নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রিয়েলপ্যাট্রিয়ট০০৭

সত্যানুসিন্ধুৎসু এবংসকল প্রকার অন্যায় ও অবিচারের বিরূদ্ধে আপোষহীন ।

রিয়েলপ্যাট্রিয়ট০০৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিশ্বের একমাত্র শাটল ট্রেন সমৃদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়--চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়,বাংলাদেশ।

২৬ শে জুলাই, ২০১১ ভোর ৪:৪৪

বিশ্বের একমাত্র শাটল ট্রেন সমৃদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়--চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়,বাংলাদেশ।





প্রিয় বন্ধুরা, আজ এই ঐতিহ্যবাহী শাটল ট্রেন নিয়ে আপনাদের অনেক কিছু বলবো।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৬ সালে। শুরুর দিকে এখানে শাটল ট্রেন ছিলনা।

তখন ছাত্রছাত্রীদের অনেক কষ্ট করে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে হতো।বিশেষ করে

যারা শহর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতো।বিশ্ববিদ্যালয় বাসে করে দীর্ঘ পথ পেরিয়ে যাতায়াত

করতে হত।বাসের সংখ্যাও পর্যাপ্ত ছিলনা।যার দরুন শিক্ষার্থীদের অনেক কষ্টের সম্মুখীন

হতে হতো।এরপর দেখতে দেখতে অনেক বছর পেরিয়ে যায়।দেশ স্বাধীন হবার পর ১৯৮০ সালের

দিকে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু করেন

এই ঐতিহ্যবাহী শাটল ট্রেন যা ইতিহাসের পাতায় যুক্ত করে আর এক নতুন অধ্যায়।বিশ্বের মাত্র

দুটি বিশ্ববিদ্যালয় যাদের নিজস্ব ট্রেন ব্যবস্থা আছে-একটি হলো যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকো

ইউনিভার্সিটি আর দ্বিতীয়টি হলো বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।বর্তমানে অবশ্য চট্টগ্রাম

বিশ্ববিদ্যালয় এককভাবে এর দাবিদার।কিছুদিন আগে সানফ্রান্সিসকো বিশ্ববিদ্যালয় তাদের শাটল

ট্রেন সার্ভিস বন্ধ করে দেয়।



এই শাটল ট্রেনকে বলা যায় -চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণভোমরা।বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষার

সিডিউল এই শাটল ট্রেনের সময়-সূচীকে কেন্দ্র করে হয়।প্রতিদিন শহর ও ক্যাম্পাসে ২ টি ট্রেন

পালাক্রমে যাতায়াত করে।এই শাটল ট্রেনকে ঘিরে আবর্তিত হয় হাজ়ারো ছাত্রছাত্রীর সুখদূঃখের

গল্পগাঁথা।এই শাটল ট্রেনের রয়েছে যেমন গৌরবময় সংস্কৃতি তেমনি রয়েছে এর কলঙ্কজনক

অধ্যায়।এর একদিকে আছে যেমন বগিভিত্তিক রাজনীতি আবার তেমনি আছে বগিভিত্তিক বিভিন্ন

বাদক ও গায়কদল।এছাড়া,প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্য রয়েছে ট্রেন ডেটিংয়ের আকর্ষনীয় সুযোগ-সুবিধা।

প্রতিদিন সকালে হাজারো ছাত্রছাত্রীদের ট্রেনে চেপে ক্যাম্পাসে আসা এবং ক্যাম্পাস থেকে শহরে যাওয়ার

মধ্য দিয়ে আবর্তিত হয় এই শাটল ট্রেনের জীবন চলা।প্রতিদিন যখন ছাত্রছাত্রীরা ট্রেন থেকে নেমে নিজ

নিজ ফ্যাকাল্টী অভিমুখে রওনা হয় তখন নতুন কেউ দেখলে তার কাছে মনে হবে এটা বোধ হয় কোনো

বিশাল র‌্যালী।



ট্রেনের বিভিন্ন বগিগুলোর রয়েছে বিচিত্র সব নাম।যেমনঃউল্কা,সিএফসি,একাকার,এপিটাফ,শাম্পাণ,ওরিওন,

খাইট্টা খা,ককপিট,ফাইটক্লাব ইত্যাদি।এসব নাম অবশ্য বগিভিত্তিক বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দেয়া। বিভিন্ন

বগিগুলোতে আছে খ্যাত-অখ্যাত গায়ক ও বাদকদল।প্রতিদিন আসা যাওয়ার সময় এসব গায়ক ও বাদকদলের

কাজ হচ্ছে ট্রেনের দেয়াল চাপরিয়ে উচ্চস্বরে গান গেয়ে সারা বগি মাতিয়ে রাখা।এদের মধ্য সুরো-বেসুরো বিভিন্ন

ধরনের শিল্পী রয়েছে।এরা যেমন খ্যাতিমান শিল্পীদের গাওয়া গান গেয়ে থাকে তেমনি পাশাপাশি রয়েছে এদের স্বরচিত

মৌলিক গান।তবে আশ্চর্য বিষয় হচ্ছে দুপুরের দিকে সাধারনত এরা প্যারোডী গান বেশি গেয়ে থাকে।যেমনঃআমার

মাথাটা চুলকায় চুলগুলো যায় যায় পড়ছি আমি মাইনকা চিপায়............,ল ফ্যাকাল্টির মেয়েদের বিয়া করিসনা

আইনের প্যাচে ফালাই দিবো বাঁচতে পারবিনা..................ইত্যাদি সব বিচিত্র ধরনের গান।এসবে অবশ্য বগির সবাই

বেশ মজা পেয়ে থাকে।এসব শিল্পীদের মধ্যে এমন অনেক শিল্পী পাওয়া যাবে যাদের রয়েছে অসাধারন গানের গলা।এদের

দেখলে মনে হয় টিভি চ্যানেল গুলো ক্লোজ়আপ অন মার্কা প্রোগ্রাম করে অনেক কষ্ট করে শিল্পী না খুজে বরং আমাদের এই

বিশ্ববিদ্যালয়ে আসলেই পারে।শাটল সার্চ দিলে পেয়ে যাবে সম্ভাবনাময়ী সব শিল্পী।সর্বোপরি, এইসব শাটল সিঙ্গারদের সুরের

মূর্ছনায় মুখরিত থাকে শাটল ট্রেন।



প্রেমিক-প্র্বেমিকাদের কথা না বললেই নয় ।শাটল ট্রেন হচ্ছে প্রেমিক জুটিদের জন্য নিরাপদ ও অবাধ ডেটপ্লেস।

প্রেমিক-প্রেমিকাদের ক্লাস মিস হলেও শাটল-ডেট মিস হওয়ার নয়।প্রেমিক কিংবা প্রেমিকা আগেভাগে এসে

সিট দখল করে রাখে এবং তার প্রিয়মুখের অপেক্ষায় প্রহর গুন্ততে থাকে।পাহাড়ি ও গ্রাম্য আকাবাঁকা পথ বেয়ে

হেলেদুলে চলতে থাকা শাটল ট্রেনের দুলুনি এবং শাটল সিঙ্গারদের সুরমূর্ছনায় প্রেমিকযুগলদের পার হয় এক

অসাধারণ রোমান্টিক মুহূর্ত।দুপুরের ট্রেনগুলোতে একটু ভিড় বেশী হলেও বলা যায় সময়টা বেশ ভালই কাটে

ছাত্রছাত্রীদের।

এত ভিড় ও হৈচৈ এর মধ্যেও এমন কিছু বই পোকা পাওয়া যাবে যারা এসব কোলাহোলের ভিতরেও যথারীতি

গভীর মনোযোগের সাথে বইয়ের পাতায় ডুবে থাকে।দেখা যায় এসব ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরেরা হচ্ছে বিভিন্ন বিভাগের

প্লেসধারী ১ম,২য়,৩য় রা।





যে ঐতিহ্যবাহী শাটল এতসব সৌন্দর্য বুকে ধারন করে আছে সেই শাটল কে মাঝে মাঝে কলঙ্কিত করে

ছাত্র নামধারী কিছু দুর্বৃত্ত।একটু আগে যেসব বগিগুলোর নাম বললাম সেই বগিগুলো কেন্দ্র করে ঘটে বিভিন্ন

উচ্ছৃংখল ঘটনা।বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা এসব বগিভিত্তিক দলগুলি প্রায়শই মেতে ওঠে

ধ্বংসলীলায়।বিশেষ করে বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংঠন সোনার ছেলে খ্যাত এইসব ছাত্রনামধারী সন্ত্রাসীরা

বগি দখলকে কেন্দ্র করে শাটল ট্রেনকে আতঙ্কপুরী বানিয়ে ফেলে।বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিগত প্রায়

আড়াই বছরে এরা অর্ধশতবার প্রকাশ্যে অস্ত্র শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মারামারিতে লিপ্ত হয়েছে।নষ্ট করেছে শিক্ষার

পরিবেশ।ছাত্রলীগের এই অন্তঃকোন্দলের কারনে বিশ্ববিদ্যালয় এই আড়াই বছরে সর্বমোট ছয়মাসের ও বেশি সময়

বন্ধ থেকেছে।এছাড়া কেড়ে নিয়েছে তিন তিনটি তরতাজা মেধাবীমুখ।বিবিএর মেধাবী ছাত্র হারুনুর রশীদ কাওসারকে

এই শাটল ট্রেন থেকেই গলা কেটে ফেলে দিয়েছে দিনবদলের এই সৈনিকেরা।ষোলশহর ষ্টেশন থেকে

বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের ছাত্র মহিউদ্দিন মাসুমকে গলা কেটে হত্যা করেছে ছাত্রলীগের খুনীরা।



বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ কিংবা অচল করে দেয়া,ধর্মঘট কিংবা বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায়ের ক্ষেত্রে এই শাটল ট্রেন

হচ্ছে মোক্ষোম হাতিয়ার।যে কোন ইস্যুতে শাটল ট্রেন বন্ধ করে দিতে পারলেই কেল্লা ফতে।আগেই বলেছি,

বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষা নির্ভর করে শাটল ট্রেন চলাচলের উপর।তাই বিভিন্ন সময়ে দেখা গেছে, ছাত্রসংঠন

গুলো এই শাটল ট্রেনকে পুঁজি করে তাদের ফায়দা হাসিল করেছে।



প্রত্যেক ভালো কিছুর-ই যেমন খারাপ দিক থাকে তেমনি কিছু অনাকাংখিত ঘটনা বাদ দিলে এই শাটল ট্রেন

আমাদের গৌরবের,আনন্দের এবং ভালোলাগা ও ভালোবাসার।এখান থেকে পাস করে চলে যাওয়া শিক্ষার্থীদের

সর্বপ্রথম যে স্মৃতি তাড়া করে ফেরে তা হচ্ছে এই শাটল ট্রেন।





প্রকৃতির অপরুপ নৈসর্গের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্যের ডানায় নতুন পালক যোগ করেছে

এই শাটল ট্রেন।সবাইকে সশরীরে এসে এই শাটল সংস্কৃতি উপভোগ করার নিমন্ত্রণ রইলো।।



এ এম নুরুদ্দিন সোহাগ,

শিক্ষার্থী,

আইন বিভাগ,

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.