নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পাঠকের মুগ্ধতাই আমার লেখার প্রেরণা, সত্য প্রচার আমার লেখার উদ্দেশ্য আর মিথ্যাকে বিনাশ করে দিকেদিগন্তে সত্যের আলোকচ্ছটার বিচ্ছুরণই আমার লেখার চূড়ান্ত লক্ষ্য।

বিদ্রহীসূত

রাকীব আল হাসান, সহকারী সাহিত্য সম্পাদক, দৈনিক বজ্রশক্তি।

বিদ্রহীসূত › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি ক্রিকেটীয় স্মৃতি ও বর্তমান রাজনীতি

২০ শে এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১:২৮

একবার আমাদের পাড়ারই এক চাচা শহর থেকে ঈদ করতে গ্রামে এসেছিলেন, সঙ্গে এসেছিল তার দুই ছেলে। তাদের কাছ থেকেই ক্রিকেট খেলাটা আমরা শিখেছিলাম। তারা ব্যাট, বল, স্ট্যাম্প ইত্যাদি ক্রিকেটীয় সরঞ্জামাদি সঙ্গে নিয়ে এসেছিল। সে সময় তারা ১৫ দিনের মতো গ্রামে ছিল। সেই থেকে আমরা বেশ ক’জন ক্রিকেটপ্রেমী হয়ে উঠেছিলাম। তারা চলে যাওয়ার পর আমরা ক’দিন ছোট জাম্বুরা দিয়ে বল বানিয়ে আর বাবলা কাঠের ভারি ব্যাট দিয়ে খেললাম। কিন্তু এভাবে আর কত দিন। বেশ ক’জন মিলে ব্যাট, বল কেনার পরিকল্পনা করলাম। এরই মধ্যে ক্রিকেটপ্রেমী হয়ে উঠেছে এমন বেশ ক’জন মিলে একটি দল গঠন করে সবাই চাঁদা দিয়ে ব্যাট, বল, স্ট্যাম্প আর লাল-সবুজের একটি পতাকা কিনে আনলাম শহর থেকে। কিছু নিয়মনীতিও ঠিক করা হলো। খেলার শুরুতেই আমরা লাল-সবুজের পতাকাটি উড়িয়ে দিতাম। সেই থেকে শুরু হলো আমাদের পাড়ায় ক্রিকেট উত্তেজনা।

কিছুদিনের মধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে উঠল খেলাটি। আমাদের অবসর সময়টি হয়ে গেল ক্রিকেটময়। আলোচনার বিষয়বস্তুতেও পরিণত হলো খেলাটি। শুধু বিনোদন নয়, অনেকের স্বপ্নে পরিণত হলো এটি। অন্যান্য পাড়া থেকেও অনেকে এসে যোগ দিল আমাদের ক্রিকেট দলে। ভালোই কাটছিল সময়। কিন্তু কিছুদিন বাদে কর্তৃত্ব নিয়ে শুরু হলো দ্বন্দ্ব। অনেক চেষ্টা করেও দ্বন্দ্বের কোনো মীমাংসা করতে পারলাম না। ব্যাট, বল কার কাছে থাকবে, খেলার নেতৃত্ব দেবে কে, কোথায় খেলা হবে, যারা চাঁদা দেয়নি তারা খেলায় অংশ নিতে পারবে কিনা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। ছেলেবেলায় যা হয় আর কী। অবশেষে অনেকে দাবি তুলল ব্যাট, বল, স্ট্যাম্প ও পতাকাটি ভাগাভাগি করতে হবে। কিন্তু ভাগ হবে কীভাবে? সবাই তো ব্যাট পেতে চায়, কেউ কেউ বল পেতে চায়। পতাকা আর স্ট্যাম্পের দিকে বিশেষ কারোর আকর্ষণ নেই। কর্তৃত্বের লালসায় যারা এ দ্বন্দ্বের সূত্রপাত ঘটিয়েছে তাদের ক’জনকে নিয়ে আমি বেশকিছু কথা বললাম, বোঝানোর চেষ্টা করলাম; কিন্তু তারা তাদের সিদ্ধান্তে অনড়। অবশেষে এ সিদ্ধান্তের ওপরই ঐকমত্য হওয়া গেল যে, এমন ইনসাফের সঙ্গে ভাগ করা হবে যেন প্রত্যেকেই ব্যাট, বল, স্ট্যাম্প ও পতাকার সমান অংশ পায়। কিন্তু সেটা কীভাবে সম্ভব? ব্যাট কেটে টুকরো টুকরো করা হলো, বলটি কুচি কুচি করে কাটা হলো, স্ট্যাম্পগুলোও ভাগ করা হলো অনেক খন্ডে। আমার চোখ দিয়ে তখন অঝোরে পানি ঝরছে, আমার মতো আরও অনেকেই সেদিন কেঁদেছিল। যখন ব্যাট, বল, স্ট্যাম্পগুলো কাটছিল তখন মনে হচ্ছিল আমার একটি করে অঙ্গচ্ছেদ হচ্ছে আর আমি মুখ বুজে সেই অঙ্গচ্ছেদ হতে দিচ্ছি, চোখের পানি ফেলা ছাড়া কিছুই করতে পারছি না। সবশেষে যখন লাল-সবুজের পতাকাটি নিল কাটার জন্য তখন আমার কাছে মনে হলো কেউ যেন আমার দেহ থেকে হৃদয়টাকে বের করে নিল আর তার ওপর ছুরি চালাতে উদ্যত হচ্ছে। আমি আর স্থির থাকতে পারলাম না। কান্নাজড়িত কণ্ঠে চিৎকার করে বললাম, আমি কিচ্ছু চাই না, শুধু একটি মিনতি তোমরা রাখ, পতাকার বুকে কেউ ছুরি চালিও না। হৃদয়ে সেদিন রক্তক্ষরণ হয়েছিল। সংঘর্ষ করেও আমার লাল-সবুজের পতাকাকে বাঁচাতে পারিনি। অধিকাংশ মানুষই এটাকে ঘৃণা করেছিল; কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করতে পারেনি।

অনেক পরে জেনেছিলাম, পশ্চিমপাড়ার কয়েকজন বড় ভাই মিলে ছোট্ট সেই কোমলমতি হৃদয়গুলোতে স্বার্থ ও কর্তৃত্বের লালসা জন্ম দিয়ে দ্বন্দ্ব বাধিয়েছিল। যে ক’জন কর্তৃত্বের মোহে আচ্ছন্ন হয়েছিল তারা অধিকাংশকে ভুল বুঝিয়ে প্রভাবিত করেছিল। বড় ভাইদের উদ্দেশ্য ছিল আমাদের মধ্যকার ঐক্য নষ্ট করে দেয়া। তারা চূড়ান্তভাবে সফল হয়েছিল। খেলাকে কেন্দ্র করে আমাদের পাড়ার বাড়ন্ত ছেলেদের মধ্যে ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব ও সংহতি গড়ে উঠেছিল এবং কিছু নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছিল- এটাই ছিল তাদের ঈর্ষান্বিত ও ভীত হওয়ার প্রধান কারণ।

প্রিয় পাঠক, গল্পটি বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ। কিন্তু কীভাবে সেটা ব্যাখ্যা করছি।

যেখানেই অনৈক্য সেখানেই ধ্বংস। আর ঐক্য হলো সব ধরনের উন্নতি, গ্রগতি, সমৃদ্ধির পূর্বশর্ত। আমরা ব্যাট, বল, স্ট্যাম্প ও পতাকা কিনতে পেরেছিলাম ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কারণেই। আর সেগুলোই নষ্ট হয়েছিল অনৈক্যের কারণে।

এই গল্পে, ‘আমরা একটি লক্ষ্যকে (খেলার সরঞ্জামাদি ক্রয়ের উদ্দেশ্য) সামনে রেখে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম’ এটার অর্থ হলো স্বাধীনতার জন্য বাঙালি জাতির ঐক্য। ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পর পতাকা পেয়েছি। পতাকা হলো স্বাধীনতার চিহ্ন। ব্যাট, বল ও স্ট্যাম্প হলো স্বাধীনতার সঙ্গে পাওয়া অন্যান্য অমূল্য সম্পদ তথা জাতীয় সব সম্পত্তি। খেলার আনন্দ হলো স্বাধীনতার উচ্ছ্বাস, আনন্দ, পরিতৃপ্তি। পশ্চিমপাড়ার বড় ভাইয়েরা হলো যারা আমাদের দেশের ভালো চায় না তথা পরাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলো। কর্তৃত্ব নিয়ে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল তা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে হুবহু মিলে যায়। কর্তৃত্বের লালসায় যখন তারা ব্যাট, বল, স্ট্যাম্প ধ্বংস করল তখন তারা আসলে কার সম্পদ ধ্বংস করল? নিজেদেরই, অর্থাৎ জাতির সম্পদ। প্রত্যেক মানুষ তাদের ঘৃণা করবে চিরকাল। সবশেষে পতাকা অর্থাৎ স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বই ধ্বংস করে দেয়া হলো। আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হলো, কাঁদলাম; কিন্তু ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করতে পারলাম না।

আজও দেশ, জাতি, জাতির সম্পদ, এমনকি স্বাধীনতা হুমকির মুখে। রাজনৈতিক দলগুলো কর্তৃত্বের লালসায় অন্ধ। আর কিছু জনগণও তাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বুঝতেই পারছে না কী হতে চলেছে জাতির ভাগ্যে। রাজনীতিকদের কাছে আমার অনুনয়, দয়া করে লালসা ত্যাগ করে আমাদের মুক্তি দিন, পতাকায় আঁচড় কাটবেন না, এ জাতিকে আর খন্ড বিখন্ড করে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবেন না। আমরা সবাই বাংলা মায়ের সন্তান, একই আলো-বাতাসে বড় হয়েছি, একই নদীর বুকে স্নান করেছি, কাজেই আর বিভেদ নয়, দ্বন্দ্ব নয়। আজ ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময়। শুধু কাঁদলে চলবে না। ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতিকে রক্ষা করতে হবে।

[email protected]

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.