নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পাঠকের মুগ্ধতাই আমার লেখার প্রেরণা, সত্য প্রচার আমার লেখার উদ্দেশ্য আর মিথ্যাকে বিনাশ করে দিকেদিগন্তে সত্যের আলোকচ্ছটার বিচ্ছুরণই আমার লেখার চূড়ান্ত লক্ষ্য।

বিদ্রহীসূত

রাকীব আল হাসান, সহকারী সাহিত্য সম্পাদক, দৈনিক বজ্রশক্তি।

বিদ্রহীসূত › বিস্তারিত পোস্টঃ

জনগণের মাথায় কাঁঠাল ভাঙার মতবাদ গণতন্ত্র

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১৫

গণতন্ত্র হলো ভারসাম্যহীন একটা বস্তুবাদী একটা অসংলগ্ন জীবনব্যবস্থা। ভারসাম্যহীন এইজন্য যে, এটি মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক বিষয়াদির কোন ব্যবস্থা দেয় না, একে মানুষের সময়ের বিবর্তনের উপর ছেড়ে দেয়। কিন্তু মানুষের জীবনের কোন একটি ক্ষেত্রেও বিধি-বিধান বা নিয়ম ছাড়া চলা সম্ভব নয়। ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের এই বিরাট শূন্যতাকে পূরণ কোরতে আমরা আজ গ্রহণ কোরে নিয়েছি পশ্চিমা দেশগুলির জীবনাচরণ ও সংস্কৃতি। সেই সংস্কৃতি আমাদের এই এলাকার অধিকাংশ মানুষের মন-মানসিকতা, ধর্মবিশ্বাস ও সামাজিক মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হোলেও যথার্থ বিকল্প না থাকায় সেগুলিই আমাদের সমাজদেহে স্থায়ী আসন গেঁড়ে বোসেছে। গণতন্ত্র আমাদের এখানে সীমাবদ্ধ কেবলমাত্র নেতানির্বাচনের মধ্যে অর্থাৎ মাত্র একদিন, ভোটের দিন আমরা গণতান্ত্রিক অধিকার লাভ কোরি। সেই অধিকার থেকে আমাদের কোন লাভ না হোলেও লাভ হয় রাজনীতিক নামক একটি বিশেষ শ্রেণির। আমার মতে, ভোটাধিকার হোচ্ছে নিজ গাছের কাঠালের মত। রাজনীতিকরা আমাদেরকে শিখিয়েছেন যে, “আমার গাছের কাঁঠাল আমার মাথায় রাখার পূর্ণ অধিকার, আমার কাঁঠাল আর কেউ মাথায় নিতে পারবে না।” ভোটের দিন আমরা সবাই সেই কাঁঠাল নিজেদের মাথায় রাখি আর রাজনীতিকরা সেটা ভেঙ্গে খাওয়া শুরু করে। তারা পাঁচ বছর ধোরে আমাদের মাথায় সেই কাঁঠাল ভেঙ্গে খেয়ে যান, আর কাঁঠালের আঠা মোছেন আমাদের গায়ে। এটাই গণতন্ত্র থেকে আমাদের প্রাপ্তি। তবু আমরা এত ভালো জনগণ যেন বাপুরাম সাঁপুড়ের সাপ, যে সাপের চোখ নেই, নোখ নেই, শিং নেই, কাউকে কাটে না এমন কি কোন ফোঁসফাসও করে না। তাই তো রাজনীতিকদের মধ্যে জনগণকে ‘ডাণ্ডা মেরে ঠাণ্ডা’ করার প্রবণতা।

গণতন্ত্রের যে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ তা বিশ্বে আজ পর্যন্ত কোথাও প্রতিষ্ঠিত হোয়েছে বোলে কেউ বোলতে পারবে না। সবাই গণতন্ত্রের স্বর্গভূমি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ কোরে থাকেন যে, দেখো গণতন্ত্র কী জিনিস? প্রশ্ন হোল, গণতন্ত্র কি কেবল নির্বাচন? নাকি জীবনেও এর চর্চা করা হবে। তাই যদি হয় তবে তারা জাতিসংঘের পঞ্চশক্তির অধিকাংশ রাষ্ট্রের ভেটো পাওয়ার উপেক্ষা কোরে একের পর এক দেশ আক্রমণ কোরে ধ্বংস কোরে দিচ্ছে? এ কেমন গণতন্ত্রের চর্চা? আসলে গণতন্ত্র তারা চাপিয়ে দিয়েছে নিজেদের আধিপত্যকে জোরদার কোরতে। ব্যাখ্যা কোরছি- গণতান্ত্রিক পদ্ধতি একটি জাতিকে বহুভাগে বিভক্ত কোরে দেয় এবং রাজনৈতিক দলগুলিকে পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রকারান্তরে শত্র“ বানিয়ে দেয়। পাশ্চাত্যের ডিভাইড অ্যান্ড রুল পলিসিটাই এখানে স্বার্থকতা লাভ করে, তারা অভিভাবকের রূপ ধোরে এই সব গণতান্ত্রিক দেশের বিবাদ-বিসম্বাদ মিটিয়ে দিতে আসে আর নিজেদের আধিপত্য, মোড়লিপনা বজায় রাখে।

ব্রিটিশ খ্রিস্টানরা প্রায় সত্তর বছর আগে যখন আমাদেরকে নামে মাত্র স্বাধীনতা দিয়ে চোলে যায় তখন আমাদের কাছে জাতীয় জীবন পরিচালনা করার মত কোন জীবনব্যবস্থা ছিল না। তখন এসলাম আর একটি জীবনব্যবস্থা হিসাবে তার প্রকৃত রূপে নেই, সেটাও হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ধর্মগুলির মতই ব্যক্তিগত ধর্মবিশ্বাসে পরিণত হোয়েছে। তাই ধর্মবিশ্বাসের ভিত্তিতে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা হোলেও সেখানে গণতন্ত্রই চালাতে হোয়েছে। প্রকৃত সত্য হোল, ব্রিটিশরা এই জাতির দায়িত্ব এমন কিছু ব্যক্তির হাতে অর্পণ কোরে যায় যারা জন্মগতভাবে এতদঞ্চলীয় হোলেও চিন্তা-চেতনায় আপাদমস্তক ব্রিটিশদের দাস। তারা প্রভুদত্ত মতবাদ ধর্মনিরপেক্ষতাবাদকেই শিরোধার্য কোরে নিল, কারণ হুজুরের মতে অমত কার? পশ্চিমারা গণতন্ত্রের জোয়ারে ভাসছে, সেই জোয়ারে গা ভাসালো আমাদের শাসক বর্গও। তারা চেয়ে দেখল না যে, ব্রিটিশরা এখনও তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যশীল রাজতন্ত্রের খুঁটি ধোরেই আছে, এবং তারা বাকি দুনিয়াকে শাসন কোরে গেছে গণতন্ত্র দিয়ে নয়, বন্দুক আর চাবুক দিয়ে। কিন্তু আমরা প্রভুদের পা চাটার জন্য জিহ্বা প্রসারিত কোরে দিলাম, একবার দেখলাম না, তাদের ঐ কোর্তা আমাদের গায়ে আঁটে না। যেহেতু মিডিয়া পশ্চিমা প্রভুদের হাতে তাই তাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মানুষ যতই কষ্ট পাক এর বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলে না। গণতন্ত্রের পরীক্ষা নিরীক্ষার ফলে যে ফলাফল আমরা হাতে পেলাম তা মিলিয়ে নেয়া যাক:

১) গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত দল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন না, সাধারণত সরকার গঠনকারী দলের ভোট বিরোধী সকল দলের ভোটের তুলনায় অতি নগণ্য।

২) নেতারা তাদের মেয়াদকালে জনগণের কোন মতেরই প্রতিফলন ঘটান না। যতদিন ক্ষমতায় থাকেন ততদিন তাদের স্বেচ্ছাচারিতা রাজতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র ও সামরিক শাসনকেও হার মানায়। এখানে জনগণের চাওয়া পাওয়ার কোন মূল্য থাকে না।

৩) এই জীবনব্যবস্থা প্রয়োগ করায় আমাদের প্রতিটি গণতান্ত্রিক দেশে হত্যা, রাহাজানি, খুন, দারিদ্র, ছিনতাই পঞ্চাশ বছর আগের থেকে বর্তমানে বহু বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু এই দেশেই যে তা নয়, উন্নত দেশে আরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

৪) এই জীবন ব্যবস্থায় মানুষ চরম ভোগবাদী বস্তুবাদী হয়ে উঠেছে মানুষের যে আত্মা আছে সে জিনিসটা ভুলে গেছে। ফলে নীতি-নৈতিকতা, মানবতা, জ্যেষ্ঠের প্রতি শ্রদ্ধা, মান্যবরকে মান্য করা ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য হারিয়ে গেছে।

৫) এই জীবন ব্যবস্থাটার কোথাও স্রষ্টার কোন ভূমিকা না থাকায় ধীরে ধীরে মানুষ নাস্তিকতাবাদীর দিকে ধাবিত হয়। মানুষের জীবন পরিচালনার জন্য যে স্রষ্টা আছে, তাঁর দেওয়া সেই জীবনব্যবস্থা দিয়ে যে মানুষ শান্তি লাভ কোরতে পারবে এ কথা এখন অধিকাংশ মানুষই বিশ্বাস করে না। অথচ মানুষে ইতিহাস বলে, যুগে যুগে ধর্মের বিধানই মানবজাতিকে শান্তিময় জীবন উপহার দিয়েছে। আর ইহুদি-খ্রিস্টান ‘সভ্যতা’র পদানত হওয়ার পরই মানবজাতি একটি অশান্তির অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হোয়েছে।

৬) বর্তমানের সমাজে নীত নৈতিকতা বলতে কিছু নেই। সম-অধিকার, ক্ষমতায়ন, স্বাধীনতা ইত্যাদি মিছিল পারিবারিক জীবনের সকল শান্তিই কেড়ে নিয়েছে। সমাজে চেইন অব কমান্ড বোলে কোন কথা নেই, রাষ্ট্রনায়কের প্রতিটি হুকুমের বিরোধিতা করাই, তাকে হেয় করাই গণতান্ত্রিক অধিকার। সুতরাং জাতির মধ্যে ঐক্য, শৃঙ্খলা, আনুগত্য কোন কিছুই অবশিষ্ট নেই।

গণতন্ত্র বক্তাদের ভাষায় এখনও শিশু, এখনও সেটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায় নি। এরই মাঝে বহু রক্ত ঝরে গেছে, বহু মানুষ কাবাব হোয়ে গেছে এবং যাচ্ছে। অর্ধ-শতাব্দী পার হোয়ে গেলেও যে মতবাদ শিশু থাকে সেই শিশুর বড় হওয়ার জন্য আর কতকাল অপেক্ষা কোরবেন, আর কত রক্তের বিনিময়ে, কত মানুষের ঝলসে যাওয়ার পর পরিণত হবে গণতন্ত্র? এই শিশুর দুরন্তপনার ভয়াবহতায় এখনই মানবজাতি দিশেহারা, সে যদি বড় হয় তখন মানবজাতিকে পৃথিবী ছেড়েই পালাতে হবে। সে যথেষ্ট বড় হোয়েছে, আর বড় হওয়ার দরকার নেই। আসুন এখনই গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠাই।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪০

উড়োজাহাজ বলেছেন: আসুন এখনই গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠাই।

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৩

বিদ্রহীসূত বলেছেন: ধন্যবাদ মহতী উদ্যোগে পাশে থাকার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.