নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পাঠকের মুগ্ধতাই আমার লেখার প্রেরণা, সত্য প্রচার আমার লেখার উদ্দেশ্য আর মিথ্যাকে বিনাশ করে দিকেদিগন্তে সত্যের আলোকচ্ছটার বিচ্ছুরণই আমার লেখার চূড়ান্ত লক্ষ্য।

বিদ্রহীসূত

রাকীব আল হাসান, সহকারী সাহিত্য সম্পাদক, দৈনিক বজ্রশক্তি।

বিদ্রহীসূত › বিস্তারিত পোস্টঃ

ব্রিটিশ প্রবর্তিত প্রচলিত ভোগবাদী ও বস্তুবাদী শিক্ষাব্যবস্থা (পর্ব-২)

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৯:০৩







আমাদের দেশে প্রধানত দু’টি ধারার শিক্ষাব্যবস্থা চালু আছে। সাধারণ শিক্ষা ও মাদ্রাসা শিক্ষা। প্রচলিত এই শিক্ষাব্যবস্থারটি চালু হয় মূলত ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগ থেকে। এরপর সময়ের পরিক্রমায় শিক্ষাব্যবস্থায় সামান্য কিছু পরিবর্তন করা হলেও মূল কাঠামো, লক্ষ্য একই রয়ে গেছে। এ প্রসঙ্গে সংক্ষেপে বলছি।

দীর্ঘ দু’শো বছর ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তিটি দাপটের সাথে পৃথিবীর বিরাট একটি অঞ্চল শাসন করে, যার মধ্যে আমাদের এই উপমহাদেশ অন্যতম। তারা এই উপমহাদেশ ছেড়ে চলে যাবার পরেও যেন এখানে তাদের স্বার্থ কায়েম থাকে সেজন্য একটি শয়তানি ফন্দি করল। প্রথমত তারা ঐ সময়ের সকল শিক্ষাব্যবস্থা বন্ধ করে দিল এবং দুইটি ধারায় শিক্ষাব্যবস্থা চালু করল। এর একটি অংশ ধর্মীয় শিক্ষা বা মাদ্রাসা শিক্ষা এবং অন্যটি সাধারণ শিক্ষা। উপমহাদেশের বড়লাট লর্ড ওয়ারেন হেসটিংস ১৭৮০ সনে ভারতের তদানীন্তন রাজধানী কলকাতায় আলীয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করল। এই মাদ্রাসায় ইসলাম শিক্ষা দেওয়ার জন্য খ্রিষ্টান পণ্ডিতরা বহু গবেষণা করে একটি নতুন ইসলাম দাঁড় করালেন যে ইসলামের বাহ্যিক রূপ বা দৃশ্য প্রকৃত ইসলামের মতো মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে সেটার আকিদা এবং চলার পথ আল্লাহর রসুলের ইসলামের ঠিক বিপরীত।

সেখানে ইসলামের অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেমন মূল ভিত্তি তওহীদ তথা আল্লাহর সার্বভৌমত্ব, ঐক্য, শৃঙ্খলা, আনুগত্য, মিথ্যার সাথে আপস না করা, অন্যায়ের প্রতিবাদ, স্বার্থহীনভাবে সমাজ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করা, সমাজে ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করা, মানবতা, মনুষ্যত্ব, দেশপ্রেম ইত্যাদি বিষয়ের কোনো গুরুত্ব এখানে রাখা হলো না। এখানে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে শেখানো হলো খুঁটি-নাটি মাসলা-মাসায়েল আর ব্যক্তিগত আমল করে জান্নাতে যাওয়ার পদ্ধতি (যদিও মানুষকে অশান্তিতে রেখে হাজার ব্যক্তিগত আমল করেও জান্নাতে যাওয়া যাবে না)। ধর্মের প্রকৃত উদ্দেশ্য যে মানুষের কল্যাণ সেটা ভুলিয়েই দেওয়া হলো। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেয়ে ছোটখাটো নফল, মুস্তাহাব আমলের গুরুত্বই অধিক ফুটিয়ে তোলা হলো। দেশের মঙ্গলের জন্য, সমাজের শান্তির জন্য, মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করা যে আল্লাহর সন্তুষ্টির অন্যতম উপায়, জান্নাতে যাবার জন্য সর্বোত্তম এবাদত এটা তাদের জ্ঞানে নেই। এই শিক্ষাব্যবস্থা থেকে শিক্ষিত হয়ে যারা বের হন তাদেরকে আমরা আলেম বলে জানি (আলেম অর্থ জ্ঞানী, যদিও তাদের জ্ঞানসীমানা নিয়ে অনেকের মনেই সংশয় রয়েছে)। মানুষের কল্যাণে তথা জনকল্যাণমূলক কাজে আমরা তাদের বিশেষ কোনো ভূমিকা দেখি না। তাদের মধ্যে কিছু মানুষকে (আলেম সাহেবকে) দেখি ফতোয়াবাজী করতে, মানুষকে নাস্তিক, কাফের ইত্যাদি বলে প্রচার করে সাধারণ মানুষকে উত্তেজিত করতে আবার কিছু মানুষকে দেখি দুনিয়ার কোনো খবর নাই, শুধু মসজিদে নামাজ পড়ানো, মিলাদ পড়ানো, মুর্দা দাফন করা, তারাবি পড়ানো ইত্যাদি (যেগুলিকে আমরা ধর্মীয় কাজ বলে জানি) করে অর্থ রোজগার করছে।

এই শিক্ষাব্যবস্থার সিলেবাসে অঙ্ক, ভূগোল, বিজ্ঞান, অর্থনীতি, প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষা ইত্যাদির কোনো কিছুই রাখা হলো না, যেন মাদ্রাসা থেকে বের হয়ে এসে আলেমদের রুজি-রোজগার করে খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য এই দীন, ধর্ম বিক্রি করে রোজগার করা ছাড়া আর কোনো পথ না থাকে। ব্রিটিশরা এটা এই উদ্দেশ্যে করল যে তাদের মাদ্রাসায় শিক্ষিত এই মানুষগুলো যাতে বাধ্য হয় দীন বিক্রি করে উপার্জন করতে এবং তাদের ওয়াজ নসিহতের মাধ্যমে বিকৃত ইসলামটা এই জনগোষ্ঠির মন-মগজে স্থায়িভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। ব্রিটিশরা তাদের এই পরিকল্পনায় শতভাগ সাফল্য লাভ করল। এই মাদ্রাসা প্রকল্পের মাধ্যমে দীনব্যবসা বা ধর্মব্যবসা ব্যাপক বিস্তার লাভ করল এবং এর মাধ্যমে মুসলিমদের মধ্যেও অন্যান্য ধর্মের মতো একটি স্বতন্ত্র পুরোহিত শ্রেণি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করল। তারা দীনের বহু বিতর্কিত বিষয় নিয়ে তর্ক-বাহাস এবং ফলে বিভেদ-অনৈক্যের সৃষ্টি করতে থাকলো, যার দরুন জাতি খ্রিষ্টান প্রভুদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার শক্তি হারিয়ে ফেলল। এই পুরোহিত শ্রেণির কর্মকাণ্ডের ফলে তাদেরকে অনুসরণকারী বৃহত্তর দরিদ্র জনগোষ্ঠির চরিত্র প্রকৃতপক্ষেই পরাধীন দাস জাতির চরিত্রে পরিণত হলো, কোনোদিন তাদের প্রভুদের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়াবার চিন্তা করারও শক্তি রইল না। ফলে তারা চিরতরে নৈতিক মেরুদণ্ড হারিয়ে ফেলে সমাজের উচ্চ শ্রেণির মুখাপেক্ষি হয়ে রইল।

এভাবেই খ্রিষ্টান পণ্ডিতরা নিজেরা অধ্যক্ষ থেকে ১৯২৭ সন পর্যন্ত ১৪৬ বছর ধরে এই মুসলিম জাতিকে এই বিকৃত ইসলাম শেখালো। অতঃপর তারা যখন নিশ্চিত হলো যে, তাদের তৈরি করা বিকৃত ইসলামটা তারা এ জাতির হাড়-মজ্জায় ঢুকিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে এবং আর তারা কখনও এটা থেকে বের হতে পারবে না তখন তারা ১৯২৭ সনে তাদের আলীয়া মাদ্রাসা থেকেই শিক্ষিত মওলানা শামসুল ওলামা কামাল উদ্দিন আহমেদ (এম.এ.আই.আই.এস) এর কাছে অধ্যক্ষ পদটি ছেড়ে দিলো, এর আগে পর্যন্ত মোট ৪৬ জন খ্রিষ্টান পণ্ডিত এই মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল পদে আসীন ছিল। (আলীয়া মাদ্রাসার ইতিহাস, মূল- আ. সাত্তার, অনুবাদ- মোস্তফা হারুণ, ইসলামী ফাউণ্ডেশন, বাংলাদেশ, Reports on Islamic Education and Madrasah Education in Bengal” by Dr. Sekander Ali Ibrahimy (Islami Faundation Bangladesh), মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার ইতিহাস, মাওলানা মমতাজ উদ্দীন আহমদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ)।

সাধারণ শিক্ষার ব্যাপারে পরবর্তী পোস্টে লিখব ইনশাল্লাহ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:০২

অদ্বিত বলেছেন: খুবই ভাল কাজ করছে বৃটিশরা। আমি তাদের সাপোর্ট করি। আসলেই ধর্মীয় শিক্ষার কোন ভ্যালু থাকা উচিত না।

২| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৫

সত্যের পথে আরিফ বলেছেন: ছবিটা কি আলিয়ার না কাওমিয়ার?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.