নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শুণ্যতার নিচে পিয়ানো শুনি...

রাজসোহান

প্রিয় অন্ধকার, আমার পুরোনো বন্ধু তুমি...

রাজসোহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

কী আগুনে পুড়ে যায় ঘর, জানে না উঠোন

০১ লা মার্চ, ২০২০ রাত ১১:৫১


“বা, অথবা কিংবা” বইটা পড়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যা বলে উঠলাম তা হলো, ‘বাব্বাহ! এইভাবেও টানা লিখে যেতে পারে কেউ!’

এবারের বইমেলায় ১৫ তারিখে হাসান ভাইয়ের সাথে দ্বিতীয় দেখা। একটু আধটু আড্ডা দিয়ে বললাম, ‘ভাই আপনার পছন্দের একটা বই কিনে দেন।’ পাশেই রিশাদ শুনতে পেয়ে বললো, ‘আশান ভাইয়ের বই কিন। মজা পাবি পড়ে।’ সেই সূত্রে এই বইটা আমার হাতে এলো। এবং বলাই বাহুল্য যে আলসেমির কারণে এতোদিন বইটা পড়া হয়ে ওঠেনি।

সব আলসেমি জয় করে আজকে পড়তে বসেই চমকে উঠলাম। প্রথম গল্পের প্রথম প্যারাটা পড়ে মনে হলো একি মুক্তগদ্য নাকি? বিভ্রম ভেঙে গেলো কিছুপরেই। এরপর তরতর করে এগিয়ে গেলাম, গল্পে ডুবে গেলাম। লেখার মধ্যে সে যে কী ঘ্রাণ! বাক্যগুলো ছোট ছোট কিন্তু ছুরিতে শান দেয়ার মতো ধার তাতে! কী করে লিখলেন এই লেখক! লেখায় এতো দক্ষতার মধ্যেও কোন খুঁত ধরা পড়লেও সেটাকে ঢেকে দিয়েছেন গল্পের চরিত্রদের প্রখর আঞ্চলিক কথোপকথন দিয়ে। এরকম পরিকল্পনা করে গুছিয়ে গল্প বলার ঢঙ অবাক করে দিয়েছে।

গল্পগুলোর বিষয়বস্তুতেও রয়েছে চমক। এইখানে লেখক আশান উজ জামান দেখিয়েছেন তার পর্যবেক্ষণ আসলে কতোটা তীব্র আর তীক্ষ্ণ! এজন্যেই তিনি গল্পের অংশ হিসেবে উপজীব্য করতে পেরেছেন সমসাময়িক নুসরাত হত্যাকাণ্ডকে “শিশু । স্বর্গ । নরক” গল্পে। ধর্ম ভেদাভেদ কতোটা নিষ্ঠুরভাবে ধরা দেয় তার চমক দেখিয়েছেন “কী আগুনে পুড়ে যায় ঘর, জানে না উঠোন” গল্পে। যেখানে এক হিন্দু নারী আর এক পুরুষের কথোপকথনে গল্প এগিয়ে যায়। কিন্তু পুরুষটি কি মুসলমান ছিলো? নিজেই গল্প পড়ে বের করে নিন!

সমসাময়িক ঘটনার মতোই আশান তুলে এনেছেন এদেশে সনদের তোয়াক্কা না করা মুক্তিযোদ্ধাদের টানাপোড়েন। রাষ্ট্র যে মুক্তিযোদ্ধাদের সত্যিকার স্বীকৃতি প্রদানে কতোটা অথর্ব তার প্রমাণ আমরা দেখতে পাই মুক্তিযোদ্ধার নতুন সনদ প্রদানে অফিসার হয়ে বসে আছে এক রাজাকার!

সর্বশেষ গল্প “আকাশ ভেঙে মুখে দিলেই বিদঘুটে স্বাদ”। সীমান্তবর্তী গ্রামে দুই দেশের সীমান্তের মাঝে ধরা পড়া রহমালিকে নিয়ে দারুণ এক প্লটের উপর নির্মিত হয়েছে গল্প। এর বেশি কিছু বললে গল্পের মজা নষ্ট হয়ে যাবে। তাই পাঠককে আবিষ্কার করার সুযোগ রেখে দিচ্ছি।

গল্পগুলোতে মৃত্যু এতো বেশি করে এসেছে যে মনে পড়ে আমরা চোখ বুজে দিন পার করি। লেখক ঝাঁকি দিয়ে বলতে চেয়েছেন, চোখ খুলুন, দেখুন প্রতিদিন কতো মানুষ লাশ হয়ে যাচ্ছে।

আমি আসলে ভেবেই পাই না এতো দারুণ ধারালো ঝাঁঝাঁলো লেখক থাকতে মানুষ কী করে ছাইপাশের বই কেনার জন্য স্টলগুলোতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দুই পা এগিয়ে ভালো লেখা এবং লেখককে তুলে ধরতে হবে আমাদেরই। ফালতু লেখক এবং লেখা নিয়ে যতো হাইপই উঠুক, খুঁজে খুঁজে আমাদেরকে ভালো লেখার পঠনে ফিরে আসতেই হবে।

বর্তমান সময়ের গ্রাম বাংলার সমাজ, রাজনৈতিক বাস্তবতার দিকে কড়া নজর রেখে গাঁথা মোট বারোটি গল্প বাংলা সাহিত্যে দারুণ একটি সংযোজন। সময়ের সাথে এই গল্পগুলো কাল্ট ক্ল্যাসিক হয়ে উঠবে বলেই আমার ধারণা।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা মার্চ, ২০২০ সকাল ৯:২৩

রাজীব নুর বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ।
এইভাবেই ব্লগে ভালো ভালো বইয়ের সন্ধান পাওয়া যায়।

২| ০২ রা মার্চ, ২০২০ সকাল ১০:২৯

নেওয়াজ আলি বলেছেন: ভালোই ।

৩| ০২ রা মার্চ, ২০২০ দুপুর ২:৩৯

শেরিফ আল সায়ার বলেছেন: পড়ার আগ্রহ বেড়ে গেলো। যারা সমসায়িক রাষ্ট্রকে, সময়কে গল্প-উপন্যাস-কবিতায় তুলে ধরছেন তাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা সবসময়ই ছিল। এই দগ্ধ সময়ে, এই মেরুদণ্ডহীন সমাজে একজন লেখক সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে সত্য বলতে পারাটাই বীরের কাজ। আপনাকে ধন্যবাদ ছোট্ট একটা রিভিউ দেয়ার জন্য।

০২ রা মার্চ, ২০২০ রাত ১০:০৩

রাজসোহান বলেছেন: আমার কাছেও অবাক লেগেছে, নতুন লেখক বলে রয়ে সয়ে গল্প লেখেননি। এই ব্যাপারটিই চমকে দিয়েছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.