![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
CCU তে দুলাভাই এর হাত ধরে বসে আছে রিয়াদ, ১১ টা অতিক্রম করে ১২ টা বাজছে ঘড়িতে। রিয়াদ তার মোবাইলটা আরেক হাত এ ধরে আছে, লক স্কিন টা আনলক করে দেখলো ১২ টা বেজে গেছে। আজ রিয়াদের জন্মদিন। রিয়াদ জানে এই সময় কোন উইশ আসবে না। তারপর ও একবার ফোনটা রিস্টার্ট দিল, হয়ত নেটওয়ার্ক এর সমস্যা থাকতে পারে। ইন্টারনেট অন করল। না কোথাও কোন উইশ নেই।
লাবণ্য তার জন্মদিনে রিয়াদ এর শুভেচ্ছা বার্তায় রিপ্লে তে লিখছিল ভুলে যান এই সব স্পেশাল দিনের কথা। আপনি আর কখন ও এইসব পুরানো স্পেশাল দিনের কথা মনে করে আমাকে উইশ করবেন না। মেনে নেন আমি আপনার জীবনে নেয়। এই রিপ্লের পর ও রিয়াদ বোকার মত বেহায়ার মত অপেক্ষা করে আছে লাবণ্য হয়ত তাকে উইশ করবে। এই সব চিন্তা ভাবনা করছে CCU তে বসেই।
অন্য সবার মত কাটে না রিয়াদের জন্মদিন। কেক কাটাও হয় না, তেমন কিছুই হয় না। স্বাভাবিক একটা দিন যেমন কাটে জন্মদিন টা মনে হয় আরো বেশী খারাপ কাটে। হ্যা। এইটা রিয়াদের ই দোষ। সে একে একে সবার থেকে আলাদা হয়ে গেছে। বন্ধু-বান্ধবী, কাছের মানুষ দের থেকে সে সব সময় দূরে থাকে এখন। আর এই জন্য ই তার এই দিন কেউ পালন করে না। রিয়াদ ও চায় না তার এই দিন পালন করা হোক। দূরে দূরে থাকে সে সবার থেকে। একাকীত্ব এই যেন সব চেয়ে বেশী ভাল লাগে তার।
বড় করে কেক কাটুক কেউ, সাজিয়ে ঘুছিয়ে বিশাল রেস্টুরেন্ট এ খাওয়া হোক এইটা রিয়াদের কোন সময়ের জন্যই ইচ্ছা না। রিয়াদের ইচ্ছা তার ভালবাসার মানুষটা সারাদিন তার সাথে যেখানে - সেখানে ঘুরুক। যা সামনে পাবে তাই ই খাবে। যেন একটা রুটিনের বাইরে কাটানো দিন। যেদিনে কোন বাধা ধরা নিয়ম থাকবে না। দুইজনের যা মন চাইবে তাই ই করবে ওরা। পাগলামি করতে করতে দিনটা পার হয়ে যাবে। যেন একটা অন্যরকম মজার দিন। কোন স্পেশাল প্লান থাকবে না, কি করবে তা ওরা নিজেরাও জানবে না, দুচোখ যেদিকে যাবে সেইদিকে যাবে, যা মন চাই তাই ই খাবে। বাঁধা- ধরা নিয়মের বাইরে যেয়ে একটা দিন পার করা।
লাবন্যর কোন গিফট ই চায় না রিয়াদ । কারন লাবণ্য ই রিয়াদের কাছে সব থেকে বড় গিফট। সে সব সময় শুকরিয়া করত লাবন্যকে কাছে পেয়ে। এর থেকে বড় কোন গিফট হতে পারে না তার কাছে। লাবণ্য কেও বলত , আমি তোমাকে আমার কাছে পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। তুমি আমার কাছে থাকলে আর কোন কিছুই চাওয়ার নেই আমার। আজ মনে হয় রিয়াদ এর কাছে সব ই আছে শুধু তার ভালবাসা টাই নাই তার কাছে।
আর সবার মত তারজন্য কেউ দিনটা স্পেশাল করার জন্য অপেক্ষা করে থাকে না। রিয়াদ এর মনে পড়ে তার একটা জন্মদিনের কথা। লাবণ্য ছিল তার সাথে সেইবার। সে কি আনন্দ রিয়াদ এর। প্রতিটা মুহূর্ত তার মনে পড়ে। লাইফে ফার্স্ট টাইম লাবণ্য রিয়াদ এর হাত ধরে হাটছিল একটা গ্রাম্য মেলায় যেয়ে বিকাল এ। লাবণ্য যে রিয়াদ এর হাত ধরে হাটছিল এইটা যেন রিয়াদের ঐ জন্মদিনের বেস্ট গিফট ছিল। রিয়াদের বড় প্রাপ্তি ছিল সেইটা । সারাজীবনের একটা বড় আশা ছিল সেইটা যে এইভাবে তার ভালবাসার মানুষ হাতটা ধরে হাঁটবে । লাবণ্য তার নিজের মনের অজান্তেই রিয়াদের সেই ইচ্ছা টা পুরন করে দিছিল সেইদিন।
কিছু সময় পর পর ই এক একজন করে মানুষ মারা যাচ্ছে CCU তে। হৃদরোগ ইন্সটিটিউট এর CCU সেতো এক আজরাইল এর বসবাস এর জায়গা। ভাবছে বসে বসে মানুষের জীবন কত ছোট, যেকোন মুহূর্তে যেকোন কিছু হয়ে যেতে পারে। আর সেই ছোট জীবন এ কত কিছু মানুষ করে, কত আফসোস, কত আশা, অপেক্ষা।
রিয়াদ তাকাচ্ছে বিভিন্ন দিকে, অনেক রোগী ভর্তি হয়েছে, এতই বেশী যে সাবধান এ হাঁটাচলা না করলে যেকোন মুহূর্তে কোন রোগির গায়ে পা লাগতে পারে। মাঝরাতে রিয়াদের ভাগ্নি আসলো, বলল মামা তুমি একটু কেবিন এ যেয়ে রেস্ট নাও, আমি বসছি আব্বুর পাশে। রিয়াদ বের হয়ে গেল , কেবিন এর দিকে না যেয়ে সে নিচে নেমে গেল । নিচেই মানুষ এর সংখ্যা এখন একটু কম।
রাত ৩ টা বাজে তার বাইকটা নিচেই পার্ক করা। একটা সিগারেট দোকান থেকে নিয়ে বাইকের উপর বসে আছে। কেন জানিনা তার চোখ থেকে পানি পড়ছে। গতবছর তার বার্থডে তে লাবণ্য একটা উইশ করেছিল, রিয়াদ বলেছিল একবার তার সাথে দেখা করার জন্য। কিন্তু লাবণ্য বলেছিল তার সময় নেই। গতবছর তো লাবণ্যর দেখা করার সময় ছিল না আর এই বছর উইশ করার ও সময় নেই।
সকাল হল, দুপুর হল, বিকাল হল। লাবণ্যকে অনেক খুজলো রিয়াদ সারাদিন এ। কিন্তু কপাল এ না থাকলে কি আর দেখা হয়, তার ও তাই হল। অনেক খুজেও দেখা পেল না লাবন্যর। যেহেতু কোন সোশ্যাল মিডিয়াতে জন্মদিন এর ডেট দেয়া নেই তাই তেমন কেউ ই জানে না তার জন্মদিনের কথা।
রিয়াদ কেন জানি না এখন আর জন্মদিন টা সহ্য করতে পারে না, সব থেকে খারাপ আর কস্টে কাটে তার এই দিন টা। সে কোনভাবেই চায়না এই দিনটা তার সামনে আসুক। তারপর ও জন্মদিনে সে দোয়া করে লাবণ্যর জন্য। ভাল থাকুক লাবণ্য। ভাল থাকুক তার ভালবাসার সব মানুষ গুলা। সবাই কে নিয়ে লাবণ্য অনেক হাসি-খুশি আর আনন্দে থাকুক এইটাই রিয়াদ এর চাওয়া। কারন এইটা লাবন্যর চাওয়া। লাবণ্য এইটাই চেয়েছিল রিয়াদ এর কাছে তার জন্মদিনে। আর রিয়াদ সব সময় ই লাবন্যর চাওয়া পাওয়ার দিকেই বেশী প্রাধান্য দিয়ে গেছে। শুভ জন্মদিন রিয়াদ।
২৬ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:৫৯
জিরো বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
১৯ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৪২
রূপম রিজওয়ান বলেছেন: ভালো লাগলো।