নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পাঠকের মুগ্ধতাই আমার লেখার প্রেরণা, সত্য প্রচার আমার লেখার উদ্দেশ্য আর মিথ্যাকে বিনাশ করে দিকেদিগন্তে সত্যের আলোকচ্ছটার বিচ্ছুরণই আমার লেখার চূড়ান্ত লক্ষ্য।

বিদ্রহীসূত

রাকীব আল হাসান, সহকারী সাহিত্য সম্পাদক, দৈনিক বজ্রশক্তি।

বিদ্রহীসূত › বিস্তারিত পোস্টঃ

দুর্নীতি দমন কিভাবে সম্ভব?

১৫ ই মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১২

রাকীব আল হাস:

দুর্নীতি শব্দের আভিধানিক অর্থ রীতি বা নীতিবিরুদ্ধ আচরণ, কুনীতি, অসদাচরণ ও নীতিহীনতা ইত্যাদি। রাষ্ট্রীয় কোষাগারের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা থেকে শুরু করে গ্রাম্য বাজারে পানি মিশ্রিত দুধ বিক্রিও দুর্নীতির আওতাভুক্ত। তবে সাধারণত বড় ধরনের অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা, ক্ষমতার অপব্যবহার, অবৈধভাবে অর্থআত্মসাৎ ও বিভিন্ন আইনবিরোধী এবং নীতিবিরুদ্ধ কর্মকাণ্ডকেই আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্নীতি হিসাবে ধরা হয়। অভিধানে Corruption এর অর্থ লেখা হয়েছে Willing to use power to do dishonest and illegal things in return for money or to get advantage. আর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল এর মতে Corruption is the abuse of public office for private gain.

মানুষ সৃষ্টির প্রারম্ভে আল্লাহ যখন সব ফেরেশতা বা মালায়েকদের সামনে তাঁর প্রতিনিধি প্রেরণের ইচ্ছা প্রকাশ করলেন, তখন সমস্ত মালায়েক একবাক্যে বলেছিল যে, ‘আপনি এমন একটি সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন যারা পৃথিবীতে ফাসাদ ও সাফাকুদ্দিমা করবে (সুরা বাকারা ৩০)?’ আরবিতে আল-ফাসাদ একটি ব্যাপকার্থক শব্দ যার মধ্যে যাবতীয় অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার, দুর্নীতি সবই এসে যায়। আর সাফাকুদ্দিমা অর্থ রক্তপাত অর্থাৎ যুদ্ধ-বিগ্রহ, হানাহানি ইত্যাদি। এই দু’টি সমস্যাই মানব ইতিহাসের সূচনালগ্ন থেকে মানবজাতির সামষ্টিক জীবনের সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে আছে। এ দু’টি সমস্যার সমাধানের জন্যই আল্লাহ দিয়েছেন সত্য জীবনব্যবস্থা যার ফল হচ্ছে শান্তি অর্থাৎ ইসলাম।

দুর্নীতির মাধ্যমে শুধুমাত্র দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিরাই আপাতদৃষ্টিতে বস্তুগতভাবে কিছুটা লাভবান হলেও জাতির অর্থনীতি ও সমাজব্যবস্থা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যায়। এই সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রধান কারণ হলো (১) নীতি-নৈতিকতাহীন সমাজ ও শিক্ষাব্যবস্থা এবং (২) অপরাধীর সঠিক শাস্তি না হওয়া। এই দুইটি বিষয়ের যে কোন একটির ঘাটতি থাকলে অন্যায় বিস্তার লাভ করবেই। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, যতদিন পর্যন্ত আল্লাহর দেওয়া বিধি-বিধানের মাধ্যমে সমাজ পরিচালিত হয়েছে ততোদিন সমাজে দুর্নীতির তেমন কোন নজির পাওয়া যায় না। আমাদের এই উপমহাদেশে অসততা ও দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার ঘটে মূলত ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে। এর আগে বিকৃত ইসলামের অনুসারী বাদশাহদের আমলে দুর্নীতি সমাজের উচ্চ পর্যায়ে কিছু থাকলেও সেটা সমাজকে একেবারে গ্রাস করে ফেলে নি। একজন মুসলিমের কথার মূল্য ছিল জীবনের চেয়েও বেশি, খাদ্যে ভেজাল দেওয়ার কথা মানুষ ভাবতেও পারতো না। অথচ ভারতবর্ষে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী তাদের এদেশীয় কিছু রাজা, জমিদার ও রাজপুরুষদের সঙ্গে দুর্নীতির মাধ্যমে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে। তারা নিজেদের স্বার্থে এদেশের সম্পদ, সম্মান ও স্বাধীনতা বিক্রি করে দেয়। নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে সিংহাসনচ্যুত করার জন্য তার প্রধান সেনাপতি মীর জাফর, বঙ্গের বিখ্যাত ধনী জগৎশেঠ, কলকাতার বড় ব্যবসায়ী উমিচাঁদ, রাজা রাজবল্লভসহ অসংখ্য নবাব কর্মচারী দুর্নীতির মাধ্যমে ইংরেজদের সাথে হাত মেলায়। এই সময় বহু আট-দশটাকার কর্মচারী রাতারাতি কোটিপতিতে পরিণত হয়। ইংরেজরা এই দেশের অর্থশালী ও বিত্তহীন সর্বশ্রেণির মানুষের চরিত্র ধ্বংস করার জন্য এবং আফিম ব্যবসার বিস্তার ঘটানোর জন্য রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে এ অঞ্চলের মানুষকে মাদকাসক্ত করে তুলেছিল। এই সময়ের মধ্যে তারা উপমহাদেশের সিংহভাগ সম্পদ লুট-পাট করে নিয়ে গেছে তাদের দেশে, আর আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়ে গেছে নীতিহীন বস্তুবাদী এক শিক্ষাব্যবস্থা ও সমাজব্যবস্থা। বর্তমানে আমাদের সমাজে দুর্নীতির অবস্থান এতই শক্তিশালী যে দেশের সাধারণ মানুষ দুর্নীতির কাছে পরাজয় বরণকে ভাগ্য বলে মেনে নিয়েছে। এমনকি এদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনও এই অভিযোগের বাইরে নেই।

আজও পশ্চিমা সভ্যতা আমাদেরকে প্রতিনিয়ত শেখাচ্ছে যে, জীবনযাত্রার মনোন্নয়নই জীবনের লক্ষ্য। যে শিক্ষা আমরা প্রচলিত সিলেবাস, সংস্কৃতি ও মিডিয়া থেকে গ্রহণ করছি তা ইহুদি-খ্রিস্টান জড়বাদী, আত্মাহীন, স্রষ্টাহীন, পরলোকহীন সভ্যতার সৃষ্ট কু-শিক্ষা ব্যবস্থা। এখানে শুধু সেখানো হয় কিভাবে বেশি উপার্জন করা যায়, কিভাবে পশ্চিমাদের মত ভোগ-বিলাস করা যায়, কিভাবে আরও ধনী হওয়া যায় এগুলি, কিন্তু আত্মিক বা নৈতিক কোনো শিক্ষা এখানে নেই। সততা, সত্যবাদিতা, ন্যায়পরায়ণতা, মহানুভবতা, ত্যাগ, পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব, ঐক্য, শৃঙ্খলা, আনুগত্য ইত্যাদি যেন শিক্ষার অংশই না। ফলে শিক্ষাঙ্গন থেকেই জন্ম নিচ্ছে সন্ত্রাস, দুর্নীতি, অন্যের সম্পদ লুটে পুটে খাওয়ার মানসিকতাসম্পন্ন কুশিক্ষিত একটা শ্রেণী, যারা পরবর্তীতে সমাজের বড় বড় চেয়ারে গিয়ে বসছে। শিক্ষাব্যবস্থায় নিচের শ্রেণিগুলিতে ‘ধর্ম’ বিষয় থাকলেও তা নামমাত্র এবং সেখানেও এসলামের প্রকৃত শিক্ষা নেই।

পাশ্চাত্য সভ্যতার চাপিয়ে দেওয়া সিস্টেমের বেড়ি এই জাতি যতদিন গলায় পরে থাকবে ততদিন তারা অন্যায়, অশান্তি, দুর্নীতি, সন্ত্রাস কোন কিছু থেকেই মুক্ত হতে পারবে না। সিস্টেমই এসবকে টিকিয়ে রাখবে। এই সিস্টেমটাই এমন যে আপনার কোন কাজ আদায় করতে অফিসের পিওন থেকে শুরু করে বড় কর্তা পর্যন্ত ঘুষ বিতরণ করবেন না, আপনার কাজ আটকে যাবে। এটা বিশ্বাসযোগ্য নয় যে প্রতিটি তরুণ পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেয় ঘুষ খাওয়ার জন্য কিন্তু সিস্টেমের কারণে তারা বাধ্য হয় অসৎ হতে। দেখা যায় নিচু থেকে উঁচু পর্যায়ের সব অফিসারের মধ্যেই বণ্টন হয় সেই অবৈধ পয়সা। যদি কোন পুলিশ অফিসার সৎ থাকতেও চান, অসৎ ক্ষমতাশালীদের চাপে তাকে বদলী হয়ে যেতে হয় পার্বত্য বান্দরবন অথবা ভুরুঙ্গামারিতে।

আপনি শিক্ষক হয়ে সৎ জীবনযাপন করতে চান, দেখবেন সংসার চালানোর টাকা নেই। আপনার আদর্শবাদিতা ও সততার জন্য আপনি সর্বত্র হবেন ধিকৃত। অথচ আপনার চোখের সামনেই আপনার সহকর্মীরা স্কুলে/কলেজে নামমাত্র পড়িয়ে কোচিং বাণিজ্য করে দিব্যি ভালো রোজগার করছেন। এক সময় আপনিও বাধ্য হবেন টাকার কাছে আদর্শকে বিসর্জন দিতে। আর রাজনৈতিক নেতাদের জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কি সে আলোচনায় না হয় নাই গেলাম। সামষ্টিক জীবনে যদি দুর্নীতি থাকে ব্যক্তিচরিত্র কলুষিত না হয়ে পারে না- যেমন ঘরের ছাদে যে পানির ট্যাঙ্ক থাকে সেখানে যদি দূষণ ঘটে, রান্নাঘরে, গোসলখানায় ভালো পানি পাওয়া সম্ভব নয়। কাজেই আমাদের শিক্ষা যখন আদর্শহীন, জাতি তখন আদর্শবান হোতে পারে না। দুর্নীতি দূর করার জন্য যত কঠোর আইনই করা হোক দুর্নীতিবাজরা ঠিকই তার ফাঁক খুজে বের করে ফেলবে, সব মানুষকে সব সময় পাহারা দেওয়াও সম্ভব নয়। একমাত্র উপায়, সর্বদ্রষ্টা আল্লাহর উপস্থিতির ধারণা যদি মানুষের মনে জাগ্রত থাকে তবে মানুষ একান্ত নির্জনেও অন্যায় করবে না। এরপরও কিছু মানুষ থাকবে যারা অপরাধ-মনস্ক। তাদেরকে অন্যায় থেকে ফিরিয়ে রাখার জন্য আল্লাহর বিধানও কায়েম থাকতে হবে। এই ভাবেই দেহ ও আত্মার ভারসাম্যপূর্ণ জীবনব্যবস্থা সমাজে প্রতিষ্ঠা করবে পূর্ণ শান্তি।

([email protected])

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই মে, ২০১৪ রাত ৮:৫৯

মোঃ মোশাররফ হোসাইন বলেছেন: থাকুক না ভাই, ঘুষের আমি, ঘুষের তুমি....

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.