নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

কিভাবে পালাকার নাট্যদল গঠিত হল: কিছু সত্য কথন। পর্ব নয়। রেজা ঘটক

০৪ ঠা জুন, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৫

পালাকারের কোনো সুখবর শুনলে মনটা যেমন ভালো হয়ে যায়, তেমনি পালাকারের কোনো দুঃসংবাদে মনটা খারাপ হয়ে যায়। পালাকারে রোজ না গেলেও মনটা ঠিকই পালাকারের তারুণ্যদিপ্ত হৈ হল্লার মধ্যে গিয়ে বিনা পারমিশানে ঠায় গিয়ে মেশে। আমি তখন কাজ করি প্রফেসর নজরুল ইসালাম (প্রাক্তন চেয়ারম্যান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন, বর্তমান চেয়ারম্যান, এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ) স্যারের নগর গবেষণা কেন্দ্রে (সিইউএস)। ধানমন্ডি ২৭ নম্বরের শংকরের সাইডের একেবারে শেষ বাড়িটা হল নগর গবেষণা কেন্দ্র। সাত মসজিদ রোডের দিকে আমাদের অফিসের একটি ওয়াল। আর ২৭ নাম্বারের দিকে একটি ওয়াল। সাত মসজিদ রোডের ঠিক দুইটা বাড়ি পরেই ছায়ানট। ছায়ানটের রাস্তায় ঠিক তৃতীয় বাড়িটা মুকুলের অফিস। প্রায় রোজ মুকুল আর আমি লাঞ্চ করি একসাথে। সপ্তাহে চারদিন মুকুল খাওয়ালে আমি একদিন মুকুলকে খাওয়াই। যার যেমন বেতন তার তেমন বাহাদুরি আরকি। কিন্তু প্রায় রোজ মুকুলের অফিসের ছাদে আমাদের একটা ছোট-খাটো আড্ডা হয়। সেই আড্ডার প্রধান শিরোনাম পালাকার। গ্রুপে যাবার সময় না পেলেও গ্রুপের প্রধান ব্যক্তি স্বয়ং অধিকারীর সঙ্গেই আমার সব বিষয়ে মন নেয়া দেয়া চলে। পালাকারের সর্বশেষ অবস্থাও আমার জানা হয়ে যায়।

এর মধ্যেই ২০০৬ সালের জানুয়ারির ৩১ তারিখ ঠিক সন্ধ্যার আগে আগে টোকন ঠাকুর ফোন করলো। রেজা কি অফিসে? বললাম হু। এখনই বের হবো। ঠাকুর বললেন, আমি ধানমন্ডির ৩২ নাম্বারে আছি। আসেন। আমার অবশ্য অফিসে তেমন কাজ ছিল না। বসে বসে নজরুল স্যারের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলাম। মোস্তাফিজ আমাদের বেতন তুলতে গেছে। ব্যাংক থেকে আবার কি কাজে নিউমার্কেট গেছে, পথে জ্যামে আটকা খাইছে সিটি কলেজের সামনে। মোস্তাফিজ না আসা পর্যন্ত স্যারের সঙ্গে আড্ডা মারা ছাড়া কোনো কাজ নাই। বেতন ছাড়া ব্যাচেলর মানুষের ঈদ হয় নাকি। আমার হাতে যেদিন যেখান থেকেই টাকা আসুক, সেদিনই আমার ঈদ। সে টাকার অংক ৫০০ হোক আর ১৫ হাজার হোক। সো, ঠাকুরের ফোনে মনের মধ্যে অলরেডি তখন ঈদ লাইগা গেছে। মোস্তাফিজ আসার পর, খামটা পকেটে পুরতে যে দেরি!

সোয়া সাতটায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে আসলাম। ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের খোলা পার্কের যে উঁচু মঞ্চটা, ওখানে বিগত প্রায় আট বছর আমার সভাপতিত্বে সন্ধ্যা নামে। সে ঝড়-ঝঞ্ঝা-রোদ-বৃষ্টি-শীত-গ্রীষ্ম-হেমন্ত-বসন্ত যে কালই হোক না কেন? প্রায় রোজ ধানমন্ডি নদীর পারে আমার সন্ধ্যা হয়। সকালে অফিসে যাবার সময় এক পশলা আড্ডা। আড্ডায় থাকেন বিশিষ্ট আর্টিস্ট মাসুক হেলাল, বিশিষ্ট ফটো জার্নালিস্ট এপি'র পাভেল ভাই, বিশিষ্ট সাহিত্যিক ইমতিয়ার শামীম, বিশিষ্ট গল্পকার শেখর ইমতিয়াজ (সিটি কলেজের বাংলার প্রাক্তন প্রফেসর, বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রফেসর, বিশিষ্ট অভিনেতা হুমায়ূন ফরিদি'র জাহাঙ্গীরনগরের বিশ্ববিদ্যালয়কালীন রুমমেট ও বন্ধু), বিশিষ্ট কার্টুনিস্ট আহসান হাবিব, আমাদের প্রিয় শাহীন ভাই। আমরা চেনার সুবিধার্থে ডাকি উন্মাদ শাহীন। কারণ, শাহীন ভাই উন্মাদ পত্রিকার সম্পাদক। শাহীন ভাই'র আরেকটা পরিচয় হল তিনি আমার নজরুল স্যারের (ভূগোল ডিপার্টমেন্টের) সরাসরি ছাত্র। আমাদের সবার প্রিয় কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ছোট ভাই হল শাহীন ভাই। আড্ডায় আরো থাকে আমার বন্ধু গল্পকার ও সাংবাদিক রুদ্রাক্ষ রহমান (সাংবাদিক নাম ফজলুল হক, বর্তমানে যুগান্তরে কাজ করে), সাপ্তাহিক বিচিত্রার প্রুফরিডার দুলাল ভাই। কখনো আড্ডায় আমাদের সাবজেক্ট হয় পুটু। পুটু হল বিচিত্রার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক বেবী মওদুদের ছোট ছেলে। পুটুর হবু শ্বশুর হল শেখর দা। কেবল শেখর'তা ছাড়া আমরা বাকিরা সবাই পুটু'র মামা। পুতু বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে চাকরি করে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের রিপন বিচিত্রার কেউ না থাকলে আমার সঙ্গে আড্ডা দেয়। তো, সকালের আড্ডা শেষ হয় আমার কাজের তাড়ার উপরে। অফিসে কাজ নাই তো আমি ৩২ নাম্বারে আড্ডা মারছি। কাজ থাকলে মোস্তাফিজ ডাক পারে। আবার মুকুল যেদিন না থাকে সেদিন আমি লাঞ্চ করতে ৩২ নাম্বার হয়ে শুক্রাবাদ যাই। লাঞ্চের পর আরেক পশলা আড্ডা মারি ৩২ নাম্বারে। মোটকথা রাতের ঘুম আর নজরুল স্যারের অফিসের সময়টুকুর বাইরে ৩২ নাম্বারে আমাকে পাওয়া যাবেই। ওখানকার সব চায়ের দোকানে আমার বাইক্কা চা সিগারেট খাওয়ার সুযোগও আছে।

তবে ৩২ নাম্বারে আমাদের বেশি চা খাওয়ায় জাদুঘরের সামনে সাধু মামা আর একটু পশ্চিম পাশে মঞ্চের পাশে হাবিবের মা। আগে হাবিবের বাবা রিক্সা চালাতো। হঠাৎ একদিন বেচারা সন্ধ্যায় হার্ট এ্যাটাক করে মারা গেল। মাসুক ভাইয়ের নের্তৃত্ব আমরা টাকা উঠালাম। একটা ট্রাক ভাড়া করে হাবিবের বাবার লাশ ওদেরসহ চিলমারী পাঠিয়ে দেওয়া হল। কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী আর ভরুঙ্গামারীতে আমি একবার রিসার্সের কাজে গিয়েছিলাম। নদী ভাঙন এলাকা। যমুনা নদী সেখানে সর্বগ্রাসী। গরিব মানুষের ঘরবাড়ি ফসলের মাঠ সব যমুনা খেয়ে ফেলে সেখানে। ভুরুঙ্গামারী আর চিলমারী যে কারণে মনে থাকবে সারা জীবন, তা হল ওখান ভৌগলিক ম্যাপ। ম্যাপে ভুরুঙ্গামারী আর চিলমারী ঠিক উত্তর আমেরিকা আর দক্ষিণ আমেরিকার মতো। ভুরুঙ্গামারী জায়গাটা আবার আরো মজার। তিনপাশে ভারত। একপাশে বাংলাদেশ। থাক চিলমারী, ভুরুঙ্গামারী ও যমুনার কথা আর কমু না। এখন অন্য কথা কই।

টোকন ঠাকুর জানালো, ব্ল্যাকআইট ফিল্মের কাজ শুরু করবো। রেজা আপনি টিমে থাকেন। পরদিন নজরুল স্যারের ওখানের চাকরিটা দিলাম ছেড়ে। যোগ দিলাম ব্ল্যাকআউট টিমে। গোটা ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে আমরা ব্ল্যাকআইটের প্রিপ্রোডাকশান আর প্রোডাকশানের কাজ শেষ করলাম। তারপর পোস্ট-প্রোডাকশানের কাজ শুরু হল। সামীর আহমেদ ছিল আমাদের ক্যামেরাম্যান। সামীরই এডিটিং করতে আগ্রহ দেখালো। ব্ল্যাকআইট পর্বে আবার নতুন করে বন্ধুত্ব হল আমাদের দুই প্রধান চরিত্র রাফি আর মাদলের সঙ্গে। রাফি করেছিল তানভির আর মাদল করেছিল রাহুল আনন্দ। এছাড়া যাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে আড্ডা মারা শুরু হল তারা হলেন কফিল আহমেদ, বিমল বাউল, বাপ্পী আশরাফদের সঙ্গে। এছাড়া আমাদের টিমের এসিট্যান্ট ডিরেক্টর জন রোমেল, স্টিল ফটোগ্রাফার রিচার্ড রোজারিও, টোকন ঠাকুর আর আমি প্রায় সবখানে একত্রে গমণাগমন করি। রোড রাতে ধ্রুব'দার (বিশিষ্ট আর্টিস্ট ধ্রুব এষ) বাসায় শেষ আড্ডা মেরে আমরা ক্লান্ত না হয়ে আবার এলিফ্যান্ট রোডের ঠাকুরের বাসার তিনতলায় প্রোডাকশানের কাজ করি। আমরা তখন একবার শংকরে আবদুল হালিম চঞ্চল (আহা চঞ্চল, আমাদের ব্ল্যাকআউটের গ্রাফিক্স, টাইটেল ও সেট ডিজাইনার)-এর বাসায়, এবার গুলশানে সামীরের বাসায় এডিটিং প‌্যানেলে, একবার ধ্রুব'দার বাসায়, দেন এলিফ্যান্ট এই আমাদের দৌড়ছাঁপ। ব্ল্যাকআউটে এ্যানিমেশান করলো চিন্ময়। চিন্ময় থাকতো জগন্নাথ হলে। সেখানেও মাঝে মধ্যে আমাদের যেতে হতো। রাশ কাটা শেষ। এ্যানিমেশান, টাইটেল, গ্রাফিক্স বসেছে। সাউন্ড আর মিউজিকের জন্য আমরা বসে আছি। কারণ অর্ণব গেছে লন্ডন। অর্ণব লন্ডন দুবাই ঘুরে আসতে তিন মাস লাগিয়ে দিল।

এর মধ্যে পালাকারে ঢু মারতে গিয়ে দেখি এলাহি ব্যাপার স্যাপার। 'মানগুলা' নাটকের পুরোদমে কাজ চলছে। অজয় গানগুলো শুনালো। তারপর 'মানগুলা' শো দেখার জন্য অপেক্ষা করতে থাকলাম। কারণ তখন ব্ল্যাকআইটের কাজ নিয়ে আমি ভিষণ ব্যস্ত টোকন ঠাকুরের সঙ্গে। 'মানগুলা' সম্ভবত দ্বিতীয় শো'তে আমি হাজির ছিলাম। বুকের মধ্যে পালাকার লালন করি বলে যেখানেই থাকি পালাকারের কাজ দেখলে মন ভালো হয়ে যায়। জয়তু পালাকার। জুয়তু মানগুলা। জয়তু পালাকারের সেই চৌকশ মানুষগুলো।।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা জুন, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৯

মামুণ বলেছেন: আপনাদের পালাকারের গল্প গুলো শুনতে মজাই লাগছে । আমি নিজেও গ্রুপ থিয়েটারের সাথে আছি তাই আরও বেশি মজা পাচ্ছি সিনিয়রদের গল্প শুনে ।

০৫ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৪:১৬

রেজা ঘটক বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে....

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.