![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাত ১১ টার দিকে হঠ্যাত করেই একটা আননোন নাম্বার থেকে কল আসলো। রিয়াদ তার একজন ক্লাইন্ট এর সাথে অনলাইন এ কনফারেন্স এ কথা বলছে। কনফারেন্সটা হোল্ড করে কলটা রিসিভ করল।
ফোনের ওপার থেকে একটা ছেলে প্রথমেই বলে উঠল- ভাই, লাবন্যর বাবা তো মারা গেছে।
রিয়াদ কেমন যেন তব্দা মেরে বসে আছে, ব্রেন কাজ করছে না। কিছু মুহূর্ত পরে একটু স্বাভাবিক হয়ে প্রশ্ন করল। কবে?? কিভাবে??
ততক্ষন এ জানাজা দিয়ে , কবর ও হয়ে গেছে। রিয়াদের মন চাচ্ছে ঐ সময় ই ছুটে যেতে লাবন্যর বাসায়। ফোন রাখার পর এক অদ্ভুদ ব্যাপার লক্ষ করল রিয়াদ। রিয়াদের সারা গায়ে জ্বর উঠে গেছে, রিতিমত কাঁপুনি উঠে গেছে। রিয়াদ কাপছে, বুঝতে পারছে তার শরীরে প্রচন্ড জ্বর। কম্বল কয়েকটা গায়ে দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়েছে। ক্লাইন্ট ততসময় কনফারেন্স এ আছে, রিয়াদ একটা ছোট মেসেজ দিয়ে কনফারেন্স শেষ করে দিছে।
জ্বর এর মধ্য রিয়াদ প্রচুর কাঁদছে। কেন কাঁদছে সে নিজেও জানেনা। কিন্তু প্রচুর কান্না পাচ্ছে রিয়াদের। একটা নতুন দুশ্চিন্তার সূচনা হল মনে হচ্ছে তার কাছে।
কি হবে লাবন্যর?? কি করবে ওরা?? পড়ালেখা শেষ হয়নি ওর। বিয়ে হয়নি। ওর কোন ভাই নে। ও আর ওর মা। দুইজনে কিভাবে সামলাবে । লাবন্যর পড়ালেখা, সংসার, খরচ -----
ভাবতে পারছে না আর রিয়াদ। শুধু কাপছে। তারপর আর তেমন কিছুই মনে করতে পারছে না। মনে হয় অজ্ঞান হয়ে ছিল কিছু সময়। হঠ্যাত করে রিয়াদ চোখ মেলে তাকালো। গা ঘেমে গেছে। মোটামুটি ২৫-৩০ মিনিট এর মত হয়ত অজ্ঞান ছিল। মাথায় কাজ করছে না রিয়াদের। মনে চাচ্ছে এই মুহূর্তে লাবন্যর কাছে ছুটে চলে যায়, কিন্তু কিভাবে?? এইটা তো সম্ভব না। ভাবতে পারছে না কিছুই। অপেক্ষা সকাল হবার। সকাল হলেই সে লাবন্যর কাছে যাবে। লাবন্যর কাছে তার যাবার দরকার। সারারাত এ ঘুম হলনা। কেন জানি না শুধু চোখ দিয়ে পানি পরছে রিয়াদ এর । লাবন্যর মুখ খানা ভেসে উঠছে ।
" লাবণ্য কাঁদছে " এই কথাটা ভেবে রিয়াদ ও কাঁদছে। লাবন্যর চোখে পানি এই কথাটা ভাবতে পারে না রিয়াদ। ভাবলেই কেমন জানি নিজেকে অসহায় লাগে। সৃষ্টিকর্তার কাছে নিজের জন্য যতটা দোয়া করে তার থেকে বেশী দোয়া এই লাবন্যর সুখের জন্য করে। রাত যেন শেষ হতে চায়না। ওযু করে আবার বিছানায় আসলো, দোয়া দুরুদ পড়তে থাকলো, কিন্তু কান্না ক্রমশ আরো বাড়তেই থাকলো।
অবশেষে ফজর এর আজান হল। রিয়াদ নামায শেষ করেই বাসা থেকে বের হল। দারোয়ান কে ডেকে তুলল , বাইক টা বের করতে করতে ছোট ভাই আলিমকে কল দিল। আলিম কে গতকাল রাতেই বলে রাখছে। শীতের সকাল। কিন্তু শীত অনুভব হচ্ছে না। শুধু মনে হচ্ছে লাবন্যর কাছে যেতে হবে। আলিম কে রাস্তা থেকে উঠিয়ে নিয়ে হাজির হল লাবন্যর বাসার সামনে। দোতলায় থাকে ওরা।
দরজা খোলা ছিল। আলিম রুমে ঢুকে সালাম দিল। বলল - লাবণ্যকে ডেকে দিবেন, আমি ওর ইউনিভার্সিটি ফ্রেন্ড।রিয়াদ বাইরেই দাঁড়িয়ে রইল। কখন ও ভাবে নি জীবনে প্রথম লাবন্যর বাসায় আসছে , তাও এইভাবে আসতে হবে। কতরকম স্বপ্ন দেখেছে লাবন্যর বাসায় যাওয়া নিয়ে। কিন্তু এমন একটা অবস্থায় প্রথমবার আসবে তা ভাবে নি রিয়াদ। এমন সময় লাবন্যর বোন বলল - ভেতরে এসে বস। লাবন্যর আম্মু বাইরে দিয়ে যাচ্ছে, রিয়াদ আন্টির দিকে তাকিয়ে আছে।সালাম দিল, ভেতরে এসে বসল ।
লাবণ্য রুমে ঢুকল । সাথে সাথে আবার বেরিয়ে যেয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রইল। লাবণ্য হয়ত এমন কিছু দেখার জন্য প্রস্তুত ছিল না। লাবণ্য হয়ত কখন ও কল্পনাও করে নি, এত বছর পর এই মানুষটা তার বাসায় এসে হাজির হবে এত ভোরে। যাইহোক, রিয়াদ ডাক দিল লাবণ্যকে। লাবণ্য ভিতরে এসে রিয়াদ এর সামনে একটা বিছানায় বসল।
একটা মানুষ পুরা অগোছাল, একটা থ্রী-পিস পরে বসে আছে, চুল গুলা মোটামুটি এলোমেলো। সারারাত ঘুমোয়নি, অনেক কেদেছে মেয়েটা। এখন ও কাঁদছে। রিয়াদ তাকিয়ে আছে লাবন্যর দিকে। ভেতরটা ভেঙ্গে যাচ্ছে। যে মানুষটার চোখের পানি সহ্য করতে পারে না , আর সেই মানুষ টাই এমনভাবে তার সামনে বসে কাঁদছে নিরন্তর।রিয়াদ পারছে না এই মানুষটাকে বুকে জড়িয়ে ধরে একটু সান্ত্বনা দিতে, এর থেকে অসহায় মুহূর্ত আর মনে হয় কিছুই হতে পারে না দুনিয়ায়। নিজেকে সামলাতে পারছে না রিয়াদ, মনে চাচ্ছে বুকে জড়িয়ে ধরে রাখবে, তারপর কিছু খাওয়াবে। লাবণ্য কিছুই খায়নি, জানা কথা। কিন্তু কিছুই করতে পারছে না।
একটু আধটু কথা বলল রিয়াদ লাবন্যর সাথে। রিয়াদ বুঝতে পারতেছে লাবণ্য আসলে কথা বলার মত অবস্থায় নেই। এদিকে রিয়াদ ও বসে আছে, লাবণ্যকে ছেড়ে যেতে মন চাচ্ছে না একবিন্দুও। ছোটভাই বুঝতে পারছে বিষয়টা। তখন বলে উঠল- ভাই। আমরা তাহলে চলেন আজ বের হয়। এই কথাটা শুনে ভেতরটা যেন হঠ্যাত করেই কেদে উঠল, যেমনটা নদীর বাঁধ ভেঙ্গে গেল পানির গতি বেড়ে যায় ঠিক তেমন। তখন মনে চাচ্ছে সে কোথাও যাবে না, লাবন্যর কাছেই বসে থাকবে। অনেক কষ্টে উঠে দাড়ালো। ছোট ভাই রুম থেকে বের হয়ে গেছে। রিয়াদ দাড়িয়েই আছে লাবন্যর সামনে। মুখ টা দেখার মত নেই, এক রাতেই চেহারা চেঞ্জ হয়ে গেছে। রিয়াদ আর সামলাতে পারছে না নিজেকে।লাবন্যর মাথায় একটু হাত বুলিয়ে বের হয়ে গেল রুম থেকে।
সামনের দিকে এগোতে পারছে না রিয়াদ, টানছে লাবণ্য ওকে এমন একটা মনে হচ্ছে। বাসা থেকে বের হয়ে গলির মাথায় যেতেই মনে পড়ল কোন একদিন মধ্য রাতে এই জায়গায় লাবন্যর বাবার সাথে দেখা হয়েছিল। আজ সেই মানুষটা লাবন্যদের ছেড়ে চলে গেছে।
নতুন করে একটা বড় দুশ্চিন্তার শুরু হল রিয়াদের জীবনে। রিয়াদ চাইলেও পারে না এই দুশ্চিন্তা কমাতে। তার সেই পারমিশোন নেই। বাসায় যেতে যেতে মনে পরছে লাবন্যর কথা।
লাবণ্য একদিন রিয়াদ কে প্রশ্ন করেছিল- " আচ্ছা বিয়ের পর যদি আম্মু আমাদের সাথে থাকে আপনার কোন সমস্যা নেই তো ?"। রিয়াদ হেসে বলছিল ধুর বোকা মেয়ে। সমস্যা থাকবে কেন? তোমার আম্মু আর আমার আম্মু তো একই কথা। তোমার আম্মু না থাকলে কি এই পরীটা কে আমি পেতাম?? আম্মু আমাদের সাথেই থাকবে।
আজ খুব করে বলতে ইচ্ছা হচ্ছে লাবণ্য আমি এই টেনশন নিতে পারছি না। আম্মু আর তুমি আমার কাছে থাকো প্লিজ। আমরা একসাথেই থাকবো প্লিজ। তোমরা প্লিজ আমার কাছে চলে আসো। মনে মনে এই দোয়া করছে রিয়াদ।আল্লাহ এর কাছে এইটায় চাইছে সে। এই দুশ্চিন্তা নিয়ে থাকতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। আল্লাহ ই জানে লাবণ্য কি আন্টিকে নিয়ে রিয়াদ এর কাছে আসবে??? অপেক্ষায় ---
©somewhere in net ltd.