নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পাঠকের মুগ্ধতাই আমার লেখার প্রেরণা, সত্য প্রচার আমার লেখার উদ্দেশ্য আর মিথ্যাকে বিনাশ করে দিকেদিগন্তে সত্যের আলোকচ্ছটার বিচ্ছুরণই আমার লেখার চূড়ান্ত লক্ষ্য।

বিদ্রহীসূত

রাকীব আল হাসান, সহকারী সাহিত্য সম্পাদক, দৈনিক বজ্রশক্তি।

বিদ্রহীসূত › বিস্তারিত পোস্টঃ

দীনের ভিত্তি হলো সার্বভৌমত্ব

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩১

মানুষ সামাজিক জীব, কাজেই একটা জীবন-ব্যবস্থা ছাড়া সে পৃথিবীতে বসবাস করতে পারে না। এই জীবনব্যবস্থাই হলো দীন। সুতরাং এই জীবন-ব্যবস্থা বা দীনের আইন-কানুন, দণ্ডবিধি, অর্থনীতি, সমাজবিধি সবই থাকতে হবে এবং এর একটা সার্বভৌমত্বও অবশ্যই থাকতে হবে; সার্বভৌমত্ব ছাড়া তা চলতেই পারবে না। সার্বভৌমত্বই হচ্ছে সকল প্রকার জীবনব্যবস্থার ভিত্তি। যখনই আইন, দণ্ডবিধি, অর্থনীতি বা যে কোনো ব্যাপারেই কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হবে তখনই একটা সার্বভৌমত্বের প্রয়োজন হবে। উদাহরণ: সমাজে অপরাধ দমনের জন্য নরহত্যার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত কিনা। কিংবা সমাজের সম্পদ সঠিক এবং সুষ্ঠু বিতরণের জন্য অর্থনীতি সুদ ভিত্তিক হওয়া সঠিক কিনা। সমাজের নেতারা যদি ঐসব বিষয়ে আলোচনা, পরামর্শ, যুক্তি-তর্ক করেন তবে তা অনন্তকাল ধরে চলতে থাকবে- কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছান যাবে না। কারণ এসব বিষয়ে প্রত্যেকেরই মতামত আছে। একদল বলবেন নরহত্যার অপরাধে মৃত্যুদণ্ড আইন না করলে সমাজে নরহত্যা থামবে না, বাড়বে; আরেকদলের মত এই হবে যে, মৃত্যুদণ্ড বর্বরোচিত, নৃশংসতা- এ কখনো আইন হতে পারে না; আরেক দল হয়ত এই মত দিবেন যে, একটি নরহত্যার জন্য মৃত্যুদণ্ড না দিয়ে একাধিক নরহত্যার জন্য মৃত্যুদণ্ড আইন করা হোক। একাধিক অর্থে কয়টি নরহত্যা করলে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে, দুইটি না একশ’টি তাও প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াবে। এবং এ বিতর্ক অনন্তকাল চলতে থাকবে।
অনুরূপভাবে সমাজের অর্থনীতি সুদ-ভিত্তিক হওয়া সঠিক, না লাভ-লোকসান ভিত্তিক হওয়া উচিত এ নিয়ে বিতর্কের কোনোদিন অবসান হবে না যদি না সিদ্ধান্ত নেবার মতো একটা ব্যবস্থা না থাকে। কাজেই যে কোনো জীবন-ব্যবস্থায়ই শেষ সিদ্ধান্ত নেবার জন্য একটি স্থান থাকতেই হবে। অন্যথায় জীবন-ব্যবস্থার যে কোনো ব্যাপারে পরামর্শ আলোচনায় বসলে তা অনন্তকাল চলতে থাকবে। এই শেষ সিদ্ধান্ত নেবার ও দেবার কর্তৃত্ব ও অধিকারই হচ্ছে সার্বভৌমত্ব। এই সার্বভৌমত্ব হতে পারে মাত্র ২ প্রকার। যিনি সৃষ্টি করেছেন তাঁর, অর্থাৎ স্রষ্টার; কিংবা সৃষ্টের অর্থাৎ মানুষের। স্রষ্টা অর্থাৎ আল্লাহ্ মানুষের জন্য একটা জীবন-ব্যবস্থা দিয়েছেন যাকে তিনি বলেছেন দীন, সুতরাং তিনি নিজেই সেটার সার্বভৌম। ঐ দীনের মধ্যেই তিনি মানুষের জীবনে যা কিছু প্রয়োজন আইন- কানুন, দণ্ডবিধি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, শিক্ষা, এক কথায় ব্যক্তি, পরিবার, গোষ্ঠী, জাতি যে কোনো পর্যায়ে অবিচার, অশান্তি, অন্যায় অপরাধহীন একটা সমাজ গঠন করে সেখানে বাস করার জন্য সিদ্ধান্ত দিয়ে দিয়েছেন। মানুষ যদি স্রষ্টার ঐ সিদ্ধান্ত অর্থাৎ আদেশগুলি মেনে নিয়ে সেই মোতাবেক তার ব্যক্তিগত, সামাজিক ও জাতীয় জীবন পরিচালিত করে তবেই সে আল্লাহ্র সার্বভৌমত্বকে মেনে নিল। আর যদি সে আল্লাহ্র দেয়া সিদ্ধান্তগুলিকে অস্বীকার করে তবে তাকে অতি অবশ্যই অন্য একটি জীবন-ব্যবস্থা অর্থাৎ দীন তৈরি করে নিতে হবে, কারণ একটা জীবন-ব্যবস্থা ছাড়া মানুষ পৃথিবীতে বাস করতে পারে না। তা অসম্ভব। এই নতুন জীবন-ব্যবস্থা তৈরি করতে গেলেই সেখানে অতি অবশ্যই একটা শেষ সিদ্ধান্তের স্থান, অধিকার থাকতে হবে; এবং যেহেতু স্রষ্টার সাবভৌমত্বকে ত্যাগ করা হলো সেহেতু এই শেষ সিদ্ধান্তের স্থান, কর্তৃত্ব, অধিকার (Authority) হতে হবে সৃষ্টির অর্থাৎ মানুষের।
মুসলিম নামধারী জনসংখ্যাসহ সমগ্র মানবজাতি, আজ স্রষ্টা আল্লাহ্র সার্বভৌমত্ব (উলুহিয়াহ্) ত্যাগ করে মানুষের সার্বভৌমত্বকে গ্রহণ করেছে। এই দুই সার্বভৌমত্ব বিপরীতমুখী, একটি স্রষ্টার, অন্যটি সৃষ্টের; এ দু’টি পরস্পর সাংঘর্ষিক। আল্লাহ্র সার্বভৌমত্বের ওপরই ইসলাম প্রতিষ্ঠিত, এই সার্বভৌমত্ব ছাড়া কোনো ইসলাম নেই। আল্লাহ্র এই সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্য ইহুদি-খ্রিস্টান সভ্যতা আজ দাঁড়িয়েছে সৃষ্টির অর্থাৎ মানুষের সার্বভৌমত্বের প্রতিভূ, প্রতিনিধি হয়ে। হওয়ার কথা ছিল এই যে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ অর্থাৎ আল্লাহ্র সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসের দাবিদার ‘মুসলিম’ জাতি নিজেদের সর্বপ্রকার বিভেদ ভুলে যেয়ে একতাবদ্ধ হয়ে মানুষের সার্বভৌমত্বের প্রতিনিধি পাশ্চাত্য সভ্যতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। দুর্ভাগ্যক্রমে তা তো হয়ই নাই বরং এই ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ যেক্রকারী, নামাজ, রোজা, হজ্বব্রত পালনকারী মুসলিম হবার দাবীদার জনসংখ্যা প্রায় সবটাই পাশ্চাত্য ইহুদি-খ্রিষ্টানদের তৈরি গণতন্ত্র, রাজতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, না হয় একনায়কতন্ত্রের কোনো না কোনটা মেনে নিয়ে তাদের আনুগত্য করছে।
এর কারণ বর্তমান দুনিয়াতে যে ইসলামটি চালু আছে তাতে এই আল্লাহর সার্বভৌমত্ব অর্থাৎ তওহীদ নেই। তওহীদহীন ইসলাম মানেই প্রাণহীন, আত্মাহীন জড়বস্তু। আল্লাহকে মানুষের ইলাহ’র আসন থেকে সরিয়ে সেখানে পাশ্চাত্য ‘সভ্যতা’-কে অর্থাৎ মানুষকে বসিয়ে যে আনুষ্ঠানিকতাসর্বস্ব ধর্ম পালন করা হচ্ছে তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা আমাদের বৃহত্তর ও সমষ্টিগত জীবনে গায়রুল্লাহর সার্বভৌমত্বকে স্বীকার ও গ্রহণ করে নিয়ে শুধুমাত্র ব্যক্তিজীবনের সার্বভৌমত্বটুকু আমরা আল্লাহর জন্য রেখেছি। সেই জাল্লে-জালাল, আযিজুল জব্বার, স্রষ্টা ভিক্ষুক নন যে তিনি এই ক্ষুদ্র তওহীদ গ্রহণ করবেন। তাছাড়া ওটা তওহীদই নয়, ওটা শেরক ও কুফর। পরিষ্কার করে উপস্থাপন করতে গেলে এমনি করে করতে হয়:
১- রাজতন্ত্র (সার্বভৌমত্ব- রাজা, বাদশাহ বা সম্রাটের)
২- গণতন্ত্র (সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারণের প্রতিনিধির)
৩- সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদ (জনসাধারণের একটি বিশেষ শ্রেণির)
৪- ফ্যাসিবাদ (এক নায়ক, ডিকটেটরের)
৫- ইসলাম (আল্লহর)
এই বিন্যাসই এ কথা পরিষ্কার করে দিচ্ছে যে সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো আপোস সম্ভব নয়। ওপরের যে কোনো একটাকে গ্রহণ করতে হবে। আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে বাদ দিয়ে অন্য যে কোনটি স্বীকার, গ্রহণ করে নিলে সে আর মুসলিম বা মো’মেন থাকতে পারে না। কোনো লোক যদি ব্যক্তিগত জীবনে আল্লাহ বিশ্বাসী এবং জাতীয় জীবনের ওপরের যে কোনটায় বিশ্বাসী হয় তবে সে শেরক করল। আর উভয় জীবনেই কোনো লোক যদি আল্লাহর সার্বভৌমত্ব বাদে ঐগুলির যে কোনটায় বিশ্বাস করে তবে সে কুফর করল। তাই এই মুসলিম দাবিদার জনসংখ্যাটি তাদের জাতীয় জীবনে কেউ সমাজতন্ত্র, কেউ রাজতন্ত্র, কেউ একনায়কতন্ত্র ইত্যাদি তন্ত্র-মন্ত্র, ism, cracy ইত্যাদি মেনে চলছে অর্থাৎ আল্লাহর সার্বভৌমত্ব বাদ দিয়ে ঐ সমস্ত তন্ত্রমন্ত্রের সার্বভৌমত্ব মানছে, এভাবে তারাও শেরক ও কুফরে নিমজ্জিত রয়েছে। কাজেই এই জাতির পরিণতি দুনিয়াময় এই লাঞ্ছনা, অপমান, গোলামি আর পরকালে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে ভয়াবহ জাহান্নাম।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৬

চাঁদগাজী বলেছেন:


এ যুগের মানুষ ধর্মীয় শাসন থেকে অনেক উন্নত শাসন ব্যবস্হা কায়েম করেছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.