নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

তৃষ্ণার্ত যূপকাঠ।। ছোটোগল্প, আমার বুনো বলেশ্বরী বই থেকে।। রেজা ঘটক

০২ রা জুন, ২০১৩ সকাল ১১:৪০

আমার বাবা তখন ব্যাচেলর। ধানমন্ডির লেক সার্কাসে পুরোনো এক দালান বাড়িতে মেস করে থাকে। মোট পাঁচ জনে মিলে থাকে। মা থাকে ইডেন কলেজের ছাত্রী নিবাসে। কিন্তু বাবাকে না দেখে মা তখন একটা দিনও থাকতে পারে না। বাবার অবস্থাও প্রায় একইরকম। মাকে না দেখলে বাবার দুনিয়াটাকেই অন্যরকম অর্থহীন লাগে। পৃথিবীটাকে মনে হয় অচেনা দুর্বোদ্ধ অনুভূতিশূণ্য কোন অলৌকিক গ্রহের ভাষাহীন গোরস্থানের মতো অসমাপিকা অজানা কোন বসতি। মনে হয় অমাবশ্যার রাতে গহীন অরণ্যের গাঢ় অন্ধকারের মতো বিমূর্ত কোন বিভিষিকাময় একঘেয়েমিতে বুঝি জীবনের ছুটি আর আনন্দগুলো দম বন্ধ হয়ে আটকা পরে আছে। হাজার হাজার বছর কোন অচেনা বঙ্কিম অক্ষরেখা পথে গোঁয়ারের মতো ছুটলেও বুঝিবা আসল ঠিকানা পুরোপুরিই অনাবিস্কৃত থেকে যাবে। যে রহস্য ভেদ করার মতো দুঃসাহস পৃথিবীর মানুষ যেনো ভুল করেই হারিয়ে ফেলেছে। যে কারণে সময়টাও বড্ডো গোলমেলে। বাবার কাছে মা না আসা পর্যন্ত বাবার বেঁচে থাকাটাই বুঝি একটা অস্থির যন্ত্রনাময় ডাইনি সময়। এসব ক্ষেত্রে বরাবরই রহস্যময় কোন জাদুকরী প্রফুল্লের ছোঁয়ায় মা বরং পরিস্থিতি সামাল দিতো অল্প সময়ের মধ্যেই। আবার কখনো উল্টো জলশূন্য হতে থাকা কোনো পুকুরের কিংকর্তব্যবিমুঢ় মাছের যন্ত্রনার মতো একটা অস্থির তাড়নায় মাও ছটফটানি করতো বাবার অনুপস্থিতিতে। সেক্ষেত্রে বাবা যথোপযুক্ত কারণ দর্শাতে ব্যর্থ হলে বা পরিস্থিতি অনুকূলে আনতে না পারলে সহসাই আমেরিকা রাশিয়ার কোল্ডওয়ারের মতো একটা সাংঘাতিক রক্তপাতহীন যুদ্ধ বিনা নোটিশে আগাম কুরুর লড়াইয়ে পরিণত হতো। যার পরিসমাপ্তি ঘটতো যুদ্ধ অথবা শান্তিতে। আর যুদ্ধ লেগেছে তো সেই যুদ্ধের আগুন নিভাতে উভয়পকেই তখন অনেক মাশুল দিতে হতো।



কিন্তু আমার সবসময় বেশি যৌক্তিক মনে হতো বাবার ছটফটানিকে। এরকম ঘটনায় মাঝে-মধ্যে মার বান্ধবীরা পালা করে বাবার মেসে যেত মার সাথে বাবার লড়াইটা থামাতে। মা যেদিন যাকে নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করত, সেদিন তাকে নিতো। কোনো দিন বিউটি আন্টি, কোনো দিন টুনটুনি আন্টি অথবা কাকলি আন্টি মার সঙ্গে বাবার মেসে যেতো। লিটন আংকেল থাকলে সেদিন ওরা জাম্পিস আড্ডা দিতো। গান-বাজনা, কবিতা-সাহিত্য, উদ্ভট সব চুটকির আড্ডায় ঘন্টার পর ঘন্টা শেষ হতো বিশেষ খাওয়া দাওয়ায়। আর আড্ডায় যে যাকে পারে যুক্তি দিয়ে একটু হেয় করতে পারাটায়- অবশ্যই থাকতো মজার মজার সব হাসির খোরাক। কে কখন কাকে চমকে দেয়, তা নিয়ে ভিতরে ভিতরে সবাই তখন বেশ তটস্থ থাকতো। অবশ্য আড্ডা শেষে এসব ঘটনা কেউ আর মনে রাখতো না। কিন্তু বাবা আর মার মধ্যে এরকম কিছু হলে তার ঝাল থাকতো পরবর্তী কয়েক সপ্তাহ অথবা মাস পর্যন্ত। তবে অবস্থা বেশি প্রতিকূলে থাকলে তখন পরিকল্পনা মতো কোথাও বেড়াতে যাওয়া থাকতো ওই সপ্তাহগুলোর রুটিন ওয়ার্ক। এ সপ্তাহে চিড়িয়াখানায় তো পরের সপ্তাহে স্মৃতিসৌধে। তারপরের সপ্তাহে হয়তো সোনারগাঁ, তো পরের সপ্তাহে বোটানিকাল গার্ডেন বা বলদা গার্ডেন। এভাবে ওদের আড্ডা আর আনন্দে বেড়ানোটা চলতো বাবা-মার মধ্যে নতুন করে সুগভীর হৃদ্যতা তৈরি না হওয়া পর্যন্ত বেশ উৎফুল্লে। আর এক সময় মা-বাবা নিজেদের মধ্যেকার যুদ্ধটা কখন যে বিনা চুক্তিতে মিটমাট করে ফেলতো সাথের কেউই তা টের পেতো না। আর এসব বেড়ানোর ভ্রমণ খরচ উঠতো মাথা পিছু চাঁদা তুলে। চাঁদা আদায়ের ব্যাপারে লিটন আংকেল ছিল কাবুলিওয়ালাদের চেয়েও কঠোর আর অপ্রতিদ্বন্দ্বী। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চাঁদা দিতে কেউ ব্যর্থ হলে তাকে গুনতে হতো তিনগুণ পরিমাণ জরিমানা। যা দিয়ে পরের সপ্তাহে ঢাকা থেকে দূরে কোথাও বেড়ানোর ছক করতো লিটন আংকেল। অথবা গণ আদালতে প্রস্তাব পাস না হলে পিকনিক টাইপের খাওয়া দাওয়া হতো বাবার মেসে।



দূরে কোথাও বেড়ানোর প্রস্তাব উঠলে মা সবার আগে কেন যেনো ভেটো দিতো। বেড়াতে গিয়ে দূরে কোথাও রাত্রিযাপন একদম পছন্দ হতো না মার। আর ঠিক এর উল্টো ছিল বাবা। রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা আছে এমন বেড়ানোর প্রস্তাবে সব সময় বেশি উৎসাহ দেখাতো বাবা। একবার তেমনি এক প্রস্তাব দিলেন মতি আংকেল- “পৌষ পূর্ণিমায় চলো সবাই মিলে গাজীপুরের শালবনে যাই।” একবার শাল পিয়ালের বনে ইচ্ছে করে হারাতে পারলে নাকি জীবনের সকল মনোমালিন্য চিরতরে মুছে যায়। প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্য এমন হারানোর মতো অরণ্যে আমৃত্যু জ্যোৎস্নাময় রাত্রিগুলো উম্মাতাল যৌবনে ভাসবার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে আইন পাস হওয়া উচিত। এমনিতে অরণ্য আর জ্যোৎস্না মা-বাবা দুজনেরই খুব পছন্দ। কিন্তু মতি আংকেলের প্রস্তাবে মার প্রায় তাৎণিক ভেটো- গত বছর ওখানে পিকনিক করলাম না? তার চেয়ে বরং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাখি দেখতে যাওয়া অনেক ভালো।



মার বিকল্প প্রস্তাব শেষ হওয়ার আগেই বাবা বাঁধিয়ে দিতো তখন মহাতর্কযুদ্ধ। অবশ্য এসব তর্কযুদ্ধে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত মা-ই জয়ী হতো। ফলে পুরো আনন্দ ভ্রমণটায় বাবার মুখে লেগে থাকতো কবরের যতো নিস্তদ্ধতা। কাব্যরসিক লিটন আংকেল, ফোঁড়ন কাটা বিউটি আন্টি, ভোজন বিলাসী ফজলু আংকেল, ঝাঁঝাঁ ঝিঁঝিঁ টুনটুনি আন্টি, কেউ আর সে যাত্রায় বাবার মুখে খই ফোঁটাতে পারতো না। আর বাবার মুখে খই ফুঁটলো না মানে, মার জন্য তা তিন নম্বর দূরবর্তী ঝঞ্ঝা সংকেতের মতো। ফলে সদা উচ্ছ্বল মার মধ্যেও তখন অবাস্তব সব ফালতু চিন্তা ভর করতো। যেমন- এই বুঝি ফ্যালারাম তিন দিনের জন্য কোথাও গুম হয়ে যায়। অথবা কখন কোথায় কোন গাধার কাণ্ড ঘটিয়ে বসে? এমন উটকো সব আশংকায় মার মধ্যে পরবর্তী সাত দিনের রাশিফল আগেই পাওয়ার দশা। মিথ্যা রাশিচক্রের দোহাই দিয়েও মা তখন বাবাকে প্রলম্বিত প্রতারিত করার দুঃসাহস পেতো না। আর এসব ক্ষেত্রে মা-বাবা পরবর্তী সোহাগি স্বপ্নে নিজেদেরকে না ভাসানো পর্যন্ত দুনিয়াটাই অন্য কোনো অজানা কক্ষে ঘুরপাক খেতো। এমনই এক দুর্ঘটনা থেকেই আমার জন্ম পর্বের শুরু।



পৌঁষের শীত তখনো কেবল গ্রাম বাংলার ওপর দিয়েই যাচ্ছে। ঢাকায় শীত বলতে তখন রাতে সিলিং ফ্যান দু’একবার বন্ধ রাখলেই চলে। ধানমন্ডির রুশ কালচারাল সেন্টারে তখন প্রদর্শিত হচ্ছে ‘মুক্তির গান’। প্রদর্শণীর দ্বিতীয় সপ্তাহে বাবা কোনো মতে দু’টো টিকিট ম্যানেজ করেছে। সন্ধ্যা সাতটায় শো। মা আগে থেকেই জানতো। দেরি করা বাবার ভীষণ অপছন্দ। কিন্তু ইডেন কলেজের হোস্টেল থেকে গাউছিয়া-নিউমার্কেটের ট্রাফিক জ্যাম ঠেলে ধানমন্ডির রুশ সেন্টারে পৌঁছাতে পৌঁছাতে মার ঘড়িতে তখন সাতটা পনের। বাইরে বাবা ছাড়া দ্বিতীয় একটি প্রাণিও নেই। বাবার মেজাজ তখন সিঙ্টি নাইন ডিগ্রিতে। ফলত বাবার ঠোঁটে সিগারেট থাকাটাই তখন স্বাভাবিক। আর সিগারেট হল মা’র দু’চোখের শত্রু। বাবার সিগারেট খাওয়া মা একদম সহ্য করতে পারতো না। পালিয়ে দু’চারটা খেলেও সে খবর বাবাকে ছুঁতেই কোন আজগুবি রহস্যময় শক্তির জোরে তা টের পেতো মা। বাবার ঠোঁটের সিগারেট আর মার দেরি করে আসা- এই দুটো ঘটনাই ছবি দেখার বারোটা বাজানোর জন্য তখন যথেষ্ট। পরস্পর চোখাচোখি হতেই বয়স্ক রিকশা চালকের অজান্তেই মা-বাবার মধ্যে কুরুক্ষেত্রের একটা অদৃশ্য অথচ বাস্তব যুদ্ধ হয়ে গেল। কোনো বাক্য বিনিময় ছাড়াই পরস্পর নিক্ষিপ্ত তীরে দু’জনেই আহত হলো। বাবা জ্বলন্ত সিগারেটের অবশিষ্টাংশ ড্রেনে ছুঁড়ে দিয়ে গেটের দিকে হাঁটা ধরলো। আর মা তাড়াহুড়ো করে দশ টাকার ভাড়া মিটাল পঞ্চাশ টাকায়। এরকম ভুল অবশ্য মা’র চেয়ে বাবা’ই বেশি করে। যা হোক রিসিপশানের সাহায্য নিয়ে পিছনের দরজা দিয়ে শো রুমে ঢুকে একেবারে পিছনের সারির সবচেয়ে উত্তরের দিকে দু’জনে টুপটাপ পাশাপাশি বসে পড়ল। দশ মিনিট দু’জনেই নষ্ট রেডিওর মতো চুপচাপ।



‘মুক্তির গান’ ততোক্ষণে আধঘন্টা হয়ে গেছে। অন্যদের মতো মা-বাবাও দর্শক। কিন্তু ছবিতে কারোরই মন নেই। মা’র মনে তখন পরদিন সকালে গাজীপুরে বেড়াতে যাওয়ার বিল অনুমোদন ‘হওয়া-না হওয়া’র চিন্তা। কেননা এবারের ভ্রমণে বাবা সঙ্গে থাকবে না। রুমমেটরা মিলে বিউটি আন্টিদের বাসায় যাবে। দলে পুরুষ সদস্যের যাওয়ার সুযোগ থাকলেও রহস্যময় কারণে অনেকটা ইচ্ছে করেই তা রাখা হয়নি। তাছাড়া প্রোগ্রামটা তখনো বাবা জানেই না। ছবি দেখা সিডিউল থাকলেও মা’র উদ্দেশ্য মূলত গাজীপুরে বেড়াতে যাওয়ার অনুমোদন লাভ করা। তাই মা-ই প্রথম যুদ্ধ বিরতি ঘোষাণা করল। বাম হাতে বাবার ডান হাঁটুতে স্বাভাবিক আদরের মতো একটা আলতো চাপ দেয় মা। গ্রামের লিলিপুট বাহিনী দৈমন্তি ঠাকুরমাকে দেখলে খামাখা রেডিও রেডিও বলে চিৎকার করলে দৈমন্তি বুড়ি যেমন তার চেয়ে উঁচু ঠ্যাঙ্গা নিয়ে খুব মেজাজে তেড়ে যায়, তেমনি মার আলতো গুতায় একেবারে তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে বাবা- ‘Don’t touch me, let me watch the film without any gossiping, please.’ বলে মা’র হাতটা দ্রুততার সঙ্গে ডান হাতে ঠেলে দেয় বাবা। এরপর দু’মিনিটের বিরতি দিয়ে মা আবার হাত চালনা করে বাবার হাঁটুতে। আবারো শুধু ‘প্লিজ’ উচ্চারণ করে বাবা হাতটা সরিয়ে দেয়। এবার মা বাম পায়ের গোড়ালি দিয়ে বাবার ডান পায়ের উপরিভাগে মৃদু চাপ দেয়। ফলাফল একই। বাবা পা দিয়ে মা’র পাকে যতোদুর সম্ভব ঠেলে সরিয়ে দেয়। এবং একবার মা’র দিকে প্যাঁচার মতো কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে পর্দায় চোখ ঘুরিয়ে নেয়। মা এবার একদম গোঁয়ারের মতো বেপরোয়া। ঘনঘন বাবা’র পায়ে গুতা মারছে, হাঁটুতে চাপ দিচ্ছে। মাঝে-মাঝে পেটে খামচি মারছে- বাবা’র কোনোরকম নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করেই। এক পর্যায়ে বাবা কিছুটা ক্রোধের সুরে ধমক লাগায়- ÔStop it, please|Õ তা’ শুনে পাশের সিটের ভদ্রলোক মা’র দিকে এমন ভঙ্গিতে তাকায় যে, মা একদম চুপ মেরে যেতে কিছুটা বাধ্য হয়। সে তাকানোর অর্থ এমন- আপনাদের যুদ্ধটা হলের বাইরে গিয়ে মিটিয়ে আসুন না। বাকি সময়টা মা চুপচাপ থাকলেও বাবা মা’য়ের মতো একই রকম খোঁচা মারছে মা’কে। কখনো গুতা মারছে বা চাপ দিচ্ছে মা’র হাঁটুতে, পায়ে বা পেটে। আর একটু পর পর বাবা এসব করেই যাচ্ছে। মা’ও বাবার আগের আচরণের মতো একইরকমভাবে সবটার জবাব দেয়। এবং যার পরিণতি দাঁড়ায়- ‘মুক্তির গান’ শেষ হবার মিনিট দশেক আগেই মা উঠে যায় নীরবে। বাবাও অগত্যা মা’র পিছু নেয়। কানামাছি খেলা, নাকি সাপ লুডু খেলছে বাবা-মা? নাকি লাল-নীল ভোঁ ভোঁ, যাকে খুশি তাকে ছোঁ। কোন খেলা খেলছে বাবা-মা?



রিকশা না নিয়েই মা ধানমন্ডির সাত নম্বর সড়ক ধরে মিরপুর রোডের দিকে হাঁটতে থাকে। পেছন পেছন বাবাও। রাস্তার সোডিয়াম বাতিগুলো যেনো বলতে চায়- আজ শীত পড়বে। বিপরীত দিক থেকে আসা একটা খালি রিকশার চালককে বাবা থামার ইশারা করে। রিকশা থামতেই মা উঠে হুড তুলে দেওয়ার অনুরোধ জানায়। বাবা ডানদিক দিয়ে রিকশায় ওঠার সময় মা তীব্র প্রতিবাদ জানায়- ‘আমি একাই যেতে পারবো। কারো আসার দরকার নেই।’ বাবা জোর করেই রিকশায় ওঠে। সঙ্গে-সঙ্গেই মা রিকশা থেকে নেমে হাঁটা ধরে। পাশেই লাইট পোস্টের নিচে লেজগুটিয়ে পায়ের মধ্যে মাথা গুঁজে শুয়ে প্রশান্তিময় নিদ্রার প্রস্তুতি নিচ্ছিল আদি ধানমন্ডির এক নেঁড়ি কুকুর। তার পাশ দিয়ে মা হাঁটার গতি বাড়ায়। পেছনে রিকশা থেকে বাবা’র রিকোয়েস্ট- ‘রাস্তায় সিন ক্রিয়েট করো না, প্লিজ, রিকশায় ওঠো।’ তা’ শুনে কুকুরটা মাথা তুলে দেখে কয়- ‘আপায় গোস্যা করছে গো।’ সন্ধ্যারাত্রির ভাবলেশহীন নির্বাক সোডিয়াম বাতিগুলো হাবার মতো হা করে বাবা-মার ওই টোনাটুনি খেলা বেশ সুড়সুড়ি চিত্তে উপভোগ করল। ওইটুকু প্রশান্তির উত্তাপ নিয়ে পৌষ শীতের সুদীর্ঘ দুর্ভোগময় রাত্রিটা তারা এখন কাবু হতে থাকা ধানমন্ডির বুড়ো গাছগুলোর সঙ্গে নিশ্চিন্তে কাটাতে পারবে।



মিরপুর রোডের মুখে এসে মা উদাস মুখে দাঁড়িয়ে থাকে। বাবা তখন রিকশা থেকে নেমে মা’র হাত ধরে রিকশায় তোলে। মিরপুর রোড ধরে রিকশা আগায় আঁলিয়াস ফ্রাঁসিস, সায়েন্স ল্যাব, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, গাউছিয়া। কারো মুখে কোনো কথা নেই। টুংটাং রিকশার আওয়াজ, সান্ধ্যরাত্রির ব্যস্ত নগরীর বর্ণহীন বিমূর্ত শব্দের ভাষাহীন কলরবের মধ্যে চারদিকেই একটা ব্যস্ততা। গন্তবে পৌঁছানোর তাড়া। নীলক্ষেতের সিগন্যালে বাবা নেমে যেতে উদ্যত হয়। এবার মা প্রথমে মুখ খুলল- বিউটি তোমাকে দেখা করতে বলেছিল।

- ক্যানো?

- জানি না।

- আমার সময় নেই, জরুরি হলে যেনো বাসায় যায়।

- ও কিন্তু সকালে গাজীপুর যাচ্ছে।

- যাওয়ার আগে আমার বাসা হয়ে গেলেই পারে।

- তার কি কোনো দরকার আছে?

- দরকারটা আমার না বিউটির?

- তা গেলেই শুনতে পাবে। ওরা হয়তো এখনো গেটের কাছেই আছে।

ইতোমধ্যে সিগন্যাল শেষ হতেই রিকশা জোরগতিতে হোম ইকোনমিক্স কলেজ পর্যন্ত এসে পড়ে। বাবা চালককে ধমক লাগায়- ওই মিঞা ! কানে কি কম শোনো? নামতে চাইলাম তারপরেও চালাইতাছো ? বামে সাইট কর।



ধমক খেয়ে রিকশা চালক হোম ইকোনমিক্স কলেজ গেটেই রিকশা থামিয়ে দেয়।

- আপায়ও নামেন, আর যামু না। শুনে, বাবার এতোক্ষণ ধরে সঞ্চিত মার ওপরের রাগ গিয়ে হামলে পড়ে বেচারা রিকশা চালকের ওপর। মা অবশ্য বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে নিজেও নামে এবং দ্রুত ভাড়া মিটিয়ে আসন্ন পরিস্থিতি সামলে নেয়। রিকশাচালক রিকশা ঘুরিয়ে নীলেক্ষতের দিকে যায়। আর তার চোখেমুখে তখন এমন বিরক্তি যেনো- ‘তোগোর খুটখুটানি ভালো কইরা লাগুক’ টাইপের কিছু একটা বলতে বলতে অন্য রিকশা, বাস, গাড়ির ভিড়ে সে মিশে যায়।



ইডেন কলেজের দুই নম্বর গেটে বিউটি আন্টিরা তখনো আড্ডা মেরে যাচ্ছিল। আবার কবে ঢাকা আসা হবে? আবার কখন দেখা হবে দু’বছরের রুমমেটদের সঙ্গে? আবার কবে এমন আড্ডা দিতে পারবে এইসব বন্ধুদের সঙ্গে? হল লাইফের শেষ আড্ডাটা অনেক বেদনা মধুরও বটে। কারোরই রুমে ফিরে যেতে মন চায়না। গেটের দারোয়ান মামারাও সেটা জানে। তাই অন্য দিনের চেয়ে আজ আপাদের ওরা ইচ্ছে করেই একটু ওভার টাইম সুযোগ দিচ্ছেন। দারোয়ান মামারাও আজ তাদের বিদায়ী আপাদের এবং তাদের কথিত ভাই, মামা, ভাইয়া, ভাইয়ার বন্ধু, ভাগ্নে, লোকাল গার্ডিয়ানদের থেকেও মোটা অঙ্কের বকশিশ বাগিয়ে বেশ পুলকিত। কোন আপা বেশি ভালো, কোন আপায় বিয়ার দাওয়াত দেবে, কোন মামাটা বজ্জাত, কোন ভাগ্নেটা শয়তানের বাছুর, কোন ভাইয়াটা একেবারে ফেরেস্তা, কোন আপায় ভীষণ কিপটা- এমন সব গল্পে নিজেদের মধ্যে মামারাও তখন খুবই মশগুল।



রশিদ ভাই নামে হলের মেয়েদের কাছে যে দারোয়ান মামার খুব সুনাম, গেটের বাইরে জটলা পাকানো হলের হোস্ট ও গেস্টদের উদ্দেশ্যে সেই রশিদ মামা এসে ঘোষণা দেয়- ‘সুপার আপায় হলে আইবো, আপারা রুমে যান।’ বলেই গেটের ছোট দরজাটা একটু ফাঁক করে পাশে দাঁড়ায়। ভোরবেলা গ্রামের দাদি-নানিরা খাবার হাতে হাঁস-মুরগির বাক্স খুলে এক পাশে দাঁড়ালে হাঁস-মুরগির মধ্যে যেমন বের হওয়ার একটা প্রতিযোগিতা শুরু হয়, তেমনি হুঁড়মুড় করে গেটের বাইরে দাঁড়ানো হলের মেয়েরা ছোট দরজা দিয়ে ঢোকার প্রতিযোগিতায় মুহূর্তে মেতে ওঠে। এতোক্ষণ যাদের সঙ্গে জীবনের গল্প হচ্ছিল তাদেরকে কোনোমতে খোদা হাফেজ, আলাহ হাফেজ, বাই, বাই-বাই, আবার দেখা হবে, আসবে কিন্তু, সি-ইউ ইত্যাদি জাতীয় সম্বোধনে বিদায় নিয়ে সন্ধ্যার সংসার তাসের ঘরের মতো ভেঙে দিয়ে একে একে হলের মেয়েরা ভিতরে ঢুকে পড়ল।



ইডেন কলেজের গেটের মামুদের সঙ্গে যাদের একটু এক্সট্রাখাতির, কেবল সেইসব গেস্টগণ চাতক পাখির মতো এসব দৃশ্য দেখে ওভার টাইম আড্ডা মারার অপেক্ষায় গেটের বাইরে তখনো ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। বাবাও তখন সে দলের সদস্য হয়ে উদাস ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে। পাঁচ মিনিট, দশ মিনিট, পনের মিনিট। বাবার হঠাৎ খেয়াল হল রাস্তার ওপারে গিয়ে তো এখন আরামছে একটা সিগারেট খাওয়া যায়। এবং দ্রুত বাবা রিকশার জটলা পাশ কাটিয়ে রাস্তার এপারে আসে। দোকানিকে বেশি দুধ চিনির এক কাপ চা এবং একটি স্বর্ণকাঠি অর্ডার করে একবার ওপারে গেটের দিকে চোখ ঘোরায় বাবা।



ইডেন কলেজের মুখে রোজ সন্ধ্যারাতে এভাবেই হাট ভাঙ্গে। বাজারের কিছুই এই হাটে বেচাকেনা হয় না। তবু এই হাটের একটা দীর্ঘ সুনাম আছে। আজিমপুরের এই হাটে কথার লেনদেন হয়। মনের দেনদরবার হয়। জীবনের বাকী দিনগুলোর কৌশল বাতলানোর এই হাটের যারা হাটুরে, কেবল তারা ভিন্ন অন্যদের কাছে ইডেন কলেজের সান্ধ্যকালীন এই হাটের অর্থ বড়োই দুর্বোধ্য।



চা এবং সিগারেট খেতে খেতে বাবার মাথাটা হঠাৎ একেবারে খালি হয়ে যায়। দু-দুটো বছর এই গেটে ঝড়-বৃষ্টি, শীত-গ্রীস্ম এমন কোন দিন ছিল না যে বাবা হাজির হয় নাই। আগামীকাল মারও তার মামার বাসায় ওঠার কথা। কাজেই, এই গেটে নিয়মিত হাজিরা দেওয়ার কাজ বাবার আজ এখানেই শেষ। কতো হাসি-ঠাট্টা, সুখ-দুঃখ, বিরহ-মিলন, স্মৃতির রংধনুতে মাখা ইজেন কলেজের গেট। এক একটি বিকেল মানে এক একটি স্বর্গ বা নরক। বাবার মনে হল দুটি বছর নয়, সময়টা যেন ছিল অনন্তকাল। কালের যে সমাপ্তি আছে, বাবা তা টের পেল দ্বিতীয় সিগারেটটা উলটো করে ধরানোর সময়। চোখ বারবার হামলে পড়ল বন্ধ গেটের ছোট্ট মুখে, এই বুঝি কেউ ডাকে- এই আশায়। কিছুতেই আজ বাবার ঘরে ফিরতে মন চায় না। বাবার মাথার মধ্যে তখন কেবলি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের সপ্তম রাগটা হাজারবার বাজতে থাকে- ‘শ্রীমতী রাধা রাণী যায় … … বাড়ি।’



তিন দিন পরের ঘটনা। বাবা ঘুম থেকে উঠে দরজা থেকে পত্রিকা কুড়িয়ে ছাদে এসে রোদে পিঠ ঠেকিয়ে বসেছে। খেলার খবর, আন্তর্জাতিক পাতা পড়া শেষ। এবার হেড লাইনে বাবার চোখ- একশো ছিচল্লিশ জন এমপি নিয়ে বিরোদীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। সেই সংবাদে মনোযোগ দেওয়ার আগেই সিঁড়িতে পরিচিত পায়ের শব্দ শুনে বাবা পত্রিকা পড়ার ভান করতে থাকে। আগন্তুক সোজা গিয়ে ছাদের সিঁড়িতে বাবার পাশেই অনেকটা গা ঘেঁষে বসে। সেদিক বাবার যেনো কোনো খেয়াল নেই। মধ্যাহ্নের সূর্য তখন পৃথিবীর কাছে অসহ্য হতে লাগলো।



গাজীপুরের মজার সব ঘটনা একটার পর একটা শুনিয়ে চলে মা। জানো, সন্ধ্যার পর আমরা যখন কলোনিতে হাঁটতে বের হতাম, সারাক্ষণ শুধু তোমার কথাই মনে পড়ত। কী যে খারাপ লেগেছে তিনটা দিন। বিউটি তো বলেই ফেলল- আব্বু বাসায় নেই জানলে ভাইয়াকে তো আনাই যেতো। লিটন ওরা কখন বাইরে যাবে, বলোনা, প্লিজ? সেই দিন মার অতি উচ্ছ্বাসেই বাবা কোনো সেফটি ব্যবস্থা নেয়নি। আর পরের মাসেই কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির সাইকেল স্ট্যান্ডে বসে মা আমার আসার খবরটি দেয় বাবাকে। মার কথা বাবা প্রথমে একদম বুঝতে পারেনি। পরে যখন বুঝলো তখন আনন্দে চিৎকার করে লাফিয়ে উঠে বলতে লাগল ‘ইউরেকা, ইউরেকা, চল আজই বিয়ে করে ফেলি।’ বাবার আনন্দ দেখে মার চোখে তখন পৌঁষ মেঘের জৌলুষহীন ধারা পুষ্পের মতো অঝরে ঝরতে থাকে। ক্রমাগত সেই পুষ্প ধারা, ঝর্ণা হয়ে নদী, নদী হয়ে সাগর, সাগর হয়ে মহাসাগর ছাপিয়ে পড়ন্ত বিকেলে লাইব্রেরি কেন্টিনের সামনে মরে পড়ে থাকা দাঁড়কাকের মতো আমার মৃত্যুর আগাম খবর ঘোষণা করল। যা শুনে সেদিন সাক্ষীদের একজন সূর্য মামা পর্যন্ত বিষম খেয়ে পশ্চিম দিগন্তের পথ ধরল।



জন্মের আগে মা আমাকে ডাকত ধ্রুব। আর বাবা ডাকত শুদ্ধ। অথচ আমার আগমনের খবরে সেই মা-ই এমনভাবে আঁতকে উঠল যে, পরবর্তী দেড় মাস শুধু আমার কথা নিয়েই মা-বাবা নিজেদের মধ্যে অকারণে বিবাদ করতে থাকল। ডাক্তারি পরীক্ষায় আমার উপস্থিতি পাকাপাকি প্রমাণিত হওয়ায়, পরবর্তী দিনগুলোতে মা আরো রাক্ষুসী হয়ে ওঠল। কখন কীভাবে আমার ঘাড় মটকে দেওয়া যায়, এই চিন্তায় মার রাতে ভালো ঘুম পর্যন্ত হতো না। মার সকল শিরা ধমনিতে উদ্ভট সব আচরণ ভর করতে থাকল। সাগরে হারিয়ে যাওয়া কোনো জাহাজের সারেং যেমন পোতাশ্রয়ের খোঁজে দিগ্বিদিক দুরবীন পরীক্ষা করে, তেমনি মা নানান পরীক্ষা নিরীক্ষা চালায় আমাকে নিয়ে। ঘরে যখনই মা একা হয়, দরজা বন্ধ করে অথবা বাথরুমে সিটকিনি লাগিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা মা তার শরীরে আমাকে খুঁজে চলে গলা টিপে মেরে ফেলার বাসনায়।



লাগাতার হরতালে ঢাকাসহ সারা দেশ তখন তাল-মাতাল। প্রেসকাবের সামনে বসেছে নগর পিতার নেতৃত্বে জনতার মঞ্চ। অফিসমুখী কর্মকতারা লাঞ্ছিত হচ্ছে পিকেটারদের হাতে। কেউ কেউ দিগম্বর হচ্ছে দোয়েল চত্বরে, রমনা, তোপাখানায়। পেঁয়াজ এবং লবণের দাম হঠাৎ করেই এক লাফে তিনগুণ। মিছিলে মিছিলে টিয়ার গ্যাস, বোমা, ককটেল, গুলি। পেট্রল পাম্পে জ্বলছে দাউ দাউ আগুন। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালায়ের শিকক্ষরা এক যোগে ঘোষণা দেয় পদত্যাগের। সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসে যোগ দেয় জনতার মঞ্চে। ঢাকা শহর তখন মিছিল, গুলি, জ্বালাও, পোড়াও, কান্না, চিৎকার আর বিভীষিকার এক উত্তাল নগরী। এসবের মধ্যেই মা প্রস্তুতি নেয় সিলিং ফ্যানে ঝুলে পড়তে। ভাগ্যিস সেদিন মার মামাতো বোনটা কোচিং কাসে যেতে পারেনি। না হলে আমার আগে মা-ই চুকাত তার অস্থির চঞ্চলতা।



অপারেশান থিয়েটারে নার্স যখন তাদের কারবারী ট্রে হাতে ঢোকে, তখনো মা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল জানালার দিকে। ডাক্তারের মেজাজটা ছিল অতিশয় রুক্ষ। ঘনঘন মাকে জিজ্ঞাসা করছিলেন- বদমাশটা এণ কোথায়? থানায় মামলা করোনি কেন? ইত্যাদি প্রশ্নের মধ্যে বেহায়ার মতো একটানে সে মার পাজামা খুলে ফেলেন। পঁচিশ বছর ধরে লালিত আব্রু আর নিজ সন্তানের মায়ায় মার চোখের কোণে তখন মুক্তার দানায় চিকচিক করে ওঠে। কসাইয়ের মতো নির্লিপ্ত ডাক্তার যখন একটানা আমার বুকে ছুরি চালাতে থাকেন, তখন মা বেশ কয়েকবার উ-উ করে ওঠে। ডাক্তারের ধমক খেয়ে শেষ দিকে মা আর কোনো শব্দ করেনি। শুধু প্রাণপণ ঠোঁট কামড়ে জড় পদার্থের মতো পড়ে থাকল। আর ট্রেতে জমা হতে থাকল আমার লাশের টুকরো টুকরো গলিত অংশ।



না। আমার লাশের কোনো শেষকৃত্য হয়নি। ডাক্তার বেরিয়ে যাওয়ার পর, শুধু একবার আমার লাশ দেখার ইচ্ছা জেগেছিল মার। কিন্তু সে ইচ্ছা কোনো শক্তি, সাহস কিংবা ভাষা খুঁজে পায়নি। আমার লাশের টুকরোগুলো নর্দমায় নিক্ষিপ্তহওয়ার পর, মাকড়সার জালের মতো বিস্তৃত ঢাকার পয়ঃনালীতে আবর্জনা হয়ে মিশে যেতে বেশি সময় লাগেনি। সময় বুঝিবা সত্যি সত্যিই তখন কোন সবুজ ডাইনি। পৃথিবীর উপকণ্ঠে থেকে সন্ধ্যার উঠোনে নেচেনেচে নাবিকের ভাঙ্গা হাড় দিয়ে হারিয়ে যাওয়া সেই ভাঙ্গা জাহাজটার ছবি আঁকলো। সময় কি সবুজ ডাইনি? ভোর বেলা যখন বুড়িগঙ্গার বিশাল জলরাশিতে আমার টুকরোগুলো মিশতে থাকে, তখন জাতীয় দৈনিকগুলোতে প্রধান সংবাদ ‘খালেদা জিয়া সরকারের পতন’ পড়ার জন্য নগরীর মানুষগুলো ব্যস্ত হয়ে ওঠে। আমার লাশের খোঁজ নেওয়ার সময় হয় না কারো।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা জুন, ২০১৩ সকাল ১১:৫৬

রহস্যময়ী কন্যা বলেছেন: ভালো লাগলো

২| ০৩ রা জুন, ২০১৩ রাত ১২:৩৬

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: ভালো গল্প।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.