নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

কিভাবে পালাকার নাট্যদল গঠিত হল: কিছু সত্য কথন। পর্ব চার। রেজা ঘটক

০৩ রা জুন, ২০১৩ সকাল ৯:২৭

ধানমন্ডির শুক্রাবাদ বাস স্টপিজের পাশে ডেফোডিল ইউনিভার্সিটি। ওই ইউনিভার্সিটির পাশেই একটি ভাবনের দোতলায় সাকরিন-তুহিন ভাইদের সাইবার ক্যাফে। ওটা আমাদের আরেকটা আড্ডার জায়গা। ওই একই বিল্ডিংয়ের চার তলায় অপু'দার একটি সাইবার ক্যাফে আছে। অপু'দা-ফাহমিদা আপারা প্রথম সাইবার ক্যাফে খুলেছিল। ওটা এসি। সাকরিনদেরটা নন-এসি। তাই অপু'দার সাইবারে আওয়ার প্রতি রেন্ট বেশি জনসমাগম কম। আর সাকরিনের সাইবার নন-এসি, রেন্ট কম, ডেফোডিলের অনেক স্টুডেন্ট ওখানে ভিড় করে। শুক্রাবাদ পৌঁছে হ্যারি বললো, ওর একটু সাইবার ক্যাফেতে বসতে হবে। হ্যারি অপু'দার এসি সাইবার ক্যাফেতে উপরে চলে গেল। আমি দোতলায় সাকরিনের সাইবারে ঢু মারতেই নাছিম, রিয়াজ, পুলক আর নাহিদকে পেলাম। কম্পিউটার খালি নেই। আমি নাহিদের পাশে বসলাম।

রাত দশটায় আমরা একবার নিচে আসলাম চা খেতে। নাছিম জিগাইল, কয় জন দেছে টাকা? কইলাম, একজন। নাছিমের প্রশ্ন- কে? জবাবে কইলাম, বাবু'দা। নাছিম জিগাইল, হ্যারি কোই? তোমরা একসাথে ছিলা না? সারা দিন হ্যারিকে দেখি না? কইলাম, উপরে অপু'র সাইবারে। আমি নাছিম রিয়াজ পুলক আর নাহিদ চা খেয়ে আর উপরে যাব। রিয়াজ বললো, সে আর উঠবে না। বাস স্টপিসে দাঁড়িয়ে পেপার পড়বে। আমি রিয়াজের কম্পিউটারে গিয়ে ওদের সঙ্গে বসলাম। এগারোটার আগে আগে রিয়াজ মিস কল দিল। মানে তোমরা নামো। সাকরিনও তাড়া দিচ্ছিল, কোথায় কোন বিয়ের দাওয়াতে যাবে। সাধারণত সাকরিন তাড়া লাগায় না। আমরা রাত বারোটা পর্যন্ত থাকলে সাকরিনেরই লাভ। আমরা নিচে নামার আগে নাছিম বললো, হ্যারি কি নামছে? নিচে নেমে দেখি, রিয়াজ একা একা পেপার পড়ছে। হ্যারি নামেনি। হ্যারিকে ডাকতে আবার উপরে গেলাম। গিয়ে দেখি, হ্যারিকে অপু আটকে রাখছে। হ্যারি'র কাছে টাকা নাই। ১১০ টাকা বিল হয়েছে। হ্যারি আমাদের কথা বলছে। অপু বলেছে, ওরা না আসা পর্যন্ত বসে থাকো। হ্যারি চুপচাপ অপু'র সাইবারে বসে ম্যাগাজিন পড়ছিল। আমি উপরে যাবার পর, অপু বললো, আপনাদের বন্ধু আজও টাকা আনে নাই। ১১০ টাকা হবার পর কম্পিউটার থেকে উঠিয়ে দিছি। আর বলেছি, টাকা না দিয়ে যাবা না? অপু'র সঙ্গে আমার তর্ক হল। হ্যারিকে কেন সে আটকে রাখলো? আমি নাছিমকে ফোন করে উপরে আসতে বললাম। নাছিম উপরে এসে অপু'র সঙ্গে আরেক দফা ঝগড়া করলো। নাছিমের কাছেও তখন টাকা নেই। অপু বললো, বন্ধু'র জন্যে এতো দরদ হলে টাকা দিয়ে দেন। নাছিম বললো, তোমার কাছে ওই ১৫০ টাকা আছে না? ওখান থেকে দিয়ে দাও। আমি তোমাকে পরে দিয়ে দিচ্ছি।

এখানে একটি কথা বলে নি। হ্যারি রোজ আমাদের কারো স্পন্সরে সাইবারে বসে। হ্যারি বাসা থেকে বেরোনোর সময় আওয়াজ তোলে- আজ আমার স্পন্সর কে? আমরা যে কেউ সানন্দে হ্যারির স্পন্সর হই। হ্যারি রোজ আমাদের কারো স্পন্সরে সাইবারে ওর জাপানি বান্ধবী মাদোকার সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চ্যাট করে। অপু'র কাছে হ্যারির আরো ৪৫০ টাকা বকেয়া ছিল। নাছিম ওটা পরদিন অপুকে দিয়ে দেবার প্রতিশুতি করার পর আমরা হ্যারিকে নিয়ে রওনা হলাম। আমরা হেঁটে হেঁটে কাঁঠালবাগান যাচ্ছি। নাছিম হ্যারিকে বললো, এরপর থেকে তুমি টাকা না নিয়ে সাইবারে বসবে না। কেউ সাথে থাকলে বসবা নইলে আমরা কেউ আসা পর্যন্ত ওয়েট করবা। হ্যারি জবাবে বললো, আমি জানতাম তোমরা আছো। আর লোকটা বেশি ভালো না, বুঝলা? আমাকে অনেক কথা কইছে।

কাঁঠালবাগান আমিন নিলয়ে পৌঁছে আবার যথারীতি পবন-অজয় জুটির গান-বাজনা শুরু হল। সাধারণত রাত সাড়ে দশটা-এগারোটার দিকে নয়ন বাসায় চলে যায়। সেদিন মুকুলের জন্য অপেক্ষা করে মুকুলের আসতে দেরি দেখে নয়ন লাকি হোটেল থেকে আমাদের চা খাইয়ে হ্যারির ঘটনা সব শুনে চলে গেল। একটু পরেই মুকুল আসল। জানতে চাইলো, কী অবস্থা? কয় জনে টাকা দিছে? কইলাম, একজন। মুকুল কইলো, সকালে আবার সবাইরে নক করো। আর নগদ লও। বাইক্যার সুযোগ দিও না। আমরা আবার আড্ডায় ব্যস্ত হয়ে গেলাম। আড্ডার এক পর্যায়ে মুকুল নাছিমের থেকে হ্যারি আর অপু'র কাণ্ড আপডেট হইলো। মুকুল তখনো জানে না, পালাকার-এর প্রথম কালেকশানের টাকা খরচ করেই হ্যারিকে ছাড়ানো হয়েছে। মুকুল হ্যারিকে ডেকে কইলো, ধরো, এই নাও ৫০০ টাকা। কাল সারাদিন সাইবার করবা, আর বাকি বকেয়া থাকলে তা দিয়া দেবা। হ্যারি রাত পোহানোর আগেই স্পন্সর পাওয়ায় মহা খুশি। আমরা সবাই আবার বুড়ির আস্তানার উদ্দেশ্যে তামুকের সন্ধানে বের হলাম। পরদিন শুক্রবার। সো সারারাত আড্ডা হবে।

সকালে মুকুল আমাকে জিগাইলো, বাবু'দা যে ১৫০ টাকা দিছে, ওইটা কি করছো? কইলাম, হ্যারির পারপাস ১১০ টাকা অপুরে দিছি। নাছিম ওটা দিয়ে দেবে। নাছিম ধার নিছে। সঙ্গে সঙ্গে মুকুল তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো। মুকুলের পুটকি ফাঁটানো চিৎকারে নাছিম এগিয়ে আসলো নাকি নাছিমকে মুকুলই ডাকলো ঠিক মনে নেই। তবে ঘণ্টাখানেক এই নিয়ে মুকুল-নাছিম-আমার মধ্যে বাগবিতণ্ডা হল। সিদ্ধান্ত হল, নাছিম সেদিনই টাকাটা ফেরত দেবে। আর ভবিষ্যতে এরকম একটাকাও খরচ করা যাবে না।

পরের বৈঠকে আমাদের ১৫ সদস্যের ফাউন্ডার মেম্বার নিয়ে পালাকার আনুষ্ঠানিক কর্মকাণ্ড শুরু করলো। পালাকার-এর পনেরো জন ফাউন্ডার মেম্বাররা হল-

১. আমিনুর রহমান মুকুল, ২. অনিকেত পাল বাবু, ৩. রেজাউল কবীর নাছিম, ৪. নয়ন মনি চৌধুরী, ৫. সুদত্ত চক্রবর্তী পবন, ৬. খোকন কায়সার, ৭. আলমগীর বিপ্লব, ৮. রিয়াজুল হক শিকদার, ৯. রেজা ঘটক, ১০. অজয় দাস, ১১. জাফর আহমেদ রাশেদ, ১২. রাজীব নূর, ১৩. শাহরিয়ার খান রিন্টু, ১৪. জায়েদউদ্দিন ও ১৫. আলী আহমদ মুকুল (ছোটো মুকুল)।

পালাকার-এর কার্যক্রম তখন তুঙ্গে। বৈঠকে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম ১ লা বৈশাখ ১৪০৯ সালে নতুন বছরের দিন শুভ নববর্ষে পালাকারও আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করবে। শুরু হল সেই আনুষ্ঠানিক যাত্রার তোড়জোড়।

পালাকার-এর দলীয় শ্লোগান ঠিক হল জীবনানন্দ দাশের কবিতার লাইন 'শাশ্বত রাত্রির বুকে সকলি অনন্ত সূর্যোদয়' লাইনটি। পালাকার-এর দলীয় সঙ্গীত লিখলেন কবি জাফর আহমেদ রাশেদ। আমাদের প্রিয় বন্ধু জাফর ভাই। গানটির যতোদূর মনে পড়ছে

'আজ, কৃষ্ণচূড়ার পাতায় পায়ে আগুন লেগেছে,

কাল, ঝড়া পাতার রোদন ছিল

প্রসূতি মা'র বোধন হল,

আজ, কণ্ঠ থেকে আদিমতার কান্না জেগেছে

...হো হো হো ...হো হো হো...হোহো ....



কাল, দিন থাকতে সূর্য গেছে নেমে,

সাথে অন্ধ পথে চন্দ্র গেছে থেমে,

আজ মেঘনা পারে ডাকবে পাখি বংশি বেজেছে

...হো হো হো ...হো হো হো...হোহো ....



আজ, দিন ফুরাবে অনেক কাজের শেষে,

সব হাওয়ায় হাওয়ায় সহজে অক্লেশে,

ঠিক খুলে দেবে অভিমন্যুর পথ,

তাই দিক-বিদিকে ছুটছে রঙিন রথ,

আজ, হাতে সবার পাখির পালক, ফড়িং সেজেছে...

...হো হো হো ...হো হো হো...হোহো ....



পালাকার-এর সবাইকে বলবো, গানটির কোথাও কোনো ভুল থাকলে আমাকে একটু তথ্য দিয়ে জানাবেন প্লিজ। একটা জিনিস খেয়াল করলাম, দলের অনেকেই এখন আর গানটির লিরিক ঠিক মতো বলতে পারে না। উল্টাপাল্টা বলে। যা খুবই দুঃখজনক। তার মানে দলীয় সঙ্গীতটা কি এখন আর তেমন একটা গাওয়া হয় না। পালাকারের উচিত রোজ রিহার্সাল শুরুর আগে গানটি একবার অন্তঃত সবাই মিলে গাওয়া। আর গানটির সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট তাদের পরিচয় জানানো। এতে পালাকারে এখন যারা নতুন তারা সত্যটা জানতে পারবে।

গানটি সুর করার দায়িত্ব পরলো সুদত্ত চক্রবর্তী পবনের উপর। বন্ধু পবন গানটির একটি চমৎকার সুর করলো। ওই সময় অজয় একটি চাকরি পেয়েছিল মনি'দার জেনারেল ফার্মাসিটিক্যালে। অজয় তখন কক্সবাজারের কর্মস্থলে। পবন পালাকার-এর দলীয় সঙ্গীতের সুর করছে কিন্তু তাল দেবার কেউ নেই। পবন অনেকটা জোর করে আমাকে বললো- তুমি একটু টুং টাং করার চেষ্টা করো। আমার সমস্যা হল, আমি তবলা বাজাতে পারি না। তবলার কোনো তালই আমি জানি না। কিন্তু কেউ বাজালে তখন একটা লয় মেলানোর চেষ্টা ভেতরে ভেতরে করি। এমনিতে অজয় কক্সবাজার চলে যাবার পর পবনের সঙ্গে আমি টুক টাক বাজাই। সেটা কেবল বন্ধুদের আড্ডায়। বাইরে কোথাও না। পবন বললো, তুমি তবলা ধরো। হবে। পবন নিজের মতো করে সুর করার চেষ্টা করছে। আমি তবলা নিয়ে বসে আছি। বাজাতে পারছি না। পবন জানতে চাইছে কখন কোন সুরটা আমার ভালো লাগে? আমি আমার মতামত দিলাম। পবন বললো, এবার তুমি বাজানোর চেষ্টা করো। আমি যখন ঢুগি-তবলা দুটো নেই, তখন আর কিছু বাজাতে পারি না। কোনো এক হাত হঠাৎ অকেজো হয়ে যায়। সুর কেটে যায়। লয় কেটে যায়। পবনকে বললাম, হচ্ছে না। এক কাজ করি, আমি শুধু বায়াতে একটু কমফোর্ট ফিল করি। বললাম, শুধু বায়াতে একটু তোমাকে তাল দিয়ে হেল্প করি। পবন বললো, ঠিক আছে, বাজাও।

তারপর পবন পালাকার-এর দলীয় সঙ্গীতের এক ভূবন জয়ী সুর করলো। সেই সুরে আত্মহারা হয়ে আমি আমার মতো করে বাজালাম। মুকুল বাসায় ফিরলে মুকুলকে শোনালো হল। নাছিম, রিয়াজ, মুকুল সবার সেই সুর ভালো লাগলো। পালাকার-এর উদ্ভোধনী অনুষ্ঠান হবে ১লা বৈশাখ। এজন্য আমরা অফিস খুঁজতে শুরু করলাম। সিদ্ধেশ্বরীকে একটা ফাঁকা মাঠের পুরানা বিল্ডিংয়ের খোঁজ আনলো জায়েদ। জায়েদের চেষ্টায় আমরা সেই পুরান বিল্ডিং-ই ভাড়া নিলাম পালাকার-এর অফিস ও রিহার্সাল রুমের জন্য।

ওদিকে পালাকার-এর আনুষ্ঠানিক উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে অনিকেত পাল বাবু'দা একটি কোরিওগ্রাফি করবেন দলীয় সঙ্গীত দিয়ে। সাভারে বাবু'দা তিনটি মেয়েকে নিয়ে ট্রেনিং করছেন। আমাদের গানটি রেকর্ড করে পাঠাতে হবে। পবন দলীয় সঙ্গীতটি গাইলো। আমি শুধু বায়া বাজালাম। নাছিম পবনের পুরানা ক্যাসেট প্লেয়ারে সেটি রেকর্ড করলো। গানে যখন দোহার প্রয়োজন তখন পবনের সঙ্গে নাছিম, রিয়াজ, মুকুল আর আমিও কন্ঠ মেলালাম। দলীয় সঙ্গীত রেকর্ড হল ক্যাসেটে। আমরা যতোবার শুনলাম, ততোই ভালা লাগা শুরু হল। সবাই তখন হাঁটতে বসতে খাইতে বাথরুমে সবখানে ওই অমর সঙ্গীত গাইছি- 'আজ কৃষ্ণচূড়ার পাতায় পায়ে আগুন লেগেছে....হো হো হো...হো হো হো...হো হো হো...।



.................চলবে.......................

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা জুন, ২০১৩ সকাল ১০:২১

লাল চাঁন বলেছেন: থিয়েটার আরামবাগ এ থাকাকালিন আমিনুর রহমান মুকুল ভাই এর অধিনে নতুন নাটকের রির্হাসেল করেছিলাম।

পর্ব গুলো ভালো লাগছে

০৫ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৪:১৪

রেজা ঘটক বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.