নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বনাম সরকারি অপচয়।। রেজা ঘটক

৩১ শে মে, ২০১৩ রাত ৮:২১

২৮ মে ২০১৩ মঙ্গলবার ন্যাশনাল ইকোনমিক কাউন্সিল (এনইসি) আগামী অর্থ বছরের (২০১৩-১৪) জন্য ৭৩,৯৮৪ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি অনুমোদন করেছে। আগামী অর্থ বছরে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে ট্রান্সপোর্ট সেক্টর। আগামী অর্থ বছরে এই প্রথম বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি'র জন্য শায়ত্ত্ব শাসিত প্রতিষ্ঠান/কর্পোরেশান সমূহ থেকে অর্থ বরাদ্দের সুযোগ রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে শের-ই-বাংলা নগরের এনইসি কনফারেন্স রুমের বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। পরিকল্পনা মন্ত্রী এমকেম খন্দকার জানান, প্রস্তাবিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি'র ৪১,৩০৭ কোটি টাকা বা প্রায় শতকরা ৬২.৭০ ভাগ সংগ্রহ করা হবে সরকারি ফান্ড থেকে, ২৪,৫৬৩ কোটি টাকা বা প্রায় শতকরা ৩৭.৩০ ভাগ মংগ্রহ করা হবে বিভিন্ন প্রজেক্ট সহায়তা থেকে এবং ৮,১১৪ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে বিভিন্ন শায়ত্ব শাসিত প্রতিষ্ঠান/কর্পোরেশান সমূহ থেকে। পরিকল্পনা সচিব ভূইয়া শফিকুল ইসলাম জানান, মোট এডিপি'র ৬৫,৮৭০ কোটি টাকার সঙ্গে শায়ত্ব শাসিত প্রতিষ্ঠান/কর্পোরেশান সমূহের থেকে বাড়তি ৮,১১৪ কোটি টাকা সংগ্রহের পরিকল্পনার সমন্বয়ে সামগ্রিক এডিপি'র আকার দাঁড়াবে ৭৩,৯৮৪ কোটি টাকা। গত অর্থ বছরের (২০১২-১৩) তুলনায় এবারের এডিপি'র আকার ১৮,৯৮৪ কোটি টাকা এবং গত বছরের সংশোধিত এডিপি'র চেয়ে তা ২১,৬১৮ কোটি টাকা বেশি।

আগামী বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে ট্রান্সপোর্ট সেক্টরে। প্রস্তাবিত পদ্মা সেতুর জন্য এডিপি থেকে ৬,৮৫২ কোটি ধরা হয়েছে, যা নিয়ে ট্রান্সপোর্ট সেক্টরে মোট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৫,৩৭৪ কোটি টাকা, যা মোট এডিপি'র প্রায় শতকরা ২৩.৩৪ ভাগ। প্রস্তাবিত এডিপিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাচ্ছে পাওয়ার সেক্টর। টাকার হিসাবে যা ৯,০৫৩ কোটি টাকা বা মোট এডিপি'র প্রায় শতকরা ১৩.৭৪ ভাগ। শিক্ষা ও ধর্ম খাতে এডিপি'র বরাদ্দ ৮,৬৭৬ কোটি টাকা বা প্রায় শতকরা ১৩.৩১ ভাগ। পল্লী উন্নয়ন ও অবকাঠামো খাতে ৬,৬২২ কোটি টাকা বা প্রায় শতকরা ১০.০৫ ভাগ, ফিজিক্যাল প্লানিং, ওয়াটার সাপ্লাই এন্ড হাউজিং সেক্টরের জন্য ৫,৪৫৪ কোটি টাকা বা প্রায় শতকরা ৮.২৮ ভাগ, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যান খাতের জন্য ৪,২৪০ কোটি টাকা বা প্রায় শতকরা ৬.৪৪ ভাগ এবং কৃষি খাতের জন্য এডিপিতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৩,৭২১ কোটি টাকা বা প্রায় শতকরা ৫.৬৫ ভাগ।

এছাড়া নতুন এডিপিতে তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদের জন্য ২,২৫৫ কোটি টাকা, কমিউনিকেশান সেক্টরের জন্য ৯০৩.৪১ কোটি টাকা, বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের জন্য ৭৫৭.৬১ কোটি টাকা, শ্রম ও কর্মসংস্থানের জন্য ৩৭০.০৯ কোটি টাকা এবং ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিভাগের জন্য ২০৮.৫২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

আগামী বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে মোট প্রকল্পের সংখ্যা ১১৭৬টি। এর মধ্যে ৯৯৬টি প্রকল্প গত বছরের উন্নয়ন প্রকল্পের অংশ, ৫০টি সম্পূর্ণ নতুন প্রকল্প এবং বিভিন্ন শায়ত্ব শাসিত প্রতিষ্ঠান/কর্পোরেশান সমূহের জন্য ১৩০টি প্রকল্প রাখা হয়েছে এডিপিতে।

এছাড়া প্রস্তাবিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে কোনো বরাদ্দ ছাড়াই ৬৬১টি অ-অনুমোদিত প্রকল্প এবং ৪৪টি পাবলিক-প্রাইভেট-পার্টনারশিপ (পিপিপি) প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।



এখন প্রশ্ন হল কিভাবে আগামী অর্থ বছরের বাজেটে প্রস্তাবিত এই বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির অর্থ বরাদ্দ করা হবে? ধারণা করা হচ্ছে আগামী বাজেট হবে খুবই উচ্চাভিলাষী বাজেট আর বাজেটের আকারও হবে এ যাবতকালের সবচেয়ে বড়। আগামী ৬ জুন ২০১৩ জাতীয় সংসদে মাননীয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আগামী অর্থ বছরের বাজেট পেশ করবেন। এবারের বাজেটের আকার হবে অন্তঃত ২,২২৫ বিলিয়ন টাকা। আবার রাজনৈতিক বিবেচনায় এই বাজেটের আকার আরো বড় হয়ে ২,২৮০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এখন ৬৫০ মিলিয়ন সাইজের ফিক্সড এডিপিতে অর্থ আসবে কিভাবে? এনবিআর (ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভিনিউ) বলছে আগামী অর্থ বছরে কর আদায় হতে পারে ১৩৬০ বিলিয়ন টাকা। আর বাজেটে কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হবে অন্তঃত ১৬৮০ বিলিয়ন টাকা। বৈদেশিক সাহায্য ধরা হতে পারে ২৫০ বিলিয়ন আর অভ্যন্তরীন ব্যাক সমূহ থেকে অর্থ ধার তরা হবে অন্তঃত ২৫০ বিলিয়ন। যা প্রস্তাবিত বাজেটের জিডিপিতে (গ্রোস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট) অন্তঃত শতকরা প্রায় ৫ ভাগ ঘাটতি থাকবে। সামনে নির্বাচনের কারণে বাজেটের আকার নিঃসন্দেহে বড় হবে আর সেই চাপ পড়বে বাজেটে, যা প্রায় শতকরা ৫ ভাগ ঘটতি জিডিপি মোকাবেলা করতে হবে বাজেটের আকারে।

আমরা বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় আগের বাজেটর ঘোষিত ৭.২ জিডিপি অর্জন করতে পারব না। সেক্ষেত্রে কত বছরের বিশাল বাজেটেই অনেক সংশোধন থাকবে। অংকের হিসাব নিকাশ এদিক সেদিক করে বাজেটের অংক মিলানো হবে। আর জাতির সামনে একটি সংশোধিত সম্পূরক বাজেটও বাজেট বক্তৃতায় শোনানো হবে। এনবিআরের হিসাব অনুযায়ী, ১৩৬০ বিলিয়ন কর থেকে পাওয়া অর্থ দিয়ে বিশাল সাইজের বাজেট মোকাবেলা করা খুব ঝুঁকিপূর্ণ হবে। এনবিআরের হুঁশিয়ার সত্ত্বেও আগামী বাজেটের আকার নির্বাচনের কারণে বড় হবে। আর সেই ঘাটতি বাজেটের ঝক্কি পোহাতে হবে বাংলাদেশের মানুষের।



এবার আসা যাক, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি'র টাকা সরকার কিভাবে অপচয় করে সেদিকটায়। এডিপিতে এবার মোট প্রকল্প সংথ্যা ধরা হয়েছে ১১৭৬টি। বাংলাদেশে প্রস্তাবিত বাজেটে কখনোই প্রকল্প উদ্ভোধনী ব্যয় টাকার অংকে দেখানো হয় না। কিন্তু প্রায় সকল উন্নয়ন প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রী বা বড় বড় আমলা কর্তৃক উদ্ভোধন নাটক মঞ্চায়ন করা হয়। উন্নয়ন প্রকল্পে সত্যিকার খরচের আগেই এসব উদ্ভোধনী ব্যয় সামাল দিতে হয় এডিপি;র ব্যয় থেকেই। প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্পের ফলক উন্মোচন ব্যয় কত? বাজেটে সেই খরচ টাকার অংকে ধরার নিয়ম নেই। কিন্তু ফলক উন্মোচন ব্যয় তো আর বাজেটর বাইরে থেকে আসে না। এডিপি'র প্রকল্প ব্যয় থেকেই ফলক উন্মোচন বাবদ আগাম খরচ করা হয়। বাংলাদেশের মত একটি গরিব দেশে কেবলমাত্র ফলক উন্মোচন বা নামলেখা পাথরকে ন্যাংটা করা বাবদ প্রতি বাজেটে যে পরিমাণ সরকারি অর্থের অপচয় হয়, তা দিয়েই ১০০ পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব। ফলক উন্মোচন হল উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ হওয়া টাকার আনুষ্ঠানিক চুরি চামারি জায়েজ করার যাত্রা শুরুর মত। অর্থ্যাৎ কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের ফলক উন্মোচন করানো মানেই হল সেই উন্নয়ন প্রকল্পে আনুষ্ঠানিক চুরি বা দুর্নীতি করার সুযোগ সুবিধারও তখন থেকে শুরু। ফলক উন্মোচন করায় কত টাকা ব্যয় হয় তা কখনো বাজেটে উল্লেখ করা হয় না। কিন্তু বাস্তবে এই ফলক উন্মোচনই হল গরিব দেশের জন্য সবচেয়ে বড় সরকারি অর্থের অপচয়ের খাত।

উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হলে আবার একটি উদ্ভোধনের ব্যাপার স্যাপার আছে। প্রধানমন্ত্রী যাবেন। ফিতা কাটবেন। উন্নয়ন প্রকল্প উদ্ভোধন হবে। আহা কি আনন্দ!!! প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্পে এই উদ্ভোধনী ব্যয় কত? এসবও বাজেটে দেখানো হয় না। কিন্তু প্রকল্পে এসব ব্যয় চুরি চামারির পর হিসেব করে মিলিয়ে দেওয়া হয়। উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষে যে টাকা অপচয় করে উদ্ভোধন করা হয়, সেই টাকায় আরো অন্তঃত ১০০ নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব। বাংলাদেশে লাল গালিচা সম্বর্ধনা, ফলক উন্মোচন, ফিতা কাটা এই সংস্কৃতি হল সরকারি প্রকল্পে চুরি চামারি এ্যাডজাস্ট করার একটি অযুহাত। প্রকল্পের ব্যয়ের চুরি-চামারি-দুর্নীতি ইত্যাদি এসব ব্যাপার ওই অপচয় খাতে এ্যাডজাস্ট করা হয়। আর তা সরকারের সুপারিশে অনুমোদন পায়।



বাংলাদেশে যতোদিন এই ফিতা কাটা সংস্কৃতি বন্ধ না হবে, যতোদিন এই লাল গালিচা সম্বর্ধনা সঙস্কৃতি বন্ধ না হবে, যতোদিন এই প্রকল্পের ফলক উনন্মোচন ও প্রকল্প উদ্ভোধন বন্ধ না হবে, ততোদিন প্রকল্প থেকে সরকারি অর্থের অপচয় বন্ধ হবে না। এটাই বাস্তবতা। প্রকল্পের ফলক উন্মোচন হবে আর সরকারি কর্মকর্তারা-কর্মচারীরা দু'চার পয়সা বামপেকেটে এদিক সেদিক করবে না এটা কি বিশ্বাস করা যায়? যতো বেশি ফলক উন্মোচন হবে ততো বেশি চুরির সুবিধা। আহারে ফলক উন্মোচন, আহারে লাল গালিচা, আহারে ফিতা কাটা....এসবই সরকারি অর্থের সুস্পষ্ট অপচয়। এটা বন্ধ না হলে বাংলাদেশে বাজেটের টাকা কোথায় কিভাবে খরচ হয় আমাদের মত আমজনতা তা জানতেও পারবে না। ধিক ওই সব ফলক উন্মচোন, ধিক ওইসব লাল গালিচা, ধিক ওইসব ফিতা কাটা। ধিক ওইসব বোতাম টেপা। এসব বন্ধ করুন নইলে বাজেটে সুস্পষ্ট ঘুোষণা রাখেন মোট বরাদ্ধের শকতরা ১০ ভাগ আমরা চুরি করব। কে কত চুরি করবেন আমাদের নাম ধাম সহ বাজেটে সুস্পষ্ট উল্লেখ রাখেন। আমরা ওই শতকরা ১০ আপনাদের আলাদা ভাবে দিয়ে দেব। কিন্তু প্রকল্প থেকে একটা টাকা এদিক সেদিক করবেন তো সাধারণ জনতা আপনাদের হাত কেটে দেবে। অতএব সাধু সাবধান। সামনে হাত কাটার দিন আসতেছে। তরুণ প্রজন্ম এসব হিসাব সবই মিলাবে।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে মে, ২০১৩ রাত ৯:০৩

খাটাস বলেছেন: বাস্তবে এই ফলক উন্মোচনই হল গরিব দেশের জন্য সবচেয়ে বড় সরকারি অর্থের অপচয়ের খাত। আমার নিজের ও জানা ছিল না। সুনির্দিষ্ট বিশ্লেষণ মুলক পোষ্ট আরও চাই। সবার আগে ফলক উম্মচনের মত আর ও যত ফাক ফোকর আছে সেগুলো খুজে বের করে তরুন প্রজন্ম এর সামনে তুলে ধরতে হবে। সময়ের সচেতনতা একান্ত প্রয়োজন। আপনার সুন্দর পোস্টের জন্য প্লাস, ধন্যবাদ- দুটোই।

২| ৩১ শে মে, ২০১৩ রাত ৯:০৯

provat বলেছেন:

৩| ৩১ শে মে, ২০১৩ রাত ৯:২০

েবনিটগ বলেছেন: + বেড়ে বলেছেন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.