![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দিনশেষে নাকি সবাই একা। কথাটা শুনেছি জীবনে বহুবার। কথাটা কি আসলেই ঠিক???
মাঝে মাঝে প্রশ্ন করতাম নিজেকে, অন্য কাওকে। তেমন একটা মনের মত উত্তর খুজে পাইনি কারো কাছে। পরে এইটা নিয়ে আর অতটা মাথা ঘামায়নি রিয়াদ। সবকিছুই চলছে বিন্দাস। জীবন চলছে রঙ্গিন প্রজাপতির মত। সবকিছুই সুন্দর, রঙ্গিন। শূন্যতা তেমন অনুভব ও করতে পারে না। কিন্তু মাঝে মাঝে খুব ই শুন্য লাগে তার যখন ই সে লাবণ্য কে খুজে পাইনা। সেটা বেশিরভাগ ই ফোনে। লাবণ্য ফোন ধরছে না/ লাবন্য বাসে বাসায় যাচ্ছে, সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে , হঠ্যাত করেই লাবন্য এর ফোন বন্ধ হয়ে গেছে অথবা ফোন তুলছে না। এর পর শুরু হয়ে গেছে অস্থিরতা। কিছুতেই যেন শান্ত করতে পারে না নিজেকে। ভার্সিটির পাশের টং এর দোকান থেকে একটার পর একটা সিগারেট জ্বালাচ্ছে আর পায়চারী করছে ক্যাম্পাস টু টং এর দোকান। ফোন এর পর ফোন দিয়েই চলছে আর সাথে মেসেজ।
তারপর ও কোন রিপ্লে নাই, কোন উত্তর ও আসছে না। মনে হয় কিছু সময়ের জন্য হার্ট - বিট চলা বন্ধ হয়ে গেছে। আশে পাশে কি হচ্ছে তার ও কোন খোজ খবর নেই রিয়াদ এর কাছে। পুরা পৃথিবীর কাছে নিজেকে সব থেকে অসহায় লাগছে সেই মুহূর্তে রিয়াদ এর কাছে। এক সময় চুপচাপ অসার শরীর টা দেয়াল / দেবদারু গাছের সাথে হেলিয়ে দিয়ে এক দৃষ্টিতে কোন একদিকে তাকিয়ে খুজছে কাওকে। চোখ দুটো জলে টলমল করছে , সন্ধ্যার অন্ধকারে কেউ দেখতে পাচ্ছে না, কিন্তু রিয়াদ অনুভব করছে গাল বেয়ে গরম কিছু প্রবাহিত হয়ে যাচ্ছে।
এইভাবে কেটে যায় কিছু সময় হঠ্যাত একটা মেসেজ আসে, রিয়াদ ওপেন করে দেখে । হ্যা এইটা লাবণ্য এর মেসেজ। বাসায় আসছি। ফোনে চার্জ ছিল না/ ফোন ব্যাগ এ ছিল দেখি নি.।।। এইটা বুঝতো রিয়াদ যে সে আসলে যে পরিমান ভয়, শুন্যতায় ছিল , যে পরিমান অস্থিরতায় ছিল লাবণ্য আসলেও তা অনুভব করে নি হয়ত।
লাবন্যর বাসা ক্যাম্পাস থেকে অনেকটা দূর। বলতে গেলে শহরের কোন এক শেষ প্রান্তে। ভার্সিটি আর এক প্রান্তে। লাবন্য যখন ক্যাম্পাসে আসে রিয়াদ ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে তাকিয়ে থাকে মোবাইলের দিকে। একটু পর পর মেসেজ দিতে থাকে , কল দিতে থাকে । রিয়াদ ঘুম এ খুব দুর্বল এই কারনে ৫ মিনিট পর পর এলারম দেয় যেন সে আবার খোজ নিতে পারে। যত সময় লাবন্য না পৌছায় রিয়াদ এই ভাবে খোজ নিতেই থাকে, তার পর কাছাকাছি আসলে রিয়াদ ঐ ঘুম চোখেই বাইক নিয়ে লাবন্য কে ক্যাম্পাস এ দিয়ে আসে। এইটা বলতে পারেন রিয়াদ এর পাগলামি, আবার তার ভাললাগা। আবার যখন বাসায় ব্যাক করে আবার সেম কাজ করে রিয়াদ। আর কখন ও যদি সন্ধ্যা লেগে যায়, রিয়াদ অফিসে আটকে আছে, লাবন্যর বাসায় পৌছানো নিয়ে তার দুশ্চিন্তার শেষ থাকে না। বলতে পারেন ঐ ১ ঘন্টা অফিসের কোন কাজ ই করতে পারে না, শুধু একটু পর পর খোজ নেয়া।
রাতে লাবন্য ঘুমিয়ে গেলে রিয়াদ এর আর রাত কাটতে চায়না। তখন শুরু হয় লাবন্য কে নিয়ে জল্পনা- কল্পনা। তাকে নিয়ে ছবি আকা, তাকে নিয়ে রুপকথার গল্প লেখা, মোবাইলের সব সেলফি দেখা, তার টাইমলাইনে এর সব ছবি থেকে, কমেন্টস পড়া.।.।
... এই লাবন্য আজ আর রিয়াদের জীবনে নেই। যে মানুষটা কে ছাড়া একটা মুহূর্ত ও কাটাতে পারতো না, সে মানুষটা আজ রিয়াদের কাছে নাই। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস লাবন্যর সাথে দেখা হয়না রিয়াদের। কিন্তু সেই অভ্যাস গুলা থেকে বের হতে পারে নি রিয়াদ। প্রতিটা মুহূর্তই এখন ও মিস করে লাবন্য কে।
নিজের জীবনের সাথে আর কাওকেই জড়াতে পারে নি। কিছু ছোটভাই, কাছের মানুষ বলে ভাই আপনি একটা প্রেম করেন, কেউ বলে বিয়ে করে ফেল.।।।
রিয়াদ হাসি মুখে বলে আমার তো গার্ল-ফ্রেন্ড আছে, আমি আবার কেন অন্য একটা প্রেম করতে যাবো। ছোট ভাই অবাক হয়ে বলে - আপনার গার্ল-ফ্রেন্ড আছে আমাকে তো ভাই একটু বললেন ও না। রিয়াদ হাসি মুখে বলে - ধুর বোকা। লাবন্য ই তো আমার গার্ল ফ্রেন্ড। আমি তো ওকেই ভালবাসি। ছোটভাই বলে- কিন্তু ভাই ! ও তো.।।।
রিয়াদ হাসতে হাসতে বলে - ধুর পাগল। ভালবাসা তো ভালবাসা। আমার আর কখনো ইচ্ছা হয়না অন্য কাওকে ভালবাসতে। ভাল যখন লাবন্য কে বাসছি, ওকেই বেসে যাবো। আমার আর লাগবে না কিছুই। আমি হ্যাপি আছি।
কথা গুলা বলতে বলতে সন্ধ্যার অন্ধকারে গলা ধরে আসে রিয়াদের, কথা গুলা নাকে বাজতেছে। ছোটভাই বুঝতে পারছে এখন যে ,ভাই আসলে হাসছে না কাঁদছে। জড়িয়ে ধরে রিয়াদ কে। রিয়াদ ও চুপচাপ জড়িয়ে ধরে আছে ছোট ভাইকে আর চোখ দিয়ে পানি ঝরছে তার।
শহরের প্রতিটা কোনায় যেন তার শুন্যতার সঙ্গী। রিয়াদ সেই পরিচিত জায়গা গুলাতে এখন ও একা যেয়ে বসে থাকে। চুপচাপ করে তাকিয়ে দেখে চারিদিকে। সবকিছুই তার চোখের সামনে ভাসছে। পুরানো দিন গুলা কেমন যেন বারবার তার সামনে খেলা করছে। শুন্যতায় আজ রিয়াদের একমাত্র সঙ্গী। বন্ধু- সঙ্গী বিহীন একাকী রিয়াদের একমাত্র সঙ্গী আজ তার এই শূন্যতা, অপূর্ণতা আর লাবন্যর রেখে যাওয়া সৃতি গুলা। আর এই নিয়েই রিয়াদের প্রতিটা দিন পার করে। নিঃসঙ্গতাই আর সব থেকে কাছের সঙ্গী।
হয়ত অপূর্ণতা থেকেই তার এই শূন্যতা। আর সেই রঙ্গিন স্বপ্ন দেখা মানুষটার জীবনে এখন সব ই ধুসর রঙ্গে রাঙ্গানো দুঃস্বপ্ন। আজো রাত কাটে সেই মানুষটার অপূর্ণতায় আর শুন্যাতায়।
©somewhere in net ltd.