নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পাঠকের মুগ্ধতাই আমার লেখার প্রেরণা, সত্য প্রচার আমার লেখার উদ্দেশ্য আর মিথ্যাকে বিনাশ করে দিকেদিগন্তে সত্যের আলোকচ্ছটার বিচ্ছুরণই আমার লেখার চূড়ান্ত লক্ষ্য।

বিদ্রহীসূত

রাকীব আল হাসান, সহকারী সাহিত্য সম্পাদক, দৈনিক বজ্রশক্তি।

বিদ্রহীসূত › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঐশীর চিঠির জবাব

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:২৭

ঐশী, পত্রিকার পাতায় তোমার লেখা চিঠিটি ( তুমি যেটাকে সুইসাইড নোট বলেছ সেটা) পড়লাম। তোমাকে নিয়ে লেখা সংবাদ পড়তে পড়তে তোমার প্রতি একটা তীব্র ঘৃণা জন্মেছে সবার মধ্যে কিন্তু আমার মধ্যে জন্মেছিল কৌতুহল, প্রশ্ন। সেই প্রশ্নগুলির কিছু উত্তর পেয়েছি চিঠিটির মধ্যে। ইচ্ছে হোল চিঠির উত্তর লিখবার তাই লিখছি, তবে শুধু তোমার উদ্দেশ্যে নয়, তোমার মতো আরও অনেক ঐশী আমাদের সমাজে আছে এবং সৃষ্টি হবে, তাদের উদ্দেশ্যেও আমার এ লেখা। মানুষ সামাজিক জীব, তাই সমাজের মধ্য দিয়েই তাকে বেড়ে উঠতে হয়। এই সমাজই তার আচার-আচরণ, কৃষ্টি-সংস্কৃতি, চরিত্র ইত্যাদি নিয়ন্ত্রন করে। আর সমাজের সমন্বয়েই গঠিত হয় রাষ্ট্র। কোনো মানুষই মাতৃগর্ভ থেকে অপরাধী হয়ে জন্ম নেয় না, তাকে অপরাধী বানায় এই সমাজ, এই রাষ্ট্রব্যবস্থা। এই সামাজিকতার প্রথম পর্যায় শুরু হয় পরিবার থেকে, পরিবারই তার প্রথম আচার-আচরণগুলি শিক্ষা দেয়। জানি, তুমিও জন্ম নিয়েছিলে নিষ্পাপ, নিষ্কলুষ, পবিত্র একটা আত্মা নিয়ে। ছোটবেলাথেকেই হয়তোবা দেখেছ মা-বাবার মধ্যে চরম বিবাদ, ঝগড়া, যে কোনো বিষয় নিয়ে অনৈক্য; হয়তো তোমার বাবাকে দেখেছ তার বাবার সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে খারাপ আচরণ করতে, তোমার মাকে দেখেছ তার মায়ের সাথে খিস্তি-খেউড় করতে; হয়তো দেখেছ তাদের স্বার্থপরতা, আত্মকেন্দ্রিকতা, আরও অনেক অসৎ কর্ম। তখন থেকেই তোমার মনের মধ্যে তোমার মা-বাবার প্রতি শ্রদ্ধার পরিবর্তে জন্মেছে ঘৃণা। ছোট থেকে বড় হয়েছ চার দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ থেকে, যেখানে আলো বলতে বৈদ্যুতিক বাতির আলো, বাতাশও যেন টাকা দিয়ে কেনা আর বিষাক্ত। একটু বড় হলেই পারিবারিক জীবনের পাশাপাশি মিশতে চেয়েছ কিছু বন্ধু-বান্ধবের সাথে, খেলতে চেয়েছ খোলা আকাশের নিচে, কিন্তু পরিবার থেকেই শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে, গরিব-ছোটলোকদের সাথে খেলতে নেই, তাদের সাথে না মেশায় ভাল। তোমার পরিবারই মানুষকে মাপা শিখিয়েছে অর্থ-বিত্তের মাপকাঠিতে, চরিত্রের মাপকাঠিতে নয়। পর্যায়ক্রমে শুরু করেছ তোমার শিক্ষা জীবন। যে শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে তুমি, আমরা সবাই স্নান করছি তা ইহুদি-খ্রিস্টান জড় ও বস্তুবাদী, আত্মাহীন, স্রষ্টাহীন সভ্যতার সৃষ্ট কু-শিক্ষা ব্যবস্থা। এখানে শুধু সেখানো হয় কিভাবে বেশি উপার্যন করা যায়, কিভাবে ভোগ-বিলাস করা যায়, কিভাবে ধনী হওয়া যায় এগুলি, কিন্তু আত্মিক কোনো শিক্ষা এখানে দেওয়া হয় না। নৈতিক শিক্ষা এখানে অনুপস্থিত; সততা, সত্যবাদিতা, ন্যায়পরায়নতা, মহানুভবতা, ত্যাগ, পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব, ঐক্য, শৃঙ্খলা, আনুগত্য ইত্যাদি যেন কোনো শিক্ষার অংশই না। ফলে শিক্ষাঙ্গন থেকেই জন্ম নিচ্ছে সন্ত্রাস, দুর্নীতিবাজ কুশিক্ষিত একটা শ্রেণী, যারা পরবর্তীতে সমাজের বড় বড় চেয়ারে বসে সমাজ পরিচালনা করছে।

এছাড়াও আমরা শিক্ষা গ্রহণ করে থাকি জাতীয় নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে, গণমাধ্যমের কাছ থেকে, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল থেকে, টেলিভিশন, ইন্টারনেট ইত্যাদি থেকে। কিন্তু আজ শিক্ষা গ্রহণের সকল দ্বারে যেন তালা দিয়ে রেখেছে ইহুদি-খ্রিস্টান বস্তুবাদী, ভোগবাদী, দেহসর্বস্ব আত্মাহীন সভ্যতা। জাতীয় নেতৃবৃন্দ যখন সংসদে দাঁড়িয়ে অপর পক্ষের পরলোকগত নেতৃবৃন্দের গোষ্ঠী উদ্ধার কোরে ছাড়ে, নিজ দেশের বুভুক্ষু জনগণের ত্রাণ কেড়ে নিয়ে বিদেশের ব্যাংকে অর্থ পাচার করে, বস্তাভর্তি টাকা নিয়ে ধরা পড়ে হাতে-নাতে, দুর্নীতি, চাঁদাবাজী, ঘুষ ইত্যাদি অভিযোগে অভিযুক্ত হয় তাদের কাছ থেকে আর কী শিখবে তোমরা। টেলিভিশন, ইন্টারনেট আজ অশ্লীলতার ছোবলে জর্জরিত, ভালর চেয়ে খারাপ অনেক বেশি, শিক্ষার চেয়ে কুশিক্ষা অনেক বেশি। গণমাধ্যমও দুর্নীতি, চাঁদাবাজী, মিথ্যাচার ইত্যাদি অভিযোগ থেকে মুক্ত নয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনের অবস্থা আরও ভয়াবহ সেটা কাওকে বলে দিতে হবে না।

ধর্ম থেকে কিছু শিখবে? সে রাস্তাও আজ কণ্টকাকীর্ণ। ধর্মের নামে রাজনীতি, ধর্মের নামে সন্ত্রাস ইত্যাদি কোরে ধর্মের প্রতি মানুষের আজ আর আস্থা নেই। স্বার্থান্বেষী এক শ্রেণীর আলেম মোল্লারা ধর্মকে ব্যাবসায়ীক পণ্য বানিয়ে কুক্ষিগত করে রেখেছে, সুতরাং সেখান থেকেও কিছু শিখতে পারছি না আমরা।

কাউকে যদি তুমি স্বাস্থ্যবান দেখতে চাও তবে অবশ্যই তাকে খাবার দিতে হবে, তুমি যদি সোজা চোলতে চাও অবশ্যই রাস্তাটিও সোজা হতে হবে। ঠিক একই ভাবে কাওকে যদি তুমি চরিত্রবান দেখতে চাও তবে অবশ্যই তার জন্য পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। তুমি চিঠিতে তোমার মা-বাবার প্রতি প্রচণ্ড ক্ষোভ ও অভিমান প্রকাশ করেছ, কিন্তু তাদেরইবা দোষ দিই কী করে? তারাও তো তোমার মতোই পরিস্থিতির শিকার, তোমার মতোই অনৈতিক পরিবেশের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছে। মানুষ যখন সবার কাছ থেকে আঘাত পায় তখন নীরবে, নির্জনে সৃষ্টিকর্তার কাছে চোখের পানি ফেলে, কিন্তু এই বস্তুবাদী সমাজ তোমাকে সৃষ্টিকর্তার প্রকৃত পরিচয় জানতে দেয় নি, ফলে অজ্ঞতা ও জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে তুমি সৃষ্টিকর্তার প্রতিও অভিমানের তীর ছুড়েছ। ছোটবেলায় যখন দুষ্টুমি করতে গিয়ে শরীরের কোথাও কেটে যেত তখন মা-বাবা আবার মারতেন- এটা তাদের ভালবাসারই প্রকাশ, ঠিক একই ভাবে আত্মহত্যা মহাপাপ এজন্য যে, সৃষ্টিকর্তা তোমায় অনেক ভালবাসেন, কিন্তু তুমি তা বুঝ নি। তোমার চিঠি পড়ে বুঝতে পারলাম তুমি সুখ খুঁজেছ শুধুই ভোগ-বিলাসিতার মধ্যে যেমনটি এসমাজের আর দশজন খোঁজে। মানুষ তো শুধু দেহসর্বস্ব প্রাণী নয়, তার একটি আত্মাও আছে, তোমার মাঝেও ছিল স্রষ্টার আত্মা, তুমি সে আত্মার ক্রন্দন কখনো শোননি, আত্মার চাওয়া কখনো পূরণ করনি অথবা করতে দেওয়া হয় নি। এ সমাজের প্ররোচনায় ভোগবিলাসে মত্ত হয়ে হীন, নীচ পাশবিক যে কর্মকাণ্ড করেছ তার দহনেই দাহিত হয়ে মারা গেছে তোমার আত্মা, তুমি হয়ে গেছ আত্মাহীন।

শুধু শাস্তি দিয়ে, বিচার করে, আইন তৈরি করে অপরাধ দমানো যায় না, এর জন্য অবশ্যই দরকার সমাজব্যবস্থা, রাষ্ট্রব্যবস্থা তথা সিস্টেমের পরিবর্তন। তুমি যে অপরাধ করেছ তার জন্য তুমি তো একা দায়ী নও, এর জন্য তো এ সমাজের প্রত্যেকেই দায়ী। হয়তোবা তোমার শাস্তি হবে এই পৃথিবীর আদালতে, তোমার অপরাধ কিছুটা হালকা হবে, কিন্তু যে সমাজ তোমাকে এমন অবনতির দিকে ঠেলে দিল তার জন্য এ সমাজের প্রত্যেকের দাঁড়াতে হবে মহান সৃষ্টিকর্তার কাঠগড়াই।

তুমি যে সিস্টেমের জাঁতাকলে পড়ে নৈতিক অধঃপতনের নিুস্তরে পৌঁছে প্রায়ান্ধ হয়ে এমন নিকৃষ্ট কর্মটি করেছ, সে সিস্টেম যদি কার্যকর থাকে তবে তোমার মতোই অনেক শিশু-কিশোর নৈতিক অধঃপতনের অতল গহ্বরে নিপতিত হবে বারংবার। হয়তো সে নিজেকে আত্মাহুতি দিয়ে বিষাদময় পৃথিবীকে বিদায় জানাবে, নয়তো তার পৈশাচিক আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে অন্য কারো জীবন নিয়ে। কিন্তু তুমি সহ সকল ঐশীদের জন্য আমার কাছে আছে এক অন্য জীবনের সন্ধান, যেখানে মানুষ শুধু মানুষকে ভালবাসে, হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি, রক্তপাত, দুর্নীতি, নিরাপত্তাহীনতা ইত্যাদির কোনো স্থান নেই সেখানে। আর এই জগৎ থেকে প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে যখন কেউ বিদায় নেবে তখন সে প্রবেশ করবে জান্নাতে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি নৈতিক অধঃপতনের আগে যদি তোমার সাথে আমার দেখা হত তবে আজকের এই পরিণতি তোমার কখনই ভোগ করতে হত না। তুমিও হতে পারতে একজন সোনার মানুষ, তুমি সবার কাছে পরিচিত হতে এক অন্য ঐশী হিসাবে।

আমি যে জগতের কথা বলছি তা হল আল্লাহর দেওয়া সত্যদীন, দীনুল হক, প্রকৃত এসলাম যা ১৩শ’ বছর আগেই হারিয়ে গিয়েছিল, ফলে ক্রমে ক্রমে পৃথিবী আজ অন্যায়, অশান্তিতে পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছে, সমাজ আজ জন্ম দেয় শুধু অসৎ মানুষ। কিন্তু আল্লাহ পাক অশেষ রহম করে সেই প্রকৃত এসলাম আবার বুঝিয়ে দিয়েছেন যামানার এমাম, এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীকে। আমরা হেযবুত তওহীদ, যামানার এমামের অনুসারীরা মানুষকে সেই সত্য মেনে নিতে আহ্বান করছি। এই সত্যদীন, এই আল্লাহর দেওয়া সিস্টেম মেনে নেওয়ার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে সেই সুন্দর জগৎ।

ঐশী, জানি না তোমার বিচারে কী রায় হবে, তুমি যদি কখনো জেল থেকে ছাড়া পাও তোমার প্রতি আমার আহ্বান রইল, এই প্রকৃত এসলামে একবার প্রবেশ করলে দেখতে পাবে পৃথিবী কত সুন্দর, পৃথিবীর মানুষগুলি কত সুন্দর, জীবন কত সুন্দর আর এ জীবনের বিনিময়ে পাবে পরকালীন মুক্তি ও সুন্দর জান্নাত। যে পৃথিবীর প্রতি ঘৃণায় তোমার মন বিষিয়ে উঠেছিল, সেখান থেকে তুমি পালাতে চেয়েছিলে কিন্তু পার নি, নিজের কাছে পরাজিত হয়েছ। দেখবে কী সুন্দর পৃথিবী আমরা গড়েছি, জান্নাতের মতো পৃথিবীটাকে সাজিয়েছি। সেই সময় অতি নিকটে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.