নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাবতে হবে

রাজু আহমেদ তন্ময়

জীবনকে এক পেয়ালা চায়ের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। যতই তৃপ্তির সাথে আমরা তা পান করি ততই দ্রুত তলার দিকে অগ্রসর হতে থাকি। ক্রিনেট

রাজু আহমেদ তন্ময় › বিস্তারিত পোস্টঃ

বখাটে ভালোবাসা,,,

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৫১

'বুঝলেন ভাই,
জিনুকে আমি আমার
জীবনের থেকেও
বেশি ভালবাসি।'
কথাটা বলেই
ছেলেটা মাথা নিচু
করে মাটিতে পা খুঁটতে লাগল।
আমি চায়ের কাপ
টা ছেলেটার
হাতে ধরিয়ে দিলাম।
বাইরে বেশ ঠান্ডা পড়েছে।
রাত প্রায় নয়টা। এই
সময়টা সফদরের চায়ের
দোকানটা প্রায়
খালি হয়ে আসে। সামনের
লেডিস হোস্টেলের
গেটে প্রেমিকদের ভীড় ও
কমে আসে। দুই একটা সদ্য
প্রেমে পড়া পুরুষ গেটের
এপারে দাঁড়িয়ে লোহার
শিকের
ওপারে থাকা প্রেমিকাকে ছোঁবার
চেষ্টা করে।
ছোঁয়া না ছোঁয়ার
প্রেমে খিলখিল
হাসি সফদরের
দোকানে বসে চায়ে চুমুক
দিতে দিতে কান পাতলেই
পাওয়া যায়।
আমি সিগারেটে লম্বা একটা টান
দিয়ে ফুঁ
দিয়ে বাতাসে একদলা ধোঁয়া উড়িয়ে দিলাম।
শীতকালে ফুঁ
দিয়ে ধোঁয়া ওড়ানোর
একটা মজা আছে। দূর
থেকে কেউ
যদি দেখে তাহলে মনে হবে ছেলেটা খুব
ঠান্ডায় মুখ দিয়ে বাষ্প বের
করছে। মানুষ সব সময়
যে নেগেটিভ
চিন্তা করে তা কিন্তু না।
একজন এলোমেলো চুলের
ছেলে সিগারেট
টানছে ব্যাপারটা ভাবার
চেয়ে আজ বড্ড শীত
পড়েছে ভেবে নেওয়া বেশ
সহজ।
আমি ছেলেটার
দিকে তাকালাম।
ছেলেটা চায়ে চুমুক
না দিয়ে দুইহাতে কাপটা ধরে অল্প
অল্প কাঁপতে লাগল। এই
প্রথম খেয়াল করলাম
ছেলেটার বাম হাতে অজস্র
কাটা দাগ। হাতের
দিকে তাকিয়ে আছি দেখে বোধহয়
বিব্রত হয়েই
কিনা হাতটা চাদরের
আড়ালে টেনে নিয়ে বলতে শুরু
করল,
'জিনিয়ার সাথে আমার
রিলেশন তিন বছরের।
জিনিয়াকে আমি আদর
করে জিনু ডাকতাম। জিনু
ডাকলেই
মেয়েটা হাসিতে ভেসে যেত।
জানেন আমার মনে হত এই
হাসি দেখে সারাটা জীবন
কাটিয়ে দিব। বিশ্বাস
করেন আর কিচ্ছু চাওয়ার
ছিল না আমার।'
ছেলেটা নড়েচড়ে বসে এবার
চায়ে চুমুক দিল। চুমুক দিয়েই
মুখটা বিকৃত করে ফেলল।
আমি মুচকি হেসে সিগেরেটে শেষ
টানটা দিয়ে দূরে ছুড়ে ফেললাম।
দীর্ঘ ছয় বছরের ব্যাচেলার
জীবনে একটা জিনিস
আমি আবিস্কার করেছি। সব
গুলো লেডিস হোস্টেলের
সামনের চায়ের দোকানের
চা গুলো মারাত্তক বিস্বাদ
হয়। তারপরও সেই চা লাইন
ধরে কিনতে হয়। আমার
মনে হয় এরা ইচ্ছে করে এমন
বিস্বাদ চা বানায়। কারন
চা বানানোর সময় এদের মুখ
হাসি হাসি থাকে। লেডিস
হোস্টেলের সামনে কেউ
এসেছে অথচ
চা খেয়ে যায়নি অথবা প্রেমিকাকে চা খাওয়ায়নি ব্যাপারটা অসম্মানজনক।
সেটার সর্বোচ্চ
ফায়দা লুটে নেয়
চা দোকানদাররা।
আমার এই ঠান্ডার
রাতে এখনে আসার কোন
ইচ্ছে ছিল না। আসতে বাধ্য
করেছে ছেলেটা। ছেলেটার
প্রেমিকা আমার ক্লাসমেট।
ক্লাসমেট এর সংসার
জুড়ে দেবার মহান
কাজে এখানে এসে পড়েছি আমি।
ছেলেটা নড়েচড়ে বসে আমার
দিকে তাকিয়ে করুন গলায়
বলল, 'আপনাকে খুব বিরক্ত
করলাম। জিনিয়া আমার
সাথে কথা বলতেই
চাইছে না। আপনি ছাড়া আর
কাওকে বলতেও পারছি না। '
-কি যে বলেন না।
আচ্ছা তারপর কি করে এমন
হল?
- ও হ্যা। মাস তিনেক
আগে থেকেই
ব্যাপারটা ধরতে পারি আমি।
আমার জিনু আর আগের মত
নেই। ফোন দিলে ঠিক মত
কথা বলে না। সারাদিন
ব্যাস্ততা, ক্লাস, এক্সামের
অজুহাত।
আমি বুঝতে পারছিলাম
জিনু আর আগের মত
আমাকে ভালবাসেনা।
আমি ছুটে এলাম
দেখা করতে। কিন্তু কোথায়
যেন সুরটা কেটে গিয়েছিল।
এই সব নিয়ে খুব
ঝগড়া হতে লাগল। তারপর
থেকে ওর ফোনে ওয়েটিং এর
পরিমান বেড়ে গেল। আর
আমাদের ঝগড়াটাও। এক
সপ্তাহ আগে একটা খুব বড়
ঝগড়া হয়ে গেল। রাগের
মাথায় আমিও বোকার মত
গালি দিয়ে ফেললাম।
তারপর থেকে মেয়েটা আমার
ফোন ধরছে না। নাম্বারটাও
ব্লক করে দিয়েছে।
ছেলেটা কথাগুলো বলতে গিয়ে বোধহয়
কেঁদে ফেলেছে। মুখ
ঘুরিয়ে চারতলা লেডিস
হোস্টেলের
দিকে তাকিয়ে কি যেন
দেখার চেষ্টা করতে লাগল।
এমন সময় আমার ফোন
বেজে উঠল,
হ্যালো?
-আমি গেটে।
তাড়াতাড়ি আয়। বেশিক্ষন
দাঁড়াতে পারব না।
আমি ফোনটা রেখে গেটের
দিকে এগিয়ে গেলাম।
ছেলেটা আমার পিছু পিছু
আসছে। মুখটায়
আশা নিরাশার আনন্দ
বেদনা খেলা করছে।
আমি গেটের
সামনে দাড়িয়ে আছি।
জিনিয়া এসেছে। এসেই মুখ
ঝামটা দিয়ে বলল, এত
রাতে কি এমন জরুরী কথা?
-শুনলাম তোর আর নাহিদের
নাকি ব্রেকাপ হয়ে গেছে?
-এই কথা বলার জন্য তুই
আমাকে ডেকেছিস?
-ঘটনা কি বলবি তো?
-দ্যাখ অর্ক তুই তো বুঝিস।
নাহিদ আনস্মার্ট, খ্যাত।
কোন পারসোনালিটি নেই।
ওর সাথে আমার থাকা সম্ভব
না। আর আমাকে রায়হান
প্রপোজ করেছে। আই এম ইন এ
রিলেশনশিপ নাউ।
-রায়হান মানে সেই
বখাটে ছেলেটা?
-অর্ক! মাইন্ড ইউর
ল্যাংগুয়েজ। রায়হানের মত
ছেলেই হয় না। তুই কি বুঝবি।
নিজেই তো একটা গাঁইয়া।
-নাহিদ তোকে অনেক
ভালবাসে।
-কুত্তা! তুই আমার কাছে ওর
দালালী করতে এসেছিস?
ছিহ তোকে আমার বন্ধু
ভাবতাম আমি।
জিনিয়া চলে গেছে। মনের
আড়াল তো ছিলই, দরজার
আড়ালটা নাহিদ
কে দেখতে দেয়নি জিনিয়াকে।
নাহিদ কাঁদছে।
কাঁদতে কাঁদতে আমাকে জিজ্ঞেস
করল, আমি এখন কি করব
ভাই?
আমি ফস
করে একটা সিগারেট
ধরিয়ে লম্বা করে একটা টান
দিয়ে বললাম,
বখাটে হতে পারবেন?
আমরা দুজনে ল্যাম্পপোস্ট
এর নিচে দাড়িয়ে আছি।
চারিদিকে ঠান্ডা কুয়াশা ঝরে পড়ছে।
ল্যাম্পপোস্ট এর আলোয়
আমার বাম হাতে অস্পষ্ট
হয়ে আসা কয়েকটা কাটা দাগ
দেখা যাচ্ছে।
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস
ফেলে তিনতলার
একটা জানালার
দিকে তাকালাম। এই
মুহুর্তে একটা জানালাকে ভুলে যাওয়ার
জন্য এক বছর সময়টাকে খুব
ছোট মনে হতে লাগল।
সত্যিকারের
ভালবাসাগুলো সব সময়
ধোঁকাবাজদের জন্য
আমরা তুলে রাখি।
ভালবাসার মানুষ
ধোঁকা দিয়ে ভালবাসা নিয়ে পালায়।
দাগ রেখে যায় শরীরে, মনে।
শরীরের দাগ তো সময়ের
সাথে সাথে মুছে যায়। মনের
দাগটা বোধহয় থেকে যায়।
সারাজীবন
ভালবেসে অভিশাপ দেবার
জন্য। মাঝরাতে কষ্ট
পেয়ে কেঁদে ফেলার মত
অভিশাপ

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:৩৫

এম.এ.জি তালুকদার বলেছেন: পড়লাম। ধন্যবাদ

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:০৮

রাজু আহমেদ তন্ময় বলেছেন: আপনাকেও,,,,,,,,,,

২| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:১৩

দিয়া আলম বলেছেন: কবিতার মত লম্বাটে কেন লেখাটা ?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.