নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পাঠকের মুগ্ধতাই আমার লেখার প্রেরণা, সত্য প্রচার আমার লেখার উদ্দেশ্য আর মিথ্যাকে বিনাশ করে দিকেদিগন্তে সত্যের আলোকচ্ছটার বিচ্ছুরণই আমার লেখার চূড়ান্ত লক্ষ্য।

বিদ্রহীসূত

রাকীব আল হাসান, সহকারী সাহিত্য সম্পাদক, দৈনিক বজ্রশক্তি।

বিদ্রহীসূত › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাজনের মিনতি

২০ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৪



চারিদিকে আনন্দের রব উঠালে। মহা ধুমধামে পালন করলে ঈদ-উৎসব। হৈ-হুল্লোড়, গান-বাজনা আর আড্ডায় মাতলে তোমরা। সাতসকালে উঠে দামি সাবান-শ্যাম্পু দিয়ে গসুল, তারপর নতুন পাঞ্জাবি, টুপি পরে, গায়ে খোশবু মেখে ঈদের নামাজ, ফিরতি পথে কোলাকুলি সবই করলে। একে অন্যের সাথে সহাস্যবদনে ‘ঈদ মোবারক’ বিনিময়। খাবার তালিকায় নানা আয়োজন। তোমাদের আনন্দ দেখে আমি বিস্মিত হলাম, তোমাদের এই আনন্দ কিসের? মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই ভুলে গেলে আমার কথা? তোমরাই না আমার খুনীদের ফাঁসির দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করলে? প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় উঠালে? তবে আজ তোমাদের কিসের আনন্দ, তোমাদের দাবি আদায় কি হয়ে গেল? তোমরা কি ভুলে গেলে আমার করুণ আর্তনাদ, হৃদয়বিদারী চিৎকার, এক ফোটা পানির জন্য ক্রন্দনরত প্রার্থনা? মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করে তোমারই শিশু সন্তান যদি এভাবে মারা যেত তবে কি পারতে এমন ঈদ আনন্দে মেতে উঠতে? চেয়ে দেখ আমার পিতা-মাতার দিকে। তাদের মনে তো আনন্দ নেই। তবে কি তোমাদের এই প্রতিবাদ, লেখালেখি, মানববন্ধন সবই লোক দেখানো, ভণ্ডামী? আমার মৃত্যু কি তোমাদের কাছে কেবলই নিজেকে মেলে ধরবার একটি ইস্যু মাত্র?
তোমাদের প্রতিবাদী কণ্ঠে আমি তৃপ্তির হাসি হেসেছিলাম, ভেবেছিলাম তোমরা বুঝি সত্যিই আমার মৃত্যুতে অনেক কষ্ট পেয়েছ, এবার হয়ত সমাজ থেকে অন্যায় দূর করার একটি শক্ত পদক্ষেপ নিশ্চয় তোমরা নেবে। কিন্তু হায়! আমি ভুলেই গিয়েছিলাম যে, আমি দীন-দরিদ্র এক ছোটলোকের সন্তান। আমাকে ইস্যু করে নিজেদের বিখ্যাত হবার পথটাই তোমরা খুঁজলে। যেই আনন্দ করবার একটি ক্ষুদ্র অবকাশ পেলে অমনি মেতে উঠলে বুনো উল্লাসে। তোমাদের ছেড়ে এসে আমি তো বেঁচেই গেছি। কষ্ট যা সহ্য করার তা আমি করে ফেলেছি। কিন্তু তোমরা যে পৃথিবীটাকে জাহান্নাম বানিয়ে রেখেছ তার জন্য তো তোমাদেরই তিক্ত ফল ভোগ করতে হবে। আমার মৃত্যু দেখেও যদি তোমরা শিক্ষা নিতে না পার তবে তো আমার এই নির্মম যন্ত্রণার মৃত্যুই বৃথা।
আমি রাজন বলছি, আমার জন্য নয়, শুধু তোমাদের কথা ভেবে বলছি- তোমরা নিজের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে অন্যকে কষ্ট দিয়ো না। নিজের পশুত্বকে শেষ করে একবার মানুষ হও। অন্যের জন্য বাঁচা শেখ। তোমরা সবাই তো ভাই-বোন, এক বাবা-মায়ের সন্তান, মৃত্যুর পর এই জগতেই তো তোমাদের প্রত্যাগমন করতে হবে- তাই আর নিজেদের মধ্যে হানাহানি না করে সকলে এক্যবদ্ধ হও। শুধু আমার খুনিদের নয় সমস্ত খুনি, দুর্নীতিবাজ, অন্যায়কারী, যুলুমকারী, অপরাধীদের ন্যায় বিচার কর। তাদের হয় শাস্তি দাও না হয় সংশোধন হবার সুযোগ করে দাও। ন্যায়, সুবিচার, সত্য, সাম্য, নিরাপত্তা, শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠা কর যেন আর কোনো রাজনকে এমন নির্মম, নিষ্ঠুরভাবে মৃত্যুবরণ করতে না হয়, যেন আমার বাবা-মায়ের মতো কারো কোল শূন্য না হয়। যেদিন তোমরা এমন শান্তিপূর্ণ নিরাপদ সমাজ গঠন করতে পারবে সেদিন ঈদ করো, আনন্দ করো, যত ইচ্ছা হৈ-হুল্লোড়, আনন্দ-উল্লাস, নাজ-গান করো। তোমাদের কাছে এ আমার আত্মার মিনতি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.