![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সন্ধ্যে প্রায় হতে চলল... পশ্চিম আকাশে লালের আভা ক্রমশ সাম্রাজ্য বাড়িয়ে চলছে... চৈত্র মাসের গোধূলীগুলো অদ্ভুদ সুন্দর হয়... পরিচ্ছন্ন আকাশে মাঝে মাঝে মেঘ তুলির আঁচর পুরো আকাশটাকেই মূর্ত ক্যানভাস করে তোলে... মনে হয় পিকাসো এইমাত্র আরেকটি কালজয়ী পোর্টেট এঁকে ওয়াইনের গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে... চৈত্র নিয়ে রবীঠাকুরের একটা কবিতা আছে... আপন মনে আবৃত্তি করলাম,
‘প্রহরশেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্রমাস–
তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।।
এ সংসারের নিত্য খেলায় প্রতিদিনের প্রাণের মেলায় বাটে ঘাটে হাজার লোকের হাস্য-পরিহাস– মাঝখানে তার তোমার চোখে আমার সর্বনাশ’ ...
ভাবতে ভাবতে এতটাই আনমনা হয়ে গেছি যে পটল মামা কখন পিছনে এসে দাঁড়িয়ে আছে তা লক্ষ্যই করিনি... পটল মামা কেমন জানি রহস্যের চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে... মুখে জলদস্যুর ক্রুর হাসি... আমি সম্বিত ফিরে তাকাতেই মৃদু হেসে বলল,
-‘কিরে, কিছু ভাবছিস নাকি’?
- ‘না, মামা... এমনি দাঁড়িয়ে আছি... সূর্যাস্ত দেখছি’...
- ‘হুম, প্রকৃতি খুব অদ্ভুদ, জানিস... নিজের পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের মনেও পরিবর্তনের ছাপ ফেলে যাই... মানুষ চিরকাল প্রকৃতির দাপটের কাছে নতি স্বীকার করে... মানুষের মন পরিবর্তন অনেক সময় পাপ, কিন্তু প্রকৃতির রূপ পরিবর্তন সৌন্দর্য’... ।।
এত কঠিন দর্শন আলোচনার মাঝখানে লক্ষ্যই করিনি মামার হাতে আমাদের লাল সবুজ জাতীয় পতাকা... ছাব্বিশে মার্চ তো এখনি দেরি আছে ... এই সময় মামার হাতে পতাকা দেখে কিছুটা কৌতুহলী হয়ে জানতে চাইলাম পতাকা কেন...!! মামা কিছু না বলে বারান্দার দিকে হাঁটা শুরু করল... আমিও বাধ্য বালকের মত অনুসরন করলাম মামাকে... বারান্দার সেগুন কাঠের আরাম কেদারায় হেলান দিতে দিতে মামা বলল,
-‘তুই জানিস না কাল বাংলাদেশের খেলা’...!!
-‘হুম জানি’...
-‘এই জন্যেই রফিক দর্জির দোকান থেকে একুরেট মাপে সেলাই করে আনলাম জাতীয় পতাকা; টেন ইন্টু সিক্স মিটার’... একশলাকা বেনসন জ্বালাতে জ্বালাতে বলল মামা... ওজোন স্তরে আরো কিছু কার্বন-ডাই-অক্সাইড ছড়িয়ে মামা বলল,
-‘এই যে ১৯ তারিখ খেলা, এতো খেলা নয়...এ হল যুদ্ধ... এখানে ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা প্রতিশোধ নেবে... প্রতিশোধ নেবে ছোট দেশ বলে অপমান করার, প্রতিশোধ নেবে কাঙাল বলে গালি দেওয়ার, প্রতিশোধ নেবে বাঙালী সত্ত্বাকে অপমান করে বিজ্ঞাপন নির্মানের’...
- ‘আচ্ছা মামা, আমাদের অপমান করে যে বিজ্ঞাপন করা হল, দেশব্যাপী তার প্রতিক্রিয়া হল; এই বিষয়টা তোমার কি মনে হয়’...??
-‘নেগেটিভ পাবলিসিটি বলে একটা ব্যাপার আছে ,শুনেছিস’?
-‘হুম, শুনেছি’
-‘ক্রিকেট হচ্ছে বাঙালীর আবেগের খেলা... এই খেলায় মাঠে তাকে ১১ জন আর যুদ্ধ করে ১৬ কোটি বাঙালীসহ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা আরো কোটি বাঙালী... আবেগ নিয়ে যখন কেউ আঘাত করবে তখন তার প্রতিত্তুরও তীর্যক হবে... এই সুযোগে কিছু পুঁজিবাদী নিজেদের আঁখের গুছিয়ে নিয়েছে... মূলত, লড়াই করতে হবে মাঠে, জিততেও হবে মাঠে... তাতেই সকল অপমানের তীক্ষ্ণ জবাব দেওয়া যাবে... কাল সকাল ৯:৩০ এ খেলা... আমরা দুজন খেলা দেখব... ও হে, তোর বদর কাকাকেও বলে রাখিস... তার আগে এক কাজ কর... ছাদে গিয়ে পতাকাটা উত্তোলন করে আয়’...
আমি খুব যত্নে বাঁশের ডগায় পতাকা বেঁধে উত্তোলন করলাম... পাশেই দাঁড়িয়ে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে মামা... ডান হাত কপালে ঠুকে স্যালুট জানালো; সাথে আমিও... মামার চোখ ছলছল করছে, গর্বে, আনন্দে... পতপত করে উড়ছে বাংলার পতাকা... আকাশের লাল আভায় মিশে গেছে পতাকার লাল রক্তাক্ত বৃত্ত... পৃথিবীর অন্ধকার আমাদের মনে কালো ছায়া ফেলেছে... এই কালো তখনি আলোই উদ্ভাসিত হবে যখন আমরা অপমানের যথাযথ প্রতিশোধ নিতে পারবো... কাল সকালের সূর্যটা যেন আমাদের জন্যই উদয় হয়... নতুন সূর্যের আলোচ্ছটায় নতুন বাংলা দেখব বলে আজ রাতটা উৎকণ্ঠা নিয়েই কাটাবো...
©somewhere in net ltd.