![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাকীব আল হাসান, সহকারী সাহিত্য সম্পাদক, দৈনিক বজ্রশক্তি।
নদী কভু পান নাহি করে নিজ জল,
তরুগণ নাহি খায় নিজ নিজ ফল,
গাভী কভু নাহি করে নিজ দুগ্ধ পান,
কাষ্ঠ, দগ্ধ হয়ে, করে পরে অন্নদান,
শস্য জন্মাইয়া, নাহি খায় জলধরে,
সাধুর ঐশ্বর্য শুধু পরহিত-তরে।
রজনীকান্ত সেনের এই কবিতাটি আমাদের সকলেরই জানা। প্রকৃততির দিকে তাকালেই আমরা দেখতে পাই- প্রতিটা প্রাণী, প্রতিটা বস্তুই নিজের জীবনকে, নিজের অস্তিত্বকে উৎসর্গ করে অন্যের জন্য। এভাবেই পৃথিবী টিকে থাকে, পৃথিবী সুন্দর হয়। সূর্য সমগ্র সৃষ্টিকে তাপ ও আলো দেয়, নদী-সমুদ্র পানি দেয়, গাছপালা ফলমুল আর অক্সিজেন দেয়, সাপ-ব্যাঙ ইত্যাদি ইকোসিস্টেম রক্ষা করে, কোন কোন প্রাণী মানুষের খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়। আবার কিছু সৃষ্টি মানুষকে স্রষ্টা সম্পর্কে ভাবিয়ে তোলে, জ্ঞানচক্ষুর উন্মীলন ঘটায়, কেউ বা ঘটায় চিত্তবিনোদন। প্রতিটা সৃষ্টিরই উদ্দেশ্য থাকে। সার্বিকভাবে সমগ্র সৃষ্টির উদ্দেশ্য মানবজীবনের সুখ-শান্তি। এজন্য সকল সৃষ্টিই মানুষের কল্যাণে কাজ করে।
যদি কোন সৃষ্টি মানুষের সেবায় কাজে আসে তবেই তার সৃষ্টির উদ্দেশ্য স্বার্থক। যেমন একটি কলম দিয়ে যদি লেখা হয়, একটি মোবাইল ফোন দিয়ে যদি কথা বলা হয়, একটি বই যদি জ্ঞান সম্প্রচারে কাজে আসে, একটি সুর যদি মানবহৃদয়ে প্রশান্তি যোগায় তবেই সেগুলির সৃষ্টি বা জন্ম স্বার্থক। একইভাবে একটি গরুর স্বার্থকতা তখনই যখন মানুষ তাকে দিয়ে নিজের প্রয়োজন পূরণ করবে। তার দুগ্ধ পান করবে, তাকে দিয়ে হাল চাষ করাবে বা তাকে খেয়ে নিজের শরীরকে পুষ্ট করবে। এজন্যই গরুর সৃষ্টি। সুতরাং গরু-ছাগল-উট-মহিষ ইত্যাদি যদি মানুষের দ্বারা ভুক্ত হয় তবেই তাদের জন্মগ্রহণের উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয়। এখন প্রশ্ন হল, কিসে আসবে মানবজনমের স্বার্থকতা, কিসে হবে তার পরমার্থলাভ, মোক্ষ ও নির্বাণ? কবি লিখেছেন -
আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে
আসে নাই কেহ অবনী ‘পরে,
সকলের তরে সকলে আমরা,
প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।
মানুষের জীবনের উদ্দেশ্যে কেবল উদরপুর্তি, সংসারবৃদ্ধি ও দেহত্যাগ করা নয়। সে যদি জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নিজের জীবন নিয়েই বিব্রত থাকে তবে সেটা তো হীন পশুর জীবন। মানুষকে তো পশু হিসাবে সৃষ্টি করা হয় নি, সে আল্লাহর রূহ ধারণকারী, আল্লাহর নিজ হাতে সৃষ্ট আশরাফুল মাখলুকাত। আল্লাহ তাঁর জীবনের উদ্দেশ্য স্থির করে দিয়েছেন যে, মানুষ তার সমগ্র জীবনকালকে যদি আত্মস্বার্থ কোরবানি দিয়ে মানুষের কল্যাণে উৎসর্গ করতে পারে তবেই তার মানবজন্মের সার্থকতা।
পশু যেমন মানুষের জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়ে জীবন স্বার্থক করে, তেমনি মানুষও মানবজাতির শান্তি প্রতিষ্ঠায় তথা সত্য, ন্যায়বিচার, নিরাপত্তা, সাম্য প্রতিষ্ঠায় অর্থাৎ পরার্থে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে নিজের জীবনকে যেন সার্থক করতে পারে। মানুষ যদি এই প্রত্যয় করে যে, সে বাঁচবে মানবতার কল্যাণে, মরবে মানবতার কল্যাণে, জ্ঞান লাভ করবে মানুষকে দেওয়া জন্য, জগতের উন্নতির জন্য দুটো পয়সা রোজগারের জন্য নয় তবেই এই পৃথিবীতে তার আসার উদ্দেশ্য সার্থক হল। অন্যথায় - কে বলে মানুষ তারে পশু সেই জন।
মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা না করে, সমাজের মানুষকে অশান্তির মধ্যে ফেলে রেখে যারা জান্নাত, স্বর্গ, হ্যাভেন পাবার আশায় উপাসনা করে যাচ্ছেন, মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা নির্মাণ করে যাচ্ছেন তাদের উভয় জগতই করুণ হবে।
স্বর্গের প্রত্যাশা বাদ দিয়ে পৃথিবীকেই স্বর্গ বানানোর চেষ্টা করেন তবে উভয় জগতই সুন্দর হবে।
২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:৫৭
বিদ্রহীসূত বলেছেন: সেটা আপনার বিশ্বাস।
২| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৫৮
প্রামানিক বলেছেন: স্বর্গের প্রত্যাশা বাদ দিয়ে পৃথিবীকেই স্বর্গ বানানোর চেষ্টা করেন তবে উভয় জগতই সুন্দর হবে।
চমৎকার লেখা। ধন্যবাদ
১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:০৫
বিদ্রহীসূত বলেছেন: মন্তব্যের জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।
৩| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৭:৫২
প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: ভাল বলেছেন।
২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:৫৬
বিদ্রহীসূত বলেছেন: লেখাটি লিখেছি আমার বিশ্বাস থেকে। আমি নিজেও চাই আমার জীবন মানুষের জন্য ব্যয় করতে, আর চেষ্টাও করছি সেটাই। লেখাটি পড়ে যদি একটি মানুষও তার জীবন অন্যের তরে বিলিয়ে দিতে অনুপ্রাণিত হয় তবেই আমার লেখাটি স্বার্থক হবে।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
৪| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৫৪
উড়োজাহাজ বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন। আরো লিখতে থাকুন।
২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৫৮
বিদ্রহীসূত বলেছেন: অনুপ্রেণার জন্য ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৫৮
চাঁদগাজী বলেছেন:
স্বর্গ হলো রূপকথার গল্প।