নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

কিভাবে পালাকার নাট্যদল গঠিত হল: কিছু সত্য কথন। পর্ব বারো। রেজা ঘটক

০৫ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:১২

আমিন নিলয়ে তখন আমাদের তিন মাসের বাড়িভাড়া বাকি। প্রায় রোজ মিজান ভাই ভাড়ার জন্যে আসেন। মিজান ভাইকে নিয়ে তখন নাছিম লাকি হোটেলে চা খেতে যায়। সেদিন ওভাবে চলে যায়। মিজান ভাইয়ের ভাড়া তুলতে ব্যর্থতার পর বাড়িওয়ালা আমাদের চূড়ান্ত নোটিশ করলো। বাড়ি ছেড়ে দিতে হবে। বাড়ি সংস্কারের নাম করে আমাদের পানির লাইন বন্ধ করে দেওয়া হল। আমিন নিলয়ের বাইরে রাস্তার পাশের পানির হাউস থেকে আমরা তখন রাতে মিজান ভাই'র সহযোগিতায় পানি সংগ্রহ করি। সবাই বালতি হাড়িপাতিল নিয়ে লাইনে দাঁড়াই। নাছিম হাউজের ট্যাংকি থেকে বালতি ভরে দেয়। মনি'দা, পবন, অজয়, পুলক, রিয়াজ ও আমি বালতি বা হাড়ি ভরতি সেই পানি নিয়ে বাথরুম বা কিচেন রাখি। তখন প্রায় রোজ রাতেই গোসল আর রান্নার পানি আমরা এভাবে সংগ্রহ করতাম। তার আগে অবশ্য মিজান ভাইকে নিয়ে নাছিম একবার লাকি হোটেল ঘুরে আসতো। এভাবে এপ্রিল মাসের প্রচণ্ড গরমের মাস গেল। মে মাসে আমাদের চুলার গ্যাসের লাইনও কেটে দেওয়া হল। আর বাড়িভাড়া চাইতে প্রায় রোজই মিজান ভাই আর নাছিম মিটিং করতে লাগলো। শেষ পর্যায়ে একদিন বিকালে বাড়িওয়ালা স্বয়ং আমিন নিলয়ে হাজির। বিকালবেলা। বাসায় পুলক আর আমি। মাসিমা (পুলকের মা) চট্টগ্রাম থেকে কুরিয়ারে পুলকের নামে কিছু টাকা পাঠিয়েছেন। সেই কুরিয়ারের জন্য পুলক আর আমি ওয়েট করছি। তার আগে বাংলা বাজারের কাজল ব্রাদার্স থেকে আগের দিন আমাকে কিছু টাকা দিয়ে গেছে ননি গোপাল। কাজল ব্রাদার্সের ক্লাস নাইন-টেনের অর্থনীতি বইটা আমি তখন লিখছিলুম। প্রতি শনিবার ননি গোপাল টাকা দিয়ে যায় আর লেখা নিয়ে যায়। সেই টাকায় সকালেই পুলক আর আমি গ্রিন রোডের স্টার প্লাসে ঢু মেরেছি। সেখানে ছোট বোতল বড় বোতল সব আছে। আমরা মনে হয় হুইস্কি নিয়েছিলুম। তো আমরা মদ খাচ্ছিলাম। ওই সময় দরজায় কে যেনো নক করলো। দরজা খুলে দেখি মিজান ভাই। মিজান ভাই বললেন, খালাম্মা আসছেন। খালাম্মা মানে বাড়িওয়ালী স্বয়ং। বাড়িওয়ালীর মেয়ে জামাইও সঙ্গে আসছেন। মেয়ে জামাই বুয়েটের টিচার। চারজন পরপর ঘুরে ঢুকলেন।
খালাম্মা জানতে চাইলেন আমরা কেন বাড়িভাড়া দিচ্ছি না। আমরা একটা ব্যাখ্যা দেবার চেষ্টা করলাম। খালাম্মার মেয়ে বুয়েটের টিচার, উনি জানতে চাইলেন আমরা কে কি করি? পুলক আর আমি তখন বেকার। তাই বললাম। বাকিরা টুকটাক চাকরি করে, তাও বললাম। আপা বললেন, মা, ওদের থেকে ভাড়া আর চাইও না। ওরা তো বেকার। টাকা দেবে কিভাবে? আপা আমার আর পুলকের এডুকেশনাল ব্যাতগ্রাউন্ডের খোঁজখবর নিলেন। আর বললেন, ঝিনাইদহে আমার একটা এনজিও আছে। তোমরা সেখানে ইচ্ছে করলে চাকরি করতে পারো। প্রথম তিন মাস তিন হাজার করে পাবা? কি রাজী? আমরা হ্যা বা না বলার আগেই দরজায় আবার কড়া নারার শব্দ। সুন্দরবন কুরিয়ারে টাকা নিয়ে পিওন এসেছে। ওনাদের সামনেই পুলক সাইন করে টাকা তুললো। খালাম্মা সেই টাকা তখনই নিতে চান। আপা বারবার বাধা দিচ্ছেন। পরে পুলক সেখান থেকে তিন হাজার টাকা খালাম্মার হাতে গুজে দিলেন। আপা আমাদের বুঝিয়ে বললেন, তোমরা আমার অফিসে জয়েন করো। আর ৩১ তারিখের মধ্যে বাসা ছেড়ে দাও। বাসায় আমরা কিছু কাজ করাবো। পানি নাই, গ্যাস নাই। তোমরা এখানে থাকছো কিভাবে? !!
তারপর আমরা বাসা খুঁজতে লেগে গেলাম। কারণ, আপা যেভাবে বলেছেন, এরপর আর আমিন নিলয়ে আসলে থাকার কোনো সুযোগ নাই। নাছিম, পুলক আর আমি বাসা খুঁজতে বের হলাম। কাঁঠালবাগানের বাজারের পাশে ১৯ কাঁঠালবাগানের চারতলায় একটা বিশাল বাসা খালি। কেয়ারটেকার লিটন ভাই পরিবার নিয়ে থাকেন ছয়তলার ছাদের চিলেকোঠায়। আমরা ছাদে গেলাম। লিটন ভাই বললেন, ভাড়া আট হাজার টাকা। তিন মাসের অগ্রিম। নাছিম বললো, লিটন ভাই, এক মাসের অ্যাডভান্স দিতে পারবো। তিন মাস পারবো না। লিটন ভাই বললেন, বাড়িওয়ালা তিন তলায় থাকেন। তার সঙ্গে কথা বলে জানাবেন। আমরা ছাদে রইলুম। লিটন ভাই তিন তলায় গেলেন। ফিরে বললেন, ঠিক আছে অ্যাডভান্স করেন। তবে তিন মাসের অ্যাডভান্সই লাগবে। ওটা ওঠার পরে কিস্তিতে দিতে হবে। ওই পর্যায়ে লিটন ভাই শুনলেন, আমরা ব্যাচেলর। লিটন ভাই বললেন, আবার শুনতে হবে। মনে হয় ব্যাচেলরদের ভাড়া দেবে না। আমরা লিটন ভাইকে রিকোয়েস্ট করে নিচে নামছি। তিন তলা ক্রোস করে নিচ তলায় আসলাম। সেখানে বাড়িওয়ালা পরিবার নিয়ে কোথায় যেনো যাচ্ছেন। লিটন ভাই বাড়িওয়ালাকে বললেন, ওনারা তো ব্যাচেলর!
১৯ কাঁঠালবাগান, কাঁঠালবাগানের সবচেয়ে বড় মেস বাড়ি। অথচ ব্যাচেলর ভাড়া দেবে না? কারণ, ওটা আগে গার্মেন্টস ছিল। অপর পাশটায় ফ্যামিল বা ব্যাচেলর থাকে। দক্ষিণ পাশে বাড়িওয়ালা থাকেন। তাই সেই পাশে কোনো ব্যাচেলর ভাড়া দেওয়া হয় না। দুইপাশে ওঠা নামারও আলাদা সিঁড়ি। বাড়িওয়ালি ভাবী আমাদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা থাকবা? জবাবে নাছিম বললো, জি, ভাবী। বাড়িওয়ালী আমাদের পক্ষে বাড়িওয়ালার কাছে ওকালতি করলেন, ছেলেগুলো শিক্ষিত। ওদের ভাড়া দিতে পারো। মনে হয় না কোনো সমস্যা হবে!! বাড়িওয়ালা গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বের হয়ে গেলেন। আমরা আবার লিটন ভাইয়ের সঙ্গে ছাদে গেলাম। লিটন ভাই ওই গোটা বাড়ির বাড়িওয়ালার পর সবচেয়ে ক্ষমতাধর চিজ। নাছিম লিটন ভাইরে পটিয়ে হাতে পাঁচ হাজার টাকা অগ্রিম ভাড়া বুঝিয়ে দিল। তখনো আমরা বাসা দেখি নাই। তারপর লিটন ভাই চাবি নিয়ে তালা খুলে আমাদের রুম দেখালেন। বিশাল বাসা। প্রত্যেক রুমে ফুটবল খেলা যায়। আমরা তখন রুম ভাগাভাগি করে ফেললাম। বাসায় ঢুকেই বিশাল ড্রয়িংরুম। ওটা আমরা আড্ডার জন্যে ব্যবহার করব। প্রথম রুমটা নিল পুলক আর নাছিম। দ্বিতীয় রুম নিলাম মনি'দা, রিয়াজ আর আমি। এ্যাটাস বাথরুমটা খালি রাখলাম। ওটা আমরা কাউরে সাবলেট দেব। ওই সময় পবন হুট করে নিসু অ্যাডভারটাইজিংয়ের চাকরিটা ছেড়ে দিল। পবন বললো, আপাতত সে ভাড়া দিতে পারবে না। তিন মাস পর একসাথে সব দেবে। পবনের দায়িত্ব চাপলো নাছিম, পুলক আর আমার ঘাড়ে। রিয়াজ আর মনি'দা পবনের দায়িত্ব নিতে রাজী না।
১৯ কাঁঠালবাগানে ১ জুন ২০০২ তারিখে আমরা উঠে গেলাম। বিকালে কবি জাফর আহমদ রাশেদ আর শামীম আহমেদ ভাই আসলেন। শামীম ভাই বললেন, আপনাদের এই রুম তো খালি। ওটা কি ভাড়া দেবেন? আমরা বললাম, আমাদের সঙ্গে মেলে এমুন কাউরে দেবো। জাফর বললেন, তাহলে খোকন কায়সাররে দেন। ভাড়া কত দিতে হবে? নাছিম, পুলক আর আমি মিলে তখন খোকন কায়সারের জন্য ভাড়া বরাদ্দ করলাম ২৫০০ টাকা। শামীম ভাই বললেন, একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে। আমরা বললাম, আমাদের সবার বাইরের একটি বাথরুম ব্যবহার করতে হয়। আর এ্যাটাস রুমে যে থাকুক সে একটা বাথরুম পাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত খোকন কায়সারের জন্য ২২০০ টাকা ফাইনাল হল। খোকন কায়সার আমাদের সঙ্গে উঠে পড়লেন। তখন কোনার রুমে মনি'দা, রিয়াজ আর আমার সঙ্গে পবনও যোগ দিল। পাশের প্রথম রুমে পুলক আর নাছিম। আর এ্যাটাস বাথরুমে খোকন কায়সার। খোকন কায়সারের সঙ্গে চট্টগ্রাম থেকে গেস্ট হিসেবে আসলেন বিখ্যাত গল্পকার রোকন রহমান।
সেদিন সকালে সবাই অফিসে গেছে। ভোরবেলা রোকন সহ ঢাকায় এসে গা গোসল দিয়ে ন'টার আগেই খোকন ভাই শাহবাগের বেতার অফিসে চলে গেছেন। আমি, পুলক, নাছিম আর রিয়াজ গেলাম শুক্রাবাদ। ওরা তিনজন অফিসে চলে যাবার পর আমি কাঁঠালবাগানের বাসায় ফিরলাম। দরজায় নক করছি মাগার কেউ দরজা খুলছে না। হিসির চাপে আমার তখন প‌্যান্ট ভিজে যাবার দশা। সবাই বেরোনোর পর রোকন রহমান একা বাসায় ঘুমাচ্ছিল। পনেরো মিনিট পর দরজা খুললো। তখনো রোকনের সাথে আমার পরিচয় হয়নি। দরজা খোলা মাত্র দিলাম এক ভেঙচি। মাগার কি খাইয়া এতো ঘুমায় এই গেস্ট? রোকন কোনো কথা না বলে অনুরোধ করলো প্রথম আলোটা ভেতরের রুমে নিয়ে পড়তে পারে কিনা? আমি বাথরুমে যেতে যেতে বললাম, শুধু প্রথম আলো না ...য়া মারাও দেওয়া যাবে হা হা হা... বাথরুম থেকে বেরিয়ে আমি রোকনের সাথে পরিচয় হতে খোকন ভাইয়ের রুমে গেলাম। দু'জনার টুক টাক কথা হল, জানাজানি হল। এক ঘণ্টা পর আমরা যেনো ৬০ বছরের পুরানা বন্ধু।
রোকন আমাকে উঠিয়ে বেসিনের কাছে নিয়ে নাকে মুখে পানি ছিটালো।রাজীব নূর খুব ভয় পেয়ে গেল। আসল ঘটনা হইলো, সকালে শুক্রাবাদ গিয়ে নাছিম, পুলক, রিয়াজ আর আমি একবার বিকল্প খাইছিলাম। জিনিসের বিকল্প হইলো শুভ্রা-পদ্ম-নীলা। নীলারা নতুন জিনিসের লগে মিল্লা আমার অবস্থা তখন কেরোসিন বানাইছে আর কি !! একটা সিএনজি নিয়ে রোকন আর আমি কাঁঠালবাগানের বাসায় চলে আসলাম।
ওদিকে সিদ্ধেশ্বরীতে পালাকারের কার্যালয় ছেড়ে দিতে হল। নতুন বাড়ি না পাওয়া পর্যন্ত মাল সামানা সব আমাদের বাসার পেছনের বারান্দায় ঢিব দেওয়া হল। চলো সবাই গাই পবনের সুর করা সেই অমর গান_ ''শুনিলে সেকথা কইন্যা লজ্বা পাবে। গোড়া উত্রা নামে চলি, বলি, কইন্যা...."
.......................চলবে..........................

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১:১১

নানাভাই বলেছেন: ঐ মিয়া আফনের কি লিখার কুনু মেশিন আছে?
এ্যাতো লিখা লিখেন ক্যামতে? আমি তো হালার কি বোর্ড ভাইংগা ফালাই, মাগার লিখা তো বাইর হয় না! :(
আর আফনের লেখা কি বাচ্চা দেয়, না মেশিন দিয়া বাইর হয়??? :P
তবু ও ধইন্যা।
ভালো লিখছেন।
দুয়া করি আফনের লেখা/কি বোর্ড যেনো আরো লেখার বাচ্চা পয়দা করতে পারে। :P

০৫ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৪:০৯

রেজা ঘটক বলেছেন: ধন্যবাদ নানাভাই। আমার কি বোর্ডের কোনো অক্ষর চেনার উপায় নাই। আন্দাজে মারি। তাই বানানে কিছু ঝামেলা হয়। আমি নানার দোয়ায় এই একটা কামই করতে পারি সাচ্ছ্বন্দে। আর কিছু পারি না নানা। ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.