![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মহল্লার সেলুনের সামনে গিয়ে দেখি। পুরো দোকান খালি! ফ্লোর পর্যন্ত পরিষ্কার, যেন এখানে আজ কেউ চুলই কাটেনি।
ভেতরে ঢুকে জিজ্ঞেস করলাম—
— কী রে ভাই, সেলুন এত ঝকঝকে কেন? একটা চুলও দেখা যাচ্ছে না! ঘটনা কী?
— ভাই রে ভাই, ধান্দা নাই রে ভাই ধান্দা নাই। মানুষের পকেটে টাকা নাই, চুলও কাটে না।
— কী বলো! মানুষ চুল কাটে না?
— কাটে, কিন্তু অনেক কম। সব ব্যবসায় একই অবস্থা!
আমি কিছুক্ষণ চুপ করে তাকিয়ে রইলাম। একটা সময় এই সেলুনগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেও জায়গা পাওয়া যেত না। এখন একদম ফাঁকা!
— তোমার কাস্টোমার নিয়ে আইলাম, দাও আমার চুল কয়টা একটু ছেঁটে দাও।
— বসেন ভাই।
চেয়ারে বসতেই সে গায়ে কালো কাপড়টা জড়িয়ে দিল। তারপর চুলে/মুখে পানি স্প্রে করতে লাগলো। চোখে পানি পড়তেই আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম। সারাদিন রোজা রেখে শরীর এমনিতেই একটু ক্লান্ত লাগছিলো। একটু ঘুম ঘুম আসছিলো তাই আর চোখ খুললাম না। চোখ বন্ধ করে ভাবছিলাম এই মহল্লার সেলুনেই ছোট বেলা থেকেই চুল কাটতাম। তখম আব্বু হাত ধরে নিয়ে আসতো সেলুনে। পুরোনো দিনের ছবিগুলো যেন চোখের সামনে ভেসে উঠছে।
তখন চেয়ারের ওপরে কাঠের একটা তক্তা বসিয়ে দিত, যেন উচ্চতা ঠিক থাকে। আব্বু কোল তুলে চেয়ারে বসিয়ে দিতেন আর দোকানিকে বলতেন, “একদম ছোট ছোট করে কেটে দিও! চামচাটা করে দাও!” মানে চুল এতটাই ছোট করে দিতো, যেন চামড়ার সঙ্গে লেগে থাকে। সেই দিনগুলো ছিল সুন্দর। চুল কেটে বাসায় আসার সময় কোন একটা খেলনা বা খাওয়ার জন্য কিছু নিয়ে আসতাম।
তখন এই সেলুনগুলো কখনোই খালি দেখতাম না। এখন এত ফাঁকা দেখে কেমন জানি একটু কষ্ট লাগলো
আমার ভাবনার মাঝে নাড়া দিয়ে ছেলেটা বললো—
— বুঝছেন ভাই, প্রথম রোজার দিন খুব কষ্ট হইছিলো! প্রেশার একদম ডাউন হয়ে গেছিলো। তারাবীহও পড়লাম পুরো ২০ রাকাত, শরীর আরও খারাপ লাগলো।
— তুমি স্যালাইন খাও নি?
— না ভাই, খাইলে কী হবে? আমার তো সবসময় প্রেশার লো থাকে। রাতে বাসায় যাওয়ার সময় হাঁসের ডিম নিয়া গেলাম, রাতে আর সেহরিতে খাইলাম। সাথে খেজুরও খাইলাম। দেখলাম, খেজুর খাইলে ভালো লাগে!
আমি মাথা নাড়লাম।
— হ্যাঁ, খেজুর তো অনেক উপকারী! আমিও খাই।
— এবারের খেজুরের দামও কম।
— কম? কই, যা আছে মোটামুটি!
— হ, কম না হলেও বাড়েও নাই!
এমন সময় কাঁচের দরজা ঢেলে ঢুকলো ছেলেটার বড় ভাই। সেও এই সেলুনেই কাজ করে। মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। বললো—
— কাস্টমার নাই! কী যে হবে! চলবো কিভাবে?
ছেলেটা বললো—
— হবে আর কী, এখন তো মাত্র রোজা শুরু!
তারপর হঠাৎ মাথা নিচু করে বললো—
— আল্লাহ কখন যে এই নাপিতের কাজ থেকে মুক্তি দিবো!
বলেই দোকান থেকে বের হয়ে গেল।
আমি চুপচাপ বসে ছিলাম। কিন্তু ঠিক তখনই ছেলেটা আমাকে এমন একটা প্রশ্ন করলো, যা শুনে আমি থমকে গেলাম।
— ভাইয়া, যদি দুনিয়ায় সব সুখ পেয়ে যাই, তাহলে পরীক্ষা কিসের হবে?
আমি একদম থেমে গেলাম।
— মানে?
— ধরেন, আমার অনেক টাকা-পয়সা, ধন-সম্পদ, সুখ-শান্তি সবই আছে। এরপর আমি আল্লাহর ইবাদত করলাম, ভালো কাজ করলাম, ঈমান নিয়ে মারা গেলাম। তাহলে আমার পরীক্ষা কিসের হলো?
আমি একটু ভেবে বললাম—
— আসলেই তো! দুঃখ-কষ্ট, অভাব যদি না থাকে, তাহলে আমরা কিভাবে আল্লাহর কাছে পরীক্ষা দেব? হয়তো এজন্যই আমাদের জীবনে নানা সমস্যা থাকে, যেন আমরা আল্লাহকে ডাকি, তাঁর কাছে সাহায্য চাই। কঠিন সময়গুলো আমাদের পরীক্ষা নেয়, আর আমরা তখন বুঝতে পারি, সত্যিকারের বিশ্বাস কী! এটাই হয়তো ঈমানি পরিক্ষা।
ছেলেটা মাথা ঝাঁকালো। তারপর বললো—
— দেখেন ভাই, ধরেন, মারা যাওয়ার পর আমরা ছোট জান্নাত মানে জান্নাতুল খুলদ বা যেটাকে "চিরস্থায়ী জান্নাত" বলে ঐটা যদি তখন আফসোস লাগবে, কেন আমরা আরও ভালো কাজ করলাম না! করলে আর একটু বড় জান্নাত মানে আল-মাকামুল আমিন পেতাম যা নিরাপদ জান্নাত, যেখানে কোনো বিপদ থাকবে না। বুঝচ্ছেন ভাই জান্নাত পেয়েও আমাদের আফসোস হতো!
আমি তার কথায় মুগ্ধ হয়ে গেলাম। সত্যিই তো!
আমরা যা পাই, তা নিয়ে কেন খুশি থাকি না? ১০০ থাকলে ২০০ চাই, হাজার থাকলে লাখ চাই। এই অদৃশ্য চাহিদার মাঝে আমরা এতটাই হারিয়ে যাই, যে কখনো বুঝতেই পারি না, আমাদের আসল প্রয়োজন কী। আমরা যা কিছু পাই, তার পরেও মনে হয়, আরও কিছু পাওয়া বাকি আছে। এই অবিরাম চাওয়ার ফলে কখনোই আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারি না, আর আমাদের মনের মধ্যে এক অস্থিরতা লেগে থাকে। আমরা সবসময় সামনের দিকে তাকিয়ে থাকি, অতীতের শান্তি আর অর্জনগুলো ভুলে যাই। অথচ, একে একে যখন আমাদের চাহিদা পূর্ণ হতে থাকে, তখনও মনে হয়, আরো কিছু চাই, যেন কখনো থামতে না হয়। এই পরিস্থিতি আমাদের জীবনের স্বস্তি কেড়ে নেয়, কারণ কখনো আমরা অনুভব করি না, যেটুকু আছে, সেটিই যথেষ্ট। আমাদের বলতে হবে আলহামদুলিল্লাহ। আমার চাহিদার শেষ এখানেই
২| ০৬ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:২৫
ধুলোপরা চিঠি বলেছেন:
নরসুন্দরের কাছে চুল কাটার বাহিরে শিখার কিছু নেই।
৩| ০৬ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:৫৫
এইচ এন নার্গিস বলেছেন: ভালো লাগলো ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:২১
ধুলোপরা চিঠি বলেছেন:
অপ্রয়োজনীয় ভাবনা চিন্তা মাথায় সহজে আসে।
আল্লাহের পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস করবে মাদ্রাসার লোকজন, ১টা কিনে নিয়ে যাবেন