নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাবতে হবে

রাজু আহমেদ তন্ময়

জীবনকে এক পেয়ালা চায়ের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। যতই তৃপ্তির সাথে আমরা তা পান করি ততই দ্রুত তলার দিকে অগ্রসর হতে থাকি। ক্রিনেট

রাজু আহমেদ তন্ময় › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বপ্ন+মৃত্যু

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:২৬

একহাজার টাকা,! আজকের দিনটা খারাফ নাহ, আজকের আয় ভালো, বাজার করতে হবে, ঘরে একমুঠো চালও নেই, আমিনা নিশ্চয়ই পথ চেয়ে বসে থাকবে, মা মরা মেয়েটা একা একা কি করছে কে জানে, পাড়ার ছেলেগুলো ইদানিং খুব বিরক্ত করছে, একা রেখে যেতে ভয় লাগে, তবুও পেটের টানে রেখে যেতে হয়, পেটের টান বড় টান. মেয়েটা কখনযে আস্তে আস্তে বড় হয়ে গেছে খেয়ালই হয়নি, শীতও পড়তে শুরু করছে ব্যপকহারে, আমিনার জন্য একটা শীতের জামা কিনতেই হবে, তিন বছরের পূরোনো জামাটা ছিড়ে গেছে এখানে ওখানে, টাকা না থাকলে অনেক কিছু চোখে পড়লেও যেন পড়েনা, আজকাল জিনিসপাতির গায়ে হাতই দেওয়া যায়না, ফুটপাতের জিনিসেরও কি দাম!! হাটতে হাটতে এসব ভাবছিল সামছু মিয়া, পেশায় একজন'কবিরাজ' সে, দশ বছর ধরে এই পেশার সাথে জড়িত সে, একেকবার একেক এলাকায় যায় সে,, এক এলাকায় দ্বিতীয়বার যায়না সামছু মিয়া, দশ বছরের নিপূন 'কাজের' চাটুকারিতা কাজে লাগিয়ে আজো একজনের কাছ থেকে একহাজার টাকা ভাগিয়েছে সে, ভদ্রলোক মেম্বার, বিশাল বাড়ি, বড় ঘর, টাকাকড়িও আছে বিপুল, তাদের কাছে এই টাকাটা হয়তো হাতের ময়লা, কিন্তু সামছু মিয়ার টাকাগুলো বড় প্রয়োজন ছিল আজ, অনেকদিন ধরে কোন আয়রোজগার নেই তার, মানুষ আজকাল বড় সেয়ানা হয়ে গেছে, ডাক্তার আর হাসপাতাল ছাড়া যেন আর কিছু বোঝেনা, কবিরাজি, বনেদি ঔষধ এইসবে বিশ্বাসই করেনা, 'করবেইবা কেন', নিজের মনে মনে কথাটা বলেই চারপাশে তাকায় সে.. এইবুঝি কেউ শুনে ফেলল..! মনের কথা কেউ শোনেনা-এটা সামছু মিয়াও জানে. তবুও,,,,,,,,,,,,,,,,, সমস্যা মেম্বার ভদ্রলোকের নয়, তার ছেলের, ছেলেটা পোলিওতে আক্রান্ত, মেম্বারের বড় ছেলে সে, এইজন্য ভদ্রলোকের মায়াও বেশি, গিয়ে নিজের পরিচয় দিতেই খাতির যত্ন শুরি করে দেয়, সামছু মিয়ার মন খুশিতে নেচে উঠে, আজ কিছু রোজগার হবে নিশ্চয়ই,, দুই একবার অজানা আশংকায় মন টা কেপে কেপে ওঠে,, মেম্বার ভদ্রলোক নিশ্চয়ই বোকা নয়, সেটা দেখলেই বোঝা যায়, নইলেতো মেম্বার হতে পারতোনা সে, ছেলেটাও শিক্ষিত, পরক্ষনেই আবেঘের কাছে টাকা পয়সা কিছুনা ভেবে ধাতস্থ হয় সামছু মিয়া,, তবুও গলাটা কেমন শুকিয়ে আসে, পানি খেয়ে নেয় সে, টাকার কথা বলে বহু কথাবার্তার পর, একহাজার টাকার কথা বলতেই টাকা নিয়ে আসে ভদ্রলোক, টাকাগুলো দেখেই সামছু মিয়ার বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে ওঠে, মনটা অানন্দে আর আশংকার এপার ওপার করতে থাকে, একটু পরে টাকাগুলো তার হবে, পরক্ষনেই নিজেকে একটা বোকা মানুষ মনে হয়, ইস্,,, যদি আরেকটু বেশি চাইতো- নিশ্চয়ই দিত, নির্ঘাত দিত,, মনেরভাবনার সাথে যে চেহারার পরিবর্তন ছিল-ভদ্রলোক কিংবা তার ছেলে কেউই হয়তো লক্ষ্য করেনি, খেয়াল করলেও হয়তো এর চেয়ে 'রোগী ভালো হবে' এই চিন্তাজগতে বিচরণ করা বেশি ঢের জরুরী ছিল,,,
করেছিলও, নাহলেতো আর এতগুলো টাকা নির্ধিদায় দিয়ে দিতনা,, নাহ্ যতটা চালাক ভেবেছিল ততটা চালাক নয় ভদ্রলোক,, সামছু মিয়ার চেয়ে বোকা মনে হয় তাকে, এখোনো মানুষ এসবে বিশ্বাস করে টাকা দেয় ভেবেই মুচকি হাসে সামছু মিয়া, 'এতটা গর্দভ হয় কি করে মানুষ'
মফঃস্বলের উদ্দেশ্যে বাসে উঠে সামছু মিয়া,, বাসে উঠলে তার অসময়েও ঘুম পায়, আজো তার ব্যতিক্রম হলনা, কিন্তু ব্যতিক্রম হল অন্যখানে,, আজ সে স্বপ্ন দেখছে, একটা জায়গায় এসেছে সামছু মিয়া, জায়গাটা তার খুব পরিচিত লাগছে, আরে! এটাতো তার নিজেরই বাড়ি, কিন্তু তার বাড়িতে এতো লোকজন কেন, পরিচিত অনেকেই দেখছে সে, কেউ দাড়িয়ে, কেউ হাটছে, কি আশ্চর্য্য! সামছু মিয়া অন্য সবার মত হাটছেনা, সে উড়ছে, তার ছোটবেলায় মায়ের মুখে শোনা গল্পের পরীদের মত তারর দুটো ডানা হয়েছে, সে ডানা দিয়ে সে দিব্যি উড়ে বেড়াচ্ছে, উড়তে উড়তে বাড়ির উঠোনের উপর এল, আমিনার খালা কাদছে, আমিনা মারা গেছে! কারা যেন মেরে বাড়ির পাশের ধান ক্ষেতে ফেলে গেছে, পাশের বাড়ির রহিম ভাই দেখে সবাইকে ডেকে তুলে আনে,
আমিনা মাগো,,,,, বিলাপ করতেই ঘুম ভেংগে যায় সামছু মিয়ার, পাশের লোকটা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে, সামছু মিয়ারও কেন জানি মনে হয় এইই আমিনার খুনী, নিজের অজান্তেই হাত চলে যায় কাধে, যেখানে একটু আগেই ডানা ছিল,নাহ্, ওখানটায় তেমন কিছুই নেই, বুকটা ছ্যাঁত করে উঠে সামছু মিয়ার, কি দেখলাম,,,,,,,,,,,
মফস্বলের ফুটপাত থেকে একটা সোয়েটার কিনল, এদিক ওদিক ঘুরে অনেক দরদাম করে একটা জামাও কিনল, কি মনে করে একটা বড় রুই মাছও কিনে নিলো, আজকের দিনটাতে অন্তত ভালো মন্দ খাওয়া যেতে পারে, অনেকদিন ভালোমন্দ খাওয়া হয়না,।
এখান থেকে বাড়ি বেশি দুরে নয় তার, হেটে গেলে দশটা টাকা বেঁচে যাবে, তবুও একটা রিকসা নিল,,
রিকসা ধিরে ধিরে এগুচ্ছে, সামছু মিয়া স্বপ্নের দৃশ্যগুলো ভাবছে, কিন্তু কোথা থেকে বেরসিক ট্রাকটা ছুটে এলো বুঝতেই পারেনি সামছু মিয়া, রক্তাত চোখ দুটো একটু একটু মেলতেই দুটো আবছা অবয়ব দেখতে পায় সে, মনেহয় আজকেই কোথাও দেখেছে, হ্যাঁ, সামছু মিয়া চিনতে পারে তাদের,,,,,,,,
চারদিক অন্ধকার হয়ে আসে, জ্ঞান হারাচ্ছে অথবা মারা যাচ্ছে সামছু মিয়া, মুখে তার গোঙানির মত শব্দ হয়, অস্পষ্ট কন্ঠে বলে"আমায় ক্ষমা করে দিয়েন ভাইসাব"

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.