![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
পালাকারের শুরুর দিকে আমিন নিলয়ে আমাদের সঙ্গে থাকতো বসনিয়ান হ্যারি। দুই মুকুল ততোদিনে আমিন নিলয় ছেড়ে অন্য বাসায় গেছে। আমিন নিলয়ে তখন আমাদের সঙ্গে গেস্ট হিসেবে আছে সুদত্ত চক্রবর্তী পবনের চট্টগ্রামের বন্ধু স্বপন। স্বপন খুব ভালো রবীন্দ্রসঙ্গীত করে। ভালো তবলা বাজাতে পারে স্বপন। এছাড়া বান্দরবানের কনটাকটারির কাজ রেখে ঢাকায় এসেছিল আমাদের বন্ধু পুলক বিশ্বাস। এসেই আমিন নিলয়ের তারুণ্যের প্রেমে পড়ে গেল পুলক। পরে পুলক আমাদের গেস্ট থেকে হোস্টে পরিনত হল। তো, একদিন সন্ধ্যায় আমরা সবাই লাকি হোটেলে চা খাচ্ছি। হ্যারির কোনো খবর নাই। হ্যারিকে খুঁজতে পবন আমিন নিলয়ে ঢু মারলো। না কোথাও হ্যারি নেই। বাথরুমেও নাই। কোথায় গেল হ্যারি? হ্যারি হ্যারি বলে চিৎকার করে আমিন নিলয় গরম করে তুলেছে পবন। হ্যারির কোনো সারাশব্দ নাই। হঠাৎ একেবারে সামনের রুমে জানালার নিচে সাদা মতো কিছু একটা দেখলো পবন। কাছে গিয়ে দেখলো হ্যারি ফ্লোরে শুয়ে উল্টোপাশের চারতলার ব্যালকনিতে বসা এক তরুণির সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম করছে। পবনের মাথায় এলো না হ্যারি যদি আলনার আড়ালে লুকিয়ে অন্ধকারে বসে এভাবে কন্ট্রাক করার চেষ্টা করবে তরুণি কি তা টের পাবে? পবন আমাদের বারান্দায় গিয়ে তরুণিকে এক নজর দেখে নিল। আর ঘোষণা দিল, এই হ্যারি, লুকিয়ে না করে এই ব্যালকনিতে বসে যা খুশি করো। তোমারে তো শালা দেখাই যায় না। যাহোক, হ্যারি পবনের সাথে চা খেতে লাকি হোটেলে আমাদের সঙ্গে যোগ দিল। হ্যারির প্রেমের চেষ্টার ঘটনা জানাজানি হওয়াতে হ্যারি একটু মুড অফ। নাছিম বললো, চলো হ্যারি, আজ আমি তোমার সাইবার ক্যাফের স্পন্সর।
আমিন নিলয়ের দিনগুলোতে হ্যারি-পবন আর হ্যারি-নাছিম মাঝে মাঝেই একটা যুদ্ধ হতো। সাধারণতঃ আমরা অনেক রাত পর্যন্ত আড্ডা গান-বাজনা করে শেষ রাতে ঘুমাতে যাই। সামনের রুমের ফ্লোরে একেবারে বামপাশের উত্তর দিকের দেয়াল থেকে ডানপাশের ওয়াল ঘুরে পূর্ব পাশের ওয়াল ঘুরে দক্ষিণ পাশের জানালার কাছের আলনা পর্যন্ত পাশাপাশি একটার পর একটা বালিশ পাতা হয়। তারপর আগে শুইলে আগে পাইবে ভিত্তিতে যে যা মতো শুয়ে পড়ি আমরা। আমাদের সবার মাথা উত্তর দিক ঘুরে আবার পূর্ব দিকে। সবার পা দক্ষিণ দিকে আর পশ্চিম দিকে। অনেকটা হরিণের ঘুমানোর স্টাইলের মতো। সবার পা প্রায় এক জায়গায়। তো পূর্ব দিকে মাথা দিয়ে ঘুমানোর চাঞ্চ পেল পবন, তার পাশে স্বপন, তার পাশে হ্যারি, তার পাশে অজয়। আর উত্তর দিকে মাথা দিয়ে ঘুমানোর চাঞ্চ পেল মনি'দা, তার পাশে আমি, তার পাশে রিয়াজ, তার পাশে নাছিম, তার পাশে পুলক। আর উপর থেকে দেখলে পুলকের পাশেই আবার পবন। অর্থ্যাৎ মনি'দা টু অজয় সবাই পাশাপাশি সার্কেল হয়ে শোয়া আর কি। তো, শেষ রাতে হ্যারি উঠে কিচেনে গেল। গিয়ে খুন্তি আর তরকারির চামচ নিয়ে এলো। এনে স্বপন আর হ্যারি'র মাঝখানে তা রাখলো। প্রায় সবাই তখনো সজাগ। ঘটনা কি? অজয় উঠে লাইট জ্বালিয়ে দিল। হ্যারির হাতে খুন্তি আর লম্বা চামচ। নাছিম জানতে চাইলো ঘটনা কি? হ্যারি কিছু বলে না। মনি'দা জানতে চাইলো, কি হইছে হ্যারি? সকালে অফিস আছে, এখন একটু ঘুমাইতে দাও না? হ্যারি তখন উচ্চারণ করলো, শালা আবার হাত দিলেই এই অস্ত্র দিয়ে দেবো, শালা। আমরা সবাই বুঝলাম, স্বপন আর হ্যারির মধ্যে কিছু একটা ঘটেছে। যাক শেষ পর্যন্ত পবন একটা বিচার করলো। হ্যারিকে হয় স্বপনের পাশেই ঘুমাতে হবে। কারণ ওই রুমে আর কোনো মাথা দেবার জায়গা নাই। নতুবা ভেতরের রুমে মেইন দরজার সামনে একটা তিন টাকির খাট আছে। খাট না বলে ওটাকে দোলনা বলা যায়। ওটায় বসে আমরা বাইরে যাবার সময় কেটস বা জুতা পড়ি আরকি। শেষ পর্যন্ত হ্যারি খুন্তি আর চামচ নিয়ে সেই দোলানার খাটে গিয়ে শুইলো।
গোলাম সফিকের লেখা 'শিলারি' নাটকটি তখন মুকুলের নির্দেশনায় বরিশালের শব্দাবলী নাট্যদল বরিশালে প্রযোজনার আয়োজন করেছিল। 'শিলারি' নাটকের সবগুলো গানই পবনের সুর করা। আমরা উঠতে বসতে হাঁটতে খাইতে সেই গান শব্দ করে গাইতাম। 'ঘোড়া উত্রা, নামে চলি, বলি- কইন্যা......' আহা কি সুর!!! ওই গানগুলো পবন যখন সুর করে প্রায় প্রত্যেকটি গানে তবলার বায়া বাজিয়ে তাল দিয়েছিলাম আমি। পবনের সুর করা অনেক গানেই আমি আউলা ঝালা কিছু তাল দিতাম। ওটাই প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেল। পরে অজয়ের মতো বাঘা তবলচিদের সেই তাল বাজাতে একটু ঝামেলাই হতো। বারণ, আমার বাজানো তালের কোনো সুনির্দিষ্ট তাল ছিল না। কিন্তু একটা লয় অবশ্যই থাকতো। পবন সকালে অফিসে যাবার সময় হ্যারি যেখানে ঘুমোচ্ছে সেই খাটে বসেই জুতা পড়ছে। আর গুনগুন করে গাইছে- 'ঘোড়া উত্রা, নামে চলি, বলি- কইন্যা.......' দোলনার খাট পবন আরো দুলুনি দিচ্ছে ইচ্ছে করেই। অমনি হ্যারি খুন্তি আর চামচ নিয়ে লাফিয়ে উঠলো। সেই থেকে হ্যারি'র প্রধান অস্ত্র খুন্তি আর চামচ আমিন নিলয়ে সঙ্গি হল। আমরা সেই রহস্যের বিষয় স্বপন বা হ্যারি কারো কাছেই কোনোদিন জানতে পারিনি।
কিন্তু আমরা যখনই বাইরে থেকে হ্যারি সহ আমিন নিলয়ে ঢুকতাম। উল্টোপাশের চারতলা থেকে গোলআলু বা পেঁয়াজ ছুড়ে মারতো সেই তরুণি। আমাদের কখনো পেঁয়াজ না থাকলে আমরা শুধু সামনের রুমে গিয়ে জোরে জোরে বলতাম, পেঁয়াজ নাই তো এখন তরকারি হবে কিভাবে? কিছুক্ষণ পরে চারতলা থেকে পেঁযাজ ঢুবঢুব করে পরা শুরু করতো। পরে নাছিম ব্যালকুনিতে গিয়ে জানান দিতো যে আর লাগবে না। যথেষ্ট হয়েছে। হ্যারি'র প্রেমটা সেই পেঁয়াজ ছোরার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রইলো। ২০০২ সালের জাপানে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ফুটবলের সময় হ্যারি ওর আসল বান্ধবী মাদোকার কাছে যাবার জন্যে ঢাকা থেকে রওনা হল। টোকিও এয়ারপোর্টে বিশ্বকাপের টিকেট নেই সেই অযুহাতে হ্যারিকে আর জাপানে ঢুকতে দেওয়া হল না। হ্যারিকে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের একটা বিমানে তারা মালয়েশিয়া পাঠিয়ে দিল। সেখানে ভিসা না থাকার কারণে হ্যারিকে ছয় মাস জেলে থাকতে হল। হায়রে জীবন! চলো সবাই মিলে গাই-
''ঘোড়া উত্রা নামে চলি বলি, জাদু কাটা ধোমালিয়া,
দুইটি স্রোতধারা, মেঘালয় থেকে নামি আত্মহারা;
এক নালেতে মিলিত হই, বঙ্গতে আসিয়া ধন্য,
ঘোড়া উত্রা নামে চলি বলি, কইন্যা;
একদিকেতে আছে গেরাম, নামে কাঞ্চনপুর,
তাতে সুন্দরী মহুয়ার বাড়ি;
আরেক দিকে কাজলকান্ডা, দেওয়ানা মদিনা ঘুমাই আছে
নদের চাঁদ আর কুমির বুকে, বলিরে সেকথা দুপুর সাঁঝে,
শুনলে সেকথা কইন্যা দুঃখ পাবে।
ঘোড়া উত্রা নামে চলি বলি, কইন্যা.....''
গানটি লিখেছেন গোলাম সফিক। সুর করেছেন সুদত্ত চক্রবর্তী পবন। 'শিলারী' নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছিল আমিনুর রহমান মুকুল। আর 'শিলারী' নাটকটি প্রযোজনা করেছিল বরিশালের নাট্যদল শব্দাবলী। ৭-৮ বছরের একটি মেয়ে এই গানটি অসাধারণভাবে করেছিল। আর সঙ্গে ছিল শব্দাবলী'র অসাধারণ কোরাস দল। চল সবাই মিলে গাই- ঘোড়া উত্রা নামে চলি বলি, কইন্যা.....''
......................চলবে.............................
©somewhere in net ltd.