নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\"আমি জন্মের প্রয়োজনে ছোট হয়েছিলাম, মৃত্যুর প্রয়োজনে বড় হচ্ছি।\"-নির্মলেন্দু গুণ

বনরুই

নিজেকে সবার আড়ালে রাখতেই ভালোবাসি,

বনরুই › বিস্তারিত পোস্টঃ

আত্মহত্যা

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:১৮


চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসছে, জানি আর বাচবোনা, বহুআগেই মৃত্যুর ছায়া দেখেছি, অনেক কষ্ট হচ্ছে, সবাই পাশে বসে কাদছে, শুধু ওর মুখটা দেখছিনা, হাসপাতালে আসার পর একটিবার মাত্র ওকে দেখেছিলাম, তার আগে এম্বুলেন্সে দেখেছিলাম। এই প্রথম ওর চোখে জল দেখলাম, দৃষ্টিটা নির্বাক ছিল, যেমনটি ছিল আজ থেকে ৯ মাস আগে, সেদিন আনন্দ ছিল আজ ছিল বিষাদ। অনেকবার ওর হাতগুলো ছুয়ে দেখেছি পরম ভালোবাসায়। আমি জানি ওর খুব কষ্ট হচ্ছে, ওর যন্ত্রনা দেখে আমারো কান্না এসেছিলো। তারপরো কিছু করার নেই, আমি যে ভুল করেছি। পাগলটার সাথে আজ ৯ মাসের সংসার, কখোনো বিষাদের চেহারা বা কাদতে দেখিনি। পুরুষ মানুষেরা হয়তো খুব সহজে কাঁদেনা,
আজ থেকে চার বছর আগে ওদের গ্রামে এসেছিলাম আমরা, হাতিয়া থেকে। তখন থেকেই ওকে দেখতাম খুব সাদাসিদে,কারো সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলতোনা,কোন অহংকারো দেখিনি ওর মাঝে, যদিওবা অহংকার করার মত সবই ছিল ওর। কেন জানি তাকে খুব ভালোলাগতো আমার, খুব ইচ্ছে হত তার সাথে কথা বলতে, ওর মসৃন চুলগুলোতে হাত বুলাতে ইচ্ছে করত। একদিন ওকে পিছন থেকে ডাকি, ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে পিছনে তাকালো ও, এমন ভাবে তাকালো যেন এই প্রথম কোন মেয়ে দেখলো সে। খুব হাঁসি পেয়েছিল তাকে দেখে, তারপর পরিচয়,কথাবার্তা । আস্তে আস্তে বদলাতে শুরু করলো ও । সবার সাথে কথা বলত,আমাদের বাড়ির সামনে বন্ধুদের নিয়ে দুষ্টুমী করতো সারাক্ষন। ধিরে ধীরে চঞ্চল হয়ে উঠলো সে..
তারপর একদিন......
একদিন ও আমাকে বলল আমাকে ভালোবাসে, কিছু না বলে চলে এলাম, আমিও যে তাকে ভালোবাসি এই কথাটা বলতে পারলাম না। অনেকদিন ওর সামনে যাইনি, আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হতে লাগলাম। ওর সাথে জীবনের প্রত্যেকটা মুহুর্ত ভাগাভাগী করতে শুরু করলাম। আমার কাছে জীবনটা স্বর্গ মনে হতে লাগলো।
আমার আর ওর ফ্যামিলির সবাই মেনে নিয়েছিল আমাদের সম্পর্ক , এরই মধ্যে কেটে যায় ৩ টি বছর ।
হটাৎই ওর একটা এক্সিডেন্টে পা দুটো সাময়িক থেমে যায়। আমার মায়েরও আচরনে পরিবর্তন দেখতে শুরু করলাম। ওরসাথে কথা বলতে, দেখা করতে দিতনা আমাকে।
অতঃপর হটাৎ একদিন আমাকে মা নিয়ে যায় দাদুর বাড়ি,হাতিয়ায়। প্রথমে বুঝতে পারিনী. পরে বুঝতে পারলাম ওখানে আমার বিয়ে ঠিক করা হয়েছিল, পালিয়ে আসি বিয়ের আগের রাতে,ওদের বাড়িতে। ও আমাকে সাদরে গ্রহন করেছিল।
আজো স্পষ্ট মনে পড়ে, আমাদের বিয়ের সারাদিন গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ছিল, কোর্টে গিয়ে বিয়ে করেছিলাম আমরা। ফিরতে আমার দিকে অনেক্ষন তাকিয়েছিল পলকহীন ভাবে। সেদিনই প্রথম লজ্জা পেয়েছিলাম ওকে। তারপর রাতে ছিল বৃষ্টিহীন মেঘলা আকাশ,সাথে জোস্না।
হয়তো বৃষ্টিরাও বুঝেছিল সেদিন আমাদের বিয়ে। সেদিনই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, এই মানুষটাকে জীবনে কখোনো ঠকাবোনা। কিন্তু আজ ঠকাচ্ছি. চলে যাচ্ছি তাকে রেখেই।
মায়ের সাথে ওর ব্যপার নিয়ে ঝগড়া করে নিয়ন্ত্রনহীন হয়ে পড়েছিলাম। এখন বুঝতে পারছি কত বড় ভুল করে ফেলেছি আমি। বড় বাচতে ইচ্ছে করছে. লোকটা বড় অগোচালো,সারাদিন না খেয়ে থাকবে। কেউ বলার ও থাকবেনা।। নিজের খেয়াল টাও ঠিকমত রাখতে পারেনা,, কিন্তু বড্ড ভালোবাসতে জানে। ওর ভালোবাসায় বেচে থাকতে ইচ্ছে করছে.. সকাল বেলায় সারাগায়ে পানি ছিটিয়ে কেউ হয়তো আর ঘুম থেকে তুলবেনা,, কারো সাথে হয়তো আর ঝগড়া করবেনা. চুপচাপ হয়ে পড়বে আগের মত।
বাবার মুখটা ভাসছে চোখে, ছোটবোনটার কান্না শুনতে পাচ্ছি। দৃষ্টিটা ঝাপসা হয়ে আসছে।
শেষবার প্রিয়মুখটা দেখতে ইচ্ছে করছে,, জানি হয়তো ডাক্তারের কাছে নিস্ফল ছোটাছুটি করছে নয়তোবা মুখ লুকিয়ে কাদছে একাকি হাসপাতালের কোন এক কোণে ।
ভালো থেকো পাগল আমার। নিজের খেয়াল রেখো। পাগলোমো করোনা, আমি তোমার মাঝেই আছি। তোমাতেই থাকবো ।।
২/৪/১৪

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:৩১

হাসান মাহবুব বলেছেন: ইন্নালিল্লাহ!

২| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:৩৬

সামিয়া বলেছেন: আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়। এটা করা মানে আশেপাশের মানুষ রুপি পশুদের খুশি করা।

৩| ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৮:৪৪

বনরুই বলেছেন: @ইতি_সামিয়া absolutely!!!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.