নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জিরো

জিরো

জিরো › বিস্তারিত পোস্টঃ

বৃষ্টি ও লাবন্যর গল্প।।।

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:০১

বৃষ্টির সাথে লাবণ্যর একটা অদ্ভুদ সম্পর্ক ছিল। বৃষ্টি হলে লাবণ্যর মধ্য এক অদ্ভুদ ধরনের পরিবর্তন দেখতাম। এক অন্যরকম লাবণ্য। অনেক বেশী চঞ্চল। রিয়াদের বৃষ্টি অতবেশী ভালো লাগতো না, রিয়াদের ভাল লাগা বলতে বৃষ্টির দিনে খিচুড়ী খাওয়া আর কাথা মুড়ি দিয়ে দেদারচে ঘুম।

কিন্তু এই ভাললাগার ধরন ও বদলে গেছে নিমিষেই লাবন্যর অনুভুতি দেখে। কেমন যেন রিয়াদের ভাল লাগাটাও বদলে গেছে। যখনই বৃষ্টি নামতো লাবন্যর মধ্য একটা পাগলামি কাজ করত ভেজার জন্য। বৃষ্টি হলেই তার বুঝি ভিজতেই হবে , আর রিয়াদ ও তার সাথে তাল মেলাতে শুরু করত।বৃষ্টির ভেতর ঐ উচ্চাস, ঐ চঞ্চলতা দেখার জন্য হয়ত সে কত সহস্র বছর অপেক্ষা করেছে। রিয়াদ তো সারাজীবন এইটাই খুজে বেড়িয়েছে। সারাজীবনে যা মনে মনে খুজে এসেছে এইটাই তো সেই স্বপ্নকন্য।

লাবণ্যর কোল্ড এলারজি ছিল।সামান্য রাতে ফ্যান এর বাতাসে ঠাণ্ডা সর্দি লেগে যেতো , সারাদিন নাক টানত, রিয়াদের এইটাও অনেব বেশী ভালো লাগতো, নাকে নাকে কথা বলত তখন। আর বাইকের পিছনে বসে রিয়াদের শার্টে নাক ডলতে থাকতো। রিয়াদ এইটা এখন অনেক বেশী মিস করে।

এই কোল্ড এলারজির মেয়েটা বৃষ্টি দেখলেই ভিজবে, বৃষ্টি হলে রিয়াদ আর লাবন্য বাইকে বের হবে। রিয়াদ এর খুব শীত করে, কিন্তু লাবন্যর জন্য সে ঐ শীত এর মধ্য ও বাইকে বের হবে। পুরা সময় জুড়ে লাবন্য রিয়াদ কে জড়িয়ে ধরে থাকবে বাইকে। রিয়াদ কোন ঠান্ডায় অনুভব করতে পারে না। রিয়াদ তখন সারাজীবন যদি এমন বৃষ্টি ও হয় তাতেও ভিজতে রাজী যদি লাবণ্য এইভাবে তাকে জড়িয়ে রাখে।
--- কিন্তু কাহিনীর আসল মজা বের হত যখন লাবণ্য কে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে একা একা রিয়াদ বাসায় ফিরত। সারা শরীরে কাঁপুনি উঠে যেত তার। মনে হয় পথ ই শেষ হতে চায় না। শরীর ঠান্ডা হয়ে যেতে থাকে। মনে হয় যেকোন মুহূর্তে এক্সসিডেন্ট হয়ে যাবে কারন হাত পা অবশ হয়ে যায় ঠাণ্ডায়।

কোনরকম বাসায় এসে কাথা-কম্বল এর মধ্য ঢুকে বসে থাকে রিয়াদ, নিজেকে একটু গরম করে নেয়। এইটা তার জন্য অনেক শীতের হলেও লাবন্যর সাথে বৃষ্টিতে ভিজে যে স্বর্গীয় অনুভুতি তার হয় তার কাছে দুনিয়ার সব কষ্টই তুচ্ছ।

একসাথে ছাতার নিচে যখন হাটে লাবন্য আর রিয়াদ তখন প্রায় বকুনি খেত রিয়াদ । কারন রিয়াদের কোন ছাতা নেই, সে লাবণ্যর ছাতার নিচে ঢুকে, আর রিয়াদ ঠিকমত ছাতা ধরতে পারে না, লাবণ্য ভিজে যায়, আর তখন লাবন্যর বকুনি শুরু হয়। এরপর থেকে রিয়াদ ভিজলেও লাবন্য কে ভিজতে দেয়না। কারন রিয়াদের সব কষ্ট সহ্য হয় কিন্তু লাবন্যর কোন কষ্ট সহ্য করতে পারে না।


আজো ধরনীতে বৃষ্টি নামে ঠিক আগের ই মত। কিন্তু রিয়াদের সে অভ্যাসগুলা আর আগের মত নেই। মাঝে মাঝে তো বুঝতেও পারে না বাইরে অনেক বৃষ্টি হয়ে গেছে। যখন সে বের হয় তখন বুঝতে পারে হয়ত কোন এক সময় বৃষ্টি হয়ে গেছে। এখন বৃষ্টি নাম্লে আর খিচুড়ি ও খায় না, কাথা মুড়ি দিয়েও ঘুমোয় না। যদি বৃষ্টি দেখতে খুব মন চায় জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছু সময়। ইচ্ছা হলে হাত বাড়িয়ে ছুয়ে দেখতে চায় বৃষ্টিকে। একটু ছুয়ে দেয় বৃষ্টি তাকে , কিন্তু লাবন্য আর এখন তাকে ছুয়ে দেয় না। হাত বাড়িয়ে ছুয়ে দেখতে চায় লাবন্য কে কিন্তু সেইটা আর হয়ে উঠে না, তায় বৃষ্টি ই ছুয়ে যায় তার হাত, বৃষ্টি যখন ঝরে আকাশ থেকে তখন রিয়াদের চোখ থেকেও কিছুটা ঝরে পরে।

এখন ও রিয়াদ বৃষ্টিতে বাইক নিয়ে বের হয়, লাবণ্যকে সাথে করে নিয়ে নয়, লাবণ্যর স্মৃতি গুলাকে সাথে করে নিয়ে, রিয়াদের চোখের জল আর আকাশের জল দুইটা মিলে একসাথে রিয়াদের গালবেয়ে পড়ে। রিয়াদ কোথাও যেন পড়েছিল , নিজের চোখের জল লুকানোর জন্য সব থেকে ভালো হল বৃষ্টির ভিতর কান্না করা। কেউ দেখতে পারে না, বুঝতেও পারে না। আর তাই বুঝি সেই কান্নাকে সেলিব্রেট করতেই রিয়াদের এই আয়োজন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.