নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পাঠকের মুগ্ধতাই আমার লেখার প্রেরণা, সত্য প্রচার আমার লেখার উদ্দেশ্য আর মিথ্যাকে বিনাশ করে দিকেদিগন্তে সত্যের আলোকচ্ছটার বিচ্ছুরণই আমার লেখার চূড়ান্ত লক্ষ্য।

বিদ্রহীসূত

রাকীব আল হাসান, সহকারী সাহিত্য সম্পাদক, দৈনিক বজ্রশক্তি।

বিদ্রহীসূত › বিস্তারিত পোস্টঃ

ব্রিটিশ ভারতে টি অ্যাডভার্টাইজিং চা প্রীতির নেপথ্য কারণ

০৯ ই মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০৬

চা সারা পৃথিবীতে একটি জনপ্রিয় পানীয়। জনপ্রিয়তা বা সহজলভ্যতার নিরীখে চায়ের স্থান নিঃসন্দেহে পানির পরেই। কিন্তু প্রতিনিয়ত আমাদের কাপে চা তুলে দেবার মূলে রয়েছেন যারা, সেই চা শ্রমিকেরা দারিদ্র্য আর বঞ্চনার কষাঘাতে দিনের পর দিন ধরে দুঃসহ, মানবেতর জীবনযাপন করে চলেছেন সিলেট, চট্টগ্রাম এবং ভারতের চা-বাগানগুলোয়। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান বা শিক্ষার মত মৌলিক চাহিদার কোনোটাই তাদের মোটামুটিভাবেও পূরণ হয় না। ব্রিটিশ বেনিয়াদের নীল চাষের উন্মত্ততা, নিরীহ কৃষকদের ওপর জুলুম-অত্যাচার, নির্মম নির্যাতনের নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দেশব্যাপী অসংখ্য নীলকুঠি। এ নিয়ে রচিত হয়েছে অনেক ইতিহাস, গল্পকথা। কিন্তু সেই ব্রিটিশদের জুলুমের আরেকটি নিদর্শন ব্রিটিশ চা-বাগানগুলি, যা ইতিহাসের প্রায় উপেক্ষিত অধ্যায়। মুলুকরাজ আনন্দ চা বাগানের শ্রমিকদের নিয়ে বিখ্যাত হিন্দি উপন্যাস লিখেছিলেন। পরে এটির বাংলায় অনূদিত হয় ‘দুটি পাতা একটি কুঁড়ি’ শিরোনামে।

চা আবিষ্কার

প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগের কথা। চীন দেশের শাসক তখন সম্রাট শেননং (Sin Nong)। তিনি ছিলেন বিজ্ঞানমনষ্কও। তিনি জানতেন পানি ফুটিয়ে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্যে ভাল, তাই তিনি সবসময় পানি ফুটিয়ে খেতেন। গ্রীষ্মকালের কোন এক দিনে তিনি রাজ্য পরিদর্শনে বের হোয়েছেন। পথিমধ্যে একটু বিশ্রাম নিতে থামলো সবাই। স¤্রাটের নির্দেশ অনুসারে খাওয়ার পানি ফোটানোর ব্যবস্থা করা হোল। হঠাৎ দমকা হাওয়ায় কিছু শুকনো পাতা উড়ে এল। কিছু পাতা এসে পড়ল ফুটানো পানির মধ্যে। নিমেষেই পানির রং পাল্টে বাদামী হোয়ে গেল। এই দেখে কৌতুহলী স¤্রাট সেই পাতার নির্যাস পানে আগ্রহী হলেন। আর পান করার পর তিনি পেলেন নতুন স্বাদ, দেহমন চাঙ্গা হয়ে উঠলো তার। খুঁজে বের করা হল সেই গাছ যার পাতায় আছে এমন জাদুকরী ক্ষমতা। সেই উদ্ভিদটিই আজকের চা গাছ। টি-এর নামকরণ গ্রিক দেবী থিয়ার নামানুসারে। বিজ্ঞানীদের দেয়া নাম ‘ক্যামেলিয়া সাইনেসিস’। চীনে ‘টি’-এর উচ্চারণ ছিল ‘চি’। চীনা মনীষী লাওৎসে চি’কে ডাকতেন মহৌষধ বা পরশমণি। ভারতবর্ষের শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর ১০৪০ খ্রিষ্টাব্দে তিব্বত ভ্রমণের সময় চা দিয়ে আপ্যায়িত হোয়েছিলেন। চা এর প্রথম বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় চীনে। তবে বেশিদিন না, মাত্র ৩৬৩ বছর আগে ১৬৫০ সালে।



ভারতবর্ষে চা

ভারতবর্ষে চায়ের প্রচলন করে ব্রিটিশরা। ১৯২০ ও ১৯৩০ এর দশকে চা কে জনপ্রিয় কোরতে অনেক মার্কেটিং কলা কৌশলের আশ্রয় নিতে হোয়েছে ব্রিটিশদের। এজন্যে প্রথমে তারা নামমাত্র মূল্যে (একরকম প্রায় বিনামূল্যেই) চা সরবরাহ শুরু করে। পরবর্তীতে ‘অসম চা কো¤পানি’ নামে কো¤পানি গঠন করে ব্রিটিশরা। জোর বিজ্ঞাপনী প্রচারণা শুরু হয়। চা মার্কেটিংয়ের বড় বাজার ছিল মফস্বলের রেল স্টেশন, অবিভক্ত বাংলার হাট-বাজার সহ বিভিন্ন জনসমাগমপূর্ণ এলাকা। লোকাল স্টেশনে খোলা হয় বিনা পয়সার চায়ের দোকান। চটকদার এনামেল বোর্ডে ছেয়ে থাকত ট্রেন স্টেশনগুলি। এমনভাবে বিজ্ঞাপনগুলি প্রচার করা হত যেন সকল সম্প্রদায়ের মিলনসূত্র এই চায়ের পেয়ালা। স¤পদ, স্বাস্থ্য ও সুখ, যা-ই চান, ভরপুর পাবেন চায়ের পেয়ালায়। নেশা দূর করার উপায় চা, মদ্যপান নিবারণের প্রধান অস্ত্রই চা পান, এই কথা মাদ্রাজ থেকে লাহোর পর্যন্ত ছড়িয়ে দিল টি সেলস কমিটি ও টি এক্সপানশন বোর্ড। ‘টি নিউজ আ-ভিউস’ নামে দৈনিক বুলেটিনে ফলাও করে মদ ও গাঁজার নেশা তাড়ানোর ক্ষেত্রে চা-এর সফলতার বিবরণ থাকত। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছিল একটা পোস্টার- বাঙালি বধূ গরম চায়ের কাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, পাশে লেখা- ‘যাহাতে নাহিক মাদকতা দোষ, কিন্তু পানে করে চিত্ত পরিতোষ।’

১৮৪০ সালে বাংলাদেশে প্রথম চা চাষ শুরু। বর্তমান চট্টগ্রাম ক্লাব যেখানে অবস্থিত সেখানকার পাহাড়ী ঢালেই এই চা বাগান গড়ে ওঠে। বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু হয় ১৮৫৭ সালে সিলেটের মালনীছড়ায়। ব্রিটিশরা বিহার, মাদ্রাজ, উড়িষ্যা, মধ্য প্রদেশ ও অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে জোর করে অনেক শ্রমিককে অতি সামান্য পারিশ্রমিকে চা বাগানের কাজে নিয়োজিত করে। এসব শ্রমিকদের অধিকাংশই রোগে ভুগে ও অমানবিক পরিশ্রমে মারা যায়। চা বাগানের এসব শ্রমিকদের বলা হত ‘কুলি’। পরবর্তীতে এদের হাত ধরেই বাংলাদেশের চা শিল্প গড়ে ওঠে। ১৯৪৭ সালের দেশবিভাগের পর বাংলাদেশে ১০৩ টি চা বাগান ছিল যার পরিমাণ ছিল ২৬ হাজার ৭৩৪ হেক্টর।



চা নিয়ে সংঘাত

চায়ের কাপে তুফান বর্তমানে একটি রাজনৈতিক প্রবচনে পরিণত হয়েছে। কিন্তু ক’জন জানেন ভারতবর্ষের দীর্ঘতম গৃহযুদ্ধটি হয়েছিল চা’কে কেন্দ্র করেই? শ্রীলঙ্কার পাহাড়ি অঞ্চলে ব্রিটিশরা চায়ের গাছ খুঁজে পায় ঔপনিবেশিক কালে। কিন্তু স্থানীয় সিংহলিদের মধ্যে চা চাষী বা শ্রমিক না পেয়ে পার্শ্ববর্তী মূল ভূখণ্ডে তামিলভাষীদের বসতি স্থাপন করে। বিশ্বের অন্যতম সেরা স্পিনার মুত্তিয়া মুরালিধরণ এই তামিল চা শ্রমিকদেরই একজন বংশধর। এই নতুন বসতি স্থাপনার ইস্যুতে স্বাধীনতার পর থেকে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধে রত ছিল শ্রীলঙ্কা। হিন্দু তামিল আর বৌদ্ধ সিংহলীরদের মধ্যে আজ পর্যন্ত সংঘর্ষের পরিণতিতে মারা গেছে এক মিলিয়নেরও বেশি, উদ্বাস্তুর সংখ্যা অগণিত।

ভারতের আসাম ও সেভেন সিস্টার্সেও একই ঘটনা ঘটেছিল। চায়ের আবাদ করতে গিয়ে স্থানীয় অধিবাসীদের বাস্তচ্যুত করে সেখানে হতদরিদ্র শ্রমিকদের বসতি স্থাপন করেছিল ব্রিটিশরা। যার মাধ্যমে এ অঞ্চলে প্রাচীন তিব্বতি-বর্মি সমাজ বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালা আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরুও চা’কে কেন্দ্র করেই। অধিক শুল্কে চা কিনবে না বলে স্যামুয়েল অ্যাডামসের নেতৃত্বে বোস্টন বন্দর থেকে চায়ের পেটি ফেলা হয় সাগরে, যা থেকে আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রামের সূত্রপাত। স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে ব্রিটেনে চা পান ছিল রাজভক্তির প্রকাশ আর আমেরিকায় তা ছিল দেশদ্রোহীর পানীয়। অবশ্য উচ্চ শুল্ক আরোপের নেপথ্যে ছিল বিশ্বের প্রথম আন্তর্জাতিক লড়াইয়ে পুঁজির যোগাড়। ফরাসী ও ইংরেজদের উপনিবেশগুলো ধরে রাখাই ছিল উদ্দেশ্য।

১৬০৬ সালে ইউরোপে ওলোন্দাজ ব্যবসায়ীরা প্রথম যখন চা নিয়ে যায় তখন এর বিশ্বায়নের রূপ তারা কল্পনাও করে নি। সম্ভবত চৈনিক এই পানীয়ের বাজার পরীক্ষাই ছিল প্রথম উদ্দেশ্য। কিন্তু এক শতাব্দীর মধ্যে চা হয়ে ওঠে দারুণ গুরুত্বপূর্ণ। ব্রিটিশরা হাজার হাজার টন চা চীন থেকে আমদানি করতে শুরু করে। কিন্তু বিনিময়ে চীন ব্রিটিশ পণ্য আমদানিতে আগ্রহ না দেখানোয় ঘটে প্রথম আফিম যুদ্ধ (১৮৩৯-১৮৪২)। চায়ের বদলে আফিম কেনার চুক্তিতে আসতে ব্রিটিশ বেনিয়ারা বাধ্য করে চীনাদের। ঔপনিবেশিকরা তাদের ব্যবসায় স্বার্থেই সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়েছে চা। তাই চা সব অর্থেই একমাত্র বৈশ্বিক পানীয়।

(তথ্য সংগ্রহ: ইন্টারনেট)

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই মে, ২০১৪ সকাল ৭:২৩

পংবাড়ী বলেছেন: ইন্টারেস্টিং পোস্ট, ভালো লেগেছে!

২| ১২ ই মে, ২০১৪ ভোর ৬:২৯

পংবাড়ী বলেছেন: আমি আবারো দেখলাম।

১৫ ই মে, ২০১৪ রাত ১২:১৫

বিদ্রহীসূত বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.