নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।
পালাকার সিদ্ধেশ্বরী থেকে ৪৬-এ আসার পর বেশ কিছু চমক লাগানো কর্মসূচি শুরু করেছিল। যার মধ্যে 'পালাকার কিডস' আর 'স্টুডিও থিয়েটার' সবচেয়ে কার্যকর ছিল বলে আমার ধারণা। পালাকারের কার্যক্রম তখন সবাইকে খুব নাড়া দিয়েছিল। এক ঝাঁক তরুণ নাট্যকর্মী নিয়ে পালাকার তখন বেশ হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিল। যেসব চৌকশ নাট্যকর্মী আমি তখন দেখেছি তারা হল- মামুন তালুকদার, সায়েম বিপ্লব, তুষার, তাপু, পংকজ ওয়াদেদার, নকুল দেবনাথ, ফারুক আহমেদ, সেলিম হায়দার, কাজী ফয়সাল, মিজানুর রহমান, ইকতারুল ইসলাম, রবীন, স্বরূপ আনন্দ, অন্তু আজাদ পায়েল, ছোট ফারুক, রাজীব (শামীম সাগরের ভাই), কলি আপা, লুবনা ভাবী, শাহীন, শাহনাজ, দুই শর্মী, ইভা, ফরহাদ লিমন, ইসরাফিল বাবু, শাহজাহান সম্রাট, শিশিরসহ আরো অনেকে। তখন কলি আপার মেয়ে ত্রয়ী ছিল দলের সবচেয়ে ছোট্ট নাট্যকর্মী। ত্রয়ী দলের আমাদের সবাইকে মামা ডাকতো। আর ও সবচেয়ে খুদে হওয়ায় সবার আদরটা পেয়েছে বেশি। গ্রুপে যে ঢুবকে তার তখন প্রথম কাজ ছিল ত্রয়ী'র সাথে কিছুক্ষণ খেলা করা। সেই ত্রয়ী এখন অনেক বড় হয়ে গেছে। ২০১০ সালের কোরবানীর ঈদে আমাদের মিজানের বাসায় কলি আপা'র সাথে অনেক দিন পরে দেখা হল। কলি আপা'র ছেলে আর ত্রয়ী আসছিল। মিজানের মেয়ের সাথে দুই পিচ্চি খেলা শুরু করলো। আমরা আড্ডা দিলাম। কলি আপা বললো, ত্রয়ী কি এসএসসি না এইচএসসি পাশ করেছে। কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবে!
আমার মাথায় হাত। ওইটুকুন ত্রয়ী এখন অনেক বড়। সময় যে কিভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে দৌড়ায়! সময় সবুজ ডাইনি। পৃথিবীর উপকূলে থাকো। সন্ধ্যার উঠোনে তুমি নাবিকের ভাঙা হার দিয়ে, ভাঙা জাহাজের ছবি আঁকো। সময় সবুজ ডাইনি। ব্ল্যাকআউটে আমরা কবি রনজিত দাশের এই কবিতা দিয়ে গান বানিয়েছিলাম। অর্ণব সুর করেছিল। অনেকটা আযানের স্টাইলে খুব করুন সেই সুর। গানের শেষের দিকে অর্ণব একটা হামিং ইউজ করেছিল, শুনলে মনে হবে নদীর ওপার থেকে কেউ ডাকছে। হয়তো সেই হারিয়ে যাওয়া জাহাজ খুঁজতে নতুন জাহাজের কোনো সাড়েং সেই চিৎকার করছে। কিন্তু সময় বসে নেই। সময় সবুজ ডাইনি।
পালাকার ৪৬ থেকে চলে আসলো ৩২ দিলু রোডে। ওই সময় পালাকারের একদিকে জোয়ার। আরেকদিক ভাটা। জোয়ার যে কারণে, তখন 'মানগুলা' শো চলছে। চারদিকে হৈ চৈ। ঢাকার গোটা নাটকপাড়ায় 'মানগুলা'-ই আলোচনার বিষয়। মামুনুর রশীদের 'রাঢ়াঙ' নাটকে মিউজিক টিমে কাজ করতো আলিম। পরে আলিমের সাথে কাঁঠালবাগানের ১৯ নম্বর ছাড়ার পর পবন আর আমি একই বাসায় কিছুদিন থেকেছিলাম। আলিমের ভাষ্য ছিল, 'রাঢ়াঙ' নিয়ে ওরা বিদেশ সফর করলেও 'মানগুলা' ওর কাছে বেশি ভালো লাগে। সেই ভালো লাগা আমরা ধরে রাখতে পারিনি। কারণ, কিছুদিনের মধ্যে পালাকারে কিছু উদ্ভট ব্যাপার স্যাপার ঘটতে লাগলো। তর্ক-ঝগড়া-বিবাদ কারো কারো গ্রুপ থেকে চলে যাওয়া, কারো কারো গ্রুপের কাছে বীর হয়ে ওঠা, কারো কারো গ্রুপের কাছে নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা, কারো কারো ওসবে মাথা না ঘামানো এসব মিলিয়ে পালাকারে তখন একটা ভাটার টান লাগলো।
আমি নতুন করে সেই প্যাচাল লিখে কারো মনে বিভিষিকা সৃষ্টি করতে চাই না। সেই প্যাচালের অনেকটাই আমি জানি না। যতোটুকু শুনতাম, সেই প্যাচাল কখনো ভালো লাগেনি। এখনো ভালো লাগার প্রশ্নই ওঠে না। তবে অনাকাঙ্খিত কিছু ব্যাপার স্যাপার তখন ঘটেছিল। যে কারণে এক সময় 'মানগুলা; শো বন্ধ হয়ে গেল। নতুন করে গ্রুপে অনেক ছেলেমেয়ে এসেছে। অনেকে চৌকশ হয়ে ওঠার পথে। কিন্তু সত্যিকারের নাট্যকর্মীরা যেমন সবকিছু উজার করে গ্রুপে ঢেলে দেয়, এদের হাইব্রিড প্রজন্মে কোথায় যেনো একটা ঝামেলা আছে। এরা আসল কথায় ফাঁকিবাজ। ফাঁকিবাজদের নিয়ে 'মানগুলা'র মতো সিরিয়াস নাটক করতে তাই মুকুল হয়তো সাহস পায় না। কারণ, 'মানগুলা' এখনো সবার হৃদয়ে একটি বিশাল জায়গা দখল করে আছে।
ওই সময় পালাকার থেকে একে একে নিস্ক্রিয় হল সুদত্ত চক্রবর্তী পবন, মামুন তালুকদার, সায়েম বিপ্লব, ফারুক আহমেদ, ছোটো ফারুক, তাপু, তুষার, অন্তু আজাদ পায়েল, নকুল দেবনাথ, রাজীব, কলি আপা, সব এক এক জন জেনারেল। সেই সব জেনারেল পালাকার থেকে ঝড়ে যাবার পর এক একজন সাধারণ সৈনিকের জীবন বেছে নিলেন। আমরা কেউ জানতে পারলাম না কি এমন সমস্যা তৈরি হয়েছিল যে, পালাকার থেকে সব জেনারেলদের একে একে বের করে দেওয়া হল বা তারা স্বেচ্ছায় বেরিয়ে গেলেন? তারা কি কোনো ছোটো খাটো অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা করেছিল? নাকি তারা কোথাও পালাকারের কোনো দুর্নাম করেছিল? নাকি তারা সেনাপ্রধানের সঙ্গে কোনো ক্ষমার অযোগ্য অন্যায় করেছিল? আমরা জানি না। কিন্তু যেসব জেনারেলরা তখন বেরিয়ে গেছেন এবং সেনাপ্রধান যিনি তানরা নিশ্চয়ই সেই ইতিহাস জানেন।
সংস্কৃতি চর্চায় দলাদলি আজকাল একটা মামুলি ব্যাপারে পরিনত হয়েছে। অনেকটা আমাদের নীতিহীন রাজনৈতিক দলগুলোর মতো। আদর্শের প্রশ্নে কারো আপোষ করার মতো যেনো কোনো ইচ্ছে নেই। বরং ভোল পাল্টে এক একজন একবার হরি বলছে তো একবার ভগবান বলছে। পরক্ষণেই হয়তো থুরি বলে আল্লাহ খোদা করছে। অথবা হায় যীশু হায় যীশু করছে। নতুবা বুদ্ধাং স্মরনাং গুচ্ছতি করছে। কখন কোন জাতে কি মারালে কিভাবে জাত চলে যাচ্ছে বা জাতের চৌদ্দগুষ্ঠি গোল্লায় যাচ্ছে, সেই দিকে সেই মহাবিবেকবানদের কোনো আমল নেই। বাংলায় যাকে বলে ঈমান নষ্ট। একবার ঈমান নষ্ট হলে তার তো নামাজ হয় না। কিন্তু তাই বলে কি সে চেষ্টা করবে না? হায় খোদা, কলি যুগে আর কি কি দেখাইবা? যতো দোষ নন্দ ঘোষ। ঘোষ মহাশয় তখন দূরে কোথাও লেকের পারে বসে আরামসে বাদাম খাচ্ছে। আর মিটমিট করে হাসছে।
পালাকার কেন পালাকারের নিজস্ব গতিতে চলতে পারে না? পালাকার কেন অন্যের এসাইনমেন্ট পালন করবে? এসব প্রশ্ন তুললে আপনিও কিন্তু আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়াবেন। অতএব সাধু সাবধান। সাবধানের নাকি মাইর নাই। কিন্তু সংস্কৃতি চর্চা করতে এসে কেউ যদি রাজনীতি করতে চায়, তার এই জগতে না আসাই ভালো। তার জন্যে রাজনীতির ওপেন মাঠ আছে। একটা দল গঠন করে প্রেসক্লাবে গিয়ে ঘোষণা দিলেই খবর। খবরের জন্য আমাদের টিভি মিডিয়ার রাতের ঘুম এখন হারাম। রানা প্লাজার আহত মানুষ বের হবার আগেই, তার সেবা যত্নের আগেই, তার চিকিৎসার আগেই, আহত হয়ে বিল্ডিংয়ের নিচে চাপা পরার পর তার অনুভূতি কেমন ছিল, তা জানতে মিডিয়ার বাঘা বাঘা সাংবাদিক নামের কলংকরা ছুটে যাচ্ছেন। আমরা সংস্কৃতি চর্চা করতে গিয়ে যদি তথাকথিত সাংবাদিকদের মতো নিজেদের অনুভূতি ভোতা করে ফেলি, তাহলে সেই ভোতা অনুভূতি দিয়ে সংস্কৃতি চর্চা হবে না। সময় নষ্টের শ্রাদ্ধ হবে মাত্র। বাংলায় বললে বলতে হয়, সংস্কৃতির নামে আসাদুজ্জামান নূরদের মতো পয়সার চর্চা হবে। নামে সংস্কৃত কর্মী। কামে তলে তলে টাকা পয়সার লেনদেন। সাভারে দশ কাঠার সারি সারি প্লট। হয় না ভাই, এসব হয় না।
আমি একবার সাভারে প্রফেসর নজরুল ইসলাম স্যারের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচারদের আবাসন প্লটের জমি দেখতে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি পাশেই আসাদুজ্জামান নূরের নামে সাইনবোর্ড। দশ কাঠার প্লট। আমি কৌতুহল নিয়ে আরেকটু আগালাম। পাশেই সারা জাকেরের নামে দশ কাঠার প্লট। আরো আগালাম, পাশেই আরো অনেক হবু গবু'র নাম। সবাই সংস্কতি চর্চার নামে গোপনে সাভারে দশ কাঠার প্লট করেছেন। আর আপনি মিঞা কি করতাছেন বাংলাদেশে? আরেকটু আগালে অনেকের চোখে আমি শত্রু হয়ে যাব। একটা কথা বলে গোসলে যাই- বাংলাদেশকে শুধু ভণ্ড রাজনীতিবিদরা বা চামার ব্যবসায়ীরাই ধ্বংস করেনি। বাংলাদেশকে ভাগ করতে সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেক বাঘা বাঘা রুই কাতলা আকাম করতেছে। করে যাচ্ছে। এখনো করছে। ভবিষ্যতেও করবে। অতএব সাধু সাবধান।। গেলাম।
................চলবে............................
০৫ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৪:০৫
রেজা ঘটক বলেছেন: ওকে। ব্যাপারটা মাথায় রাখলাম। ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ০৫ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৮
খাটাস বলেছেন: ধারাবাহিক লিখছেন কিন্তু একবার ও পাঠকের কথা ভাবছেন না। চার দিনে ১৩ পর্বের পোষ্ট বেশি হয়ে গেল না?