নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পাঠকের মুগ্ধতাই আমার লেখার প্রেরণা, সত্য প্রচার আমার লেখার উদ্দেশ্য আর মিথ্যাকে বিনাশ করে দিকেদিগন্তে সত্যের আলোকচ্ছটার বিচ্ছুরণই আমার লেখার চূড়ান্ত লক্ষ্য।

বিদ্রহীসূত

রাকীব আল হাসান, সহকারী সাহিত্য সম্পাদক, দৈনিক বজ্রশক্তি।

বিদ্রহীসূত › বিস্তারিত পোস্টঃ

অতীত রক্তাক্ত, বর্তমান দগ্ধ আর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:১০

একটি জাতি যখন মরণাপন্ন হয়, তাকে রক্ষা করবে ঐ জাতির সন্তানেরাই। মায়ের বিপদে সন্তান যদি এগিয়ে না যায় তাহলে সে সন্তানের আর প্রয়োজন কী?
আমাদের অর্থাৎ এই বাঙালি জাতির অতীত রক্তাক্ত, বর্তমান দগ্ধ আর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। সামনে আমাদের বিপদ। মিথ্যা যে সমাজকে আচ্ছন্ন করে ফেলে, যেখানে সবাই স্বার্থকেন্দ্রিক, আত্মকেন্দ্রিক হয়, সত্যভাষণ মূল্যহীন হয়ে যায়, দুর্নীতি যাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করে, যেখানে নির্দোষ মানুষ সাজা পায় আর অপরাধী সম্মানিত হয় সে জাতি একসময় অবশ্যই ধ্বংস হয়ে যায়। এটা মানবজাতির ইতিহাসের দিকে তাকালে সবাই দেখতে পাবেন। আমাদের দেশে সেটা হয়েছে। তাই মানুষের সামনে সমূহবিপদ তা অনুধাবন করে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া একান্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
আমরা বাঙালিরা জাতিগতভাবে সহজ-সরল, তাই সহজেই হুজুগে মাতি। একই ভুল আমরা বারবার করি এবং বারবার তার পরিণাম ভোগ করি। দুইশত বছর আমরা ব্রিটিশদের অধীনে ছিলাম। তারা এ জাতিটিকে নিয়ে হাজারো ষড়যন্ত্রের খেলা খেলেছে, আত্মাহীন শিক্ষাব্যবস্থার দ্বারা তারা এ জাতির চরিত্র-হরণ করেছে, রাজনীতি ও মামলা-মকদ্দমার সিস্টেম চালু করে এ জাতিকে মিথ্যাবাদী বানিয়েছে, এ জাতির মধ্যে হীনম্মন্য দাস মনোবৃত্তি সৃষ্টি করে দিয়েছে। তারা আমাদের গৌরবময় ইতিহাসকে বিকৃত করেছে, আমাদেরকে লাঞ্ছিত করেছে, আমাদের সমুদয় সম্পদ হরণ করে যাওয়ার সময় আমাদের হাতে ভিক্ষার থলে ধরিয়ে দিয়ে গেছে। তারা শাসন করেছে ‘Divide and ru অর্থাৎ ভাগ করো শাসন করো’ নামক ষড়যন্ত্রমূলক নীতি দিয়ে এবং যাওয়ার সময় এ সিস্টেমটাই চাপিয়ে দিয়ে গেছে, যাতে করে আমরা চিরকাল মারামারি, হানাহানি, কাটাকাটি, দাঙ্গা ফাসাদ করতে থাকি, আমাদের মধ্যে কোনো জাতীয়তাবোধ, দেশপ্রেম, ভাতৃত্ববোধ সৃষ্টি না হয়, আমরা যেন সব সময় পশ্চিমা প্রভুর মানসিক দাস হয়ে থাকি, সর্ববিষয়ে প্রভুদের তাঁবেদারি করে চলি, তাদের দিকে ভিক্ষার হাত বাড়িয়ে থাকি, তাদের ভাষা, তাদের সংস্কৃতিতে নিজেদের অলংকৃত করি। এইভাবে পশ্চিমাদের শক্তিশালী প্রভাববলয়ে থেকে, তাদের সিস্টেমের অন্ধ অনুকরণ করে করে প্রতিনিয়ত হাজারো সমস্যায় জর্জরিত হতে হতে আমরা আজ একপ্রকার বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হয়ে গেছি। আমাদের পিঠের চামড়া মার খেতে খেতে গণ্ডারের মতো হয়ে গেছে, যতই পেটানো হয়, আমরা বিনা প্রতিবাদে মার খেয়ে যাই। আমরা চলমান বস্তুবাদী, আত্মাহীন সিস্টেমের চাবুক খেতে খেতে সর্বস্ব হারিয়ে কাঁদি, কিন্তু রুখে দাঁড়ানোর চিন্তা করি না। আমরা প্রতিদিন প্রতারক রাজনীতিকদের ছলনাময় শব্দজাল দ্বারা প্রতারিত হই। যে রাজনীতির মানেই সন্ত্রাস, সে রাজনীতির কাছেই আমরা সমাধান আশা করি। আমাদেরকে জীবন্ত পুড়িয়ে ফেলা হয়, তারপর নেতারা এর দায়ভার একে অপরের উপর চাপানোর চেষ্টা করেন। নেতারা চশমা খুলে চোখের পানি মোছেন আর বলেন, আমাদেরকে গণতন্ত্রের পথে ফিরতে হবে। আমরা জনগণ পরবর্তী নির্বাচন না আসা পর্যন্ত টিভির পর্দায়, পত্রিকার পাতায় মানুষের অঙ্গার দেখি, আর নির্বাচন এলেই লাইন ধরে ভোট দিতে দাঁড়িয়ে যাই। কোনো কারণে যদি ভোট দিতে না পারি আমরা চিৎকার করি, ‘আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দিন।’ হায়রে দুর্ভাগা জাতি! কবে আমাদের বোধদয় হবে, কবে আমরা বুঝব যে, আগুনে পুড়ে মরাই আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। একটি ভোটের বিনিময়ে নিজেদের নিরাপত্তা, সমাজের নিরাপত্তার সমস্ত দায়িত্ব আমরা সরকারের উপর চাপিয়ে দিয়ে নির্বিকার জীবনযাপন করে এই বোমা খাওয়ার অধিকার আমরা অর্জন করেছি।
এভাবেই আমরা বছর বছর মরব। আমাদেরকে অবরুদ্ধ করে রাখবে রাজনীতির নামে, আমাদের সহায়, সম্পদ ভস্মীভূত করে দেবে, আমাদেরকে ঘর থেকে বের হতে দিবে না। না খাইয়ে মারবে। লাশের রাজনীতি ঘুমন্ত যাত্রী, নারী-শিশুর উপর বোমা মারবে। আমরা আসমানের দিকে তাকিয়ে হাউমাউ করে কাঁদবো, অজানা শত্র“কে অভিসম্পাত করব। তারপর আবার সব ভুলে যাব। আবার আমরা দোকান খুলব, আমাদের ফসল মাঠে নষ্ট হবে, আবারও আমরা সেই মাঠে ফিরব, আমরা চাকরি-বাকরি করব, টিফিন ক্যারিয়ার হাতে অফিসে যাব। আমরা ফুটবল ফুটবল, ক্রিকেট ক্রিকেট করে দিকভ্রান্তের মত চিৎকার করব। কিছুদিন পর আবার আমাদেরকে বোমা মারা হবে, আবার পুড়িয়ে মারা হবে, আবার আমরা কাঁদব...। এভাবেই কি আমরা মরতে মরতে বাঁচব আর বাঁচতে বাঁচতে মরব? এই প্রতারক সিস্টেম পরিবর্তন করার জন্য আমাদের মাঝে কি কোনো প্রচেষ্টা আসবে না, চেতনা আসবে না? নাকি আমরা গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে তকদিরে যা আছে সেটাই হবে এমন মনোভাব নিয়ে বসে থাকব? এ সিদ্ধান্ত আজ জাতিকে নিতে হবে।
আসুন বললেই কেউ ছুটে আসে না, আদরের ডাকে আর ঘুম ভাঙবে না। একসময় এই ঘুম কালঘুম হয়ে দাঁড়াবে। যেমন কালঘুমে ঘুমিয়েছিল ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তানের মানুষগুলো। আজ সে দেশগুলো জনমানবহীন, বিবর্ণ, ধ্বংস¯তূপ। তাই এ জাতিকে আজ জাগাতে হলে শক্ত আঘাত না করে উপায় নেই। আমরা নিজের চোখের সামনে আপনজনকে পুড়তে দেখছি, তাদেরকে কবর দিচ্ছি, তারপর আবার নিজেদেরকে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়ছি। ভবিষ্যতে আর যেন কাউকে এমন করুণ পরিণতির সম্মুখীন হতে না হয়, সেজন্য কোনো উদ্যোগ নিচ্ছি না। ফলে ভবিষ্যতে আমারও অঙ্গার হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। কেন? আমরা কি এতই নিরুপায়? ষোল কোটি মানুষ কি এই সমস্যার সমাধান করতে অক্ষম? না। তবে কেন আমরা দেশের প্রয়োজনে, জাতির প্রয়োজনে অন্ততপক্ষে নিজের আত্মরক্ষার জন্য এ সমাজব্যবস্থাকে পরিবর্তন করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হচ্ছি না।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:২৬

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: এভাবেই কি আমরা মরতে মরতে বাঁচব আর বাঁচতে বাঁচতে মরব? এই প্রতারক সিস্টেম পরিবর্তন করার জন্য আমাদের মাঝে কি কোনো প্রচেষ্টা আসবে না, চেতনা আসবে না? নাকি আমরা গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে তকদিরে যা আছে সেটাই হবে এমন মনোভাব নিয়ে বসে থাকব? এ সিদ্ধান্ত আজ জাতিকে নিতে হবে।

+++++++++++++++

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৩৮

বিদ্রহীসূত বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.