নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পাঠকের মুগ্ধতাই আমার লেখার প্রেরণা, সত্য প্রচার আমার লেখার উদ্দেশ্য আর মিথ্যাকে বিনাশ করে দিকেদিগন্তে সত্যের আলোকচ্ছটার বিচ্ছুরণই আমার লেখার চূড়ান্ত লক্ষ্য।

বিদ্রহীসূত

রাকীব আল হাসান, সহকারী সাহিত্য সম্পাদক, দৈনিক বজ্রশক্তি।

বিদ্রহীসূত › বিস্তারিত পোস্টঃ

কেবল আমার ধর্মই সঠিক। হুম!!! . ...স্থির হও ভাই। মূল ধর্ম এক বটে, বিভিন্ন আধার। জল এক, ভিন্ন তটে ভিন্ন জলাশয়।...

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:১২



গত কাল “সঙ্গত প্রশ্ন” শিরোনামে একটি পোস্ট করেছিলাম, সেখানে অনেকেই মন্তব্য করেছেন, এই পোস্টটি পড়লে আশা করি উত্তর পেয়ে যাবেন তারা। আগের পোস্টে কেবল প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলাম, এখানে আমার মতামত উপস্থাপন করেছি।
.
প্রতিটি ধর্মের লোক এই একটি কথায় দৃঢ়বিশ্বাসী যে তাদের ধর্মই সঠিক এবং তারাই যে আল্লাহর মনোনীত বান্দা (Chosen People) একথা তাদের সবার ধর্মগ্রন্থে লেখা আছে।

পবিত্র কোর’আনে মহান আল্লাহ সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, আল্লাহ ইসলামকে তোমাদের দীন হিসাবে মনোনীত করেছেন (সুরা ইমরান ১৯) এবং তোমাদের প্রতি তাঁর নেয়ামতকে পূর্ণ করেছেন (সুরা মায়েদা ৩)। ইসলাম ছাড়া আর কোনো দীন গ্রহণ করা হবে না (সুরা ইমরান ৮৫)। এই আয়াতগুলির উপর ভিত্তি করে আলেম ওলামারা অমুসলিমদের জান্নাতে যাবার সম্ভাবনাকে নাকচ করে দেন।

এ কথা বাইবেলে ইহুদি জাতির উদ্দেশ্যেও দ্ব্যার্থহীনভাবে বলা হয়েছে," For you are a holy people to the LORD your God, and the LORD has chosen you to be a people for His own possession out of all the peoples who are on the face of the earth. (Deuteronomy 14:2) সুতরাং তারা যার যার অবস্থানে দৃঢ় থেকে অন্য জাতিগুলোকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দিচ্ছে।

আসলেই কি তাই?

সকল ধর্ম একই ধর্ম:
দীন এবং ইসলাম এ শব্দ দু’টি লক্ষ্য করি। দীন অর্থ জীবনব্যবস্থা অর্থাৎ মানুষ সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করতে গেলে তাদের মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য যে পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, বিচারিক বিধি-বিধান প্রয়োজন পড়ে সেগুলি হচ্ছে দীন। দীন হতে পারে দুই প্রকার: আল্লাহর দেওয়া অথবা মানুষের তৈরি। এ দুটির খিচুড়িও হতে পারে। আল্লাহ যুগে যুগে তাঁর নবী-রসুল-অবতারদের মাধ্যমে যে জীবনব্যবস্থাগুলি পাঠিয়েছেন সেগুলির নাম তিনি দিয়েছেন ‘ইসলাম’ অর্থাৎ শান্তি। এর তাৎপর্য হচ্ছে- এটি এমন এক জীবনব্যবস্থা যার পরিণামে মানবসমাজে নেমে আসবে অনাবিল শান্তি। তাই শান্তিই হচ্ছে সকল দীনের উদ্দেশ্য এবং উপরোক্ত আয়াত যেখানে আল্লাহ বলছেন যে, ‘ইসলাম’ ব্যতীত আর কোনো দীনকে কবুল করা হবে না, সেখানে তিনি এই শাশ্বত চিরন্তন জীবনবিধানকেই বুঝিয়েছেন যা তিনি আদম (আ.) থেকে শেষ নবী (দ.) পর্যন্ত প্রত্যেক নবী-রসুলকে দিয়ে পাঠিয়েছেন। অর্থাৎ আল্লাহরটা নিতে হবে, মানুষের মনগড়া দীন তিনি গ্রহণ করবেন না।

একজন নবীর আনীত শিক্ষা যখন কালক্রমে বিকৃত করে ফেলা হয় তখন আরেকজন নবী আসেন এবং সেই পূর্বতন নবীর প্রকৃত শিক্ষাকেই সত্যায়ন করেন এবং যুগোপযোগী করেন। কিন্তু মূল শিক্ষায় কোনো পরিবর্তন করেন না। ধর্মের বাস্তবিক রূপ হচ্ছে করুণা ও মানবতা। ধর্মের চর্চা থেকে যখন করুণা ও মানবতা বিদায় নেয়, তখন তা আসলে প্রদীপ থেকে আলো নিভে যাওয়ার মতো। প্রদীপ থেকে আলো নিভে গেলে তা আলো দেওয়ার পরিবর্তে হাতকে কালিমালিপ্ত করে। নতুন নবী এসে সেই প্রদীপটিকে আবার জ্বেলে দেন। প্রদীপ পরিবর্তনের কোনো প্রয়োজন হয় না, বড়জোর কিছু ঝাড়পোছ করেন।


মুসার (আ.) শিক্ষাকে সত্যায়ন করার জন্যই ঈসার (আ.) আবির্ভাব। ঈসা (আ.) নতুন কোনো বিধান নিয়ে আসেন নি, তাঁর প্রচারিত শিক্ষার (ইঞ্জিল) মধ্যে জাতীয়-রাষ্ট্রীয় জীবন পরিচালনার মতো কোনো আইন-কানুন, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বা দণ্ডবিধি নেই। ধর্মের আত্মা হচ্ছে করুণা ও মানবতা, কিন্তু তওরাতের ধারক-বাহক আলেমদের কাছে মানবতার চেয়ে ধর্মের বিধিনিষেধ পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পালন করাই মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল, যার ফলে ধর্ম হয়ে পড়েছিল ভারসাম্যহীন। ঈসা (আ.) এসে তওরাতের ঐ শুষ্ক বিধানগুলোর প্রতিটির মধ্যে মানবতার বোধ সঞ্চার করে তদানীন্তন ‘ইসলামকে’ তার যথাস্থানে ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। আল্লাহই কোর’আনে বলেছেন যে, ঈসা (আ.) খ্রিষ্টান ছিলেন না, তিনি ছিলেন মুসলিম, সুতরাং তার ধর্ম ইসলামই ছিল। তিনি ছিলেন এক আল্লাহর আনুগত্যে একনিষ্ঠ (হানিফ) এবং একজন মুসলিম (সুরা ইমরান ৬৬)।

মহানবী (দ.) মদীনায় রাষ্ট্রগঠন করে ইহুদি বা খ্রিষ্টানদের উপর কোর’আনের বিধি-বিধান চাপিয়ে দেন নি। ইহুদিরাও আল্লাহর রসুলকে শাসক হিসাবে মেনে নিলেও বিধানের ক্ষেত্রে তওরাতের বিধানকেই পছন্দ করত। রসুল তাদেরকে তাদের অভিপ্রেত বিধান দিয়েই বিচার করেছেন। অর্থাৎ তওরাতের বিধানও ‘ইসলাম’ বলেই বিবেচিত হলো। এমনকি আল্লাহ তওরাতের বিধানের দিকেই ইহুদিদেরকে আহ্বান করেছেন, নতুন বিধান তাদের উপর চাপিয়ে দেন নি। কেননা তওরাতও তারই হুকুম। তিনি প্রশ্ন রেখেছেন, “তারা আপনাকে কেমন করে বিচারক মান্য করবে যখন তাদের কাছে তওরাত রয়েছে। তাতে আল্লাহর নির্দেশ আছে। অতঃপর তারা পেছন দিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তারা কখনোই বিশ্বাসী নয়। আমিই তওরাত অবতীর্ণ করেছি। এতে রয়েছে হেদায়াত ও আলো। আল্লাহর আজ্ঞাবহ নবী, দরবেশ ও আলেমরা এর মাধ্যমে ইহুদিদেরকে ফায়সালা দিতেন। কেননা তাদেরকে এই ঐশীগ্রন্থের তত্ত্বাবধান করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল এবং তারা এর রক্ষণাবেক্ষণে নিযুক্ত ছিলেন। অতএব তোমরা মানুষকে ভয় কর না, আমাকে ভয় করো এবং আমার আয়াতসমূহের বিনিময়ে স্বল্পমূল্য গ্রহণ করো না। যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন সে অনুযায়ী ফায়সালা (হুকুম) করে না, তারাই কাফের (সুরা মায়েদা ৪৩-৪৪)।


সুতরাং এটা সুস্পষ্ট হলো যে, কেবল কোর’আন দিয়েই যে ফায়সালা দিতে হবে তা আল্লাহ বলেন নি, তিনি বলেছেন ‘আনযালাল্লাহু’ অর্থাৎ আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান। বেদ, তওরাত, জিন্দাভেস্তা, ত্রিপিটক, যবুর, ইঞ্জিলও আল্লাহর অবতীর্ণ (অনেক গবেষকদের মতে) সুতরাং সেগুলি দিয়ে ফায়সালা দিলেও সেটা ইসলামেরই ফায়সালা, সেটাই সমাজে শান্তি আনবে। আর কাফের তো তারাই যারা আল্লাহর কোনো বিধান দিয়েই ফায়সালা দিতে রাজি না, যারা নিজেদের মনগড়া বিধানের পক্ষপাতী। সেটা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ সেটা মানবসমাজে শান্তি আনবে না যা আল্লাহ অবগত আছেন।

একইভাবে আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি মরিয়ম তনয় ঈসাকে ইঞ্জিল প্রদান করেছি। এতে হেদায়াত ও আলো রয়েছে। এটি পূর্ববর্তী গ্রন্থ তওরাতের সত্যায়ন করে পথপ্রদর্শন করে এবং এটি মুত্তাকীদের জন্য হেদায়াতসহ উপদেশবাণী। ইঞ্জিলের অধিকারীদের উচিত আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তদনুযায়ী ফায়সালা করা। যারা আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তদনুযায়ী ফায়সালা করে না, তারাই ফাসেক (অবাধ্য) (সুরা মায়েদা ৪৬-৪৭)।

পূর্বেই বলেছি, ঈসা (আ.) জাতীয় জীবন পরিচালনার জন্য কোনো নতুন শরীয়াহ আনেন নি, তিনি ইহুদিদেরকে তওরাতের বিধানকেই মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “হে বনী ইসরাইল! আলেমেরা ও ফরীশীরা শরীয়ত শিক্ষা দেবার ব্যাপারে মূসা (আ.) এর জায়াগায় আছেন। সুতরাং এরা যা কিছু করতে আদেশ করেন তোমরা তা পালন করো। কিন্তু তাঁরা যা করেন সেটা তোমরা অনুসরণ করো না, কারণ তাঁরা মুখে যা বলেন কাজে তা করেন না।’ (নিউ টেস্টামেন্ট: ম্যাথু ২৩:২-৩)।

একইভাবে বৈদিক ধর্ম যখন আত্মাহীন হয়ে গিয়েছিল তখন সর্বজীবে করুণার বাণী নিয়ে এসেছিলেন গৌতম বুদ্ধ (আ.)। স্বামী বিবেকানন্দ গৌতম বুদ্ধকে নবী ঈসার (আ.) সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, “বুদ্ধদেব এর শিষ্যগণ তাঁহাকে ঠিক ঠিক বুঝিতে পারেন নাই। ইহুদিধর্মের সহিত খ্রিষ্টানধর্মের যে সম্বন্ধ, হিন্দুধর্ম অর্থাৎ বেদবিহিত ধর্মের সহিত বর্তমানকালের বৌদ্ধধর্মের প্রায় সেইরূপ সম্বন্ধ। যীশুখ্রিস্ট ইহুদি ছিলেন ও শাক্যমুনি (বুদ্ধদেব) হিন্দু ছিলেন। শাক্যমুনি নতুন কিছু প্রচার করিতে আসেন নাই। যীশুর মতো তিনিও (পূর্ব ধর্মমতকে) ‘পূর্ণ করিতে আসিয়াছিলেন, ধ্বংস করিতে আসেন নাই।’” [শিকাগো বিশ্বধর্ম মহাসভায় প্রদত্ত বক্তৃতা]।

একটি বৃক্ষের মধ্যে বহু শাখা প্রশাখা ও অসংখ্য পাতা থাকে, কিন্তু সেগুলি সব একই বৃক্ষের অংশ হিসাবে পরিচিত হয়, যেমন আমগাছের সব ডালের পাতাই আমপাতা। বৃক্ষে যে ফল ধরে তার নামে ঐ বৃক্ষের নামকরণ হয়। তেমনি আল্লাহ যে জীবনব্যবস্থা যুগে যুগে নাজেল করেছেন সবগুলি মূলত একই বৃক্ষের শাখা-প্রশাখা এবং সেই বৃক্ষের ফল হচ্ছে শান্তি। ফলের নামে এই দীনরূপ বৃক্ষের নাম আল্লাহ রেখেছেন ইসলাম বা শান্তি। অর্থাৎ কোর’আনে আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন যে, একমাত্র যে জীবনব্যবস্থায় শান্তি আসবে সেটাই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য জীবনব্যবস্থা।

একই বৃক্ষের ভিন্ন শাখায় যেমন পৃথক ফল ধরে না, তেমনি কোনো ধর্মেই অশান্তি হয় না, সকল ধর্মই শান্তিময়। তবে বিকৃত ধর্ম শান্তি দিতে সক্ষম হবে না, এটা সাধারণ জ্ঞান। তাই আদম (আ.) থেকে শুরু করে শেষ নবী মোহাম্মদ (দ.) পর্যন্ত যে শাশ্বত জীবনব্যবস্থা আল্লাহ পাঠিয়েছেন সেগুলি আলাদা আলাদা ধর্ম নয়, সেগুলি একই ধর্ম, একই দীন। এজন্য এর আরেক নাম দীনুল কাইয়্যেমাহ বা সনাতন জীবনব্যবস্থা- যে জীবনব্যবস্থা ছিল-আছে-থাকবে।

খানিক আগে যে কথাটি বলে আসলাম যে, প্রতিটি ধর্মের মূল শিক্ষায় এবং ভিত্তিতে কোনো পার্থক্য আসে নি। সেই মূল শিক্ষা হচ্ছে- স্রষ্টার শর্তহীন আনুগত্যই শান্তির মূল সূত্র। বিভিন্ন ধর্মের ধার্মিকদের উপাসনা পদ্ধতি যতই আলাদা হোক, উপাস্য তো আলাদা নয়। প্রতিটি ধর্মের মানুষ যদি সেই সৃষ্টিকর্তার বিধান মেনে চলতে সম্মত থাকে, সেই বিধান বেদেরই হোক, তওরাতেরই হোক, ইঞ্জিলেরই হোক, যবুরেরই হোক বা কোর’আনেরই হোক তারা অবশ্যই সামগ্রিক জীবনে শান্তি ও সমৃদ্ধির দিকে ধাবিত হবে। কেননা তারা সৃষ্টিকর্তাকে ঐক্যসূত্র হিসাবে গ্রহণ করে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে আর ঐক্য প্রাকৃতিকভাবেই তাদেরকে শক্তিশালী করে তুলবে। পরিণামে সমৃদ্ধি ও সুখ-শান্তি তাদের সমাজে বিরাজ করবে। ঐক্যই শান্তির আধার আর বিচ্ছিন্নতাই অশান্তির আকর।

ইসলামের বৃক্ষের সন্নিকটেই দাঁড়িয়ে আছে আরেকটি বৃক্ষ যার ফলগুলি বিষাক্ত। এটা হচ্ছে মানবরচিত জীবনব্যবস্থা যার সনাতন ফল অন্যায়, অশান্তি, রক্তপাত, ঘৃণা। এই বিষবৃক্ষকে আল্লাহ প্রত্যাখ্যান করবেন। মানবজাতির শান্তির জন্য যে বিধি-বিধান প্রয়োজন তা আল্লাহ অগণিত প্রেরিতের মাধ্যমে পাঠানোর পর তিনি কোর’আনের মাধ্যমে ইসলাম নামক জীবনব্যবস্থার শেষ ইটটি স্থাপন করেছেন। আর নতুন কোনো বিধান আসবে না, বিধান আসার পর্ব শেষ। এই বিধানই মানবজাতির শেষ দিন পর্যন্ত শান্তি দিতে সক্ষম হবে। একেই আল্লাহ বলেছেন, তোমাদের প্রতি আমার নেয়ামতকে পূর্ণ করলাম।

শেষ নবীর উপর আল্লাহ যে দায়িত্ব দিয়েছেন সমগ্র পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য। আল্লাহ বলেছেন, “তিনি তাঁর রসুল প্রেরণ করেছেন পথনির্দেশ ও সত্য জীবনব্যবস্থা সহকারে যেন রসুল একে অন্যান্য সকল জীবনব্যবস্থার উপরে বিজয়ী করে” (সুরা তওবা-৩৩, সুরা সফ- ৯, সুরা ফাতাহ- ২৮)। এখানেও আল্লাহ পূর্বতন ধর্মগুলোকে নির্মূল করতে বলেন নি, কেবল বলেছেন জাতীয় জীবনে যেন মনগড়া বিধান না থাকে, সেখানে যেন আল্লাহর সত্যদীন প্রতিষ্ঠা করা হয়। আর সকল ধর্মের অনুসারীদেরকে যেন স্বাধীনভাবে ধর্মপালনের সুযোগ করে দেওয়া হয়। রসুলাল্লাহর হাতে গড়া জাতিটি যেখানেই সত্যদীন প্রতিষ্ঠা করেছেন সেখানেই অন্য ধর্মের উপাস্য ও উপাসনালয়কে সুরক্ষা দিয়েছেন।

এখানে একটি কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন, আমরা যদি সত্যিই চাই পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা হোক, তাহলে মানবজাতিকে যেভাবেই হোক শান্তির পক্ষে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। যারা নাস্তিক বা নিরিশ্বরবাদী তারাও শান্তি চান, যারা ধার্মিক তারাও শান্তি চান। তাই মানবতার পক্ষে, শান্তির পক্ষে আস্তিক-নাস্তিক, সংশয়বাদী সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতেই হবে। শান্তি আসবে স্রষ্টার বিধানে এটা ধ্রুব সত্য। আল্লাহর অস্তিত্বে অবিশ্বাসীরাও যদি তাদের জীবনে আল্লাহর বিধান মান্য করে অবশ্যই তাদের সমাজ থেকেও সকল অন্যায়, অবিচার লুপ্ত হয়ে শান্তি কায়েম হবে।

তবে পৃথিবীতে শান্তিতে থাকা আর পরকালে জান্নাতে যাওয়া এক বিষয় নয়। পরকালের সঙ্গে বিশ্বাস জড়িত। স্বর্গে যাবার জন্য আল্লাহ যে বিষয়গুলি বিশ্বাস করতে বলেছেন সেগুলি বিশ্বাস করতে হবে। এখানেই প্রশ্ন, ইসলামের শেষ সংস্করণ এসে যাওয়ার পরও ইসলাম গ্রহণ না করে, পূর্ববর্তী ধর্মবিশ্বাসে স্থির থেকে কেউ কি স্বর্গে যেতে পারবেন?

এর জবাব হচ্ছে, হ্যাঁ, অবশ্যই তাদেরও জান্নাতে যাওয়ার পথ খোলা আছে। এক্ষেত্রে শর্ত হলো, তাদেরকে শেষ নবী ও শেষ গ্রন্থ কোর’আনকে সত্য বলে বিশ্বাস করতে হবে (যেমন একজন মুসলিমকেও অন্য নবীদের উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে হয়)। বিশ্বাসী হিসাবে পরিগণিত হতে হলে ধর্মের কয়েকটি মূল বিষয়ের উপর বিশ্বাস থাকতেই হবে। সেগুলি হচ্ছে: আল্লাহর উপর, মালায়েকদের উপর, সকল ঐশীগ্রন্থের উপর, সকল নবী-রসুলগণের উপর, কেয়ামত দিবসের উপর, ভাগ্যের ভালো-মন্দের নিয়ন্ত্রক আল্লাহ এ কথার উপর এবং মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের উপর। তাই শেষ নবী এবং শেষ কেতাবের উপর অবিশ্বাস রেখে জান্নাতে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই তেমনিভাবে পূর্ববর্তী কোনো নবী-রসুল-অবতার এবং তাঁদের আনীত কেতাবের প্রতিও অবিশ্বাস রেখে মুসলমানদের জান্নাতে যাওয়ার আশা করে লাভ নেই। এটাই রসুলাল্লাহ সুস্পষ্টভাষায় বলে দিয়েছেন, ‘আমার আহ্বান যার কানে পৌঁছালো সে যদি আমার উপর ঈমান না এনে মৃত্যুবরণ করে তবে সে অবশ্যই জাহান্নামী।’-হাদিস

আবিসিনিয়ার খ্রিষ্টান বাদশাহ নাজ্জাশি রসুলাল্লাহকে সত্য নবী এবং কোর’আনকে আল্লাহর বাণী বলে স্বীকার করে নিলেও ইসলাম কবুল করেন নি, তবে সত্য প্রচারে অনেক সহযোগিতা করেছিলেন। নাজ্জাশী ইন্তেকাল করেছিলেন তাবুক যুদ্ধের পর নবম হিজরীতে। আল্লাহর রসুল নাজ্জাশীর এন্তেকালের সঙ্গে সঙ্গেই সাহাবাদেরকে বলেন- ‘তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জানাযা পড় যিনি তোমাদের দেশ ব্যতীত অন্য দেশে মৃত্যুবরণ করেছেন।’ রসুলাল্লাহ যখন জানাযায় দাঁড়ালেন তখন কয়েকজন মুনাফেক মন্তব্য করে যে, রসুলাল্লাহ একজন কাফেরের জানাযা পড়াচ্ছেন। এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ সুরা আল ইমরানের ১৯৯ নং আয়াত নাজেল করলেন, যেখানে বলা হয়েছে- ‘গ্রন্থধারীদের কেউ কেউ এমনও রয়েছে, যারা আল্লাহর উপর ঈমান আনে এবং যা কিছু তোমার উপর অবতীর্ণ হয় আর যা কিছু তাদের উপর অবতীর্ণ হয়েছে সেগুলোর উপর, আল্লাহর সামনে বিনয়াবনত থাকে এবং আল্লাহর আয়াতসমুহকে স্বল্পমূল্যের বিনিময়ে সওদা করে না, তারাই হলো সে লোক যাদের জন্য পারিশ্রমিক রয়েছে তাদের পালনকর্তার নিকট। নিশ্চয়ই আল্লাহ যথাশীঘ্র হিসাব চুকিয়ে দেন।’ অর্থাৎ ভিন্নধর্মের যারা পূর্ববর্তী বা পরবর্তী কেতাবে বিশ্বাস রাখে এবং ধর্মব্যবসা করে না তারা আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কার লাভ করবে এটা আল্লাহ বলেছেন। এ কারণে নাজ্জাশী মুসলমান না হয়েও শেষ নবীকে বিশ্বাস করে তাঁকে সাহায্য করার জন্য জান্নাতবাসী হয়েছেন। একই কথা হিন্দু-বৌদ্ধ-ইহুদিসহ সকল ধর্ম-সম্প্রদায়ের জন্যই প্রযোজ্য।

আল্লাহ আরও বলেন, নিঃসন্দেহে যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং যারা ইহুদী, নাসারা ও সাবেঈনদেরও যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও কিয়ামত দিবসের প্রতি এবং সৎকাজ করেছে, তাদের জন্য রয়েছে তার সওয়াব তাদের পালনকর্তার কাছে। আর তাদের কোনই ভয়-ভীতি নেই, তারা দুঃখিতও হবে না। (সুরা বাকারা ৬২)

খেয়াল করুন,এখানে দুটি ধরণের মানুষের কথা বলা হয়েছে। প্রথমত- যারা ইসলাম গ্রহণ করে মুসলিম হয়েছে, দ্বিতীয়ত- যারা ভিন্ন ধর্মের লোক কিন্তু আল্লাহ, কেয়ামত দিবসের প্রতি বিশ্বাস রেখে সৎকাজ করে। এই দুই ধরণের মানুষকেই বলা হয়েছে তাদের কোনো ভয় নেই।

তাই স্থির হও ভাই। মূল ধর্ম এক বটে, বিভিন্ন আধার। জল এক, ভিন্ন তটে ভিন্ন জলাশয়।...

মন্তব্য ২৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:২৪

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার আগের কয়েকটা পড়েছি। এটাও পড়লাম।
ভালো লিখেন আপনি অথবা অন্যভাবে বলা যায় আপনার লেখা আমার ভালো লাগে।

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:২৮

বিদ্রহীসূত বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। আপনার ইতিবাচক মন্তব্যও আমাকে উৎসাহিত করে। আসলে মনের মিল থাকলেই লেখা ভালো লাগে।

২| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৩

অাব্দুল্লাহ অাল কাফি বলেছেন: এই লেখার সৌজন্যে শুকনা মগজে কিছু সঞ্চয় করতে পারলাম ভাইসাব।

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:৪১

বিদ্রহীসূত বলেছেন: জেনে আমারও ভালো লাগল। শুভ কামনা।

৩| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:৫০

সৈয়দ ইসলাম বলেছেন: দীর্ঘ লিখা। পরে পড়বো।



প্রিয়তে রাখলাম প্রিয়।

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৩

বিদ্রহীসূত বলেছেন: ধন্যবাদ। এমন একটি বিষয় নিয়ে লিখেছি, বড় না করে উপায় ছিল না।

৪| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৪

দিলের্‌ আড্ডা বলেছেন: ইন্টারফেইথের দিকে এগুতে চাচ্ছেন মনে হচ্ছে। সকলকে সকল ধর্মকে নিয়ে ভাববার দরকার নেই। যার যার ধর্ম নিয়ে সে সে ভাবলেই আশা করি পৃথিবীতে শান্তি আসবে। কোনো ধর্মই হিংসা বিদ্বেষকে প্রশ্রয় দেয় নি।

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৬

বিদ্রহীসূত বলেছেন: “কোনো ধর্মই হিংসা বিদ্বেষকে প্রশ্রয় দেয় নি”- কথাটি আপনি বুঝলেন, আমি বুঝলাম কিন্তু সবাই তো আর বোঝে না। এজন্যই পৃথিবীময় বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি হয়, দাঙ্গা হয়। আমি কেবল তাদের মধ্য থেকে বিদ্বেষের ভাবটা দূর করতে চাই, সত্যটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। সবাইকে তাদের নিজ নিজ ধর্মের প্রতি আনুগত্যশীল ও অন্য ধর্মগুলোর প্রতিও শ্রদ্ধাশীল করতে চেয়েছি। ধন্যবাদ।

৫| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৯

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: অন্য ধর্ম বিকৃত হওয়ার বা রহিত হওয়ার আগে যারা ঈমান এনেছিল তারা ও ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের জন্য (সূরা বাকারার -৬২ আয়াত) প্রযোজ্য।

যারা ঈমান আনবেনা কিন্তু সৎ কাজ করবে তারা দুনিয়াতে এর প্রতিদান পাবে কিন্তু আখেরাতে কিছু পাবেনা।

সব ধর্মের মূল এক নয়।

আল্লাহর মনোনীত ধর্ম ছাড়া অন্য ধর্ম যতই ভাল হোক গ্রহণযোগ্য নয়, কল্যানযোগ্য নয়।

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৭

বিদ্রহীসূত বলেছেন: মতামতের জন্য ধন্যবাদ।

৬| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:০২

নাদিয়া রহমান চুমকি বলেছেন: আপনার কাছে একটা প্রশ্ন- যখন কেউ আল্লাহর প্রতি ও কিয়ামত দিবসের প্রতি ঈমান আনে এবং সৎকাজ করে, তখন কেউ কী আর ইহুদী, নাসারা ও সাবেঈন থাকে ?

যদি না হয়, তাহলে ব্যাপারটি কি দাঁড়াল ? আর যদি হ্যাঁ হয় তাহলে ব্যাপারটি কি দাঁড়াল ? আশা করি ব্যাখ্যা করবেন।




আল্লাহ আরও বলেন, নিঃসন্দেহে যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং যারা ইহুদী, নাসারা ও সাবেঈনদেরও যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও কিয়ামত দিবসের প্রতি এবং সৎকাজ করেছে, তাদের জন্য রয়েছে তার সওয়াব তাদের পালনকর্তার কাছে। আর তাদের কোনই ভয়-ভীতি নেই, তারা দুঃখিতও হবে না। (সুরা বাকারা ৬২)

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৭

বিদ্রহীসূত বলেছেন: আমার লেখার মধ্যেই এর ব্যাখ্যা করেছি, লেখার শেষের দিকে বাদশা নাজ্জাশির ঘটনাটি পড়লেই বুঝবেন। তিনি মোহাম্মদ (সা.) কে নবী হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন, কিয়ামত দিবসে তিনি আগে থেকেই বিশ্বাসী ছিলেন কিন্তু পালন করতেন খ্রিষ্ট ধর্মের রীতি-নীতি। মুসলমানদেরকে তিনি দীন প্রচারে সহযোগিতা করেছিলেন যখন অন্য সমস্ত দিক দিয়েই বাধা আসছিল। তিনি যে খ্রিষ্টান ছিলেন সেটা তখন সকলেই জানত এবং এ কারণেই মোনাফেকরা তার গায়েবানা জানাজার ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছিল এবং রসুলাল্লাহর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছিল।--- আমার লেখটা বুঝতে এবং মেনে নিতে একটু কষ্ট হতে পারে কারণ দীর্ঘদিনের ধ্যান-ধারণার বিরুদ্ধে কেউ কোনো কথা বললে সহজে সেটা মানা যায় না। তবে নিরোপেক্ষ দৃষ্টি এবং বিবেকবোধ নিয়ে পড়লে আশা করি বুঝতে পারবেন।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। শুভ কামনা রইল।

৭| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:৪৩

হাসান রাজু বলেছেন: ব্যাপারটা হল, রাসুলদের উপর কিতাব নাজিল হয়েছিল । এটাতো সবাই বিশ্বাস করে । কিন্তু কথা হল, সেই কিতাবগুলো বিকৃত এবং মিথ্যা এতটাই মিশ্রিত যে ঐ গুলো আর পরিমারজন করেও খাটি বিষয় বের করা সম্ভব না । তাছাড়া আগের কিতাব গুলো নির্দিষ্ট জাতি গুষ্টির জন্য প্রযোজ্য ছিল সবার উপর না । তাই আল্লাহ কোরআন কে সব জাতির জন্যই আগের ভুল কিতাবের স্থলে নাজিল করেছেন ।
তাই আগেরগুলো বাতিল তো স্বয়ং আল্লাহই করে দিয়েছেন ।

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৯

বিদ্রহীসূত বলেছেন: না ভাই, আল্লাহ বাতিল করেননি, তিনি সত্যায়ন করেছেন। আল্লাহ বলেন-
‘তিনি সত্যসহ তোমার প্রতি কেতাব (কোর’আন) অবতীর্ণ করেছেন যা তা পূর্বের কেতাবের ‘সমর্থক’। আর তিনি অবতীর্ণ করেছেন তওরাত ও ইঞ্জিল (সুরা ইমরান- ৩)।’ আরেকটি আয়াতে বলেন- ‘হে মোহাম্মদ, আমি তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি সত্যগ্রন্থ যা পূর্ববর্তী গ্রন্থসমূহের সত্যায়নকারী এবং সেগুলোর বিষয়বস্তুর রক্ষণাবেক্ষণকারী। (সুরা মায়েদা: ৪৮)।’

এই আয়াতের তাফসির করতে গিয়ে ইবনে কাসির লিখেছেন, ‘‘কোর’আনে যা কিছু রয়েছে, পূর্ববর্তী কিতাবগুলোতে সেগুলোই ছিল।’’ সুতরাং আল কোর’আন পূর্ববর্তী ধর্মগ্রন্থগুলোকে বাতিল করে না, সমর্থন করে ও সত্যায়ন করে- এটা আমার কথা নয়, আল্লাহর কথা। আমি কেবল এখানে তুলে ধরলাম।

সবচেয়ে বড় কথা হলো- আজ তো আল্লাহর হুকুম বাদ দিয়ে পাশ্চাত্য প্রভুদের হুকুম আমরা মেনে নিয়েছি, কোনো ধর্মাবলম্বীরাই তো তাদের কিতাবের অনুসারী নয়, বরং কিছু প্রথাকে ধর্ম হিসাবে পালন করে চলেছে। কিতাবের সাথে তাদের পালন করা ধর্মের খুব কমই মিল রয়েছে।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

৮| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৩

ওয়াজেদ বিপ্লব বলেছেন: বুদ্ধের নামের সাথে (আ.) কি বুঝে লাগালেন? মানে কি উনিও ইসলামের নবী- এই বুঝাতে চাচ্ছেন?

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০৫

বিদ্রহীসূত বলেছেন: এটা আমার নতুন কোনো মত নয়। অনেক বিশেষজ্ঞই এই মত দিয়েছেন এবং তাদের মতের পক্ষে বহু যুক্তি, তথ্য উপস্থাপন করেছেন। আমি কেবল তাদের দেওয়া যুক্তি-তথ্যগুলো পড়ে সমর্থন না করে পারিনি। আপনি পড়লে হয়ত আপনিও মানতেন। যাইহোক, (আ.) দেওয়ার অর্থ হলো তার প্রতি সালাম পাঠানো, তার শান্তি কামনা করা। যদি তিনি নবী না হন তাহলে আমার দোয়া আল্লাহ গ্রহণ করলেন না আর যদি তিনি নবী হনই তাহলে আমার প্রার্থনার জন্য আমিই উপকৃত হলাম। এটা অন্য কাউকে মানতে বাধ্য করছি না।

৯| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০৮

মনির হোসেন মমি বলেছেন: সব ধর্মের এক ধর্ম তাহলো মানুষ ধর্ম।নিজেকে উত্তম মানুষ হিসাবে গড়তে পারলে তখন আর কোন ধর্মের প্রয়োজন হয় না।

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৩

বিদ্রহীসূত বলেছেন: মানুষের মধ্যেকার ঐ ধর্মটাকে জাগ্রত করার জন্যই তো সব ধর্মের আগমন।

১০| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৫

ওয়াজেদ বিপ্লব বলেছেন: অনেক বিশেষজ্ঞই এই মত দিয়েছেন এবং তাদের মতের পক্ষে বহু যুক্তি, তথ্য উপস্থাপন করেছেন-- একটু রেফারেন্স দেন, পড়ে দেখি।

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:১৭

বিদ্রহীসূত বলেছেন: একটু পরিশ্রম করুন, নেটে সার্চ দেন, অনেক কিছুই পেয়ে যাবেন। তবে ইন্টারনেট অবশ্য বাংলা তথ্য অনেক কম পাওয়া যায়। ইংরেজিতে অনেক তথ্য পাওয়া যায়। আর এ বিষয়টা মোটামুটি যারা পড়াশুনা করে তারা সবাই জানে। হয়ত সবাই রেফারেন্স দিতে পারবে না কিন্তু এটা জানে যে, গৌতম বুদ্ধকে অনেকেই নবী বলে মনে করেন। শুধু গৌতম বুদ্ধ নন, শ্রী-কৃষ্ণ, যুধিষ্ঠির, মহাবীর, রামচন্দ্রসহ অনেককেই ভারতীয় নবী বলে মত দিয়েছেন অনেক গবেষক। যাইহোক, আমার পড়ার মধ্যে যে লেখকদের অভিমত পেয়েছি তার উপরে আমি পত্রিকার জন্য একটা লেখা লিখেছিলাম, বেশকিছু পত্রিকাতেও লেখাটি ছাপা হয়েছিল। সেখান থেকে কিছু তথ্য আপনাকে দিলাম-

# মোজাদ্দেদে আলফেসানী সরহিন্দ (র.) কাশেফ প্রায় ৩০-৫০ জন ভারতীয় নবীর সমাধি দর্শন করেছেন বলে হাদীকা মাহমাদিয়া গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে।

# ভারত উপমহাদেশের প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ ও রাজনীতিক ব্যক্তিত্ব আবুল হাশিম তাহার বিখ্যাত Creed of Islam গ্রন্থে গৌতম বুদ্ধকে আল্লাহর নবী বলে তথ্যপ্রমাণ দিয়েছেন এবং নবীদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত দরুদ ও সম্মানসূচক “Peace be upon him বা আলাইহে সালাম (আ.) ব্যবহার করেছেন।

# খ্যাতনামা তাপস মির্জা মাজহার জানজানান এক স্বপ্নের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শ্রীকৃষ্ণ এবং রামচন্দ্রকে নবীরূপে স্বীকার করে ‘মাকামাতে মাজহারি’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।

# মাওলানা জাফর আলী খান লিখেছেন, এমন কোনো জাতি বা দেশ নেই; যার দোষ-ত্রুটি সংশোধনের জন্য উপযুক্ত সময়ে আল্লাহ তা’লা কোনো নবী রসুল প্রেরণ করেন নাই। তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় উল্লেখ করেছেন যে , শ্রীকৃষ্ণ মহান প্রভুর রেসালতের ধারায় ভারতীয় নবীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন (প্রতাপ, ২৮ শে আগস্ট ১৯২৯)।

# উপমহাদেশের প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ ও মহানবী মোহাম্মদ (দ.) এর জীবনীকার “সীরাতুন্নবীর” (দ.) রচয়িতা “আল্লামা শিবলী নোমানী, ভারতীয় নবীদের সম্বন্ধে মতামত ব্যক্ত করতে গিয়ে মন্তব্য করেছেন যে, শ্রীকৃষ্ণ ও অন্যান্য ভারতীয় নবীদের জীবনী ও সত্যিকার পরিচয় আজ নানারূপ কল্পকাহিনীর আড়ালে ঢাকা পড়ে আছে।

# আল-কোর’আনের তাফসির গ্রন্থ “তাফসীরে ওয়াহিদী”-তে মাওলানা ওয়াহিদুজ্জামান অকাতরে স্বীকার করেছেন যে, “শ্রীকৃষ্ণ আল্লাহর এক প্রিয় ও সৎপথ প্রাপ্ত ব্যক্তি ছিলেন। এবং নিজ যুগ ও জাতির জন্য খোদার পক্ষ হতে সতর্ককারীরূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন।”

# খাজা হাসান নিজামী বলেছেন, শ্রীকৃষ্ণ প্রকৃতপক্ষে দুষ্কৃতিকারীদের বিনাশকল্পে প্রেরিত অবতার ছিলেন (কৃষণবিতি)।

# উপমহাদেশের আরও একজন প্রখ্যাত পণ্ডিত, ইসলামী চিন্তাবিদ আল্লামা সোলেমান নদভী হিন্দুদের পূজ্য অবতার শ্রীরামচন্দ্র, কৃষ্ণ ও গৌতম বুদ্ধকে নবীরূপে স্বীকার করে তাঁর “সিরাত মোবারক” ১৯৮২ গ্রন্থে উল্লেখ কোরেছেন।

# আল-কোর’আনের ব্যাখ্যাতা প্রখ্যাত তাফসিরকারক ও আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মুফতি এবং প্রখ্যাত তাফসির গ্রন্থ “মা’আরেফুল কোর’আন” এর রচয়িতা (আটখণ্ড) মুফতি মোহাম্মদ শফি, তাঁর গ্রন্থের ৩য় খণ্ডে উল্লেখ করেছেন যে, আর্য ধর্মগ্রন্থ বেদের সকল ঋষিগণই নবী-অবতার ছিলেন। শ্রীমদভাগবতগীতার উদ্গাতা শ্রীকৃষ্ণের সঠিক পরিচয়কে উদ্ঘাটন করতে গিয়ে বহু মনীষী, জ্ঞানী-গুণী পণ্ডিত ব্যক্তি সুগভীর গবেষণা করেছেন। তাদের অনেকেই অভিমত দিয়েছেন যে, আল্লাহ সকল জাতিগোষ্ঠীতে ও জনপদে ঐ এলাকার ভাষায় রচিত ধর্মগ্রন্থ সহকারে তাঁর নবী-রসুলদেরকে পাঠিয়েছেন। কিন্তু ঐ নবীদের বিদায়ের পরে তাঁর শিক্ষা ও ধর্মগ্রন্থ বিকৃত করে ফেলা হয়েছে। ফলে ঐ এলাকার মানুষকে নতুন করে পথ দেখাতে আবির্ভূত হয়েছেন অন্য নবী যারা পূর্বের বিকৃত গ্রন্থকে রদ ঘোষণা করেছেন এবং নতুন বিধান জাতিকে প্রদান করেছেন। কেউ তাকে মেনে নিয়েছে, কেউ মেনে নেয় নি। এভাবে জন্ম হয়েছে একাধিক ধর্মের। কালক্রমে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, এক এলাকার ধর্মের অনুসারীরা অন্য এলাকায় অন্য ভাষায় নাযেলকৃত ধর্মকে ধর্ম হিসাবে এবং ঐ ধর্মের প্রবর্তককে নবী হিসাবে স্বীকৃতি দিতে নারাজ। যেমন ইহুদিরা ঈসা (আ.) কে আল্লাহর প্রেরিত বলে স্বীকার করে না, খ্রিস্টানরা আখেরী নবী মোহাম্মদ (দ.)-কে নবী হিসাবে স্বীকার করে না একইভাবে মুসলিমরা ভারতীয় অঞ্চলে ভারতীয় ভাষার মানুষের প্রতি আল্লাহর প্রেরিত বৌদ্ধ ও শ্রীকৃষ্ণ এঁদেরকে নবী হিসাবে স্বীকার করেন না। কিন্তু তাদের প্রচারিত ধর্মগ্রন্থের মধ্যে আখেরী নবীর আগমনের বহু ভবিষ্যদ্বাণী উল্লেখিত আছে যা গবেষণা করলে স্পষ্ট বোঝা যায় যে ঐ ধর্মগুলিও আল্লাহরই প্রেরিত (যা এখন বিকৃত হয়ে গেছে), এবং স্বভাবতই সেগুলির প্রবক্তারা আল্লাহরই বার্তাবাহক অর্থাৎ নবী ও রসুল। এমনই একজন গবেষক ন্যাশনাল ব্যাংক ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এবং ধর্মীয় বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও ইসলাম প্রচার মিশনের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ কে.এম.এ হোসাইন তার গবেষণা গ্রন্থ ‘ইসলাম কি ও কেন’- তে গৌতম বুদ্ধ ও শ্রীকৃষ্ণের নবী হওয়ার পক্ষে বিস্তারিত যুক্তি ও প্রমাণ উল্লেখ করেছেন। তার বই থেকে কিছু তথ্য-

# মাসিক পত্রিকা “পৃথিবীতে” মন্তব্য করা হয়েছে যে, “গীতার শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন একেশ্বরবাদী। এই পরমপুরুষের উল্লেখ করে মহানবী বিশ্বনবী মুহাম্মদ (দ.) বলেছেন “কানা ফিল হিন্দে নবীয়ান আসওয়াদুল লাওনা ইসমুহু কাহেন।” (হাদিসে দোলমী, তারিখে হামদান, বাবুল কাফ।) অর্থাৎ “ভারতবর্ষে এক নবীর আবির্ভাব ঘটে, যিনি কৃষ্ণবর্ণ এবং কানাই নামে পরিচিত।” আমরা সবাই জানি যে, শ্র্রীকৃষ্ণের আসল নাম কানাই। আর শ্রীকৃষ্ণ তাঁর সিফতি নাম। মাসিক পত্রিকা ‘পৃথিবী’ আরো উল্লেখ করেছে যে, ভারতের বৈদিকযুগ ছিল ইসলামের যুগ।(মাসিক পৃথিবী, ফেব্রুয়ারিÑ১৯৮৮)।

# ড. রফিক জাকারিয়া এক প্রবন্ধে বিভিন্ন মুসলিম মনীষী ও ওলামাদের উক্তি উদ্ধৃতি করে লিখেছেন যে, According to the Quaranic declarations, not only Moses and jesus, but all the Vedic Rishies of old and Rama, Krishna…………have alike place in the hearts of the true followers of Islam” (Ilustrated weekly of India. Dated 28.10.1973)|

# ইসলামের চতুর্থ খলিফা, জ্ঞানের দরজা নামে খ্যাত, নবী করিম (দ.) এর প্রিয়তম ভ্রাতা ও জামাতা ইসলামের ইতিহাসে খ্যাতনামা সমরবিদ আলী (রা.) বলেছেন, “আল্লাহ তা’লা কৃষ্ণবর্ণের এক নবী পাঠিয়েছিলেন, যার নাম কোর’আনে উল্লেখ করা হয় নাই।” (কাশশাফ, মাদারেক) এই বর্ণনা থেকে একজন কৃষ্ণ বর্ণের নবীর আবির্ভাবের সংবাদ পাওয়া গেল, যা নবী করিম (দ.) কর্তৃক ইতোপূর্বে উল্লেখিত হাদিসের “আসওয়াদুল ও এসমুহু কাহেন” কৃষ্ণবর্ণ ও কানাই নামে ভারতীয় নবী-অবতার শ্রীকৃষ্ণের মধ্যে সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়।

# ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং আরো বহু হিন্দু মুসলিম পণ্ডিত ও ভাষাবিদ সংস্কৃত ধর্মগ্রন্থ গবেষণা করে এমন অনেক সত্য, সনাতন বাণী খুঁজে পেয়েছেন, যার দ্বারা প্রমাণ হয় যে, বৈদিক শ্লোকগুলো ঐশীবাণী এবং বৈদিক ঋষিরা নবী, অবতার, অন্তিম ঋষি নরাশংস, কল্কি অবতার মহানবী মুহাম্মদ (দ.)। ঐ সব গ্রন্থের বাণী সত্য ও প্রবক্তারা সত্যবাদী না হলে তাঁদের ভবিষ্যৎবাণী কিরূপে সত্য হতে পারে?

# কবি নজরুল তাঁর মানুষ কবিতাতে লিখেছেন, মূর্খরা সব শোনো/মানুষ এনেছে গ্রন্থ; গ্রন্থ আনে নি মানুষ কোনো। আদম দাউদ ঈসা মুসা ইব্রাহিম মোহাম্মাদ/কৃষ্ণ বুদ্ধ নানক কবীর, বিশ্বের সম্পদ। এখানে পবিত্র কোর’আনে যাঁদেরকে নবী বলে সত্যায়ন করা হয়েছে তাদের সঙ্গে একই কাতারে কৃষ্ণ ও বুদ্ধের উল্লেখ থেকে বোঝা যায় যে, কবি নজরুল তাঁদেরকেও নবী হিসাবে বিশ্বাস করতেন।

১১| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:১৪

ওয়াজেদ বিপ্লব বলেছেন: আপনার দীর্ঘ মন্তব্য দেখলাম, পোস্ট প্রিয়তে- সময় হলে এ নিয়ে কথা বলবো।

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:০৯

বিদ্রহীসূত বলেছেন: ঠিক আছে, ধন্যবাদ।

১২| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৬

আবু ছােলহ বলেছেন:



পোস্টটি পড়ার ইচ্ছে রইল। বিশেষ করে মন্তব্য প্রতিমন্তব্যগুলো।

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:৫৭

বিদ্রহীসূত বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

১৩| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:০৪

বিদেশে কামলা খাটি বলেছেন: সারা পৃথিবীতে একটি ধর্ম ও একটি ভাষা থাকলে সেটা কতই না চমৎকার হত। এর চেয়ে ভাল আর কিছু হতে পারে না।

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:০২

বিদ্রহীসূত বলেছেন: ধর্ম ইনশাল্লাহ একটাই হবে, হয়ত তার আগে এক মহা বিধ্বংস দেখতে হবে আমাদেরকে। সমগ্র পৃথিবীতে ন্যায়ের ধর্ম প্রতিষ্ঠিত হবে। তবে ভাষার ব্যাপারটা ভিন্ন। সাধারণ একটা ভাষা থাকবে বটে তবে বিভিন্ন এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন মাতৃ ভাষা থাকতেই পারে। সেই সাধারণ ভাষা হবে বাংলা ভাষা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.