নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

কিভাবে পালাকার নাট্যদল গঠিত হল: কিছু সত্য কথন। পর্ব পাঁচ। রেজা ঘটক

০৩ রা জুন, ২০১৩ দুপুর ১:২৩

১ লা বৈশাখ ১৪০৯ বঙ্গাব্দ, ১৪ এপ্রিল ২০০২ সাল। সিদ্ধেশ্বরীর পালাকার-এর অস্থায়ী কার্যালয়ে প্রথম আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হল। সকাল থেকে আমরা রিহার্সল করছি। আমাকেও পারফর্ম করতে হবে। বেশ পুলকিত। বেশ ফুরফুরে মেজাজ। চারদিকে আনন্দের হল্লা। এই পর্বে পালাকার-এ সবচেয়ে সক্রিয় কর্মী ছিল মামুন তালুকদার, সায়েম বিপ্লব আর নকুল কুমার দেবনাথ। ওদের রাতদিন পরিশ্রমে আমরা শেষ পর্যন্ত উদ্ভোধনী অনুষ্ঠান করতে সক্ষম হলাম।

বিকাল ৪টায় মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব সারা জাকের ও বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব লিয়াকত আলী লাকি ভাই পালাকার-এর আনুষ্ঠানিক শুভ সূচনা করলেন। আমরা ফ্লোরে মাদুর বিছিয়ে সবার ব্যবস্থা করেছিলাম। মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে অতিথিরা নিজ নিজ আসনে গিয়ে বসতেই আমার হাতের বায়া বেজে উঠলো। সুদত্ত চক্রবর্তী পবন হারমোনিয়ামে সুর তুললো। আর দলের সবাই পালাকার-এর উদ্ভোধনী সঙ্গীত 'আজ কৃষ্ণচূড়ার পাতায় পায়ে আগুন লেগেছে...' গেয়ে উঠলো। অনিতেক পাল বাবু'দার করা কোরিওগ্রাফিতে তিনটি মেয়ে (বড়-মাঝারি-ছোট) তিন ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আমাদের গাওয়া গানের সঙ্গে নেচে উঠলো। চারদিকে হৈ হৈ পড়ে গেল।

পরের সপ্তাহে সিদ্ধেশ্বরীতে আমরা একটি নাটকের কর্মশালার কাজ শুরু করি। সেখানে ২০ জন নাট্যকর্মী প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন। বিভিন্ন অতিথি নাট্য ব্যক্তিত্বরা সেখানে নাট্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেন। কর্মশালা শেষে সেখান থেকে আমরা বাছাই করে কয়েকজন নাট্যকর্মীকে পালাকার-এর প্রাথমিক সদস্যপদ প্রদান করি। পালাকার-এর সঙ্গে এরপর বিভিন্ন পর্যায়ে নতুন করে যুক্ত হল- কাজী ফয়সাল, সায়েম বিপ্লব, ফারুক আহমেদ, মামুন তালুকদার, শামীম সাগরের ছোট ভাই রাজীব, শামীম সাগর, কলি আপাসহ অনেকে। শুরু হল নতুন নাটকের কাজ। নাট্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ আর নতুন নাটকের রিহার্সাল পাশাপাশি চলতে লাগলো।

ওই সময় আমি আইসিডিডিআরবি'র এক রিসার্সের কাজে মিরেরশরাই গেলাম ছয় মাসের জন্য। ঢাকায় ফিরে পালাকাল-এর প্রথম নাটক দেখলাম পান্থকুঞ্জের ওপেন মঞ্চে। আমিনুর রহমান মুকুলের লেখা 'তাইরালীর বুকে মিজু মুন্সী'র পাও' নাটকটি। নাটকের মঞ্চায়ন শেষে মুকুল জানালো, আগামী সপ্তাহে গ্রুপে ছোটদের নাটক 'প্রজেক্ট হান্ড্রেড প্লাস'এর শো। সবাইরে কইও। 'প্রজেক্ট হান্ড্রেড প্লাস' দেখলাম। সায়েম বিপ্লবের অভিনয় আমাকে মন্ত্রমুগ্ধ করলো। নাটক শেষে মুকুলকে বললাম, এই ছেলেটিকে স্পেশাল নজরে রাখো। খুব ভালো পারফর্মার বিপ্লব।

পালাকার-এর গ্রুপে নতুন নাটকের রিহার্সাল চলছে। নাটকের কর্মশালাও পাশাপাশি চলছে। সেই কর্মশালা থেকে নাট্যকর্মী নেওয়াও চলছে। এভাবে ধীরে ধীরে পালাকার-এ যুক্ত হল- মিজান, ইকতারুল ইসলাম, ফরহাদ লিমন, রবীন, স্বরূপ আনন্দ, শুভ, সেলিম হায়দার, শাহজাহান সম্রাট, শিশির, বড় শর্মী, ছোট শর্মী, অন্তু আজাদ পায়েল, ছোট রাজীব, স্বপ্ন জুয়েল, ছোটো ফারুক, ইভা এবং আরো অনেকে। পালাকার নতুন অফিস নিল ৪৬ দিলু রোড। গোটা চার তলা বাড়ির নিচ তলা তখন আমাদের। আমরা খুব সুন্দর করে পালাকার-এর অফিস সাজালাম।

এরপর একে একে পালাকার তৈরি করলো স্টুডিও থিয়েটার, ক্লাস এ্যাক্ট, প্রডাক্ট এ্যাক্ট, পালাকার কিডস স্কুল ইত্যাদি। এরপর আসলো গোলাম সফিকের মেগা ক্যানভাস হাজং সম্প্রদায়দের নিয়ে লেখা নাটক 'মানগুলা' নাটকের কাজ শুরু হল। আমি যখনই ঢাকায় থাকি অবসর সময় কাটে পালাকার-এর গ্রুপে। সে এক অস্থির সময়। দুরন্ত ডাইনি সময়। চঞ্চল তারুণ্যের সময়। 'মানগুলা' নাটকে অনেকগুলো গান। একটি গান সম্ভবত মুকুলের লেখা। কয়েকটি গান হাজং সম্প্রদায় থেকে সংগ্রহ করা। নাটকটির উপর ব্যাপক তথ্য ও নির্ভুল প্রযোজনার জন্যে সফিক ভাই'র নের্তৃত্বে গ্রুপের একটি টিম গেল নেত্রকোনার হাজং সম্প্রদায় এলাকায় রিসার্স করতে। সেখান থেকে রিসার্স টিম ঢাকায় ফিরলে মূল নাটকের রিহার্সাল শুরু হল।

আমিনুর রহমান মুকুল নাটকটির নির্দেশনা দিল। সুদত্ত চব্রকর্তী পবন আর অজয় দাস নাটকের গানগুলোতে সুরারোপ করলো। দলের ছেলেমেয়েরা গানগুলো খুব কষ্ট করে কণ্ঠে তুললো। প্রথম শো শিল্পকলা একাডেমী'র এক্সপারিমেন্টাল হলে। আমার দায়িত্ব পরলো মিডিয়া কো-অরডিনেট করা আর টিকেট কাউন্টারে বসা। বাড়তি দায়িত্ব ছিল ব্রেক আওয়ারে পারফর্মারদের নাস্তা খাওয়ানো। পবন আর রিন্টু ভাই নাস্তা কেনায় আমাকে সহযোগিতা করলো। রিন্টু ভাই কিছু দামী বিস্কুট কিনে ফেলায় আমার সঙ্গে খানিক তর্ক হল। বললাম, গ্রুপের বাজেটে দামী বিস্কুট কেনার সুযোগ নেই। পরে রিন্টু ভাই নিজ পকেট থেকে সেই বিস্কুটের দাম দিয়েছিলেন। রিন্টু ভাইকে আমি আগের ঘটা হ্যারির ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলাম।

'মানগুলা' দর্শকদের মাঝে বিপুল সারা জাগালো। ওই সময় নাট্যকার মামনুর রশীদের 'রাঢ়াঙ'-এর সাথে পাল্লা দিয়ে আমরা 'মানগুলা' প্রযোজনাটি করতে লাগলাম। দর্শকদের বিপুল ভালোবাসায় 'মানগুলা' সবার হৃদয়ে জায়গা করে নিল। গোলাম সফিক ভাইকে আমরা তখন পালাকার-এর উপদেষ্টা বানালাম। ও বুচি, ও লিপি, আয়ো তোরা, আয় ইছা মারতে যাই...

........................চলবে...........................

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.