নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পাঠকের মুগ্ধতাই আমার লেখার প্রেরণা, সত্য প্রচার আমার লেখার উদ্দেশ্য আর মিথ্যাকে বিনাশ করে দিকেদিগন্তে সত্যের আলোকচ্ছটার বিচ্ছুরণই আমার লেখার চূড়ান্ত লক্ষ্য।

বিদ্রহীসূত

রাকীব আল হাসান, সহকারী সাহিত্য সম্পাদক, দৈনিক বজ্রশক্তি।

বিদ্রহীসূত › বিস্তারিত পোস্টঃ

দাড়ি-টুপির ইসলাম ও আমার কিছু কথা

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:২৬

ধর্ম নিয়ে, ইসলাম নিয়ে কথা বলতে গেলে, লেখালেখি করতে গেলে অনেকে বলেন- আপনার মুখে তো দাড়ি নাই, মাথায় টুপি নাই, পাগড়ী নাই, গায়ে জুব্বা নাই ইত্যাদি আপনি আবার কী ইসলামের কথা বলবেন! আগে তো নিজেদের শরীরে ইসলাম কায়েম করতে হবে।
এ প্রশ্নের জবাবে প্রথমেই আমি বলব, ইসলাম আসলে কী এবং কেন, তা আগে আমাদের বুঝতে হবে। যদি এই প্রশ্ন দুটির উত্তর আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়, তাহলে আশা করি আমরা বুঝতে পারব আসলে দাড়ি, টুপি, পাগড়ীর সাথে ইসলামের সম্পর্ক কতটুকু।
ইসলাম শব্দের অর্থ হলো শান্তি। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যখন সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে তখন ঐ শান্তিপূর্ণ সমাজকেই বলা যাবে ইসলাম। ইসলাম বা শান্তি হচ্ছে সত্য-জীবনব্যবস্থা প্রয়োগের ফল। অর্থাৎ দীনুল হক্ব কার্যকরী করা হলে মানবজীবন থেকে অন্যায় অবিচার বিলুপ্ত হয়ে যে নিরাপত্তা, সুবিচার, ন্যায় ইত্যাদি অর্থাৎ এক কথায় শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে- এই শান্তিটাই হচ্ছে ইসলাম। এটা ইতিহাস সুতরাং অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে, ১৪০০ বছর আগে অর্ধেক পৃথিবীতে এই দীন প্রবর্তন করার ফলে ঐ সমস্ত এলাকায় মানবজীবনের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত, অর্র্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে সকল প্রকার শোষণ, অবিচার, অন্যায়, নিরাপত্তাহীনতা দূরীভূত হয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল চূড়ান্ত শান্তি, নিরাপত্তা ও সুবিচার, তথা ইসলাম।
এই হলো ইসলামের সঠিক আকিদা বা ধারণা। এই ধারণা মোতাবেক আসলে ইসলামের সাথে দাড়ি, টুপি, পাগড়ী, জুব্বার সম্পর্ক কোথায়? ইসলাম নির্ভর করে মানবজীবনের শান্তি-অশান্তির উপর। আল্লাহ প্রেরিত দীনুল হক্ব হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ। অর্থাৎ রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, বিচারব্যবস্থা ইত্যাদি সব কিছুই এই জীবন-ব্যবস্থার এক একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, এসব কিছু মিলেই দীনুল হক্ব নামক বৃক্ষ পূর্ণতা পায়, আর এই পূর্ণাঙ্গ বৃক্ষের শান্তি নামক ফল হচ্ছে ইসলাম। সুতরাং যারা শরীরে ইসলাম নাই এই প্রশ্ন করেন তাদের কাছে আমার প্রশ্ন- শান্তি কি শরীরে ধারণ করা যায়, নাকি সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে হয়? একটি দেশের সব মানুষ যদি দাড়ি রাখে, টুপি পরে, জোব্বা গায়ে দেয় কিন্তু তাদের অর্থনীতি যদি পুজিবাদী হয়, বিচারব্যবস্থা ন্যায়ভিত্তিক না হয়ে ভারসাম্যহীন, জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরজবরদস্তিমূলক আইন দ্বারা হয় তাহলে কি সেই দেশে শান্তি এসে যাবে? সাধারণ জ্ঞান কী বলে?
অনেকের ধারণা এই যে, দাড়ি ছাড়া ইসলামই হয় না, সেই দাড়ি তো আল্লাহর রসুলের বিরোধিতাকারী, ঘৃণিত কাফের আবু জেহেল, আবু লাহাব, ওতবা, শায়েবার মুখেও ছিল। তারাও জুব্বা পরত, রসুল (সা.) যে জুব্বা পরতেন ঠিক একই ধরনের জুব্বা। প্রকৃতপক্ষে দাড়ি, টুপি, পাগড়ি, জুব্বার সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নাই, প্রকৃতির আবহাওয়া, ভৌগোলিক অবস্থার সাথে এগুলোর সম্পর্ক রয়েছে।
টুপি তো ইহুদিরা, শিখরা বা অন্যান্য ধর্মের ধর্মগুরুরাও পরেন, তাদেরও দাড়ি আছে, তারাও জুব্বা পরেন, তাদের অনেকেই পাগড়ী পরেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাড়ি, টুপি, জোব্বা সবই ছিল, আপনাদের দৃষ্টিতে সে তো হিন্দু। শুধু ধর্মীয় সাধু সন্ন্যাসী নয়, আল্লাহর অস্তিত্বে সম্পূর্ণ অবিশ্বাসী হিসাবে পরিচিত অনেকেরই দাড়ি ছিল যেমন কার্ল মার্কস, চার্লস ডারউইন, আব্রাহাম লিঙ্কন প্রমুখ যাদেরকে আপনারা নাস্তিক বলেন। দাড়ি-টুপিই যদি ইসলামের পরিচায়ক হতো তাহলে এরাও তো ইসলামেরই ধারক হবার যোগ্য! আসলে দাড়ি-টুপি-পাগড়ী-পাজামা-জোব্বার সাথে ইসলামের সম্পর্ক নেই। এগুলো নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করা নেহায়েত বোকামীর শামিল। ছোটখাটো বিষয় নিয়ে মতবিরোধে গিয়ে মূল উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে যাওয়া একপ্রকার মূর্খতা বলে আমি মনে করি।
গত কয়েক শতাব্দী ধরে এই জাতির দুর্ভাগ্যজনক পরাজয়ের কারণ এগুলিই। অথচ এটা ইতিহাস যে রসুলের একদল সর্বত্যাগী সাহাবী যাদেরকে আসহাবে সুফফা বলা হতো, তারা বাড়ী-ঘরে যেতেন না, মসজিদে নববীতে থাকতেন আর অপেক্ষা করতেন রসুল (সা.) কখন কী হুকুম দেন এবং সঙ্গে সঙ্গে সে হুকুম বাস্তবায়ন করতেন, সেই সাহাবীদের অনেকেরই গায়ে জুব্বা তো দূরের কথা ঠিকমত লজ্জাস্থান ঢাকার মতো কাপড় সংস্থান করতেও কষ্ট হত।

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:৩২

জুলহাস খান বলেছেন: সময় উপযোগী। ধন্যবাদ

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৩

বিদ্রহীসূত বলেছেন: মন্তব্যের জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।

২| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩১

চাঁদগাজী বলেছেন:

"সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যখন সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে তখন ঐ শান্তিপূর্ণ সমাজকেই বলা যাবে ইসলাম। "

-ইসলাম দ্বারা শান্তি প্রতিস্ঠা হয়নি কোন কালে; শান্তি সম্ভব মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিস্ঠার মাধ্যমে; তা হলো আধুনিক সমাজ ও অর্থনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে।

ইসলাম মানুষকে সুন্নি, শিয়া, ওয়াহাবী, আহমেদিয়াতে ভাগ করে আরবে ইসলামিক সিভিলওয়ারের সৃস্টি করেছে।

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:০৪

বিদ্রহীসূত বলেছেন: বিবেচনাহীনভাবে, যুক্তিহীনভাবে ধর্মের প্রতি আপনার যে বিদ্বেষ তা ধর্মীয় গোঁড়া পন্থীদের মতোই অন্ধত্ব। আর প্রতিটা পোস্টের অগঠনমূলক সমালোচনা করা যে আপনার মজ্জাগত বদ অভ্যাস সেটা সামুর নিয়মিত সকল ব্লগারই জানে। তাছাড়া আপনি কোন পোস্টই পড়েন না, শুধু ক্ষুদ্র একটি অংশ কোট করে তার উপর অযৌক্তিক কিছু নেতিবাচক মন্তব্য করে পাশ কাটেন।
আমাদের দেশের রাজনীতিক দলগুলির কাছ থেকে যেমন শিষ্টাচার আশা করা হবে নিতান্ত বোকামী তেমনই আপনার কাছ থেকেও ইতিবাচক মন্তব্য আশা করা নির্বুদ্ধিতা। তাই ভালো কিছু আশা করছি না, শুধু বলি- পোস্টগুলি একটু অন্তত আপনার জ্ঞানবৃদ্ধি হত। যদিও এই বয়সে এসে হয়ত জ্ঞানবৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা আপনি অনুভবই করেন না।
ধন্যবাদ।

৩| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:৫০

টু-ইমদাদ বলেছেন: একটা দেশের চিনার জন্য পতাকা যেমন জরুরী ঠিক তেমনি মুসলমানকে চিনার জন্য দাড়ি,টুপি ও আখলাক জরুরী। সম্ভবত ভারতের দাঙ্গার সময়ে ট্রেনে মানুষ পুড়ানোর সময় পেন্ট খুলে দেখতে হয়েছিল লোকটি মুসলমান নাকি হিন্দু । এখন তো আমাদের দেশে বাসে মানুষ পুড়ানো হচ্ছে। নিশ্চয়ই আপনি দাড়ি বিহীন ইমামের পিছনে নামাজ পড়বেন না।

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৫০

বিদ্রহীসূত বলেছেন: দাড়ি রাখা, বাহ্যিক পোষাক-পরিচ্ছদ ইত্যাদি এই দীনের বুনিয়াদী কোন ব্যাপার নয় এবং বুনিয়াদী নয় বলেই কোর’আনে আল্লাহ কোথাও দাড়ি বা কাপড়-চোপড় সম্বন্ধে কোন নির্দেশ দেন নি। বরং বলেছেন- আমি মানুষের কাপড়-চোপড়, পোশাক-পরিচ্ছদ দেখি না, আমি দেখি মানুষের অন্তর । আসলে এই শেষ দীনে কোন নির্দিষ্ট পোষাক হতে পারে না, কারণ এটা এসেছে সমস্ত পৃথিবীর মানুষের জন্য। পৃথিবীর মানুষ প্রচণ্ড গরমের দেশে, প্রচণ্ড শীতের দেশে, নাতিশীতোষ্ণ দেশে, অর্থাৎ সর্বরকম আবহাওয়ায় বাস করে, এদের সবার জন্য এক রকম পোষাক নির্দেশ করা অসম্ভব। তা করলে এ দীন সমস্ত মানব জাতির জন্য প্রযোজ্য হতে পারত না, সীমিত হয়ে যেত। তাই আল্লাহ ও তাঁর রসুল (সা:) তা করেনও নি। বিশ্বনবীর (সা:) সময়ে তার নিজের এবং সাহাবাদের পোষাক-পরিচ্ছদ ও তখনকার আরবের মোশরেক ও কাফেরদের পরিচ্ছদ একই ছিল। বর্তমানেও আরবে মুসলিম আরব, খ্রিস্টান আরব ও ইহুদি আরবদের একই পোষাক-পরিচ্ছদ। দেখলে বলা যাবে না কে মুসলিম, কে খ্রিস্টান আর কে ইহুদি।

৪| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৩৩

নতুন বলেছেন: এই সব কথা বোঝার মতন জনগন এখনো কম....

এখনো ভন্ড ধমান্ধের সংখ্যা অনেক বেশি... ( কারন এরা প্রচন্ড ধামিক...কিন্তু ঠিকই দূনিতি করে)

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৫২

বিদ্রহীসূত বলেছেন: সত্য বোঝার জন্য ও বলার জন্য ধন্যবাদ।

৫| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:৩০

জাহিদ ২০১০ বলেছেন: দাড়ি, টুপি আর সুন্নতী পোশাক সর্ম্পকে কথা বলার আগে জানতে হবে এগুলো আসলে কি???

যদি নবীজী (সাঃ) এর সুন্নত সর্ম্পকে আপনার ন্যূনতম ধারনা থাকত তাহলে এই সমস্ত আজগুবি পোষ্ট আপনার দ্বারা প্রসব হত না।

'অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী' একটা প্রবাদ আছে।

সুতরাং আগে নবীজী (সাঃ) এর সুন্নত সর্ম্পকে ভালভাবে জ্ঞান অর্জন করুন তারপর পোষ্ট প্রসব করেন।

ভালো থাকবেন।

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:০৯

বিদ্রহীসূত বলেছেন: অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বলছি- আপনি আমার লেখাটি ঠাণ্ডা মাথায় আরও একবার পড়ুন। আমি জানি আমার জ্ঞানের সীমানা কত ক্ষুদ্র। আমি খুবই সাধারণ, খুবই অল্পজ্ঞান সম্পন্ন মানুষ তবে আমার সাধারণ জ্ঞান আছে বলে আমি মনে করি। অতি সাধারণ মানুষের কথাও আমি যুক্তি দিয়ে বিচার করে দেখি। তাছাড়া ইসলাম, কোর'আন- এগুলি তো বোঝা অতি অবশ্যই সহজ। একারণেই রসুলাল্লাহর আসহাবগণ অতি সাধারণ মানুষ হওয়া সত্ত্বেও ইসলাম পূর্ণাঙ্গরূপে বুঝেছিল, প্রতিষ্ঠা করেছিল। আজ অতি পণ্ডিতদের হাতে পড়ে ইসলাম এমন দুর্বোদ্ধ হয়ে পড়েছে যে সাধারণ মানুষ আজ বুঝতে পারে না। অতি সহজ সুন্নত আজ অতি কঠিন হয়ে গেছে-

সুন্নাহ একটি আরবি শব্দ যার আভিধানিক অর্থ রীতি, নিয়ম, পথ, পন্থা, পদ্ধতি, আদেশ ইত্যাদি। সুরা ফাতাহর ২৩ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, “সুন্নাতাল্লাহি উল্লাতি ক্বদ খলাত্ মিন্ ক্ববলু ওয়া লানতাজিদা লিস্ সুন্নাতিল্লাহি তাবদিলা” অর্থ এটাই আল্লাহর রীতি, যা পূর্ব থেকে চালু আছে। তুমি আল্লাহর রীতিতে কোন পরিবর্তন পাবে না”। এই আয়াতে আল্লাহ তাঁর নিজের ক্ষেত্রে সুন্নাহ শব্দটি ব্যবহার করেছেন, যার বাংলা অনুবাদ করা হয়েছে, “আল্লাহর রীতি”। ইংরেজি অনুবাদ করা হয়েছে “Way of Allâh”অর্থ আল্লাহর রীতি।
অর্থাৎ রসুলাল্লাহ সমস্ত জীবন যে পথে চলেছেন সে পথে চলাই হলো তাঁর সুন্নাহ। সে অর্থে তাঁর দেখানো প্রক্রিয়াই সত্যদীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামই হলো সবচেয়ে বড় সুন্নাহ। এটাই ছিল তাঁর জীবনের প্রধান লক্ষ্য। এ বিষয়ে আল্লাহ বলেছেন আমি আমার রসুলকে সঠিক পথ প্রর্দশন (হেদায়াহ) এবং সত্যদীন (দীনুল হক) দিয়ে প্রেরণ করলাম এই জন্যে যে তিনি যেন একে (এই হেদায়াহ ও জীবনব্যবস্থাকে) পৃথিবীর অন্যান্য সমস্ত জীবনব্যবস্থার উপর বিজয়ী করেন (কোর’আন-সুরা ফাতাহ- ২৮, তওবা- ৩৩ ও সফ- ৯) । অর্থাৎ আল্লাহ তাঁর শেষ রসুলকে দায়িত্ব দিলেন এই দীনুল ইসলামকে সমস্ত পৃথিবীর ওপর বিজয়ী ও প্রতিষ্ঠা করার। কোর’আনের এই তিনটি আয়াত থেকে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে যে, আল্লাহ তাঁর নবীর মাধ্যমে শুধু হেদায়াহ এবং সত্যদীনই দিলেন না, তিনি তাঁর নবীর উপর একই সাথে এই দায়িত্বও দিলেন যে, নবী যেন পৃথিবীর অন্যান্য দীন অর্থাৎ জীবন-ব্যবস্থাগুলিকে পরাজিত, নিষ্ক্রিয় করে দিয়ে এই সত্যদীনকে প্রতিষ্ঠা ও কার্যকর করেন।

এবার রসুলাল্লাহ বললেন- আমি আদিষ্ট হয়েছি মানব জাতির বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম (যুদ্ধ) চালিয়ে যেতে যে পর্যন্ত না সমস্ত মানুষ আল্লাহকে একমাত্র ইলাহ এবং আমাকে তাঁর রসুল বলে মেনে নেয় (হাদিস- আবদাল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) থেকে- বোখারী, মেশকাত)। অর্থাৎ ইসলামকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করতে হবে সংগ্রামের মাধ্যমে। এ সিদ্ধান্ত কি রসুলের নিজের? না, তাঁর নিজের নয়, কারণ তিনি বোলেছেন “আমি আদিষ্ট হোয়েছি।” আল্লাহ ছাড়া আর কার সাধ্য তাঁকে আদেশ দেয়? অর্থাৎ এই দীনকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার পদ্ধতি, প্রক্রিয়া যে অন্য কোন পন্থা নয় সংগ্রাম এ সিদ্ধান্ত আর কারো নয়, স্বয়ং আল্লাহর। আল্লাহর কোর’আনে শত শতবার সংগ্রামের উল্লেখ, আদেশ ও তাগিদ, ছোট বড় সমস্ত গোনাহের ক্ষমা, যোদ্ধাদের সরাসরি জান্নাতে প্রবেশ করানোর প্রতিশ্র“তি, শহীদদের মৃত না বলার সম্মান ও রসুলের মাত্র ৯ বছরের মধ্যে ১০৭টি যুদ্ধ থেকেই আর সন্দেহের কোন অবকাশই থাকে না যে, সর্বজ্ঞানী আল্লাহ তাঁর দীনকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার জন্যে সর্বাত্মক সংগ্রামকেই নীতি হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
অতি সাধারণ জ্ঞানেই বুঝা যায় সমস্ত পৃথিবীতে এই শেষ জীবন বিধান প্রতিষ্ঠা করার মত এত বড় বিশাল কাজ এক জীবনে করা সম্ভব নয়। এজন্য তিনি একটি জাতি গঠন করলেন, যে জাতিটির নাম উম্মতে মোহাম্মদী। বিশ্বনবী (দঃ) তার নবীজীবনের তেইশ বছরে তাঁর আসহাবদের নিয়ে সমস্ত আরব উপদ্বীপে এই শেষ জীবন-ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করলেন অর্থাৎ ইসলামের শেষ সংস্করণ সমস্ত মানবজাতির একটি অংশে কার্যকরী হল। কিন্তু রসুলের প্রতি আল্লাহর দেয়া দায়িত্ব অসম্পূর্ণ রয়ে গেল, কারণ তাঁর উপর দায়িত্ব সমস্ত পৃথিবী, সমগ্র মানব জাতি। এর আগে কোন নবীর ওপর এত বড় দায়িত্ব অর্পিত হয় নি। যতদিন সমস্ত পৃথিবীর সমগ্র মানব জাতির ওপর এই শেষ জীবনবিধান সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠা না হবে ততোদিন মানুষ আজকের মতোই যুদ্ধবিগ্রহ, অশান্তি, অবিচারের মধ্যে ডুবে থাকবে- শান্তি, ইসলাম আসবে না এবং বিশ্বনবীর (দঃ) ওপর আল্লাহর দেয়া দায়িত্বও পূর্ণ হবে না। অর্থাৎ সমস্ত পৃথিবীতে এই সত্যদীন প্রতিষ্ঠা না হলে দুনিয়াময় দীন প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব অপূর্ণই থেকে যাবে কিন্তু সেটা হবার নয়, সমস্ত দুনিয়াময় এই সত্যদীন প্রতিষ্ঠা হবেই হবে। রসুলের উপর আল্লাহর দেওয়া দায়িত্ব পূর্ণ হবেই হবে ইনশা’আল্লাহ। এখানে একটা বিষয় খুব সাবধানের সাথে খেয়াল রাখতে হবে- একটা হল দীন, জীবন-ব্যবস্থা আর অপরটা হল সেই জীবন-ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা (কার্যকরী) করা। নবী করীম (দঃ) বিদায় হজ্বের ভাষণে তাঁর আসহাবদের নিকট আল্লাহকে সাক্ষী রেখে জানতে চেয়েছেন তাঁর উপর যে কোর’আন অর্থাৎ জীবন-ব্যবস্থা নাযেল হল তা তিনি পূর্ণভাবে পৌঁছে দিয়েছেন কিনা। উপস্থিত সকল আসহাব সমস্বরে উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, আল্লাহ সাক্ষী, আপনি পৌঁছে দিয়েছেন। তাহলে আমরা পরিষ্কার বুঝলাম রসুলের উপর দুইটি দায়িত্ব ছিলো একটি আল্লাহর দেওয়া জীবন-বিধান মানব জাতিকে পৌঁছে দেওয়া (যেটা তিনি সম্পূর্ণ করেছেন), অন্যটি হল সেই জীবন-বিধান মানুষের সামগ্রিক জীবনে প্রতিষ্ঠা করা। বিদায় হজ্বে রসুল দীন, জীবন-বিধান নাযেল পূর্ণ হওয়ার কথা বলেছেন, কিন্তু দ্বিতীয় যে দায়িত্ব অর্থাৎ সমস্ত পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা (কায়েম) তখনও হয় নাই। রসুলের জীবদ্দশায় শুধুমাত্র আরব উপদ্বীপে এই পূর্ণ দীন, জীবন-ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, রসুল চলে যাওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই বাকি দুনিয়ায় এই দীন প্রতিষ্ঠার ভার পোড়ল তাঁর উম্মাহর উপর।

রসুলাল্লাহর নবুয়তী জীবনের সমস্তটাই ছিল বহির্মুখী- এজন্য এই শেষ দীনের চরিত্রও বহির্মুখী, সংগ্রামী। রসুল তাঁর আসহাবদের সাথে নিয়ে সমস্ত আরবে শেষ জীবন-বিধান প্রতিষ্ঠা করে চলে গেলেন। তাঁর সৃষ্ট জাতি কিন্তু ভুলে গেলো না যে তাদের নেতার দায়িত্ব শেষ হয় নি, তার ওপর আল্লাহর দেয়া দায়িত্ব হচ্ছে সমস্ত পৃথিবীতে এই দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা। কারণ তিনি ছিলেন সমস্ত মানব জাতির জন্য প্রেরিত এবং সেই দায়িত্ব এসে পড়েছে এবার তাদের ওপর। তাই ইতিহাসে দেখি বিশ্বনবী (দঃ) ওফাতের সঙ্গে সঙ্গে তার উম্মাহ পৃথিবীর সমস্ত কিছু কোরবান করে তাদের মাতৃভূমি আরব থেকে বের হয়ে পড়েছিলেন। একটা জাতি তাদের মাতৃভূমি ত্যাগ করে অন্যত্র চলে গেছে, এটা ইতিহাসে আছে। কিন্তু সেগুলোর কারণ অন্য জাতির আক্রমণ, দ্বিগি¦জয়, আবহাওয়ার পরিবর্তন হয়ে দেশ বাসের অযোগ্য হয়ে যাওয়া, দুর্ভিক্ষ ইত্যাদি। কিন্তু একটা আদর্শ প্রতিষ্ঠা করার জন্য একটা জাতির সমস্ত সদস্য দেশ থেকে বের হয়ে যাওয়া মানুষের ইতিহাসে বোধহয় আর নেই।

এই যে সত্যদীন প্রতিষ্ঠার জন্য ঘর ছেড়ে বের হয়ে যাওয়া- এটিই ছিল রসুলাল্লাহর প্রকৃত সুন্নাহ। তাঁরা দাড়ি-টুপি নিয়ে তর্কাতর্কীতে লিপ্ত হন নি। তাঁরা যদি খুটিনাটি বিষয় নিয়ে পড়ে থাকতেন তবে আজ আমরা ইসলামের নামটিও জানতাম না, ইসলাম সেখানেই ধ্বংস হয়ে যেত। আজ এই দাড়ি- টুপির তর্কাতর্কীর জন্যই মুসলিমরা পৃথিবীর সবচেয়ে নির্জাতিত, নিষ্পেষিত জাতি। অপমানিত, লাঞ্ছিত জাতি। এগুলির কারণেই আজ মুসলিমরা নানা ফেরকায় বিভক্ত, নিজেরা নিজেরা হানাহানিতে লিপ্ত। আমি জানি আমার স্বল্প জ্ঞানে আপনাকে আমি বোঝাতে পারব না শুধু এটুকু বলি- আমি চাই মুসলিম জাতিটা এই ছোটখাট বিষয় নিয়ে কূটতর্ক বাদ দিয়ে সত্যদীন তথা শান্তি প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হোক।

৬| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৮

জনাব মাহাবুব বলেছেন: আরে ভাই আপনি শুধু কোরআনের কথাই বললেন, হাদিসটাকে বেমালুম চেপে গেলেন। :||

ইসলাম সম্পর্কে পুরোপুরি জানতে হলে কোরআন এবং হাদিস দুইটার সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে।

শুধু কোরআনকে রেফারেন্স হিসেবে তুলে ধরে হাদিসকে পাস কাটিয়ে যাওয়ার অর্থ সত্যকে ধামাচাপা দেওয়ার কুটকৌশল।

আগে ধর্ম সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করুন, তারপর, দাড়ি-টুপির ব্যাপারে পোষ্ট দিয়েন।

নিজেরে বেশি পন্ডিত মনে না কইরা জ্ঞান অর্জনে নেমে পড়ুন। B-))

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:১৪

বিদ্রহীসূত বলেছেন: আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত এই জন্য যে, আমি আপনাকে আমার বক্তব্য বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি। আমি শুধু বোঝাতে চেয়েছি যে দাড়ি হলো ব্যক্তিগত একটি বিষয়, জাতিগত ও নামাজ-রোজার মত অত্যাবশ্যকীয় কোন বিষয় নয় বলেই আল্লাহ এ ব্যাপারে কোরআনে বলেন নি। আমি হাদিস অবশ্যই মানি ও আমল করার চেষ্টা করি। আপনি যদি দাড়ি রাখেন তবে ভালো কিন্ত আমি রাখি না বলে আমাকে এ ব্যাপারে জোর করা নিতান্ত মূর্খতা। আমি এটাই বোঝাতে চেয়েছি। আশা করি ভুল বুঝবেন না।
ধন্যবাদ।

৭| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:২৩

জাহিদ ২০১০ বলেছেন: দাড়ি, টুপি, জোব্বা এগুলো নিয়ে কে তর্কাতর্কি শুরু করল, কখন করল একটু বলবেন কি দয়া করে????

যে মুসলমান ব্যক্তিগত ভাবে ইসলামকে মানতে পারবে না সে কিভাবে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভাবে ইসলাম কায়েম করবে???? তার ব্যাখ্যাটা আশাকরি দিবেন।

দাড়ি রাখা দায়েমি সুন্নত হলেও এর প্রতি এত পরিমান গুরুত্বারোপ করা হয়েছে যে অনেক ওলামায়ে কেরাম দাড়ি রাখাকে ওয়াজিব এর কাছাকাছি হুকুম বলে আখ্যা দিয়েছেন। কেননা দাড়ি একমুষ্টি পরিমান রাখা দায়েমি সুন্নত। সেখানে কেউ যদি দাড়ি না রাখে অথবা দাড়ি রাখলেও তা ছোট ছোট করে রাখে তাহলে এর জন্য তাকে গুনাহগার হতে হবে।

একজন মুসলমানকে পরিপূর্নভাবে মুমিন হতে হলে তাকে ইসলাম এর সমস্ত হুকুম আহকাম মানতেই হবে। না হলে তাকে গুনাহগার হতে হবে।

এখন আপনি যদি বলেন আমি এটা করব না, এটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তাহলে বলব ভাই কেন শুধু শুধু আপনি গুনাহগার হতে যাবেন??? জাহান্নামের আগুন দুনিয়ার আগুনের চাইতে ৭০ গুন বেশি। এই জন্য বলি ভাই দয়া করে জেনে শুনে ইসলামের কোন হুকুমকে ছোট মনে না করে আমল করার চেষ্টা করবেন।

ইসলামের প্রত্যেকটা হুকুম আহকাম পালন করার লাভ ফজিলত এবং আজর সওয়াব অনেক অনেক বেশি।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে ইসলামের সমস্ত হুকুম আহকাম সঠিক ভাবে জেনে আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.