নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রিবেল মনোয়ার
ব্যাংকিং খাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যখন বিশ্বের অধিকাংশ দেশ ব্যাসেল-৩ বাস্তবায়ন নিয়ে তৎপর তখন বাংলাদেশে ব্যাসেল-২ বাস্তবায়ন নিয়ে তোরজোড় চলছে। ব্যাসেল-২ বাস্তবায়নের সময়সীমা ধরা হয়েছে ২০১১ সালের ১০ আগস্ট। তবে দেশে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে তার প্রায় অর্ধেক সংখ্যক ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি থাকায় এবং এসব ব্যাংকের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের মূলধন ঘাটতি পূরণে কোন উদ্যোগ না থাকায় ব্যাসেল-২ বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাসেল-২ এর বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী মূলধন না বাড়ালে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সুত্রে জানা গেছে, মূলধন পর্যাপ্ততার নিয়মনীতি অর্থাৎ- ‘ব্যাসেল-২’ অনুযায়ী বর্তমানে দেশের ২১টি ব্যাংকে পর্যাপ্ত মূলধন নেই। ব্যাসেল-২ বাস্তবায়ন করতে হলে ব্যাংকগুলোকে মূলধননের পরিমাণ বাড়াতে হবে। তবে মূলধন বাড়ানোর জন্য মাত্র ৯টি ব্যাংক উদ্যোগ নিয়েছে। এ কাজে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে রাইট শেয়ার এবং সাব-অর্ডিনেটেড বন্ড ইস্যুকে। বাকি ১২টি ব্যাংক এব্যাপারে এখনো কোন উদ্যোগ নেয়নি। তবে ব্যাংকগুলোকে তাদের মূলধন ঘাটতি পূরণে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জানা গেছে, এ বছরের জুন শেষে যেসব ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ছিল তাদের প্রত্যেকের কাছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূলধন বাড়ানোর পরিকল্পনা চেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেয়া নিয়ম অনুসারে বর্তমানে কোন ব্যাংক কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ও সংরক্ষিত তহবিল হতে হবে কমপক্ষে ৪শ’ কোটি টাকা (যার মধ্যে পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ হবে কমপক্ষে ২শ’ কোটি টাকা) অথবা ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের অন্তত ৯ শতাংশের মধ্যে যেটি বেশি। যেমন-কোন ব্যাংকের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ৯ শতাংশ যদি ৫শ’ কোটি টাকা হয় তাহলে তাকে ওই পরিমাণ ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে। আবার কারও ক্ষেত্রে ওই ৯ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থ যদি ৩শ’ কোটি টাকা হয় তবে তার জন্য ন্যূনতম মূলধন ৪শ’ কোটি টাকা মুলধন সংরক্ষণ করতে হবে। ইতোপুর্বে বাসেল-২ নামে পরিচিত মূলধন পর্যাপ্ততার আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি পরিপালন করতে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গত বছর ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের অনুপাতে ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণের হার ও সময়সূচি ঘোষণা করে। এ বছরের জানুয়ারি থেকে এ নিয়ম বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। বাসেল-২ নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে তার ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের অংশ হিসেবে ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৮ শতাংশ, ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১১ সালের জুন পর্যন্ত ৯ শতাংশ এবং ২০১১ সালের জুলাই থেকে ১০ শতাংশ হারে ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে মুখ্য মূলধন (টিআর-১) হবে অন্তত ৫০ শতাংশ।
সূত্র জানায়, ব্যাংকগুলোকে প্রতি ৩ মাস পর তার মূলধন সংরক্ষণের হিসাব কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে হয়। ব্যাংকগুলোর পাঠানো বিবরণী অনুসারে এ বছরের জুন শেষে মোট ১০টি ব্যাংক ন্যূনতম মূলধন (ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ৮ শতাংশ) সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। ব্যাংকগুলো হচ্ছে- ডাচ-বাংলা ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ইউসিবিএল, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক এবং রাষ্ট্রায়ত্ব জনতা, অগ্রণী, রূপালী, কৃষি ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। এসব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক আলাদা আলাদা বৈঠকও করেছে। তাদের বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বর ভিত্তিক রিপোর্টে প্রত্যেকের মূলধন যাতে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ৯ শতাংশ হয়। তবে এরই মধ্যে এক্সিম ব্যাংক রাইটশেয়ার এবং ইউসিবিএল বোনাস শেয়ার ইস্যুর ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে জুনের তথ্য অনুযায়ী মোট ১১টি ব্যাংকের মূলধন তাদের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ৯ শতাংশের কম রয়েছে। যেহেতু বাসেল-২ অনুযায়ী এ বছরের জুলাই থেকে আগামী বছরের জুন সময়কালে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের অন্তত ৯ শতাংশ মূলধন সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে, সেহেতু ওই ১১টি ব্যাংকের মূলধন বাড়াতে এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। ব্যাংকগুলো হচ্ছে-সোনালী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ওয়ান ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামি ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক এবং ট্রাস্ট ব্যাংক। তবে এর মধ্যে আল-আরাফাহ, যমুনা, ফার্স্ট সিকিউরিটি, সাউথইস্ট এবং সিটি ব্যাংক মূলধন বাড়ানোর জন্য রাইট শেয়ার ছাড়ার অনুমতি পেয়েছে। এছাড়া ন্যাশনাল ব্যাংক এবং ঢাকা ব্যাংক সাবঅর্ডিনেটেড বন্ড ছেড়ে মূলধন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
ব্যাংকিং খাতের মূলধন পর্যাপ্ততার বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে মতামত জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর জানান, বিশ্ব অর্থমন্দার পর এখন আন্তর্জাতিকভাবে মনে করা হচ্ছে, বাসেল-২ নীতিমালা ব্যাংকিং খাতের মূলধন সংরক্ষণের জন্য যথেষ্ট নয়। এ কারণে বাসেল-৩ নিয়ে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে বাসেল-২ বাস্তবায়ন চলছে। তবে সামনে বাসেল-৩ আসছে বিধায় আগাম প্রস্তুতি হিসেবে বর্তমানের বাধ্যবাধকতার তুলনায় আরও বেশি মূলধন সংরক্ষণ করা উচিত। তার মতে, অর্থমন্দার একটি বড় শিক্ষা হচ্ছে- ব্যাংকগুলোর পর্যাপ্ত মূলধন থাকতে হবে, যাতে কোন ধরনের সংকট সৃষ্টি হলে আমানতকারীদের অর্থের নিরাপত্তা থাকে। মূলধন ঘাটতি পূরণ করতে না পারলে ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অফসাইট সুপারভিশন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, প্রথমে কিছুদিন ঘাটতি পূরণের জন্য সময় দেয়া হবে। যারা ঘাটতি পূরণ করবে না, ক্যামেল রেটিংয়ে তাদের মান খারাপ হবে। তাদের নতুন শাখা খোলার ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হবে এবং আগাম সতর্কতা পদ্ধতির আওতায় এনে তাদের বিশেষভাবে মনিটরিং করা হবে।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক তথ্যে দেখা গেছে, ব্যাংক বাসেল-২ এর নিয়মনীতি অনুসারে বর্তমানে যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে তার চেয়ে বেশি হারে মূলধন সংরক্ষণ করছে ২৬টি ব্যাংক। এসব ব্যাংকের মূলধন তাদের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ৯ শতাংশেরও বেশি। ব্যাংকগুলো হচ্ছে- ইসলামী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, বিডিবিএল, শাহজালাল ইসলামি ব্যাংক, এবি ব্যাংক, আইএফআইসি, উত্তরা, পূবালী, ইবিএল, এনসিসি ব্যাংক, প্রাইম, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, মার্কেন্টাইল, স্ট্যান্ডার্ড, প্রিমিয়ার, ব্র্যাক, এসআইবিএল, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, সিটিব্যাংক এনএ, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, এইচএসবিসি, উরি এবং ব্যাংক আল-ফালাহ।
২| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সকাল ৭:৪৩
আইডিয়াল বলেছেন:
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ ভোর ৫:৩১
বন্ধনহীন বলেছেন: এই রিপোর্ট টি আর অন্য কোথায় প্রকাশিত হয়েছে?