নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পাঠকের মুগ্ধতাই আমার লেখার প্রেরণা, সত্য প্রচার আমার লেখার উদ্দেশ্য আর মিথ্যাকে বিনাশ করে দিকেদিগন্তে সত্যের আলোকচ্ছটার বিচ্ছুরণই আমার লেখার চূড়ান্ত লক্ষ্য।

বিদ্রহীসূত

রাকীব আল হাসান, সহকারী সাহিত্য সম্পাদক, দৈনিক বজ্রশক্তি।

বিদ্রহীসূত › বিস্তারিত পোস্টঃ

শাসকই পারেন সত্যযুগ ফিরিয়ে আনতে

১৪ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৪:১৫



সনাতন ধর্মমতে মানবজাতির জীবনে চারটি কালের আবর্তন ঘটে - সত্যযুগ, ত্রেতাযুগ, দ্বাপর যুগ, কলিযুগ। যুগগুলিকে কালও বলা হয়। এই কালের আবর্তন কি প্রাকৃতিক নিয়মে আপনা আপনি হয় নাকি মানুষের কাজ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় এ নিয়ে এখনও অনেক প্রশ্ন ওঠে। প্রচলিত বিশ্বাসমতে মনে করা হয় কালের এই আবর্তনে মানুষের কোন হাত নেই, মানুষ নিরপেক্ষ দর্শকমাত্র। কিন্তু আসলে কিন্তু তা নয়। আল্লাহ প্রতিটি যুগে তাঁর নবী-রসুল ও অবতারগণের মাধ্যমে যে জীবনব্যবস্থা মানুষকে দান কোরেছেন সেই জীবনব্যবস্থার পূর্ণ বাস্তবায়ন সমাজে পূর্ণ শান্তি আনয়ন করে, এটাই হোচ্ছে সত্য সত্যযুগ। এই যুগে প্রায় সকলের হৃদয়েই স্রষ্টার উপস্থিতি বিরাজ করে, ফলে মানবজীবনে বিন্দুমাত্রও অন্যায় অবিচার থাকে না। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা ইত্যাদি ঋতুগুলি মানুষের রোগের কারণ না হোয়ে নিরাময়ের কারণ হয়, প্রতিটি মানুষের কথা, বাহ্যিক রূপ ও অন্তর নির্মল হয়। মানুষ দীর্ঘ নিরোগ সুখী জীবনের অধিকারী হয়। প্রচুর ফসল উৎপন্ন হয়, ঔষধি বৃক্ষ, ফলমূল সবকিছু প্রচুর খাদ্যগুণসম্পন্ন হয়।

যদি আল্লাহর বিধানের এক তৃতীয়াংশ বিধান পরিত্যাগ করা হয় তবে সত্যযুগে বিরাজিত শান্তির এক তৃতীয়াংশ হ্রাস পায়, এটাই হোচ্ছে ত্রেতাযুগ। অর্ধাংশ বিধান পরিত্যাগ করা হলে সমাজের শান্তির ভাগও দাঁড়ায় সত্যযুগের অর্ধেক। আর যদি আল্লাহর বিধান শাসনকার্য থেকে সম্পূর্ণরূপেই বাদ দেওয়া হয় তবে সমাজ অন্যায় অশান্তি রক্তপাতে পরিপূর্ণ হোয়ে যায়। বর্তমানে আমাদের সমাজের প্রতিটি অঙ্গন এ কারণেই অন্যায় আর অবিচারে পূর্ণ। এই অবস্থা থেকে মানবজাতির মুক্তির এখন একটাই পথ, সত্যযুগ আগমনের অপেক্ষা না কোরে আল্লাহর দেওয়া বিধানগুলি সামগ্রিক জীবনে প্রতিষ্ঠা করা। আল্লাহর প্রেরিতদের ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ আগমন করেছেন মহানবী মোহাম্মদ (দ: ) যাঁকে সনাতন ধর্মগ্রন্থে কল্কি অবতার, নরাশংস, অন্তিম ঋষি, মামহ ইত্যাদি নামে অভিহিত করা হোয়েছে। সমগ্র মানবজাতিতে প্রচলিত প্রাচীন ধর্মগুলির সর্বশেষ সংস্করণ নিয়ে এসেছেন তিনি। সুতরাং সকল ধর্মের শান্তিকামী মানুষের এখন কর্তব্য পৃথিবীতে প্রচলিত পাশ্চাত্য সভ্যতার প্রবর্তিত জীবনব্যবস্থার ব্যর্থতা প্রমাণিত হওয়ার পর পুনরায় সত্যযুগের প্রবর্তন ঘটানোর লক্ষ্যে শেষ জীবনব্যবস্থাটিকে গ্রহণ কোরে নেওয়া। গ্রহণ কোরে নিলে কি ফল আসবে সেটা বোঝার জন্য মহাত্মা ব্যাসদেব বিরচিত মহাভারত থেকে কিছু কথা হুবহু তুলে দিচ্ছি।

যুধিষ্ঠির (আ: ) এর প্রতি মহামতি ভীষ্মের উপদেশ:

“কাল রাজার কারণ, কি রাজা কালের কারণ, এ বিষয়ে তোমার কিছুমাত্র সন্দেহ করিবার প্রয়োজন নাই। রাজাই কালের কারণ। রাজা যখন দণ্ডনীতির অনুসারে সুচারুরূপে রাজ্যপালন করেন, তখনই সত্যযুগ নামে শ্রেষ্ঠ কাল উপস্থিত হয় ঐ কালে বিন্দুমাত্রও অধর্ম্মসঞ্চার হয় না। সকল বর্ণেরই অন্তকরণ ধর্ম্মবিষয়ে আসক্ত থাকে। প্রজাগণ অলব্ধবস্তু লাভ ও লব্ধবস্তু পরিবর্দ্ধন করে। বৈদিক কর্ম্মসমুদয় দোষশূন্য হয়। ঋতুসকল নিরাময় ও সুখাবহ হইয়া ওঠে। মানবগণের স্বর, বর্ণ ও মনঃনির্ম্মল হয়। ব্যাধিসমুদয় তিরোহিত হইয়া যায়। প্রজাগণ দীর্ঘায়ু হইয়া পরমসুখে কালযাপন করে। বিধবা স্ত্রী বা কৃপণ পুরুষ কুত্রাপি দৃষ্টিগোচর হয় না। পৃথিবী কৃষ্ট না হইয়াও শস্যোৎপাদন করে। ঔষধি, ত্বক, পত্র ও ফলমূলসমুদয় তেজঃসমম্পন্ন হইয়া ওঠে। অধর্ম্ম এককালে তিরোহিত এবং ধর্ম্ম সর্ব্বত্র পরিব্যাপ্ত হয়। সত্যযুগে এইরূপে ধর্ম্মেরই প্রাদুর্ভাব হইয়া থাকে।

“যখন রাজা চতুস্পদ দণ্ডনীতির তিনপদ গ্রহণ করিয়া রাজ্যপালন করেন। সেই কালকে ত্রেতাযুগ কহে। তখন পাপের একপাদমাত্র সঞ্চারিত হয়। তখন পৃথিবী কৃষ্টা না হইলে প্রচুর পরিমাণে শস্য উৎপাদনে সমর্থ হয় না। যখন রাজ দণ্ডনীতির অর্দ্ধাংশ পরিত্যাগপূর্ব্বক অর্দ্ধাংশ গ্রহণ করিয়া প্রজাপালন করেন, সেই কালকে দ্বাপরযুগ কহে। দ্বাপরযুগে অধর্ম্মের দুইপদ ভূমণ্ডলে সঞ্চারিত হয়। তখন পৃথিবী কৃষ্টা হইয়াও সত্যযুগে অকৃষ্টাবস্থায় যে ফল উৎপাদন করিত তাহার অর্দ্ধেক ফল উৎপাদন করে। যে সময় নরপতি একমাত্র দণ্ডনীতি পরিত্যাগপূর্ব্বক বিবিধ প্রকারে কষ্ট প্রদান করেন, সেই কালকে কলিযুগ কহে। কলিযুগে সকলেই প্রায় অধর্ম্মানুষ্ঠানে নিরত হয়। ধর্ম্মানুষ্ঠান তিরোহিতপ্রায় হইয়া যায়। সকল বর্ণেরই স্বধর্ম্মত্যাগ প্রবৃত্তি জন্মে। শূদ্রেরা ভিক্ষাবৃত্তি ও ব্রাহ্মণেরা দাস্যবৃত্তি অবলম্বন করিয়া জীবিকানির্ব্বাহ করেন। সমুদয় লোকই মঙ্গলহীন এবং সর্ব্বত্র বর্ণসঙ্কর প্রাদুর্ভূত হয়। বৈদিক কার্য্যসকল অপরিশুদ্ধ এবং ঋতুসমুদয় ক্লেশকর ও রোগজনক হইয়া উঠে। মনুষ্যগণের স্বর, বর্ণ ও মনোবৃত্তির হ্রাস হইয়া যায়। নানাপ্রকার ব্যাধি ও অকালমৃত্যু জীবনগণকে আক্রমণ করিতে আরম্ভ করে। রমণীগণ বিধবা ও প্রজাগণ নৃশংস হইতে থাকে। নিরূপিত সময়ে বৃষ্টিপাত বা শস্যোৎপত্তি হয় না এবং সমুদয় রস ক্ষীণ হইয়া যায়।

“অতএব রাজাকেই সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলিযুগের কারণ বলিতে হইবে। যে রাজা হইতে সত্যযুগের উৎপত্তি হয়, তিনি সম্পূর্ন স্বর্গসুখ অনুভব করেন; যাঁহা হইতে ত্রেতাযুগের উৎপত্তি হয়, তিনি ত্রিপাদ স্বর্গÑসুখভোগে অধিকারী হয়েন,যাঁহা হইতে দ্বাপরযুগের উৎপত্তি হয়, তিনি দ্বিপাদ স্বর্গসুখ অনুভব করিয়া থাকেন; আর যিনি কলিযুগোৎপত্তির কারণ হয়েন, তাহাকে সম্পূর্ণ পাপ ভোগ করিতে হয়। কলির রাজা স্বীয় দুষ্কর্ম্মনিবন্ধন প্রজাগণের পাপে মগ্ন হইয়া ইহলোকে অকীর্ত্তিলাভ ও পরলোকে বহুদিন ঘোর নরকে বাস করেন।

“ক্ষত্রিয় দণ্ডনীতির অনুগামী হইয়া সর্ব্বদা অপ্রাপ্ত বস্তুর লাভাকাঙক্ষা ও প্রাপ্ত বস্তুর রক্ষা করিবেন। দণ্ডনীতি যথানিয়মে প্রযুক্ত হইলে সুশৃঙ্খলতাসম্পাদন মাতা পিতার ন্যায় মঙ্গল-বিধান করে। উহার প্রভাবেই প্রাণীগণ জীবিত থাকে। দণ্ডনীতি অনুসারে কার্য্য করা রাজার প্রধান ধর্ম্ম; অতএব এক্ষণে তুমি নীতিপরায়ণ হইয়া ধর্ম্মানুসারে প্রজপালন কর, তাহা হইলে দুর্জ্জয় স্বর্গলোক জয় করিতে পারিবে।” (কালীপ্রসন্ন সিংহ অনূদিত মহাভারত প্রথম খণ্ড, পৃ: ৬০৭)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জুন, ২০১৫ রাত ১২:১৬

মোহাম্মদ জামিল বলেছেন: সহমত

২| ১২ ই জুন, ২০১৫ রাত ১২:২৯

ভয়ংকর বিশু বলেছেন: যেমন জনগন তেমন শাসক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.