নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

কিভাবে পালাকার নাট্যদল গঠিত হল: কিছু সত্য কথন। পর্ব দুই। রেজা ঘটক

০২ রা জুন, ২০১৩ রাত ৮:৪৪

কাঁঠালবাগানের আমিন নিলয়ের বাড়িওয়ালা থাকেন তাদের লালমাটিয়ার আরেকটি নিজস্ব বাড়িতে। আসল বাড়িওয়ালী যিনি তিনি থাকেন বুয়েটের শিক্ষক কোয়ার্টারে। কারণ, ভদ্রমহিলা বুয়েটের টিচার। মিজান নামের একজন কেয়ারটেকার থাকেন আমিন নিলয়ে। আমরা ডাকি মিজান ভাই। মিজান ভাই ডাকারও রহস্য আছে। প্রতি মাসে ভাড়া কিছু বাকি থাকে। সেই বাকি ভাড়া কেয়ারটেকার মিজান ভাই যখন চাইতে আসেন, তখন ভাড়া বিষয়ক দপ্তরের নতুন মনোনীত মন্ত্রী মহোদয় জনাব রেজাউল কবির নাছিম, মিজান ভাইকে নিয়ে কাঁঠালবাগানের লাকি হোটেলে চা খেতে চলে যায়। নাছিমের ভাবটা থাকে এমৃন, চলেন মিজান ভাই চা খেতে খেতে আলাপ করি। তাদের চা খাওয়া যখন শেষ হয়, নাছিম হাসিমুখে বাসায় ঢোকে। আমরা জানতে পারি, বন্ধু নাছিম এক সপ্তাহ ডেড বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। আমরা করতালি দিয়ে উঠি। পবন হারমোনিয়াম নিয়ে অজয়কে ডাক দেয়। ভাড়া বিষয়ক দুঃশ্চিন্তা তাড়াতে তখন আনন্দের হল্লা বয়ে যায় আমিন নিলয়ে।

আমাদের বন্ধু নয়ন মনি চৌধুরী ধানমন্ডির চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে রোজ নতুন অফিস করা শুরু করলো আমিন নিলয়ে। সকালে বাসাবো বৌদ্ধ মন্দিরের বাসা থেকে বের হয়ে পায়ে হেঁটে সোজা কমলাপুর। সেখান থেকে এক পুরিয়া খাঁটি তামুক নিয়ে নয়ন সোজা হেঁটে হেঁটে চলে আসতো আমিন নিলয়ে। বাসায় আমি বেকার সময় কাটাই। আর ভালো লাগলে কিছু লেখালেখি করি। কাজল ব্রাদার্সের নবম দশম শ্রেণীর অর্থনীতি বইটি আমার লেখা। কাজল ব্রাদার্সের সঙ্গে আমার চুক্তি হল প্রতি শনিবার কাজল ব্রাদার্স থেকে একজন এসে এই সপ্তাহের লেখা নিয়ে যাবে। আর কিছু টাকা দিয়ে যাবে। সেই টাকায় আমি পরের এক সপ্তাহ ব্যাচেলর পূজা করব। অজয়, হ্যারি আর আমি বাসায় থাকি। নয়ন আসলে আমাদের সময় কাটে ভালো। তামুক খাই। গান-বাজনা করি। নয়নের গলা ভারী মিষ্টি। কিন্তু দোস্তো আমার হারমোনিয়াম বাজাতে পারে না। অজয় হারমোনিয়াম বাজালে আমি তবলায় টুং টাং শব্দ করি। অথবা বসনিয়ান হ্যারি তবলা বাজায়। আমাদের বসনিয়ান বন্ধু হ্যারি খুব ভালো খোল বাজাতে পারতো। তবলায় কিছু ঝামেলা হতো। তবু পবন নিসু এ্যাডভারটাইজিংয়ের চাকরি শেষ করে আসতে আসতে বিকাল। কোনো কোনো দিন পবন দুপুরের আগেই মার্কেটিংয়ের কথা বলে বাসায় চলে আসতো। চলতো জাম্পিস আড্ডা। রিয়াজ অটোবিতে চাকরি করতো। নাছিম একটা শিপিং এজেন্টে। মুকুল এশিয়াটিকে। মনি'দা জেনারেল ফার্মাসিটিকালে। তো সারাদিন বাসায় থাকতাম আমি অজয় আর হ্যারি। সকাল দশটার মধ্যেই নয়ন চলে আসতো। আমাদের আড্ডা চলতো সারাদিন। সন্ধ্যায় সেই আড্ডায় একে একে যোগ দিতো তখনকার ভোরের কাগজ থেকে শামীম ভাই আর জাফর ভাই। কখনো ওদের সঙ্গে আসতো কবীর ভাই। বিখ্যাত ফটোগ্রাফার কামালউদ্দিন কবীর। বাংলাদেশ বেতার থেকে আসতো খোকন ভাই। বিখ্যাত গল্পকার খোকন কায়সার। প্রথম আলো থেকে আসতো বিখ্যাত তরুণ রিপোর্টার রাজীব নূর। আমাদের সবার প্রিয় রাজীব'দা। কখনো রাজীব'দার সঙ্গে আসতো আরেক বিখ্যাত রিপোর্টার তরুণ সরকার। আমাদের প্রিয় তরুণ দা। মাঝে মধ্যে মুকুলের সঙ্গে আসতো আমাদের আরেক বন্ধু আলমগীর বিপ্লব। চট্টগ্রাম থেকে প্রায়ই এসে আড্ডায় যোগ দিতো লিটন ভাই। চট্টগ্রাম বেতারের বিখ্যাত বাঁশিয়াল ...এবং আরো অনেকে। রাত এগারোটার পর থেকে আড্ডায় বাইরে থেকে যারা আসতেন তাদের প্রস্থান ঘটলেও আমাদের আড্ডা চলতো রাত দুইটা/তিনটা/চারটা/পাঁচটা/ছয়টা পর্যন্ত। কখনো আড্ডা শেষে যারা অফিসিয়াল তারা গোসল দিয়ে অফিসে চলে যেতো। গ্যারি, অজয় আর আমি ঘুমাতে যেতাম। নয়ন এসে নিজের মতো মশলাবাটি রেডি করে আমাদের উঠাতো। কখনো কখনো নয়ন চেক করতো যে আমাদের নাস্তার কোনো আয়োজন নাই। নিজ দায়িত্বে লাকি হোটেল থেকে নাস্তা এনে তামুক বানিয়ে সব ঠিকঠাক রেডি করে ঘুমন্ত আমাদের ঠোঁঠে গুজে ধরতো থামুক। আমরা ঘুমের ভান করে সেই তামুকে টান মেরে দুনিয়ায় সুপ্রভাত জানাতাম। কখনো কখনো আড্ডায় আসতো বিখ্যাত কলকেম্যান বন্ধু জাহেদ ও বন্ধু শিবলী।

এরকম আড্ডায় আড্ডায় একদিন মুকুল প্রস্তাব করলো, চল আমরা একটা নাটকের দল করি। প্রথম নাটকের দল করার আলোচনা হল আমিন নিলয়ে। কিন্তু আমিন নিলয়ের আড্ডায় নাটকের কথা বার্তা ঠিক অফিসিয়াল হবে না বলে আমরা আনুষ্ঠানিক মিটিং করার জন্য ধানমন্ডির আট নাম্বার ব্রিজের পাশে রবীন্দ্র সরোবরের উন্মুক্ত প্রান্তর বেছে নিলাম। শুক্রবার বিকালে আমরা নাটকের দল গঠন বিষয়ক প্রথম আনুষ্ঠানিক মিটিং করলাম ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে। প্রথম মিটিংয়ে আমরা দুইটি মিনিট ফাইনাল করলাম। নাটকের দলের নাম হবে 'পালাকার'। পালা বা নাটক করেন যিনি তিনিই পালাকার। মুকুল নামটি প্রস্তাব করেছিল। আমরা সবাই সমর্থণ করেছিলাম। নাটকের দলের নাম ফাইনাল হল। তারপর আমরা ঠিক করলাম, আমাদের 'পালাকার'-এ আনুষ্ঠানিক পদবি থাকবে মাত্র দু'টি। দলের প্রধানকে আমরা ডাকব 'অধিকারী'। আর দলের হিসাব নিকাশ করার জন্য একজন সেক্রটারি-কাম হিসাবরক্ষক থাকবে। যাকে আমরা ডাবক 'ম্যানেজার বাবু'। ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে দ্বিতীয় বৈঠকে আমরা এই দুই পদে আনুষ্ঠানিকভাবে দুইজনকে সর্বসম্মতিক্রমে মনোনয়ন দিলাম। বৈঠকে 'পালাকার'-এর অধিকারী নির্বাচিত হল আমিনুর রহমান মুকুল। আর ম্যানেজার বাবু নির্বাচিত হল নয়ন মনি চৌধুরী। কারণ নয়নের একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড এমবিএ। শুরু হল পালাকারের কার্যক্রম।

আমরা তখন একটি রেজিস্টার খাতা কিনলাম। বৈঠকে উপস্থিত সবাই সেই খাতায় নিজেদের নামের পাশে সাক্ষর করে জানান দিল এরা সবাই পালাকার নাট্যদলের সদস্য। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হল প্রাথমিক সদস্যপদের জন্য আপাতত সবাই ১৫০ টাকা করে ম্যানেজার বাবু'র কাছে জমা করবেন। টাকা আদায়ের দায়িত্ব দেওয়া হল আমাকে আর হ্যারিকে। আমরা টাকা আদায় করে নয়নের কাছে জমা করব।

পরদিন সকালে হ্যারি আর আমি টাকা কালেকশানের জন্য আমিন নিলয় থেকে পদব্রজে শাহবাগ রওনা হলাম। উদ্দেশ্য বাংলাদেশ বেতারের খোকন ভাইয়ের কাছ থেকে টাকা তোলা। জীবনে সেই প্রথম বাংলাদেশ বেতারে প্রবেশ করব। কেমন যেনো গা ছিম ছিম করছে। কারণ, এই সেই রেডিও অফিস যেখান থেকে মেজর ডালিম বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছিলেন- আমি মেজর ডালিম বলছি...বঙ্গবন্ধুর সরকারকে উৎখাত করা হইয়াছে..ইত্যাদি ইত্যাদি। আমরা গেইটে গিয়ে অমুকের কাছে যাবার জন্য নাম ধাম ইত্যাদি আনুষ্ঠানিকতা সারলাম। আমাদের বসিয়ে রাখা হল। বলা হল স্যার এখন জরুরী মিটিংয়ে আছেন। হ্যারি বললো, ভাই, বলেন যে একজন বিদেশীও আছেন। ওনাদের মামলাটাও বেশ জরুরী। হ্যারীর সুন্দর বাংলা শুনে ওই ভদ্রলোক একটু পুলকিত হয়ে আমাদের সঙ্গে করে নিয়ে চললেন। পাশ টাসের কারবার নাই ক্যা। স্যারের রুমে নিয়ে যাচ্ছেন আমাদের, ঠিক তখনই খোকন ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের করিডোরে দেখা। খোকন ভাই'র রুমে ঢুকেই একটা সিগারেট ধরিয়ে গা ছম ছম ভাব তাড়াতে ঘোষণা দিলাম, মেজর ডালিম যদি এইখানে আইসা জাতির উদ্দেশ্য ভাষণ দিতে পারে, আমরা ক্যানো সিগারেট খাইতে পারুম না? এ্যাস্ট্রের ব্যবস্থা না হবার আগেই সিগারেট প্রথমটা শেষ। খোকন ভাই জানতে চাইলো, ব্যাপার কি? কি মনে কইরা? কইলাম, পালাকারের মেম্বারশিপের ১৫০ টাকা নগদ জমা করেন। খোকন ভাই কইলো, সন্ধ্যায় দিমুনে। আমনেরা আর কোথাও কাম থাকলে কইরা আহেন। হামার তো অফিস করতে অইবো, স্যারেরা। আর ভুলে আবার গাঁজা ধরাইয়া আমার ইজ্জত মাইরেন না যেনো। আমরা রেডিও অফিস থেকে বের হয়ে লোকাল বাসে উঠলাম। উদ্দেশ্য বনানী অনিকেত পাল বাবু'দার অফিস।।

...............চলবে.................

মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.