান্ত আগ্রহ বোধ করে। তারা চান্স পেলেই আমার মতো Man of Cotton কে বাঁশের গুনাগুণ সম্পর্কে ধারনা দিতে ব্যস্ত হয়ে যায়।
ঘুম ঘুম চোখে দরজা খুলে দেখি কাজের বুয়া দরজার সামনে দাড়িয়ে। বাসা মালিকের ডাকাডাকির কারন স্পষ্ট হলো। বুয়া অনেক্ষন ডাকার পরও দরজা খুলছিলামনা বলে বাসা মালিক স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। আমাকে দরজা খুলতে দেখে তিনি বিজয়ের হাসি হাসলেন। তার বত্রিশ দন্ত বিকশিত হওয়া দেখে মনে হল তিনি এই মাত্র হেলেন অব ট্রয়কে জয় করে ফেলেছেন। খালা (কাজের বুয়াকে আমি খালা ডাকি) বিরক্তির সাথে আমাকে পাঁশ কাটিয়ে হন হন করে রন্ধনশালায় ঢুকে গেলেন। বাসা মালিক তার ননস্টপ হাসি মুখে নিয়েই আমাকে প্রশ্ন করলেন-
কয়টা বাজে? এতো সময় ধরে বুয়া দরজা নক করছে...
আঙ্কেল, জানিনা কয়টা বাজে। অনেক রাত করে ঘুমিয়েছি তো তাই উঠতে লেট হয়েছে।
ও আচ্ছা!
বেশি কথা না বলে দরজা লাগিয়ে দিলাম। শালার নন স্টপ হাসির মতো কথা ও নন স্টপ। একবার কথা বলতে শুরু করলে কারফ্যু জারি করেও ব্যাটাকে থামানো সম্ভব কিনা কে জানে। দরজা লাগিয়ে এসে সময় দেখলাম- ১২.৩৪। আজকে কি রান্না হবে তা খালাকে বুঝিয়ে দিয়ে আসলাম।
ফ্রেশ না হয়েই আবার বিছানায় শুয়ে পড়লাম। একটু পর খালা আবার ডাক দিয়ে ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিল। কাজ শেষ। খালা চলে যাওয়ার পর দরজা লাগিয়ে ফ্রেশ হতে গেলাম। আজ ও দাঁত মাজা হবেনা। কারন প্রতিদিনই দাঁত ব্রাশ করার সময় ব্রাশ কেনার কথা মনে হয় কিন্তু বাজারে গেলে ভুলে যাই। বাসা থেকে আসার সময় ভুলে ব্রাশ ফেলে এসেছিলাম গত সপ্তাহে এখনো ব্রাশ কেনা হয়নি দেখে ব্রাশ করতে পারছিনা। মুখে কি রকম ঘাতক গন্ধ কে জানে! হাত মুখ ধুয়ে খেতে বসলাম। ডিম ভাজি আর ভাজা ভাত। স্বাদ-গন্ধ বিহীন রান্নার প্রতিযোগিতা হলে খালা নির্ঘাত প্রথম পুরষ্কার পেয়ে যেত। আমি স্বাদ-গন্ধ বিহীন ডিম ভাজি আর ভাজা ভাত আগ্রহ নিয়েই শেষ করলাম।
মেসে আমি একা। গতকাল রাতে মেসের অন্যসকল বাসিন্দা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি যুদ্ধে শামিল হতে চলে গেছে। আমার ও যাওয়ার কথা ছিল। সেই মতেই ভর্তি যুদ্ধের ফর্ম কেটেছিলাম। আমার মতো ভোতা মাথার ছাত্রের সুযোগ হবেনা নিশ্চিত জেনেই আর যাইনি। তার উপর সিলেট থেকে ঢাকা যাওয়া বিশাল খরচের ব্যাপার। অর্থনীতির ক্ষতি। আমার দ্বারা অর্থনীতির ক্ষতি করা সম্ভব হলো না। অবশ্য বাসা থেকে ওরা বেরিয়ে যাওয়ার ঠিক ৫ মিনিট আগে মত পাল্টে শেষ পর্যন্ত ওদের সাথে যাব বলে ট্রেন ষ্টেশনের উদ্দেশে বেরিয়েছিলাম। ট্রেন ষ্টেশনের ওয়েটিং কর্ণারে বসে গান শুনতে শুনতে ট্রেনের অপেক্ষা করতে লাগলাম। ছয় বন্ধু একসাথে ট্রেনে করে যাব তা ভেবেও কোনো আনন্দ হচ্ছেনা। অন্য সময় ও আমার এরকম হতো কি না তা জানিনা। একবার মাত্র ট্রেনে চড়েছি। ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। ট্রেন চলে এসেছে। হুইসেল দিচ্ছে। আমি কি মনে করে যেন ওয়েটিং কর্ণার থেকে বেরিয়ে এলাম। আমার দুই বন্ধু জিজ্ঞেস করলো কোথায় যাচ্ছি। আমি- এইতো সামনেই, বলে ষ্টেশন থেকে বেরিয়ে আসলাম। সামনেই রিকশার সারি। চালক আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে যাত্রীর। আমাকে অল্প বয়সী এক চালক জিজ্ঞেস করলো-
ভাই, কই যাবেন?
রায়নগর যাবে?
হ, যামু। পয়েন্টে নামবেন?
হ্যাঁ।
উঠেন।
আমি রিকশায় উঠে পড়লাম। রিকশার গতি বেড়ে চলেছে। আমি পেছনে ট্রেন ষ্টেশন ফেলে অনেকটা পথ এগিয়ে এসেছি। আমার বন্ধুদের কাউকে জানানো হয়নি আমি ওদের সাথে যাচ্ছিনা। পকেট থেকে যোগাযোগ যন্ত্র বের করে ফোন করলাম-
হ্যালো, আমি তোদের সাথে যাচ্ছিনা।
বলেই ফোন কেটে দিলাম। পরক্ষনেই আমার মোবাইল বেজে উঠলো,আমাকে ফিরে আসার জন্য একে একে অনুরোধ করা হল। এক পর্যায়ে ইমোশনাল অত্যাচার। বাসায় পৌছার আগে পর্যন্ত অনেক বাহাস করতে হলো। কিন্তু ফলাফল শুন্য। আমার ফেরা সম্ভব না। হিমুদের আবেগ উপেক্ষা করতে হয়। গভীর আবেগ উপেক্ষা করার ক্ষমতা সবাই অর্জন করতে পারেনা। হিমুরা পারে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৪:৪৪

চাঁদগাজী বলেছেন:


ডিম বাজি ও ফ্রাইড রাইস খেলে মাথায় উদ্ভট ভাবনা আসে।

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৫৮

রায়হান দ্যা উইং বলেছেন: হা হা হা, ডাক্তার ডিটেকটেড।

২| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:১৭

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: আগে তিনবার ব্যারিস্টারি ফেল করে তবে মানুষ কালী সাধক হতো আর এখন ভর্তি পরীক্ষার প্রিপারেশান খারাপ বলে মানুষ হিমু হয়!
খারাপ লাগে নাই পড়তে।
প্লাস!

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০২

রায়হান দ্যা উইং বলেছেন: অনেক আগের লিখা ভাই, বছর তিনেক আগের। সব ড্রাফটে জমিয়ে রাখা। এখন পোস্ট করছি আরকি। বাই দ্যা ওয়ে ওইদিনই ঢাকা যাই এবং পরের দিন পরিক্ষা দেই এবং রসায়ন সাব্জেক্ট নিয়ে পড়ার সুযোগ ও পেয়েছিলাম। ভাল লাগলো জেনে যে পড়তে আপনার খারাপ লাগেনি। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.