নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পাঠকের মুগ্ধতাই আমার লেখার প্রেরণা, সত্য প্রচার আমার লেখার উদ্দেশ্য আর মিথ্যাকে বিনাশ করে দিকেদিগন্তে সত্যের আলোকচ্ছটার বিচ্ছুরণই আমার লেখার চূড়ান্ত লক্ষ্য।

বিদ্রহীসূত

রাকীব আল হাসান, সহকারী সাহিত্য সম্পাদক, দৈনিক বজ্রশক্তি।

বিদ্রহীসূত › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধূমপান আসলেই কি এতটা ক্ষতিকর?

০১ লা জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:১৫

ধূমপান নিঃসন্দেহে একটি স্বাস্থ্যহানিকর বদভ্যাস। কিন্তু কতটুকু স্বাস্থ্য হানিকর। প্রচার প্রচারণার দাপটে আমরা বর্তমানে জানি, ভয়ংকর এর আক্রমণ, ক্যান্সার নিশ্চিত, ছোঁয়াচে মড়কের মতো এটা আশেপাশের মানুষজনেরও বিধ্বংস করে দিচ্ছে, করছে পরিবেশ দূষণ। মজার ব্যাপার হচ্ছে, যে নিকোটিন প্রাণসংহারী বলে সবাই জুজুর মতো ভয় পাচ্ছি, সেটা চা বা কফির মধ্যে যে ক্যাফেইন থাকে তার চাইতে মোটেও বেশি ক্ষতিকর নয়, বরঞ্চ অনেক ক্ষেত্রে তা দেহে কিছুটা উপকারী ভূমিকাই রাখে, এর ক্যান্সার সৃষ্টি করার কোনো ক্ষমতাই নেই এবং এটাকে খুব বেশি ক্ষতিকর (Harmful) হিসাবেও সংজ্ঞায়িত করা যায় না। তাহলে, ধূমপানের ক্ষতিটা কোথায়? ক্ষতিটা হচ্ছে- এর অন্তর্নিহিত কিছু যৌগে, যাদেরকে কারসিনোজেন বা ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে এমন দ্রব্য হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এবং এরকম কোনো যৌগের সম্পূর্ণ অনুপস্থিতি ব্যতীত সাধারণত আমরা কোনো খাদ্যই গ্রহণ করতে পারব না।
এবার একটা সহজ প্রশ্ন, প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত একটা গাছের পাতা পোড়ালে যে পরিমাণ কারসিনোজেন সৃষ্টি হবে, যে তেজস্ক্রিয়তা তৈরি হবে, একটা বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য পোড়ালে কি তার চাইতে বেশি হবে নাকি কম? এটা সাধারণ জ্ঞানেই বোঝা যায়- বেশি হবে। কিন্তু এটার বিরুদ্ধে প্রচারণার সেই জোর কই? The International Agency for Research on Cancer (IARC) আগে দূষিত বাতাসে একটা একটা করে কারসিনোজেন চিহ্নিত করতে থাকে এবং পরে সম্পূর্ণ পরিবেশকেই (Outdoor polluted air) কারসিনোজেন বলে ঘোষণা দেয় এবং বলে, “আমরা যে শ্বাস নিচ্ছি তা ক্যান্সার তৈরি করার উপাদানে ভর্তি।” আর এই দূষণ ধূমপানের ধোঁয়া নয়, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পলুশনের ধোঁয়া। রাসায়নিক বর্জ্য থেকে শত শত কারসিনোজেন ছড়িয়ে পড়ছে আমাদের বায়ুতে, পানিতে, মাটিতে, প্রাণীতে, উদ্ভিদে তথা আমাদের খাদ্যে এবং আমাদের মধ্যে। হাস্যকর ব্যাপার, সেদিকে আমাদের কোনো খেয়াল নেই। ক্যান্সার তৈরির সবচাইতে বেশি ক্ষতিকর আক্রমণ আসে আমাদের ভোগের, আমাদের বিলাসের দ্রব্যসামগ্রীগুলো থেকে এবং আসে পারমাণবিক তেজস্ক্রিয়তা থেকে। এই সামগ্রীগুলো কিংবা পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদন একদিনের জন্যও কি বন্ধ হয়েছে। ধূমপানের বিরুদ্ধে যে প্রচারণা ও তরিৎ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হয়েছে, এগুলোর ব্যাপারে তার আংশিকও কি সম্ভব হয়েছে? নিকোটিনে ক্যান্সার বলে যারা অজ্ঞান, এসবেসটসের মতো মারাত্মক রাসায়নিক কারসিনোজেনের নামও তারা হয়তো কোনদিন শোনেন নি। যে দেশের মানুষ ভুল ব্যবস্থাপনায় একটা পুরো নদীর পানিকে দূষিত করে, হাজার হাজার মানুষকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে, তারা আজ ফেইসবুকে কমেন্টস এবং লাইক দিয়ে প্রতিবাদ করছে, সামান্য কয়েকটা কারসিনোজেনের, ধূমপানের। এটা কি সচেতনতার লক্ষণ?
কারসিনোজেনের আরেকটি বড় ক্ষেত্র হচ্ছে জেনেটিক্যালি মডিফ্যায়েড অরগানিজমস (GMOs), এবং জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ারড (GE) ফুড যাকে আমরা হাইব্রিড খাদ্য বলে জানি, এবং এটা উৎপাদন করতে জমিতে ব্যবহৃত সার, কীটনাশক এবং অন্যান্য আরো অনেক রাসায়নিক উপাদান। প্যাকেটজাত খাবারের রং, গন্ধ, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বাজারজাত করণ ইত্যাদি কাজে মোট ২৫০০ এর মতো কৃত্রিম উপাদান খাবারের সাথে মিশ্রিত করা হচ্ছে যার মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই ধূমপানের চাইতে মারাত্মক কারসিনোজেন বিদ্যমান। কিন্তু তার বিরুদ্ধেও কোনো অভিযোগ কি কারো আছে?
যারা ধূমপানের বিরুদ্ধে প্রচার প্রচারণা শুরু করেছে, পৃথিবীতে এই বর্তমান অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্য মূলত তারাই দায়ী, তারাই পৃথিবীতে ক্যান্সার তৈরির উপাদানগুলো বৃহৎ মাত্রায় পরিবেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে এবং অতি সহজে অন্য আরেকটি ক্ষতিকর দ্রব্য ধূমপানকে বলির পাঁঠা করে এবং জনমানুষের দৃষ্টিকে সেদিকে অনায়াসে সরিয়ে দিয়ে, নিরবে নিভৃতে তাদের প্রাণহানিকর ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড পরিচালনা করে যাচ্ছে। নিজেদের ইন্ডাস্ট্রিগুলো দিয়ে পৃথিবীকে দূষিত করছে, গাছ কেটে পরিবেশ সংশোধনের পথ বন্ধ করছে এবং পারমাণবিক গবেষণা, অস্ত্র প্রস্তুতি নির্ভাবনায় বজায় রাখছে। আর সাধারণ মানুষ ধূমপানের বিরুদ্ধে ধূম্র উদ্গীরণ করে পরিবেশ, সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্ব উদ্ধার করছে, সচেতনতার হুজুগে ডুবে আছে।
বাংলাদেশে এবং এর পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রগুলোতে ধূমপায়ীর অন্ততঃ সমসংখ্যক মানুষ এই তামাককেই জর্দা নামে কাঁচা চিবিয়ে খাচ্ছে- এতে যে ক্ষতি হয়, ক্যান্সার হবে এরকম কথাতো কাউকেই বলতে শুনি না! নাকি এটার প্রতিবাদ করার কথা কেউ মনে করিয়ে দেয়নি বলে প্রতিবাদ, গণসচেতনতা সৃষ্টি করা হয়ে উঠেনি? নাকি পশ্চিমা গুরুরা এ ব্যাপারে কিছু বলে নি বলে সেটার ক্ষতিকর দিক উবে গেছে? এর ক্ষতির কোনো পরিসংখ্যান করার কথা পর্যন্ত কারো মাথায় আসেনি। এমনকি জর্দা খেয়ে কোনো রোগ কারো হয়েছে বলেও সচরাচর শোনা যায় না! হুজুগটা এতদূর গড়িয়েছে যে, আমাদের দেশের ধর্মের ধ্বজাধারীরা পর্যন্ত ধূমপানের বিরুদ্ধে জাল হাদিস প্রবর্তন করে ফেলেছেন। রসুল (সা.) এর সময় ধূমপানের প্রচলনই ছিলো না, কাজেই এটা সম্বন্ধে প্রচলিত সমস্ত হাদিসই হুজুগে হাদিস। মজার ব্যাপার, জর্দা সম্বন্ধে এই জাল হাদিসেরও নিতান্ত অভাব। কাজেই, এটাকে সচেতনতার হুজুগ বলে কি খুব ভুল বলেছি?
এবার আসুন দেখি, ধূমপানের বিরুদ্ধে আসলে হোতারা, কর্তৃপক্ষগণ কী করছে? বাংলাদেশের কথাই ধরুন, উত্তরবঙ্গে আগে ধান এবং তারপর অন্যান্য খাদ্যশস্য যেমন বহু রকমের ডাল, মটর, কলাই, সরিষা, আলু, পেঁয়াজ, মরিচ ইত্যাদি বিভিন্ন রকমের চাষ হতো। আজ বাংলাদেশ ভারত থেকে ডাল, পেয়াঁজ আমদানী করছে। কারণ, উত্তরবঙ্গের একরের পর একর জমিতে কৃষকরা বেশি লাভের আশায় তামাক চাষ করছেন। অপরদিকে, বিড়ির প্যাকেটে দেয়া হচ্ছে সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ। এই সতর্কীকরণের প্রভাব কতটুকু হয়েছে তা কোন কাগুজে পরিসংখ্যানের দিকে না তাকিয়ে নিজের চারপাশে তাকান। বাস্তবতা সবচাইতে বড় পরিসংখ্যান। আজ থেকে ১০ বৎসর আগে ধূমপায়ীর সংখ্যার হারের সাথে বর্তমানের সংখ্যাটা তুলনা করুন, উত্তর পেয়ে যাবেন। এই বিজ্ঞপ্তি টিনেজদের অল্প বয়সেই সিগারেটের প্রতি আগ্রহী করে তোলা ছাড়া আর কোনো প্রভাব ফেলতে পেরেছে বলে তো মনে হয় না। এই বিজ্ঞপ্তি বরং ধূমপানকে একটা গুরুত্বপূর্ণ ও অত্যন্ত মজার ব্যাপার বলে আগ্রহী করে তুলতে বিজ্ঞাপনের কাজ করেছে। এ কথাটা এ কারণে বলছি যে, প্রকৃতপক্ষে ধূমপায়ীর সংখ্যা কমানোর ব্যাপারে সত্যিই কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা সেটা প্রশ্ন সাপেক্ষ। এতে তাদের উদ্দেশ্য সফল হবে না। উদ্দেশ্য সফল হবে, ধূমপান চলতে থাকবে, মানুষ তার বিরুদ্ধে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাবে, এটা নিয়েই ব্যস্ত থাকবে, সমাজের জন্য কাজ করা হচ্ছে বলে সন্তুষ্ট থাকবে, সিগারেট কোম্পানিগুলো এই সুযোগে সিগারেটের দাম বাড়িয়ে ব্যবসা বৃদ্ধি করে যাবে এবং অন্য দিকে পৃথিবী ধ্বংসকারী মারাত্মক ক্ষতিকারী কর্মকাণ্ডগুলো সবার চোখের আড়ালে চলতে থাকবে, প্রতিবাদ করার কেউ থাকবে না।
আমি ধূমপানের পক্ষে কথা বলার জন্য এগুলো লিখছি না। ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং বদভ্যাস। কিন্তু তাকে তার অবস্থানেই রাখা উচিত, অতিরঞ্জিত করে তাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকলে আমাদের অবস্থা হবে সেই নাবিকের মতো যে তার জাহাজের পাল ফুটো হয়ে গেছে বলে মাস্তুলে উঠে চেঁচামেচি করছে, আর সেই চেঁচামেচির শব্দের ডামাডোলে, জাহাজের তলা যে ফুটো হয়ে আছে সেদিকে কারো খেয়ালই নেই।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:২৪

টি এম মাজাহর বলেছেন: দারুন যুক্তিপূর্ণ লেখা। পড়ে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।

২| ০১ লা জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৯

বিদ্রহীসূত বলেছেন: আমরা তো হুজুগে বাঙালি, এ কারণে যুক্তি আমাদের চোখে ধরা পড়ে কম। যুক্তি দেখার দৃষ্টি আপনার আছে।
অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.